“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন, ২০১২

কবিতা আপনার জন্যে নয়


মূল অসমিয়াঃ স্নেহাঙ্কর চক্রবর্তী
কবিতার বইঃ  ‘উশাহ’র থেকে নেয়া।

















কবিতা আপনার জন্যে নয়।

আলিবাবার মতো গুপ্তমন্ত্রের জোরে
কবিতার গহনে গিয়ে যত খুশি
মণি মুক্তা তুলে আনতে চান
আপনি
একদল অনুচর গুটিয়ে
ওদের তোতার মতো নিয়ম মাফিক
বিদ্রোহ আর প্রেমের ককটেল শব্দের শিক্ষাতে
দীক্ষিত করে তুলেছেন

আপনার সেনাবাহিনীতে
কোনো আগ্রহ দেখায়নি যে প্রতিভারা
তারা নিশ্চিতই উন্মাদ ( জয় হোক আপনার প্রচার যন্ত্রের)

অথচ আপনি ওয়াকিবহাল নন
একদল শর্টসার্কিট ফ্রাঙ্কেনস্টাইন অচিরেই তেড়ে আসবে
আপনাকে
তখন ঢাল হিসেবেও কিছু থাকবে না
আপনার

পত্নী প্রেয়সী অথবা সন্তান সেই বাহিনীর
সেনাপতি হ’লেও আমি অবাক হ’ব না।

কথাগুলো বলে সতর্ক করে দিয়ে লাভ নেই কোনো
আপনি হলেন গে বুড়ো মূলো,
সেদ্ধ হবেন না কিছুতেই...
জানেনও না যে কোথায় খোঁড়া হয়েছে কণ্ঠ সমান কবর।
আপনার কষ্টার্জিত বিদ্যা বুদ্ধি
বড় বড় ডিগ্রিকে বিদ্রূপ করে যে শব্দেরা
তাদের  কবিতা কেন বলব, বলুন দেখি


প্রথম সর্ত—আপনাকে বুঝতে হবে
( কেননা আপনার ভেতরে বাজে না কিছুই)
কবিতা কী বলে

শাপ শাপান্ত, সুড় সুড়ি, বিড় বিড়ি থাকলে
বুঝে টুঝে না পেলেও ক্যা বাত হ্যায়
দিলখুশতো হয়েই যায়

আমেরিকা—শব্দটি এক ভিলেনের নাম
হিরো যদি ভিলেনকে গালি পাড়ে
বলিউড মার্কা আবেগে উথলে উঠা স্রোতা দর্শকের
চেতনার (?) জোয়ার উঠে...ফেন (fan) -এতে ফুলে উঠে
আপনার সৃষ্টি ঔদ্ধত্য

বুঝে নেবার অধিকার অবাধ বলে
অরণ্য রোদন করতে গিয়ে আপনি ভুলেই গেলেন
কবিতা কতটা স্বাধীন
সেখানেই আপনার/ আপনাদের বিপদ

প্রচুর পঠন পাঠন পরীক্ষা নিরীক্ষা...
বোধ আর প্রজ্ঞার গবেষণাতে প্রমাণিত যে—
কবিতা হয়ে উঠতে পারে সৃজনী ধারা অথবা ভীষণ আত্মক্ষয়ংকরী
শেকলের বাঁধন ছেঁড়া পশুর মতো সহজাত প্রবৃত্তিতে বলীয়ান
সোনার খাঁচাতে বনের পাখিরা  বেজার কেন থাকে জানেন না আপনি
জানতেও চান না
সেজন্যেও আপনার জন্যে কবিতাকে হতে হয়
সিদ্ধি সাধনের মন্ত্র
রাজনীতির স্লোগান
মূলত আপনার গোলাম

আপনার গর্ব—
নিয়ন্তা বলেই নিজ হাতে গড়ে তোলা শব্দ
হয়ে উঠবে আপনার ইচ্ছের আয়না

ঠিক এইখানে এসেই (মানুষ) আদ্দিকাল থেকে
বড়ই করুণ আর করুণভাবেই
আপনি পরাস্ত হয়ে এসছেন বারম্বার
কারণ কবিতা মানুষের ধারণাতীতভাবেই স্বাধীন
হাতের খোঁচার থেকে বেরুবার পর ও নিজের মতেই চলে।

অহংবোধকে চূর্নবিচূর্ণ করে কবিতা
আপনাকেও আঙুল ধরে শেখাতে পারে
পথের বুকে শোয়ানো পথের দিক

কবিতা আপনার উঠোন দোয়ারে সুন্দরের পাহারাদার
বিদ্রোহ... প্রতিবাদের ফর্দ দিয়ে পাঠালেও
মানুষের থেকে ফিরিয়ে আপনাকে দেয়
 স্নেহ এবং ভালোবাসা প্রতিনিয়ত

অহরহ সে চায় আপনার সমর্পিত সাধনা 
                                                        (c) ছবি

কোন মন্তব্য নেই: