“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ৬ আগস্ট, ২০১২

আমার বন্ধু সলিল

           (১৮/১/১৯৭১ – ৪/৮/২০১২)
পর্ব ১

   সলিলের  সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় কবে হয়েছিল, এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তবে আমি যখন দল গড়ে নাটক করতে শুরু করি, ততদিনে বরাকের নাট্য জগতে সে একজন তরুন এবং সম্ভাবনাময় প্রতিভা হিসাবে বেশ পরিচিত। তার সাড়া জাগানো নাটক দুই গালও চড় আমি তখনো দেখিনি, শুধু খ্যাতি সুনেছি। এরকমই সময়ে কোন একটি Theatre Fest এর অবকাশে, সে  আমাকে খুঁজে বের করে আলাপ জমিয়ে ফেলল, এবং অচিরেই আমাকে জানালো, সে নাকি আমার নাটকের বিরাট ভক্ত। আমি প্রবল আপত্তি জানিয়ে তাকে বললাম,
  আপনি আমার fan হতে যাবেন কেন? আসলে আপনিই হচ্ছেন আমার অনুপ্রেরনা।

   কথাটা আমি বাড়িয়ে বলিনি। কারন গোড়ার  দিকে, একটি গ্রামের কিছু আনকোরা ছেলেদের নিয়ে দল গড়ে ফেললেও, দলটিকে কোনও সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায় নিয়ে যেতে আমি কিছুটা ভীত এবং প্রচণ্ড দ্বিধাগ্রস্থ ছিলাম। তখন আমার নাট্যগুরু মৌসম দত্ত আমাকে সাহস যোগাতে প্রায়ই বলতেন,
- পাথারকান্দি থেকে সলিল যদি পারে, তাহলে পয়লাপুল থেকে তুমি পারবেনা কেন?
সলিল অবশ্য এসব শুনে গায়েও মাখল না। এমনকি বয়সে আমার থেকে বড় হওয়া সত্ত্বেও আমাকে অচিরেই দাদা ডাকতে শুরু করল।

পর্ব ২

     এরপর অনেকদিন দেখা নেই। ২০০৬ সনে শিলচরে দিল্লির National School of Drama র একটা workshop হবে। আমি আমার দলের সবচেয়ে মেধাবী অভিনেতা কৃষ্ণ পাণ্ডে কে পাঠিয়ে দিলাম। দুদিনের মধ্যে আমিও সেই workshop এ ভিড়ে গেলাম, কিছু ‘unavoidable’ কার্যকারণে। মজার কথা হল, সেই workshop এ সলিলও এল, এবং workshop এর resource person , মিস ঝিলমিল এর সঙ্গে অচিরেই বিরাট বড় ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ল।
     সেই ঝগড়া সেদিনই মিটে গেছিল। কিন্তু আমি আর কৃষ্ণ সেদিন রাতে workshop শেষ করে রাতে বাড়ি ফিরতে ফিরতে যেটা ঘুরেফিরে বারবার বলাবলি করছিলাম সেটা হল এই যে নাটকের প্রতি কতটা ভালবাসা থাকলে সলিলের মত একজন প্রতিষ্ঠিত এবং স্বনামধন্য মানুষ ঝিলমিলের মত বালিকার ( jhilmil, excuse me, but that’s the impression you left) অপমান অবলিলায় সহ্য করতে পারে!

পর্ব ৩

        তিন বছর আগে, শেষ দেখা। সলিল আমার গ্রামে এসেছিল। আমাকে বলল, ওর এক বন্ধুর ভারি বিপদ। একটি মেয়েকে ভালবাসে, কিন্তু অনেক অসুবিধে পথে ছড়ানো। পাঠক, মাপ করবেন, আমি দ্রবীভূত ছিলাম, গল্পটি মনে নেই। তবে ততদিনে  অর্জিত ঘনিষ্ঠতার সুবাদে বলেছিলাম,
শালা, কোনও বন্ধু ফন্ধু নয়... এটা তোর গল্প।
সলিল লাজুক হেসেছিল, জবাব দেয়নি।

পর্ব ৪
         সলিল মৃত। শিলচরের কোনও আঁতেলের অর্শ হলেও যতটা শোক হয়, সলিল, তোর ভাগ্যে বোধহয় সেটিও নেই। তবে মজার কথা হচ্ছে, তোকে যারা জানত তারা জানে, You never gave a damn. সলিল, আমি ব্যাক্তিগত ভাবে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, কোন শালাকে তোকে ভুলতে দেবনা। 

কোন মন্তব্য নেই: