“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

রবিবার, ৩ জুন, ২০১২

৬ জুনের লাইভ শো দেখার জন্য তৈরি তো ?

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে গত ৮ জুন ২০০৪ সালে ‘শুক্রের সূর্য অতিক্রমণ’ ঘটনার তোলা ছবি ।সূর্যপৃষ্ঠে শুক্র গ্রহকে কালো মটর দানার মত দেখা যাচ্ছে ।
   
        ‘লাইভ শো’ দেখতে যারা ভালবাসেন তাঁদের জন্য এক জব্বর খবর । ‘আই পি এলের’ দীর্ঘ নাটকীয় লাইভ ক্রিকেট ম্যাচগুলো দেখে যারা ‘বোর’ হচ্ছিলেন, তাদেরকে এক আলাদা স্বাদ দেবার জন্য আগামী ৬ জুন দু’জন ‘কলাকার’ তৈরি হচ্ছেন । প্রায় তিন ঘণ্টার এই শোয়ে থাকবে এক আলাদা আনন্দ, মজা আর শিহরণ । সকাল সাতটা থেকে শুরু হওয়া এই ‘শো’ দেখার জন্য বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষেরা উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করছেন । সেদিনই ঘটতে চলেছে এমন এক মহাজাগতিক ঘটনা যা আবার দেখতে হলে আমাদের আরও ১০৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে । ‘ট্রেন্সিট অব ভেনাস’ নামক অনুষ্ঠানে সূর্য আর শুক্রের দ্বৈত অভিনয়কে ক্যামেরা-বন্দী করবেন পৃথিবী স্বয়ং । আসলে সেদিনই এক অভিনব সূর্য গ্রহণ ঘটতে চলেছে যার নেপথ্যে রয়েছেন নায়িকা শুক্র গ্রহ বা ‘ভেনাস প্ল্যানেট’ । সূর্যের সঙ্গে শুক্রের ‘টুইস্ট ডান্স’ নিয়ে আসর আপাতত গরম । আর এই লাইভ শো-এর ‘টি আর পি’ও তাই এখন তুঙ্গে ।
     সৌরজগতের নানা চমকপ্রদ ঘটনার মধ্যে ‘ট্রেন্সিট অব ভেনাস’ হল এক অতি বিরল ঘটনা । সূর্য আর পৃথিবীর মধ্যে রয়েছে শুক্র আর বুধ গ্রহ । কখনো কখনো এই গ্রহ দু’টি সূর্য আর পৃথিবীর মধ্যে এক সরলরেখার চলে আসে । আর তখন দৃশ্যমান হয় গ্রহণ । সাধারণত: সূর্যগ্রহণ বলতে আমরা পৃথিবী আর চন্দ্র উপগ্রহের ‘রাউন্ড ডান্স’-এর কথাই জানি । পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় চন্দ্র পুরো সূর্যকেই ঢেকে ফেলে । তখন সূর্য ভোজবাজীর মতই কিছুক্ষণের জন্য পৃথিবীর আকাশ থেকে ‘গায়েব’ হয়ে যায় । গ্রহণ হতে হলে সূর্যের কৌণিক ব্যাসার্ধের সঙ্গে চন্দ্রের কৌণিক ব্যাসার্ধ মিলতেই হবে, আর হতে হবে অমাবস্যা । আর বলয়গ্রাসের সময় চন্দ্রের কৌণিক ব্যাসার্ধ সূর্য থেকে কিঞ্চিৎ ছোট হয় । তাই সূর্যকে একটি রিং এর মত দেখায় । আর এই মজার ঘটনা সম্ভব হওয়ার পেছনে চন্দ্র আর পৃথিবীর স্বল্প দূরত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে । কিন্তু বুধ আর শুক্র গ্রহের দূরত্ব পৃথিবী থেকে বেশী হওয়ার কারণে বুধ বা শুক্র গ্রহ পুরো সূর্যকে ঢাকতে পারেনা । পৃথিবী থেকে এই বিশেষ সূর্য গ্রহণের সময় শুক্র গ্রহকে তখন একটি কালো মটর দানার মত সূর্যের পৃষ্টে দেখা যায় । এই গ্রহ সূর্যের বলয়ের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে সময় লেগে যায় কয়েক ঘণ্টা । মজার ব্যাপার হল জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ‘ট্রেন্সিট’ সময় গণনা করে পৃথিবী আর সূর্যের দূরত্ব নির্ণয় করতে পারেন ।
       ১৬৩১ সালে জোহানেস কেপলার প্রথম গণনার সাহায্যে সর্বসমক্ষে ঘোষণা করেন যে ৬ ডিসেম্বর ১৬৩১ সালে ‘ট্রেন্সিট অব ভেনাস’ হবে ।  সেদিন ‘ট্রেন্সিট অব ভেনাস’ ইউরোপে দৃশ্যমান না হওয়ায় তিনি সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকলেন । জেরেমিয়া হরোকস নামে এক ইংরেজ পুরোহিত প্রথম বোঝতে পারেন যে এই ঘটনা দ্বিতীয়বার ‘রিপিট’ হবে খুব কম সময়ের ব্যবধানে । তিনি অঙ্ক কষে দেখেন যে ২৪ নভেম্বর ১৬৩৯ সালে এটি আবার দৃশ্যমান হবে । বিজ্ঞানের ইতিহাসে তিনিই প্রথম এই ঘটনা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণ করেন । আসলে ‘ট্রেন্সিট অব ভেনাস’ জোড়া ঘটনা হিসেবে হয়ে থাকে । এর মানে এই ঘটনা একবার হলে দ্বিতীয়টি খুব কম সময়ের মধ্যে ‘রিপিট’ হয় । যেমন ১৮৯৫ আর ১৯০৫ সালে ‘ট্রেন্সিট অব ভেনাস’ ঘটেছিল । এই ঘটনা গত ৮ জুন ২০০৪ সালে পৃথিবী থেকে শেষ দেখা গিয়েছিল ।  ৬ জুন ২০১২ এর পর আবার এই ঘটনা দৃশ্যমান হবে ২১১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে । এর মানে পাক্কা ১০৫ বছর পর !
    এই ঘটনা দেখতে হলে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে । খালি চোখে সূর্যকে দেখতে গেলেই অন্ধ হবার চান্স থাকে । সাধারণত: ওয়েল্ডিং এর কালো গ্লাস বা এক্স রে প্লেট কে দুই বা তিন পরতে জোড়া দিয়ে ফিল্টার বানাতে হবে যা সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করবে । জলে প্রতিফলিত সূর্যের প্রতিবিম্বকেও যেন সরাসরি কেউ না দেখেন । দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে প্রজেকশন স্ক্রিনের মাধ্যমে সূর্যের প্রজেক্টেড ইমেজ দেখা যেতে পারে । আর এটাই সব থেকে নিরাপদ ।
    সকাল ঠিক সাতটার সময় এই ঘটনা শিলচরে দৃশ্যমান হবে । ততক্ষণে শুক্র গ্রহ সূর্যের প্রায় মধ্যখানে চলে আসবে । সকাল প্রায় ১০:০৫ এ সূর্যের বলয় থেকে  শুক্রগ্রহ বের হওয়া শুরু হবে । তারপর সকাল প্রায় ১০:২১ এ শুক্র পুরোপুরি বেরিয়ে পড়বে সূর্যের বলয় ছেড়ে আর শেষ হয়ে যাবে লাইভ শো ।  
    গরমের কষ্টে নাজেহাল আম আদমিরা অন্তত: সেদিন আশা করবেন না যে বৃষ্টি হোক । আসলে এই ঋতুতে বৃষ্টির সঙ্গে যে আমাদের এক আলাদা রোমান্সের সৃষ্টি হয় । আসুন না গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ স্বল্প ক্ষণের জন্য ভুলে আমরা এক মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হই !

* সম্পর্কিত সংযোগঃ Transit of Venus

কোন মন্তব্য নেই: