“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বুধবার, ২৭ জুন, ২০১২

স্বগতোক্তি

                                                                                       স্বপন সেনগুপ্ত

তোমার নাভির কাছাকাছি আমার প্রতিটি ঢিল
গোল হয়ে ছড়িয়ে পড়তো
তুমি হাসতে হাসতে
হাসতে হাসতে একেক সময়
অদৃশ্য হয়ে যেতে।

এই কিস্তিবন্দি নিরুত্তাপ খেলা
ক্লাইভের শহরে কেউ ভালোবাসলো না,
ভাগচাষির মতো আমার নালজমি
দেনার দায়ে বিকিয়ে গেল
ঘর গেল
গোয়ালের শান্তি লুঠে নিল।

তোমার দু:খ হয়েছিল
আমারও দু:খ হয়েছিল
জানি, কুরুশকাঠি দিয়ে অনেকদিন
তুমি এই দু:খকে ধরে রাখতে চেয়েছিলে।
ছবিতে আমিও দেখেছি--
হারবার সিলের বাচ্চার দুধ খাওয়া।

বড়ো অদ্ভুত মনে হয় করতল--
জ্যোৎস্নাহীন, শ্রাবণের দু:খহীন
এ যেন ডাকঘরের সীলমোহরের ক্ষত,
যতো তাকে জলে রাখি ধুয়ে মুছে যাক
ততো যেন জ্বলে ওঠে--
আত্মপ্রকাশের এতো বিড়ম্বনা ?

নিপুণ খলিফা ছাড়া এতো জল
এতো আলো হাওয়ায় ক্ষয়ে যাওয়া
রূপবান মানবিক প্রাণীর শরীর
ঢেকে দিতে আর কারা পারে ?

হাঁটছি, হাঁটছি, অনন্ত সময়ব্যাপী হেঁটে
চলেছি; অজস্র পায়ের ছাপ রেখেও দেখেছি
এ মাটির বড়ো নাকটান--
দাগ মুছে ফেলে
চিহ্ন মুছে ফেলে
মুছে ফেলে শরীরের রক্ত ও ঘাম।

বহুদিন তোমার সঙ্গে দেখা নেই
তুমি কেমন আছ কিছুই জানি না।
জানি না, কোন তানপুরায় তোমার
আর্দ্র আঙুল কাঁপছে,
কোন বৃক্ষবীজের ছায়া দেখবে বলে
গুঁড়ি মেরে বসে আছো !

তোমার নাভির কাছাকাছি আমার প্রতিটি ঢিল
গোল হয়ে ছড়িয়ে পড়তো
তুমি হাসতে হাসতে
হাসতে হাসতে একেক সময়
অদৃশ্য হয়ে যেতে।

                                          (C) Picture : ছবি

কোন মন্তব্য নেই: