“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬

বালি বর্ষা...তিন/ চিরশ্রী দেবনাথ

সুকুমারী

...................

ছাদে দাঁড়াও সুকুমারী

এক ক্ষনজন্মা বর্ষা আসার কথা  রাতবিরেতে

এই ধরনের নাম বিংশশতকে কেউ রাখে না

সুকুমারীর বাবা রেখেছিলেন

সুকুমারীর বাবা কিন্ত খুব আধুনিক ছিলেন

ঘরের দেয়ালে সাজিয়েছিলেন 

মকবুল ফিদা হুসেন সারি সারি 

সন্ধ্যার বৃষ্টির সময় এইসব বিতর্কেরা

 দুঃখ,  প্রেম, উল্লাস, অভিমান ইত্যাদি

পারস্পরিক সম্পর্ককে চুমু খেতো

তারপর ঘুমিয়ে থাকতো নিপাট বিছানায় 

অথচ মেয়ের নাম  শুধু  সুকুমারী 

সুকুমারীর মা প্রতিবাদ করেছিলো

মা মারা গেছে অকাল জোৎস্নায়

অরণ্যের মতো ঘর পেরোয় আজকাল ধূসর হস্তীযূথ 

সুকুমারীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে পিতা

পিতাপুত্রীর নিঃশ্বাসে ঘরে বয়ে যায় বনজ বাতাস... 

সোমবার, ২৭ জুন, ২০১৬

আমি কৈবর্ত -শৈলেন দাস














।।শৈলেন দাস।।


জীবনের জন্যই জীবিকা-
মাছে ভাতে বাঁচে বাঙালি জীবন
তাই ভরা বর্ষায়, নদী ঝিল বিল
হাওরে আমার রাত দিন যাপন।
শীতে, শিশিরে ভিজে দুর্বা ঘাস
সমস্ত চরাচর ঢাকে ঘন কুয়াশায়
আমি জলে কাদায় দাঁড়িয়ে ঠায়
শক্ত হাতে ধরে লাঙল জোয়াল
বাতাসে উষ্ণতা ছড়াই খালি গায়।

শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬

প্রসংগ: ভারত মাতা কি জয়...


।। সুমনা চৌধুরী ।।
(C)Image:ছবি
দেশপ্রেম বনাম দেশদ্রোহিতা!এ যেন এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে বাধ্য হচ্ছেন আবার ও দেশের মুসলমানেরা। নিছক এক স্লোগান কে কেন্দ্র করে ভারতের মতো এক বৃহৎ গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কিছু অতি উৎসাহী দেশপ্রেমিকরা বলা যায় এক অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাইছেন দেশে। হিন্দু-মুসলিম সংঘাত, বিভেদ-অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরিই যেন মূল লক্ষ্য এ স্লোগান অবতারণা কারীদের কারণ দেশের মুসলমানদের প্রবল আপত্তি "ভারত মাতা কি জয়!’ বলা নিয়ে আর এ নিয়েই শুরু হল এক নয়া বিতর্ক, যুক্তি-তর্ক আর কোথাও তো সংঘাতের রূপে। প্রশ্ন হল কেনই বা এ স্লোগানকে কেন্দ্র করে এত বিতর্ক বা বিভেদ তৈরি হতে যাচ্ছে? কেন একে দেশপ্রেমীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হচ্ছে? এর বিশদ বিবরণ নিশ্চয় দেব কিন্তু তার আগে আমরা দেখে নেই দেশ বর্তমানে কি অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে।
ছোটকাল থেকেই আমাদের দেশ ধর্মনিরপেক্ষ, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ বলে আমরা শুনে আসছি, দেখে আসছি যা অবশ্যই ভারতবাসী হিসেবে গর্বের বিষয়ও কিন্তু বর্তমানে মনে হয় ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষের ধর্ম নিরপেক্ষতাকে কলুষিত করতে তথা ধুয়ে মুছে সাফ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন নিজেদের স্বঘোষিত দেশপ্রেমিক-গডম্যান বলে দাবি করা দেশের কিছু জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে একশ্রেণির উগ্র সাম্প্রদায়িক এক বিশেষ মতবাদে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলের কিছু লোক ও  কলমচি। জোর জবরদস্তি নিজেদের ইচ্ছা খুশিমতো কোন মতবাদকে দেশের ভিন ধর্মাবলম্বী লোকের উপর চাপিয়ে দিয়ে ওদের মুখ দিয়ে তা বলাতেই হবে নাহলে এদের দেশদ্রোহী তকমায় ভূষিত সহ দেশ ছাড়ার হুমকি এমন কি গর্দান কাটার ও হুমকি প্রকাশ্যেই অহরহ দিচ্ছেন আমাদের দেশের বর্তমান শাসক দলের কিছু নেতা-মন্ত্রীরা এমন কি এদের মিত্র রা। আর আশ্চর্যের বিষয় যে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ বলে পরিচিত ভারতবর্ষে প্রকাশ্যে এক যোগগুরু ( ব্যবসায়ী!) বিশ্বের সর্বোচ্চ  ইসলাম ধর্মাবলম্বী বসবাসকারী দেশে লোকদের সম্পূর্ণ জঙ্গি কায়দায় স্লোগানটি না দিলে আর আইন না থাকলে লক্ষ লক্ষ লোকের গর্দান কেটে নেওয়ার হুমকি দেন আর ওই সামান্য যোগগুরুর বিরুদ্ধে কোন আইনত ব্যবস্থা নেওয়া তো দূর সম্পূর্ণ মৌনব্রত পালন করলেন আচ্ছে দিনের সওগাত নিয়ে আসা, সবকা সাথ সবকা বিকাশ স্লোগানে বিশ্বাসী আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মোদিজীযা অবশ্যই চরম বিস্ময়ের ব্যাপার! বিদেশে গিয়ে যিনি ভারতবর্ষ ধর্ম নিরপেক্ষ, সহিষ্ণু - মহাত্মা গান্ধীর দেশ, ভারতবর্ষে অসহিষ্ণুতা-হিংসার স্থান নেই  বলে বাহবা কুড়ান, সেই প্রধানমন্ত্রীর দেশের এইসব বিকৃত মস্তিষ্কের লোকের মুখের লাগাম টেনে না দেওয়াটা কিংবা কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করাটা বাস্তবে দেশের পরিস্থিতি যে পুরো উলটো তা ই প্রমাণ পাওয়া গেল যেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে নিছক একটা স্লোগানকে কেন্দ্র করে পলিটিকাল গিমিক চলছে পুরো। রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে কেউ কেউ। অহেতুক উত্তেজক কথা বলে, দেশকে মুসলিম মুক্ত করার ডাক দিয়ে কিছু উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব  এবং তাদের দল দেশে যেন এক অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাইছেন তথা তাদের দলের রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে চাইছেনযা এর আগে কখনো দেখা যায়নি।
প্রশ্ন হল, এটা নিয়ে কেন এত বিতর্ক ?.. মুসলিমরা কেনই বা এটা বলতে চায় না? আর অন্য ধর্মাবলম্বীদের বা এতে কি মতামত ? এসব প্রশ্নের উত্তর নিতান্ত সহজ সরল ভাষায় ই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব এবার।

ভারতবর্ষ ছাড়া বোধহয় পৃথিবীর অন্য কোন দেশে দেশ কে মা বলে ডাকা হয়না বা মাতৃরূপে বন্দনা করা হয়না। যাই হোক, এটা কোন বড় ব্যাপার না যে কে কী রূপে দেশকে ডাকল, সম্মান - শ্রদ্ধা দিল বা বন্দনা করল বড় কথা হল যে আমি যেভাবে দেশকে ভালবাসার নিদর্শনস্বরূপ কোন এক স্লোগানের মাধ্যমে ভালবাসার নিদর্শন দেখাই সেটা যে অন্য কাউকেও একই ভাবে করতে হবে এটা তো কোন কথা নয়! নিছক এক স্লোগানের জন্য কাউকে জাতীয়তাবাদী প্রমাণ করার চেষ্টাটা নেহাতই বোকামি আর উগ্রতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

এবার লেখার মেইন পয়েন্ট এ আসি। হিন্দুধর্মে বিভিন্ন দেব দেবী যেমন দুর্গা, কালী, সরস্বতী ইত্যাদি কে যেভাবে বন্দনা করা হয়, পূজা করা হয় বা উপাস্য হিসেবে মেনে নেওয়া হয় এবং খুশির বহি:প্রকাশ হিসেবে "দুর্গা মাতা কি জয়, কালী মা কি জয় বলে স্লোগান দেওয়া হয় ঠিক সেভাবে ভারতবর্ষকে ও দেবী রূপে কল্পনা করে বন্দনা করেন এবং "ভারত মাতা কি জয় বলে খুশির - প্রশংসা মূলক স্লোগান দেন দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকেরা। আর ঠিক সেখানেই মুসলিম সহ অন্য ধর্মাবলম্বীদের আপত্তি। কেননা মুসলিমরা উপাস্য হিসেবে একমাত্র আল্লাহকে মানেন। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো এবাদত-পূজা বা উপাসনা মুসলিমরা করেন না। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সামনেই মাথা নত করেন না কিংবা বন্দনা করেন না বা উপাস্য হিসেবে মানেন না।
এখন অনেকেই হয়তো প্রশ্ন করবেন যে, কেন মাকে তো বন্দনা করা যায় ই, কিংবা মা এর উপাসনা বা পূজা করাতে বাধা কেন আবার?.. সুন্দর প্রশ্ন। এখন বলি, ইসলামে মা এর পায়ের নীচে জান্নাত বলা হয়েছে, মা এর মুখ দিয়ে সন্তান দ্বারাকৃত কোন কার্যে 'উফ' শব্দটি ও যাতে বের না হয় তার নির্দেশ কঠোরভাবে কোরানে দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ ইসলাম ধর্মে মাকে সর্বোচ্চ সম্মানের, শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে কিন্তু মাকে উপাস্য বা বন্দনা করার কথা কোথাও বলা হয়নি। একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেই উপাসনা বা এবাদত করা বা কারো সামনে মাতা নত করার বলা হয়নি এ ব্যাপারে সমগ্র বিশ্বের মুসলিমরা একমত। কোথাও এতটুকু দ্বিধা -দ্বন্দ্ব নেই তাই মুসলিমরা যেহেতু এক আল্লাহর উপাসনা করে তাই তাদের জন্য অন্য কোন দেবীকে কল্পনা করে জয়ধ্বনি দেওয়াটা মোটেই বৈধ নয়। তাই মুসলিম দের এখানেই আপত্তি "ভারত মাতা কি জয় বলা নিয়ে। ঠিক সেভাবে বন্দে মাতরম বলা নিয়ে ও একই যুক্তি খাটে।
        এ সহজ-সরল বিশ্লেষণটা আশা করি এবার বুঝতে পারছেন  আমার হিন্দু ধর্মাবলম্বীর ভাই-বোনেরা। এতটুকু পড়ে
এখন অনেকেই আবার প্রশ্ন করতে পারেন যেকেন নিজের মা, মাতৃভাষা এবং দেশ কে মা হিসেবে গণ্য করলে ক্ষতি কি?.. সুন্দর প্রশ্ন। এ প্রশ্নের উত্তরে বলব যে, হ্যাঁ, মা এর মতোই ভালবাসা যায় দেশ-মাতৃভাষা কে কিন্তু দেবীরূপে কল্পনা করে বন্দনা, পূজা বা জয়ধ্বনি দেওয়াটা ইসলাম ধর্মাবলম্বী লোকের নিকট জায়েজ নয়। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারোকে কল্পনা করে পূজা বা বন্দনা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে । হ্যাঁ, নিদেনপক্ষে দেশের জয়ধ্বনি দেওয়া যেতে পারে যেমন জয় ভারতের জয় বা "জয়হিন্দ!’
       আর শুধু তাই নয় শিখ ধর্মগুরু সিমরণজিৎ  সিং ও "ভারত মাতা কি জয় স্লোগান নিয়ে উনার আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি বলেন,শিখেরা নারীদেরকে, মা কে সম্মান করেন কিন্তু কোনভাবেই পূজা করেন না তাই যদি তারা " ভারত মাতা কি জয় বলেন তাহলে এটা নাকি হিন্দুদের মধ্যেই সামিল হওয়ার নামান্তর বুঝায়, তাই তারা এ স্লোগান দিতে পারবেনা...!
এবার বলি নিছক একটা স্লোগান কে কেন্দ্র করে কেন আমরা দেশপ্রেম -দেশদ্রোহের সংজ্ঞা নির্ধারণ করব আর দেশপ্রেমের পরীক্ষা নেব স্লোগান দিতে অনিচ্ছুক ভিনধর্মাবলম্বী দের??.. ভারতের সংবিধানে সব ধর্মের লোককেই পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয়েছে বিনা বাধায়, স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ ধর্ম পালনের এখানে জোরাজুরির কোনো স্থান নেই।
কিন্তু আমরা কি দেখছি যে ইদানীং কালে যে জোরে বলে যেন অন্য ধর্মাবলম্বীদের মুখ থেকে (যা তাদের ধর্মে হারাম বলা হয়েছে) নির্গত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন একশ্রেণির লোক। যেন "ভারত মাতা কি জয় যারা বলেন তারাই প্রকৃত দেশপ্রেমী আর যারা বলতে চান না এরা দেশের গদ্দার, দেশদ্রোহী! বড় অদ্ভুত, হাস্যকর এ যুক্তি আর তাদের কার্যকলাপও যারা কোন স্লোগান কে কেন্দ্র করে দেশপ্রেমী আর দেশদ্রোহের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে চাইছেন।
ভারতবর্ষের মতো তৃতীয় বিশ্বের এক বিশাল গণতান্ত্রিক দেশে যেখানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে নাজেহাল দেশের জনগণ, যেখানকার প্রায় ৫০% শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে, যেখানকার প্রায় ৬০ কোটি লোক খোলা জায়গায় মলত্যাগ করছে, যেখানে প্রতিবছরই কৃষিঋণ না পেয়ে কৃষকরা আত্মহত্যা করছে আর এ আত্মহত্যা বর্তমানে যেখানে চরমে, সেখানে দেশের এসব সমস্যা বা এর উত্তরণের পথ থেকে দূরে সরে গিয়ে নিছক এক স্লোগানকে কেন্দ্র করে মেতে উঠে ধর্মের নামে উগ্রতা, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ, অবিশ্বাসের বাতাবরণ  আর সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে এক বিশেষ মতাদর্শে বিশ্বাসী এক রাজনৈতিক দলের কিছু ব্যক্তিত্ব এবং তাদের সমর্থিত একশ্রেণীর লোক যা দেশবাসীর জন্য এক অশনি সংকেতই বলা যায় নি:সন্দেহে।
          আমরা দেখেছি কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়া এক হৃদয় বিদারক ছবি যেখানে দেখা গেছে  সন্ত্রাসীদের সংগে যুদ্ধে প্রাণ হারানো কাশ্মীরের এক মুসলমান সেনার মৃতদেহকে ঘিরে ক্রন্দনরত অবস্থায় জড়িয়ে আঁকড়ে আছেন উনার স্ত্রী যা দেখে প্রত্যেক ভারতবাসীরই নিশ্চিত বুকটা মোচড়ে উঠেছিল একবারের জন্য হলে ও। তো তখন কি আমরা ক্ষণিকের জন্য একবার ও ভেবেছি কি দেশের সেবায় নিয়োজিত, দেশ মাতৃকার জন্য প্রাণ হারানো সেনাকর্মীটি কোন ধর্মের ছিলেন?..  আমরা দেখতে পাই সিয়াচেনে শূন্য ডিগ্রী উষ্ণতায় হিমশীতল, দুর্গমসংকুল স্থানে নিরন্তর প্রহরারত দেশের সেবায় নিয়োজিত দেশকে বহি:আক্রমণের হাত থেকে রক্ষাকারী সেইসব হিন্দু-মুসলিম বীর সেনানীদের যারা নিজেদের দিনরাত এক করে দেশকে পাহারা দিচ্ছেন আর নিজের প্রাণ আহুতি দিচ্ছেন আমরা তাদের বলিদানের কথা একবারও ভাবিনা, ভাবিনা দুর্গম-সংকুল স্থানে হিন্দু - মুসলিম হিসেবে না ভারতীয় হিসেবেই আছেন কিছু লোক। আমরা এসব চোখে দেখিনা আমরা শুধু দেখি দেশকে ধর্মীয় পরিচয়ে । সামান্য ছুতোতেই খুঁজে বেড়াই কে হিন্দু আর কে মুসলমান বলে, আর খুঁজাই কে বড় দেশপ্রেমী আর কে বড় দেশদ্রোহী। সত্যি মেকী যত দেশপ্রেম আর মেকী আদর্শ যত!

            আমরা ভুলে যাইনি গুজরাট দাঙ্গার সেই ভয়াবহ দৃশ্যটি যেখানে মায়ের পেট চিরে ভ্রূণ কেটে তলোয়ারের আগায় তুলে কিছু উন্মাদ নরপশুর নৃত্যরত উল্লাস আর সঙ্গে
ভারত মাতা কি জয় দিয়ে জয়ধ্বনির চিত্র! তো এদেরকে আমরা কি দেশপ্রেমী বলে অভিহিত করব যারা স্লোগানের মাধ্যমে কোন জঘন্য পাশবিক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করল?.. একবার ভাবুন তো স্লোগান অবতারণাকারী লোকেরা??..
          আমার দেশ
ভারতবর্ষ সর্বধর্মের সমন্বয়ের মিলনস্থল। দেশের ৮০% লোক হিন্দু ধর্মাবলম্বী যাদের বেশিরভাগই পরিচিতি উদার ও সহিষ্ণু বলে কিন্তু সেই উদারতা-সহিষ্ণু তা কে শেষ করার অপচেষ্টায় মেতে উঠতে চাইছেন একশ্রেণির লোক যা অবশ্যই বুঝা উচিত দেশের  শান্তিপ্রিয় হিন্দু ধর্মাবলম্বী জনগণের। আর বলতে দ্বিধা নেই অশান্তি সৃষ্টিকারী, উগ্রতা প্রদানকারী - সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি করতে চেষ্টা করা এসব লোকের নিছক এক স্লোগানকে কেন্দ্র করে অতিরঞ্জিত বাড়াবাড়ি আর অহেতুক কথায় প্রভাবিত হচ্ছেন বর্তমানে দেশের আমজনতা তো বটেই অনেক উচ্চশিক্ষিত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকও। ফলে সামান্য এক স্লোগান কে কেন্দ্র করে বাড়ছে দুই সম্প্রদায় - ধর্মের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি সহ উত্তেজনা- সংঘাত-অবিশ্বাসের বাতাবরণ যা খুব ই দু:খজনক বলা যায়।
          দেশের মানুষের কল্যাণের স্বার্থেই, সর্বাবস্থায় দেশে শান্তি বজায় রাখতেই আমার হিন্দু ভাই বোনেদের উচিত নিজেদের বিবেক - বিচার বুদ্ধি দিয়ে কোনকিছু ভাবাচিন্তা করা। উগ্র মতাদর্শে বিশ্বাসী মুষ্টিমেয় কিছু লোকের অহেতুক অবাঞ্ছিত কথায়, চিন্তা ভাবনায় প্রভাবিত  হয়ে উত্তেজিত হয়ে কোন সম্প্রদায়কে  ভুল বোঝাটা নিশ্চয় কোন বুদ্ধিমান ও বিবেকবান লোকের কাম্য হতে পারেনা।
          ভারতবর্ষের মুসলমানেরা জিন্নাকে তাদের আদর্শ মানেন নি, অহিংসার পূজারি, শান্তির দূত মহাত্মা গান্ধীকে ই তাদের আদর্শ- পথপ্রদর্শক তথা নেতা হিসেবে মেনেছেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ইংরেজদের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম একাত্ম হয়ে লড়েছেননিজেদের প্রাণ আহুতি দিয়েছেন তাই অহেতুক কোন স্লোগান কে কেন্দ্র করে দেশের মুসলমানদের যেন দেশপ্রেমের পরীক্ষা না নেন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠরা   অনুরোধ টা রাখি। জয় হিন্দ!

শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬

ছবি মেয়ে

 























/চিরশ্রী দেবনাথ /
ধর্ষণের পর থেকে এক ছবিমেয়ে
শুধু সঙ্গমের ছবি আঁকে
মোহ, সাপ, কলা, রস, ছোঁয়াচে অসুখ
ছড়িয়ে ছড়িয়ে আঁকতে থাকে বাৎসায়ন
আনতচোখের মেয়েটি দিনের পর দিন
হয়ে উঠছে অশ্লীল কেবলই অশ্লীল
তার চোখে ঢেউ হয়ে নেমে আসে জোয়ারের শরীর
এতো শরীরী সে তো ছিল না কখনো
হলুদরঙা মেয়েটির বারান্দার
একপাশের ঘরে ঝুলে থাকা
দেয়ালে  এ শুধু নোংরা ছবি
মোমরঙা ঊরুতে যে তিল ফুটেছিলো
সেখানে সে তার পেন্সিল ডোবায়
দীর্ঘ পথ খুলে যায়, এতো এতো মেয়ে সেখানে
চারদিকে ফুল ক্ষত, সাদা নখের আঁচর
আচ্ছন্ন এক রাজপথ ... রঙে জলে ভেজা,
ছবির পর ছবি বসে আছে হাঁটু ভেঙে....
ছবিরও যোনি থাকে, যোনিতে  তুলি
তুলিতে আঁকছে সেই মেয়ে শ্বেত মরুভূমি.....