“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১২

কবি ফৈজুল্লার সত্যপীরের পাঁচালির বন্দনাংশ


সত্যপীরের সিন্নি বা সত্যনারায়ণ সেবা-র পরম্পরা আমাদের প্রাচীন বৈচিত্রময় সংস্কৃতির ঐক্যের নিদর্শন। যে রীতি আছে তো এখনো, কিন্তু তার ইতিহাসকে ভুলে থাকতে এবং অন্তসলিলা প্রীতির ঐতিহ্যকে কোথাও যেন আমাদের ভুলিয়েই দেয়া হয়েছিল। উত্তর বাংলার কৃষ্ণহরি দাস বলে এক কবি ছিলেন সত্যপীরের পাঁচালি লেখক। তাঁর দুই পংক্তি এমন,
“ তাহেদ মামুদ গুরু শমস-নন্দন
তাহার সেবক হয়ে কৃষ্ণহরি গান।”
মনে কি হয় না, প্রাকৃতজনের ধর্ম জানতনা কোনো ভেদ করতে? কোথাওতো গড়ে উঠছিল বাংলার নিজস্ব ধর্ম, যাকে মাথা তুলতে দেয়া হয় নি কেবল আধুনিক যুগে, তাঁর জায়গা জূড়েছে সাম্প্রদায়িক-রাজনৈতিক  ধর্ম? সত্যপীরেরপাঁচালির জনপ্রিয় লেখক দক্ষিণ রাঢ়ের কবি ফৈজুল্লা। তাঁর কাব্য শুরু হচ্ছে এরকমঃ

সেলাম  করিব আগে পীর নিরঞ্জন
মহাম্মদ মস্তফা বন্দো আর পঞ্জাতন।
সের আলি ফতেমা বন্দো একিদা করিয়া
হাচেন হোছেন পেয়দা হৈল যাহার লাগিয়া।
রছুলের চারি ইয়ার বন্দো শত শত
চারি দহ ইমামের নাম লব কত।
এবরাহি খলিলের পায়ে করি নিবেদন
বেটার করবানি দল দীনের কারণ।
করবানি করিয়া দিল এসমাল করিয়া
সেই হৈতে নিকে বিভা হইল দুনিয়া।
আম্বিয়ার হাসিল বন্দো পালআন দুই জনে
এসমাইল গাজি পীর কামাএর কুনি
বড়-খান মুরিদ মিঞা করিল আপনি।
পাঁড়ুয়ার সাফি-খাঁয়ে করি নিবেদন
অবশেষে বন্দিব সত্যপীরের চরণ।
সম্বল জাহানে বন্দিব পীর আছে যত
এক লাখ আশি হাজার পীরের নাম লব কত।
সম্বল পীরিনী বন্দো বিবিগণ যত
বিবি ফতেমার কদমে বন্দিব শত শত।
হিন্দুর ঠাকুরগণে করি প্রণিপাত
খানাকুলের বন্দিব ঠাকুর গোপীনাথ।
নামেতে বন্দিয়া গাইব ধর্ম নিরঞ্জন
যার ধবল খাট ধবল পাট ধবল সিংহাসন।
যমুনার তটে বন্দো রাস বৃন্দাবন
কৃষ্ণ-বলরাম বন্দো শ্রীনন্দের নন্দন।
নবদ্বীপে ঠাকুর বন্দো চৈতন্য-গোসাঞি
শচীর উদরে জন্ম বৈষ্ণব –গোষাঞি।
কামারহাটির পঞ্চাননে কতি নিবেদন
দশরথের পুত্র বন্দো শ্রীরামলক্ষণ।
লক্ষী সরস্বতী বন্দো গঙ্গা-ভাগীরথী
সীতা ঠাকুরাণী বন্দো শচী ঠাকুরাণী
যর গর্ভে গোঁরাচাঁদ জন্মিল আপনি।
শুনহ ভকত লোক হএ-একচিত
সত্যপীর সাহেব সভার করে হিত।
তুমি ব্রহ্মা তুমি বিষ্ণু তুমি নারায়ণ
শুন গাজি আপনি আসরে দেহ মন।
ভকত না একের তরে মোকেদ হইয়া
আসিয়া দেখহ পীর আসরে বসিয়া।
ছাড় গাজি মক্কার স্থান আসরে দেহ মন
গাইল ফৈজল্যা কবি সত্য-পদে মন।

                                                  (c) ছবি

কোন মন্তব্য নেই: