“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৩

ফর্মালিন



মাথাটা কে ব্যাবচ্ছেদ করে মিউজিয়ামে রাখবো ভাবছি
কোন কাজে লাগবে না জানি

হৃদয় দিয়েও বোঝাতে পারিনি,
ভালোবাসি তোমায়।

শিরচ্ছেদের সিদ্ধান্ত তাই।

ফর্মালিনের শিশিতেও
তোমারই নাম সেঁটে যাবো
নিহত চোখের মণিতে বিঁধে যাবো তোমার
হারিয়ে যাওয়া কানের দুল

হৃদয় অক্ষত থাকবে সেদিনও,
হেসে উঠবে তোমায় দেখে আমার পাহাড়ি পাখি,
হরিণ ছড়াবে সুগন্ধ, ফুলেরা বিছিয়ে দেবে বিছানা,
ঝর্ণা হবে শান্ত, পাহাড় দাঁড়াবে মাথা তুলে


যেদিন তুমি যাবে আমার শিরচ্ছেদ দেখতে
লংতরাইয়ের সবুজ গালিচা ধরে, তোমার আঁচল এলোমেলো হবে,
নতুন পাতা ছুঁয়ে যাবে তোমার হাত, পায়ের পাতা,
ঘাস জানবে শুধু তোমার অন্ধ কুঠুরির রহস্য

কোন কবির মিউজিয়ামে সেদিনও অকারনেই ছুঁয়ে যাবে বসন্ত
এখানেই ছিল কবির আস্ত পৃথিবী আর তুমি, শেষ কয়েক দশক।
এবং আজ

যদি ভুলক্রমেও ছুঁয়ে দাও একবার!

তাই, মাথাটাকে ব্যাবচ্ছেদ করবো ভাবছি।
হৃদয়টা রেখে দেবো অক্ষত, তোমারই জন্যে।

মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৩

সুভাষ চন্দ্রঃ মৃত্যু নিয়ে এক ধ্রুপদি শিল্পের স্রষ্টা



( লেখাটি বেরিয়েছিল আজ থেকে ঠিক দশ বছর আগে গোপাল বসু সম্পাদিত তিনসুকিয়ার ছোট কাগজ 'দৃষ্টি'র সুভাষ জন্মদিনে বিশেষ ক্রোড়পত্র হিসেবে। কিছু বানান এবং ছাপা ভুল বাদে আজো লেখাটি সমান প্রাসঙ্গিক ভেবে এখানে তুলে দিলাম। )

কটা লোকের  জন্মের মধ্যে তার নিজের কি কৃতিত্ব থাকে? কবে, কোথায়, কোন ঘরে জন্ম নেবে সে ঠিক করে? এখানে তার নিজেরও স্বাধীনতা কই? সে তো ঠিক করে জীবনটাকে। নির্মাণ করে তার মৃত্যুটাকে। আর যাঁরা অসাধারণ , যাঁদের মহান বলতে পারলে আমাদের আত্মা তৃপ্তবোধ করে তাঁরা রীতিমত সৃষ্টি করে। সৃষ্টি করে তাঁর মৃত্যুটাকে। যে মৃত্যুর নামে সাধারণের আত্মা আঁৎকে উঠে, অসাধারণেরা তারই নামে গেয়ে উঠেন, “মরণরে তুহুঁ মম শ্যাম সমান।” আর সে শ্যামের জন্যেঃ
“মন্দির বাহির কঠিন কপাট।
চলইতে শঙ্কিল পঙ্কিল বাট।।” তুচ্ছ করে করে এসে যাঁরা অভিসার করেন স্বাধীনতার তাঁরাইতো মূর্ত প্রতীক।
সুভাষ চন্দ্র বসু এমনই এক মৃত্যু সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর নিজের জন্যে। ভারত মায়ানমার সীমান্ত যুদ্ধে বৃটিশের গোলাবারুদের ঘায়ে তাঁর মৃত্যু হতে পারত। হলো তাইহোকু বিমান বন্দর ছাড়ার মুহূর্তখানিক পরে, দুর্ঘটনায়। তাতেই বা কি? কি সুন্দর সে মৃত্যু! দুশো বছরের পরাধীনতাকে উপড়ে ফেলে দেশ আর দেশের মানুষকে মুক্ত করতে গিয়েইতো? প্রথমে জাতীয় কংগ্রেস ও পরে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বোচ্চ সংগঠক হবার যোগ্যতা অর্জন করতে করতে জীবনটাকে গড়েছিলেন বলেই তো?
এমন সুন্দর মৃত্যু কবে কোন সাধু সৃষ্টি করেছিল? অথচ আমরা একে স্বীকারই করলাম না। আমরা বিশ্বাস করি সুভাষ বসুর মত এত সুন্দর মানুষটা এতো সুন্দর মৃত্যু বরণ করতেই পারেন না! শৌলমারি না কোথাকার সাধুর ভেক ধরে কাপুরুষের মতো পালিয়ে বেড়াতে পারেন।

সুভাষচন্দ্রের দুর্ভাগ্য এই তিনি সফল হলেন না তাঁর লক্ষ্যে। তাই আমাদের কাপুরুষ, ভয় –বিহ্বল, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মন পাল্টালো না। সে রইল কুৎসিত আগের মতো। সে আমদের কৌৎসিত্য যে আমরা সুভাষের জীবন ও মৃত্যুর সৌন্দর্য বুঝলাম না। সেনানায়ক সুভাষ নয় সাধু সুভাষের কল্পনা আমাদের বেশি প্রিয়। কেন ফকির বা পাদ্রীও নয় কেন? তাঁকে হিন্দুর একার সম্পদ বলে ভাবি বলে তো? তাঁকে শরীরে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াসে তিলে তিলে চেতনায় তাঁকে মেরে ফেলার সাধনায় আমাদের ক্লান্তি নেই!
চে গুয়েভারা ছিলেন আর্জেন্টিনার লোক, কিউবার বিপ্লবে সফল নেতৃত্ব দিয়ে মন্ত্রীও হয়েছিলেন। পরে বলিভিয়া গেলেন যেখান থেকে মার্কিনী ভাড়াটে শাসকদের তাড়াতে বলিভিয়ার জঙ্গলেই প্রায় নিঃসঙ্গ অবস্থায় সংঘর্ষেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যু নিয়েও কম রহস্যের জলঘোলা হয় নি। অথচ তাঁর অনুগামীরা সে মৃত্যুকে বিশ্বাস করেছে। তাতে লাভ হয়েছে এই যে শুধু বলিভিয়াতে নয়, শুধু কিউবা বা আর্জেন্টিনাতে নয়, সারা লাতিন আমেরিকাতে হাজারো তরুণ সেই তখন থেকে প্রতিদিন স্বপ্ন দেখছে সাধনা করছে সৃষ্টি করবে মৃত্যু—চে গুয়েভারার মতো। যেমন কোন বাঙালি তরুণ বা তরুণী প্রথম কবিতা লেখে রবীন্দ্রনাথের মতোঃ কিম্বা নজরুলের মতো। এও তেমনি।
চে’কে নিয়েও ভক্তির বাড়াবাড়ি আছে। চে’র ছবি বা মূর্তি ঘরে রাখা, তাঁর জন্ম মৃত্যুদিন পালনতো তুচ্ছ। চে’র মতো চুল দাড়ি রাখা, পোষাক পরা, পোষাকে চে’র ছবি এঁকে তৃপ্তি হয় না—শরীরে খোদাই করে টাট্টু করা। সুভাষ বসুর লেখা কেউ পড়ে না, পড়ে ‘ শৌলমারির সাধু কি নেতাজী ছিলেন?’ জাতীয় পয়সা রোজগারের ধান্দায় লেখা পাতি বই। চে’র রচনা সবাই হজম করে; মুখে মুখে ফেরে তাঁর কবিতা। এসবে প্রশংসনীয় তেমন কিছু নেই। কিন্তু এ হচ্ছে চে’কে প্রচার করার নমুনা।

চে যে তাঁর ধ্রুপদি শিল্প কর্ম—তাঁর মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে কি দারুণ ভাবে বেঁচে আছেন সে আঁচ করা যায় যখন দেখি সারা লাতিন আমেরিকাতে মার্কিনী নেতৃত্বাধীন বিশ্বায়ন বিরোধিতাটা ফুটবলের মতো, লোকের জাতীয় ধর্ম হয়ে গেছে। আর পেলে-মারাদোনার মতো সে ধর্মের দেবতা চে গুয়েভারা। স্বাধীনতার যে কোন সংগ্রাম, যে কোন মিছিলে  ছবির চেহারাতেও চে থাকেন সবার আগে, সবার সামনে। সারা বিশ্ব কান পেতে শোনে চে’র হৃদস্পন্দন।
এবার কল্পনা করুন সুভাষ থাকেন কই? এ হীনতা আমাদের। সুভাষ বসুর নয়। স্বাধীন ভারতের কোন সংগ্রামের ময়দানে, লড়াইর ময়দানে—বিশ্বায়ন বিরোধী লড়াই নয় বাদই দিলাম—সুভাষ বসুর নাম নিতে কখনো কাউকে দেখব? অনশনে বসলে গান্দির ছবি মালা দিয়ে সাজিয়ে রাখার সংস্কৃতি অসমেও আছে। মৃত্যুর শিল্পীদের সম্মান জানাবার এর চেয়ে বেশি যোগ্যতা আমরা অর্জন করিনি। আমরা তেইশ জানুয়ারি করি। ওখানে একটু গানবাজনা করি আর খেলাধুলা করি। ক্যারাম খেলি। সুভাষ বসু ক্যারাম খেলার প্রতীক!!?
সুভাষ বসু কি ছিলেন তা যার গরজ আছে তিনি নিজের অধ্যয়ন অনুশীলনে আবিষ্কার করেন। আর এ নিয়ে লেখাটা খউব জরুরি নয়।
এখন সময় বোধহয় আত্মসমালোচনা করার । আমাদের চেতনার গভীরে বৃটিশ-মার্কিনীদের সেবাদাসদের বিরুদ্ধে লড়াই করার। মনে রাখতে হবে, শুধু কমিউনিষ্টরা তাঁকে ‘কুইসলিঙ্ক’ বলেছিল বলে, আমরা আসলে নিজেদের অপরাধ আড়ালই করি। বরং ঐ জনযুদ্ধের বছর কয় বাদ দিলে কমিউনিষ্টরা সুভাষ বসুর সহযোগীই ছিল। জাতীয় কংগ্রেসের ভেতরে সুভাষও বামপন্থী বলেই পরিচিত ছিলেন। চীন দেশের ডাঃ সান ইয়েৎ সেন-এর মতো রুশ বিপ্লবের প্রতি সুভাষচন্দ্রের ছিল অপার শ্রদ্ধা। আমাদের ভুলে গেলে চলবে কেন যাঁরা সুভাষকে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে থাকতে দিলেন না তাঁরা কমিউনিষ্ট ছিলেন না। ভুললে চলবে কেন কংগ্রেস ছেড়ে ফরোয়ার্ড ব্লক গড়লে আমাদের অকমিউনিষ্ট পূর্বসূরীরা দলে দলে অনুগামী হন নি। এবং যখন তিনি মায়ানমার সীমান্তে যুদ্ধ করেছিলেন তখন তাঁর আশামত তাঁর সমর্থনে দেশে গণ-অভ্যুত্থান আমরা গরে তুলিনি। যা হবার হয়েছিল বিমান দুর্ঘটনার পর বন্দি মুক্তির আন্দোলনে। ঐ দুর্ঘটনার পরই হয় আমাদের ঘুম ভেঙ্গেছে কিম্বা ভোল পাল্টেছে। আমরা সুভাষদ্রোহী থেকে ভক্ত হয়েছি। তাও কোন সুভাষের? সেনানায়ক নয় রহস্যবাদী সাধু সুভাষের।

বৃটিশের অর্ধ সমাপ্ত কাজের ভার আমরা নিয়েছি ভক্তের বেশে। আমরা তাঁকে ক্যারাম খেলার প্রতীক করে তুলেছি। করে তুলেছি বাঙালিয়ানার প্রতীক। লক্ষ্য করুন চে কিন্তু সারা লাতিন আমেরিকার সম্পদ। আমরা ২৩ জানুয়ারি বলে তাঁর নামে আরো এক তিথি বের করেছি, বুদ্ধ পূর্ণিমা বা কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর মতো। অবতারদের যেমন তাঁদের জন্মের উপরও একটা কর্তৃত্ব থাকে, সুভাষ বসুরও ছিল বলে আমরা কল্পনা করে নিয়েছি। অবতারেরাও পরলোকে গেলে মরদেহ ধরে রাখিনি আমরা। সুভাষ বসুকে পরলোকে যেতে দিতে তৈরিই নই। মনে করি তিনি কোথাও  কারারুদ্ধ আছেন আর পৃথিবীর তাবৎ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিন লাদেনকে ধরার চাইতেও ঐকমত্য আছে সুভাষ বসুকে কারাগারে রাখার পক্ষে। তাই কোথায় কি ভাবে আছেন তা নিয়ে কেউ টূঁ শব্দটি করে না। লাদেন সাদ্দামের চেয়েও ওদের ভয় বেশি সুভাষকে?!
আমরা মনে করি সুভাষ কোথাও লুকিয়ে আছেন সাধুর বেশে। সময় হলে বেরিয়ে আসবেন। তা লুকিয়ে তো বিন লাদেনো আছেন। এ সত্বেও তাঁকে নিয়ে ইঙ্গ-মার্কিনদের কী ভয়। তা সুভাষ বসুর কোনো গোপন সক্রিয়তাও দেখিনা, না দেখি তাঁকে নিয়ে কারো কোনো ভয়!
সুভাষ কারাগারে আছেন অথচ জেল ভাঙার পরিকল্পনা করছেন না? আজকের হাইটেক যুগের কোনো সুযোগ নিতে পারছেন না? জেলের ভেতরে একটাও বিশ্বস্ত লোক তৈরি করতে পারছেন না, যে বাইরে খবর পাঠাবে? বাইরে তাঁর একজনও অনুচর নেই, যে নিশ্চিত খবর দিতে পয়ারে সুভাষ আছেন কোথায়? অথচ আজকের মানুষ সন্ধান করছে পৃথিবীতুল্য দ্বিতীয় গ্রহটি আছে মহাবিশ্বের কোন ছায়াপথে, কতদূরে?
সুভাষ সাধু হয়ে আছেন! যতদূর জানি স্বামী বিবেকানন্দের ভাবনায় দারুণ ভাবে প্রভাবিত ছিলেন তিনি। সুভাষের এ দীর্ঘ আত্মগোপন বিবেকানন্দের দর্শনের কোন ব্যাখ্যায় সমর্থন মিলবে? অথবা বিবেকানন্দের দর্শনে সেই দুর্ঘটনার পর আস্থা হারালেন তিনি? কার দর্শন, কোন দর্শন সমর্থন করবে এ দীর্ঘ আত্মগোপন?

নেতাজি সুভাষ এখন কিছুর রাস্তার নাম এবং তাই নিয়ে অসমিয়া ও হিন্দু -বাঙালির কাজিয়ার নাম
সমর্থন করে শুধু ভীরুতার দর্শন আমাদের যে ভিরুতা ভয় পায় এমন কি রাজনীতির ‘র’ উচ্চারণে। ভালোবাসে শুধু গাইতে আর খেলতে? সে সুভাষের মতো বীর পূজাতে আত্মগ্লানি মুক্ত হবার প্রয়াস করে আর দীর্ঘজীবি কাপুরুষ কিম্বা সাধু বানিয়ে সুভাষকেও নামিয়ে আনে নিজের সারিতে। এভাবে সে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে সুভাষের শিল্পকে ধ্বংস করে। মারে সুভাষকে।

চিতাভস্মকে পেছনে ফেলে নেতাজি কন্যা
বাইরে ২৩ জানুয়ারি জন্মদিন বটে- কিন্তু এদিনেই তাঁকে আটকে মেরে ফেলবার দিনও বটে। কোনোদিন যদি কেউ তাঁর সত্যিকারের মৃত্যুদিন পালনে সাহসী হয় বোধকরি সেদিনই সে মৃত্যুর ঔজ্জ্বল্য আমাদের পথা দেখাবে। নতুবা আমাদের মনও শত্রুর কাছে বন্ধক রেখে দিতে, কিম্বা সাধু হয়ে পালিয়ে বেড়াতে আমাদেরই বা বাধা কিসে? তাইতো করছেন আমাদের কল্পনার icon. সুতরাং সুভাষ হবেন না চে গুয়েভারা। মার্কিনিরা বা বৃটিশেরাও তাঁকে ভয় পাবে না—তারা করে করে খাবে। প্রেত নৃত্য নাচবে আমাদের বুকের উপর। সেই নৃত্যেই আমরা হব আহ্লাদে আটখানা। জর্জ বুশ আর টনি ব্লেয়ারদের আমরা আজকাল এতো ভালোবাসি সে এমনি এমনি? অথচ চে’র দেহ আর্জেন্টিনায় আমেরিকানরা কী মারই না আজ খাচ্ছে। চাভেজ-এর ভেনেজুয়েলা, লুলার ব্রাজিল মার্কিনীদের ঘাড় ধরে বাইরের দরজা দেখাচ্ছে। এইতো চে। আমাদের সুভাষ ঠিক এভাবেই আমার বেঁচে উঠবেন তো? চাভেজ কিম্বা লুলার চেহারা নিয়ে এই দেশে এই ভারতে আমাদেরই কেউ মাথা তুলে দাঁড়াবে তো? কেউ দাঁড়ালেই আমরা তাঁর সাথী হব তো?  

তিনসুকিয়াতে হেমাঙ্গ বিশ্বাস জন্ম শতবর্ষ উদযাপিত হলো

'সমৰ কৃষক-বনুৱা, হালোৱা-হজুৱা তথা গণ-জীবণৰ মুক্তিৰ স্বার্থত সমৃদ্ধিশালী দিশেৰে মাতৃভূমিক আগুৱাই নিবলৈ হ'লে, নৱ-প্রজন্মই হেমাঙ্গ বিশ্বাসৰ লিখনি তথা অসমৰ সাংস্কৃতিক ইতিহাস অনুসন্ধিৎসা-সহকাৰে যথেষ্ট অধ্যয়ন কৰিব লাগিব; কাৰণ বহু ৰাজনীতিক, বহু ডিগ্রীধাৰী লোকতকৈ অসমক আৰু অসমৰ মাটিৰ কৃষ্টি সংস্কতিক গণ-সংস্কৃতিলৈ উত্তৰণ ঘটাই তাক ৰাষ্ট্রীয় মঞ্চ আৰু বিশ্বৰ দৰবাৰত মর্যাদা সহকাৰে প্রতিষ্ঠা কৰোতা হেমাঙ্গ বিশ্বাসৰ আদর্শ তেতিয়া যিমান প্রাসঙ্গিক আজিও একেদৰেই প্রাসঙ্গিক।'--যোৱা ২০ জানুৱাৰীত তিনিচুকীয়াৰ বিষ্ণুজ্যোতি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ত দিনজোৰা কার্যসূচী উপলক্ষে , সাংবাদিক অমূল্য খাটনিয়াৰৰ সঞ্চালনাত অনুষ্ঠিত এক মনোজ্ঞ আলোচনা চক্রত এই ভাষ্য দাঙি ধৰে হেমাঙ্গ বিশ্বাসৰ নিবিড় সান্নিধ্য লাভ কৰা গণনাট্য কর্মী, প্রগতীশীল লেখক শৰৎ চন্দ্র নেওগে। 'সাম্প্রতিক সময়ত হেমাঙ্গ বিশ্বাসৰ আদর্শৰ প্রাসঙ্গিকতা' শীর্ষক আলোচনা চক্রত অন্যতম আলোচক তিনিচুকীয়া জিলা সাহিত্য সভাৰ নৱ-নির্বাচিত সভাপতি তথা শিশু সাহিত্যিক, নাট্যকাৰ কবি হৰেন্দ্রনাথ বৰঠাকুৰে লোক-সংস্কৃতি আৰু গণ-সংস্কৃতি সম্পর্কে সৰস আলোচনা আগবঢ়ায়। আলোচনাৰ বিষয়বস্তু উপস্থাপন কৰে ড০ অপূর্ব ভাস্কৰ গগৈয়ে আৰু হেমাঙ্গ বিশ্বাসৰ জীবনী লেখক ফটিক বৰাই তেখেতৰ অনুভৱত, হেমাঙ্গ বিশ্বাসক সততে মনত ৰাখিবলৈ গণশিল্পীগৰাকীৰ নামত অসমত কোনো ভৱন আদিৰ নামকৰণ কৰাটো প্রয়োজন বুলি মত আগ বঢ়ায়। অনুষ্ঠানত স্থানীয় চেমনীয়া স্বভাৱ শিল্পী ৰাহুল সণোৱালৰ আকর্ষণীয় ঢোলবাদন আৰু বিভিন্নজনৰ  গীত-মাত কবিতা আবৃত্তিয়ে অনুষ্ঠানৰ সৌষ্ঠব বৃদ্ধি কৰে। উক্ত কার্যসূচী উপলক্ষে তিনিচুকীয়া আঞ্চলিক ছাত্র সন্থাৰ পৃষ্ঠপোষকতাত আৰু পূর্ণানন্দ বৰুৱাৰ সম্পাদনাত প্রকাশিত 'জালালী কইতৰ' নামেৰে এখনি গ্রন্থ হৰেন্দ্র নাথ বৰঠাকুৰে উন্মোচন কৰে। আগবেলা ছাত্র-ছাত্রীৰ মাজত কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আৰু এখনি নান্দনিক দৃশ্যশিল্পৰ প্রতিযোগিতামূলক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত কৰা হয়। 
                                        ইতি
                                 পূর্ণ কাকতি
সম্পাদক, হেমাঙ্গ বিশ্বাস জন্ম শতবর্ষ উদযাপন সমিতি, তিনিচুকীয়া ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

**********************************************************************

      অসমের  মজুর-কৃষক  তথা গণ-জীবনের মুক্তির জন্যে  সমৃদ্ধির দিকে  মাতৃভূমিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে,  নৱ-প্রজন্মকে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের লেখালেখি  তথা অসমের  সাংস্কৃতিক ইতিহাস অনুসন্ধিৎসা নিয়ে প্রচুর  অধ্যয়ন করতে হবে; কারণ বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তথা বহু ডিগ্রীধারী লোকের থেকে  অসমকে এবং এখানকার  মাটির কৃষ্টি সংস্কতিকে গণ-সংস্কৃতিতে উত্তরণ ঘটিয়ে সেগুলোকে জাতীয় আন্তর্জাতিক স্তরে  সমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। তাঁর  আদর্শ তখন যতটা  প্রাসঙ্গিক আজও একইরকম প্রাসঙ্গিক।'--গেল ২০ জানুয়ারিতে তিনসুকিয়ার  বিষ্ণুজ্যোতি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ে দিনজোড়া কার্যসূচী উপলক্ষে , সাংবাদিক অমূল্য খাটনিয়ারের  সঞ্চালনাতে অনুষ্ঠিত এক মনোজ্ঞ আলোচনা চক্রে এই ভাষ্য তুলে ধরেন  হেমাঙ্গ বিশ্বাসের  এককালের সহকর্মী গণনাট্য কর্মী, প্রগতীশীল লেখক শরৎ চন্দ্র নেওগ। 'সাম্প্রতিক সময়ে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের  আদর্শের প্রাসঙ্গিকতা' শীর্ষক আলোচনা চক্রে অন্যতম আলোচক তিনসুকীয়া  জলা সাহিত্য সভার নব-নির্বাচিত সভাপতি তথা শিশু সাহিত্যিক, নাট্যকার কবি হরেন্দ্রনাথ বরঠাকুর লোক-সংস্কৃতি এবং গণ-সংস্কৃতি সম্পর্কে সরস আলোচনা করেন। আলোচনার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন ড০ অপূর্ব ভাস্কৰ গগৈ এবং   হেমাঙ্গ বিশ্বাসের অসমিয়া জীবনী লেখক ফটিক বরা তাঁর  অনুভবে হেমাঙ্গ বিশ্বাসকে  সদা স্মরণে রাখবার জন্যে তাঁর নামে  অসমে  কোনো ভবন ইত্যাদির  নামকরণ করা দরকার বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ।  স্থানীয় শিশু স্বভাব শিল্পী রাহুল সণোয়ালের আকর্ষণীয় ঢোলবাদ্য এবং অন্য অনেকের গান-আবৃত্তি পুরো অনুষ্ঠানের  সৌষ্ঠব বৃদ্ধি করে। এই কর্মসূচী  উপলক্ষে তিনসুকিয়া আঞ্চলিক ছাত্র সন্থার পৃষ্ঠপোষকতাতে এবং  পূর্ণানন্দ বরুয়ার  সম্পাদনাতে  'জালালী কইতৰ' নামে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।  গ্রন্থটি উন্মোচন করেন হরেন্দ্র নাথ বরঠাকুর । সকাল বেলা ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে  কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা এবং একটি  নান্দনিক দৃশ্যশিল্পের  প্রতিযোগিতামূলক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত  হয়। 

                                        ইতি
                                 পূর্ণ কাকতি
সম্পাদক, হেমাঙ্গ বিশ্বাস জন্ম শতবর্ষ উদযাপন সমিতি, তিনসুকিয়া।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ 
আবৃত্তি আৰু দৃশ্যশিল্প প্রতিযোগিতাৰ বিজয়ীসকলৰ নামৰ তালিকা                             

**********************************************************************
পূর্ণানন্দ বৰুৱাৰ সম্পাদনাত প্রকাশিত 'জালালী কইতৰ'                                          
                       
 ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
এখানে গোটা অনুষ্ঠানের ছবিগুলো একেএকে দেখতে পাবেন।                           


ঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁঁ
এখানে কিছু বাছাই করা ভিডিও দেখতে পাবেন,                                                  
এর মধ্যে দুই আবৃত্তি প্রতিযোগী শিশুর ভিডিও রয়েছে                                         

সোমবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৩

তুমি ছুঁয়ে দিলেই ...


বটের ঝুড়ি ধরে চলে যাও মেঘেদের কাছে।
দেখবে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে মেঘবালিকা

তুমি এমনটাই,
ছুঁয়ে দিলেই ঝরে অসংখ্য আকাশ মাটিতে

তুমি ছুঁয়ে দিলেই মেঘ ঝরে পড়ে বৃষ্টি হয়ে
তুমি ছুঁয়ে দিলেই ঈশ্বর হয় রাহুমুক্ত
তুমি ছুঁয়ে দিলেই আজানের সময় হয় অসময়ে

ছুঁয়ে দিলেই স্খলন শুরু হয় ধানী জমির
সূর্যমুখীর ক্ষেত ভিজে যায় ধূতরা ফুলের কষে
শুরু হয় নতুন সৃষ্টি অথবা অগ্নুৎপাত
লাভাপথে জমে যায় অজস্র বরফ

হেসে ওঠে ইন্ডিয়া গেইটের তাক করা রাইফেল

চিতা থেকে জেগে উঠেন রবীন্দ্রনাথ
রাইটার্সের রঙ হয়ে যায় নীল

তুমি ছুঁয়ে দিলেই ... ফুল ফোটে, পাতা ঝড়ে
নুইয়ে পড়ে লজ্জাবতী

তুমি ছুঁয়ে গেলেই রোদ্দুর, অথবা বৃষ্টি, সকাল অথবা বিকেল


তুমি না থাকলেই সব বেসামাল অথবা শব যাত্রার গেঁদা,
খই ছড়ানো পথে সিলভার কয়েন।
জলহীন মঙ্গল আর চাঁদের শরীর, মাটি
এবং আমার অনিদ্রা, ভেজা ছাই অথবা ফ্রেমে রজনীগন্ধা।

বৃহস্পতিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৩

আর্চিস গ্যালারী


র্চিস গ্যালারীতে অনেককাল ধরে নীরবে অপেক্ষা করছে দুটি লাল গোলাপ।
হাতে তৈরি কাগজে রাতের পর রাত জেগে এই গোলাপের জন্ম দিয়েছিল আর্ট কলেজের ছেলে ঋতু। তেল রঙ কিনবে, তাই একদিন নিজেই বিক্রী করে দিয়েছিল কালো রাবার মুড়ে গোলাপ আঁকা কার্ডগুলি।
সেই থেকে গোলাপ ঘিরে অন্ধকার।
এখন কি কাল কে জানে! কতকাল সূর্য দেখেনি, কুয়াশাদের সাথে খেলেনি, বাবুই পাখির কোলাহল শোনেনি। ভেবেছিল মিষ্টি প্রেমের উপহার সেজে মুক্তি পাবে এককালে এই কালো রাবারের ঘুম থেকে এই গোলাপ হৃদয়।

ঋতু বলেছিল, তানি কে ভরিয়ে দেবে কাগুজে গোলাপে। ভেবেছিল, হাতে তৈরি এই কাগজে ছড়িয়ে দেবে শেষ বার কোন জুঁই ফুলের পারফিউম।
কোন মিষ্টি প্রেমের উপহার সেজে খুনসুটি করবে ভ্যালেন্টাইন ডে'র সন্ধ্যায় দুই লাল গোলাপ।

সময় গেল, চরিত্রহীন এখনও বেষ্ট সেলার। গোলাপ এখনও বিক্রী হয়। শুধু বিক্রী হয়না ঋতুর হৃদয়। এখনও তানির কালো ফিতের বাঁধুনি আলগা হয়নি।
ঋতু এখন আর ছবি আঁকেনা।

আজ ১৬ই জানুয়ারি। আজই এমনি করে চলে গিয়েছিলেন রূপনারায়নের পারে শরৎবাবু। চরিত্রহীন এখনও বেষ্ট সেলার। কিন্তু কেউ মনে রাখেনি চরিত্রহীনের মৃত্যুর খবর।
কেউ মনে রাখেনি শরৎ ঋতুর নিরুদ্দেশ হওয়ার খবর। কেউ মনে রাখেনি কাল শেষবার আমার দেয়া গোলাপের শেষ পাপড়িটি ঝড়ে পড়েছিল তোমার ডায়েরির পাতা থেকে অজান্তেই।

কেউ মনে রাখেনি, এই দিনটিতে তুমি চলে গিয়েছিলে। কেউ মনে রাখেনি, রেখে গিয়েছিলে আমাকে।

ঋতুর আঁকা গোলাপ আর আমি, এখন কালো চুল বাঁধার রাবারে হাঁসফাঁস করছি, অন্ধকার এক ঘরে, এককোণে তোমারই জন্যে...

হে পিতা! স্বর্গ মর্ত্যের প্রভেদ আমি জানিনা। আমি জানি, তোমার প্রশস্ত দুই হাত আর সেই হৃদয়ের কথা। যা আমাকে দিয়েছিলে তুমি আমার প্রথম কৈশোরে, আমাকে। আমার মাকে, আমার প্রথম ভালোবাসাকে।
তুমিই ছিলে আমার কৈশোরের আর্চিস গ্যালারী...।

বুধবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৩

পাখির চোখে কুয়ালালামপুর

০ ডিসেম্বর, ২০১২। কোলকাতা নেতাজী সুভাসচন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে  ইমিগ্রেসন এবং যাবতীয় চেক হয়ে যাওয়ার পর বিমান ছাড়ার অপেক্ষায় বসে সময় গুনছিলাম। ওয়েটিং লাঊণজে পাশের সিটে বসা এক তরুণী। হাতে মেরুন-রঙের পাসপোর্ট দেখে বুঝা গেলো উনি ভারতীয় নন। চেহারা ছবি অনুযায়ী আমাদের সাত বোনের দেশ মণিপুরি মহিলাদের মতই। বাক্য-বিনিময় করে জানা গেলো, ঐ শ্রীমতি কুয়ালালামপুরের বাসিন্দা। এদেশে বেড়াতে এসেছিলেন। কুড়ি দিন পর দেশে ফেরত যাচ্ছেন। দিল্লি, মুম্বাই ইতিমধ্যে ঘুরে এসেছেন, শেষের পাঁচ দিন কোলকাতা থাকার পর, এবার বেক টু স্বদেশ। আর পাঁচটা কথার পর জিগ্যেস করলাম, আপনার দেশে স্থানীয় সুস্বাদু খাবার কোনটা?

সু-তন্বীর উত্তর, ‘নাসি-লেমাক’ (Nassi-Lemak)।
আমাদের দেশে তো রিফাইন তেলে ভাত সেঁকে নিলেই ফ্রাইড রাইস হয়ে যায়, তেমনটা নয়, নারকেল তেলে ভাত সেদ্ধ করে এটা বানানো হয়। মালাই ভাষাতে ‘নাসি’ শব্দের অর্থ ‘ভাত’।
       একুশ ডিসেম্বর।  যে কনফারেন্স-এ এসেছি, সেটা শুরু হবে পরদিন থেকে। অর্থাৎ আগের দিন, নিজের গাঁটের কড়ি ভেঙেই লাঞ্চ, ডিনার। দুপুরের খাওয়া ঐ চার-তারা হোটেলেই। মেনু কার্ডে দেখলাম রয়েছে ঐ ‘নাসি-লেমাক’। দাম ১৮ রিঙ্গিত । ১৭ টাকা ৮০ পয়সা দিয়ে মনে মনে গুন করলাম। মোটা-মোটি ৩২০-৩২৫ টাকা। অর্ডার করলাম। যথামাফিক ডিশ আসলো। দেখে সেই বাসি-বিয়ের দিনের বাটি-তে চাপ-দিয়ে বসানো ভাত উল্টিয়ে থালে দেওয়ার কথা মনে হল। তবে এ ভাতে নারকেল এর মৃদু গন্ধ। সঙ্গে বাদাম আর আমাদের ‘ভুজিয়া মাছ’-এর মত একটা ছোট মাছ একেবারে কড়-কড় করে ভাজা। দেখতে এবং খেতে অনেকটা চানাচুর এর স্বাদ। সঙ্গে আরও রয়েছে টুকরো মুরগি-ভাজা, সেদ্ধ-ডিম অর্ধেক করে কাটা আর ‘কড়া’ স্বাদের চাটনি। খারাপ লাগলো না। সেদেশে গেলে, আপনারাও চেখে দেখতে পারেন...।

      
    বাইশ ডিসেম্বর। কনফারেন্স এর প্রথম দিন। বস্তুতঃ নাম নথি-করণ ছাড়া সেদিন কোনও কাজ ছিল না। অন্ধ্র প্রদেশ থেকে আরও দুজন এসেছেন। রথ দেখা কলা বেচার মত ওদেরও এই কনফারেন্সের অছিলায় কুয়ালালামপুর জায়গাটাকে চেখে নেওয়ার ইচ্ছা। বেলা এগারটা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম তিনজন। আমাদের সময়ে, সকাল সাড়ে আটটা।
          যে হোটেল-টা কনফারেন্সের ভেনু, আমাদের সাময়িক নিবাস সেখানেই। বিমান বন্দরের একেবারে কাছাকাছি হলেও মূল শহর থেকে প্রায় পঞ্চাশ কিলো মিটার। মানে এই শিলচর–করিমগঞ্জ দূরত্ব। যেতে লাগল মাত্র ৪০-৪৫ মিনিট। মনে মনে ঈর্ষা হয়!  তবে সবগুলো বাস-ই বাতানুকূল। তাই ভাড়া-টাও আমার কাছে একটু বেশি লাগছিলো। ১০ রিঙ্গিত। মানে আমাদের ১৭৮-১৮০টাকা। বাগদাদ থেকে অধ্যাপক জাব্বোর আল মাহদিদ এসেছেন কনফারেন্সে। আগের দিন ‘লিমোজিন’ দিয়ে শহর ঘুরে এসেছেন। সেটা আমার জানা ছিল না। আমরা বাস দিয়ে শহরে গেছি, সন্ধ্যায় ফিরে সেটা উনাকে বললাম না, বলেছি শুধু এখান থেকে শহরে যাওয়ার ভাড়াটা একটু বেশি। ভদ্রলোক প্রতিবাদে গর্জে উঠলেন।
      
নো-ও-ও-ও-ও । ভেরি চিপ। ‘ইয়েসটারডে দে টুক অনলি ৩৪০ রিঙ্গিত’।ভাবলাম ছ’হাজারেরও বেশি। শুধু শহর ঘোরার জন্যই! বাপরে! তেলের দেশের অধ্যাপক বলে কথা! আমি আর কথা বাড়ালাম না। সাহসও হলো না। বাসে চেপে বিমানবন্দর চত্বর থেকে শহরের দিকে যাচ্ছি। একটু পর পাশের সিটে বসা লোকটার একটা ফোন আসলো। কথা বলছে। তবে অনেক কষ্ট করে বুঝা গেলো যে সেটা বাংলা। যাকগে। সোজা-সাপ্টা জিগ্যেস করলাম, বাড়ি কোথায়?
-কুমিল্লা, বাংলাদেশ।
 -কী কাজ করেন?
-মিস্ত্রি, সিমেন্টের কাজ করি।
-নাম?
- ইফতাব আলি
-এদেশে কতদিন ধরে আছেন?
- এই ১০-১১ বছর। আমার উস্তাদ-ই এখানে নিয়ে এসেছেন।
-তা মোটামুটি মাসে রোজগার ?
-এই ধরুন,  ৮০০ থেকে ১০০০ রিঙ্গিত। মানে আমাদের বাংলাদেশের  হিসেবে  আঠারো থেকে কুড়ি হাজার টাকা।
-আচ্ছা, এতদিন ধরে যে এদেশে রয়েছেন, তো আপনার পরিবার?
-দেশেই রয়েছে, ৪-৫ বছরে একবার যাই।
-আর এখানের ভিসা কতদিনের?
-আমাদের তো ওয়ার্কিং ভিসা। প্রথমে এক বছরের দেয়। পরে তা বছর বছর এমব্যাসি তে গিয়ে রিনিউ করতে হয়। উস্তাদ-ই তা করে দেয়।
-আচ্ছা, ধর্মের দিক দিয়ে তো কোনও বাধ্য বাধকতা নেই, এরা–আপনারা একই। তাই জিগ্যেস করছিলাম, দুটো জাতের মধ্যে বিয়ে-সাদি চলে?
-আকছার হয়। ছেলে পুলেও হয়। ছেলে পুলেরা এদেশের নাগরিকত্ব পেলেও ওদের বাবা আই সি পায় না।
-আই সি মানে?
 
-‘Identity Card’। বিষয় সম্পত্তি সব বউ-এর নামেই থাকে, ছেলে-পুলেও বউ-এর  প্রাপ্য সব ফায়দা-সুযোগ পায়,  কিন্তু ঐ ‘বাবা’ কিচ্ছু স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি করতে পারবে না নিজের নামে।
-বললাম, দারুণ। যেটা আমাদের দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে এতদিনে হয়ে ওঠে নি, সেটাই ওদেশের প্রচলিত নিয়ম।
        যাকগে, লাখ দুয়েক বঙ্গ-ভাষী লোকেরা রয়েছেন সেদেশে, ধর্মের দিক দিয়ে বেশির ভাগই মুসলমান, তবে, হিন্দুরাও রয়েছেন। সুজন চক্রবর্তী নামের আরেক জনকে একই ভাবে অন্য দিন বাসে পেয়েছিলাম, বলেছিলেন, ‘দেওয়ালি’ এখানে কিছুটা টের পাওয়া গেলেও ‘দুর্গা-পুজার দিনগুলো আর পাঁচটা দিনের মতই কাজ করে কাটে। পূজা-টুজা টের পাই না।
     শহরের যেখানটায় সব বাস গুলোর সিন্ডিকেট, তার নাম কে এল সেন্ট্রাল। (কে এল কুয়ালালামপুরের সংক্ষিপ্ত নাম)। ইংরাজিতে ওরা লেখে KL SENTRAL । C-র প্রচলন খুবই কম;  সে জায়গাটা S দখল করে নিয়েছে।  ঐ কে-এল সেন্ট্রাল থেকে মনো-রেল  বা LRT  (Light Rail Transit) এবং KTM Komuter ট্রেন, দুরকম ট্রেন-ই পাওয়া যায়। দুটোই  অনেকটা দিল্লি-কলকাতার মেট্রো-র মত। তবে KTM চালক-বিহীন,  মাটি থেকে প্রায় ১০-১২ ফুট ওপরে কংক্রিটের লাইন, তার ওপর দিয়ে চলে। LRT তে টিকিট নেওয়ার পথ দিল্লি-কলকাতার মেট্রো থেকে অনেকটা ভিন্ন। সারি করে ফিঙ্গার টাচ কম্পুটারগুলো রাখা। আঙ্গুল লাগালেই পুরো নেট-ওয়ার্কের ম্যাপ মনিটর-এ চলে আসে। এবার, আপনার গন্তব্যস্থল ছুঁলেই টিকিটের দাম ভেসে উঠবে।  ধরুন ৫.৮০ রিঙ্গিত।  এবার একদিকে নোট ঢোকান, অন্যদিকে খুচরো পয়সা। ৫.৮০-র জায়গায় ৬ রিঙ্গিত দিতে চাইলে মেসিন তা নেবে না। পুরোপুরি মাপমতো টাকা পেলেই প্লাস্টিকের গোল টিকিট বেরিয়ে আসবে। বলাবাহুল্য, খুচরার আকাল নেই। আর আমাদের অবশ্য, তা নিয়ে  দুশ্চিন্তা করেও লাভ নেই। LRT  কিম্বা KRT, কোনটাই বরাক উপত্যকায় আগামী পাঁচ হাজার বছরে হবে কি না! BGT–ই (Broad Gauge Train) যে আমাদের কাছে আজও অধঃরা! নয় কি?
 
 শহরের যে জায়গাটা একদম প্রথম আকর্ষণ, সেটাই প্রথম দেখতে গেলাম। ‘পেট্রোনাজ টুইন টাওয়ার’। এই টুইন টাওয়ারই কুয়ালালামপুরের অন্যতম আকর্ষণ। টাওয়ারের নিচের ৬-৭ তলা জুড়ে রয়েছে সপিং মল, বাজার, ব্যাংক, KFC এবং এ জাতীয় অনেক ফাস্ট-ফুডের দোকান এবং অন্যান্য জরুরী সেবা কেন্দ্র। মূল প্রবেশ দ্বারে টাওয়ারের শিখরে যাওয়ার মুল্য তালিকা রয়েছে। ৮০ রিঙ্গিত। তবে যথারীতি অনেক বিধি নিষেধ আর নিয়মাবলী রয়েছে।
      পেট্রোনাজ  টাওয়ার থেকে মনো-রেল (LRT) দিয়ে চলে এলাম ‘মসজিদ ইন্ডিয়া’- তে। ওদের ভাষায় ‘মাজ্জে জামেক’। সেই সুদুর কোন অতীতে দক্ষিণ ভারতীয় মুসলমানেরা সেখানে গিয়ে মসজিদ স্থাপন করেছিলেন। দুপুর হয়ে গেছিলো। মসজিদের প্রবেশ-দ্বার বন্ধ। সামনের বিস্তর জায়গা জুড়ে পসরা সাজিয়ে দোকানিরা রয়েছে। কেনা কাটা চলছে ধুমধাম। বেশির ভাগই মহিলা। আসলে পুরুষ- মহিলা অনুযায়ী কাজের কোনো বিভাজন নেই সেদেশে। বাসের হাণ্ডিমেন, কন্ডাক্টার বেশির ভাগই মহিলা। ভোর  পাচটা  থেকে রাত এগারোটা অবধি মহিলা কন্ডাক্টার কাজ করেন। ইসলামি দেশ, কিন্তু চিন্তনে-মননে অনেকটাই পশ্চিমি। আমাদের দেশ হলে তো রোজ পঞ্চাশ-একশোটা করে ‘বর্ণালী’, ‘আমানত’ মারা পড়ত!
          আমাদের এখানে হাড় হিম করা ঠাণ্ডার বিপরীতে কুয়ালালামপুরে পুরোদস্তুর গরম। এ সি বন্ধ করলে রাতে ঘুমানোর ঊপায় নেই। দিনের বেলা খুব বেশি হলে ফুল হাতা শার্ট পড়া সম্ভব। ব্লেজার বা কোট গায়ে চড়াতে হলে এ সি রুমে থাকা আবশ্যক। নতুবা গলদঘর্ম।
     
 চব্বিশ ডিসেম্বর। জেনটিং হাইল্যান্ড কুয়ালালামপুর থেকে ঘণ্টা দু-এর রাস্তা। দারুণ সুন্দর জায়গা। এক কথায় মন-কাড়া, স্বপ্ন-তুল্য। থেকে দু ঘণ্টার ব্যবধানে একেবারে গ্রীষ্ম থেকে শীতকালের পরিবেশ। অনেক টা আমাদের চেরাপুঞ্জি-র মত আবহাওয়া। একবার যদি সেখানে যান, আর ‘ক্যাবল-কার’ (রোপ-ওয়ে) না চড়ে ফিরে আসেন, তবে সে দুঃখ পুরো-জন্মে ভোলার নয়। দারুণ অনুভূতি। পনেরো-কুড়ি মিনিট লাগবে একবার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে যেতে, সমান সময় ফিরে আসতে। টিকিট মাত্র ৬ রিঙ্গিত। আসা যাওয়া ১২ রিঙ্গিত। গভীর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে প্রায় শো খানেক ক্যাব একদিকে যাচ্ছে, তো আরও শো খানেক ক্যাব ফিরে আসছে। একেবারে বিরামহীন। দু-প্রান্ত থেকেই অবশ্য শহরে ফিরার গাড়ি পাওয়া যায়। সঙ্গীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ও-প্রান্তে গিয়েই নেমে পড়লাম।

         রোপ-ওয়ে দিয়ে ফিরে না এসে দারুণ লাভ হোলো। এ প্রান্তে এসে দেখলাম, স্থানীয় এক মহিলা নিজস্ব অভিনব পদ্ধতিতে, অনেক রকমের  চাটনি জাতীয় খাবারের পশরা সাজিয়ে বেশ বড় মাপের দোকান খুলেছেন, কেনা কাটাও হচ্ছে দুর্দান্ত। রয়েছে করলার, শসার, আদার, আলুর আর এ জাতীয় অন্যান্য শাক-সবজীর আচার, এবং সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন আকৃতির আর বিভিন্ন স্বাদের ফল দিয়ে বানানো চোকলেট। রোপ ওয়ে দিয়ে ফিরে আসলে এটা দেখা সম্ভব হতো না। দারুণ মিস করতাম।
       কুয়ালালামপুরে শহরের ওপর এক প্রান্তে এক পাহাড়ের গুহায় রয়েছে অন্যতম আরেক মুখ্য আকর্ষণ। বিশেষত ভারতীয়দের জন্য। ‘বাঁটু-কেভ’। প্রায় ২৫০ টা সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ে চড়ার পর দেখতে পাবেন ঐ গুহা। গুহার মূল প্রবেশ দ্বারে রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি পিতলের মূর্তি। ‘মুরুগান’, বা আমাদের মতে কার্তিক ঠাকুর। প্রায় ১৫০-১৬০ ফুট উঁচু। পাহাড়ের ওপর গুহার ভিতরে রয়েছে মন্দির। দক্ষিণ ভারতীয় পুরোহিতরা রয়েছেন। রোজ পুজো হয় । প্রণাম করে দক্ষিনা দেওয়ার পর কপালে আঙ্গুল দিয়ে এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে সাদা মাটি লেপে দিলেন পুরুত- মশাই।
          
 কুয়ালালামপুর থেকে কলকাতা চার ঘণ্টার উড়ান। বিমানে বসে করার কিছুই নেই, তাই যতটুকু দেখলাম, মনে তরতাজা থাকতে থাকতে ল্যাপটপ এ লিখে নিচ্ছি।
       জানালা দিয়ে বাইরে চোখ পড়ল। ঘণ্টা তিনেক পেরিয়ে গেছে, বিমান বঙ্গোপোসাগরের ওপর। হাল্কা মেঘের নিচে থাকা ধরিত্রী মাতা-কে দেখা একেবারেই দেখা যাচ্ছে না। পুরোটাই জলে ঢাকা। যেন বিশাল একটা জল-বেলুন। বাঁ দিকের আকাশে তাকালাম। দেখলাম, উজ্জ্বল কাঁসার একটা ঝুলন্ত থালা! আর কেউ নন, উড়োজাহাজের নীচে থাকা ধরিত্রী মা’র আপন ভাই; আপনার  ছোটবেলার মামা, আমারও...

-‘চাঁদ-মামা’! রয়েছেন বাঁ দিকের মধ্যাকাশে...!


সোমবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৩

জীবনরেখা চাতলা




পিংকী পুরকায়স্থ চন্দ্রানী, গবেষিকা
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়।
(লেখাটি নতুন কাগজ 'প্রতাপে'র প্রম স্যাতে বেরিয়েছে) 
 সামের মোট জলাভূমির ১৪ শতাংশই বরাক উপত্যকায়। শিলচর শহরের অদূরে অবস্থিত এমনই একটি জলাভুমি হল চাতলা হাওর। হাওর শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে তেমন কিছু জানা না থাকলেও এইটুকু বলা যায় যে বাঙলা এবং আসামের বেশ কিছু জায়গায় গোলাকৃতি বিশালাকার জলাভূমিগুলোকে স্থানীয় ভাষায় হাওর বলা হয়ে থাকে। হাওরগুলো বর্ষায় জলে টুঁইটুম্বুর আবার শীতে খিটখিটে শুকনো, টুকরো টুকরো জলাশয়ের রূপ নেয় । বর্ষায় চাতলার বিস্তৃতি ১৭৫০ হেক্টরের চেয়ে ও বেশী হয় এবং গভীরতা ১০ মিটারকেও ছাপিয়ে যায়। নীল নয়না চাতলার সাথে গাঢ় সই সম্পর্ক বরাকের চঞ্চলা কিশোরী উপনদী ঘাঘরার । চাতলা তার আশেপাশের সমস্ত জলধারাকে নিজের মধ্যে সঞ্চিত করে রাখে এবং পরিমিত অনুপাতে ঘাঘরার স্রোতে নিজেকে রিক্ত করে জলের উচ্চতা বজায় রাখে। যেহেতু প্রকৃতির সব কিছুতেই রয়েছে পরিমিতি অপরিমিতির হিসেব, তাই চাতলা কখনো সম্পূর্ণ ভাবে শুকিয়ে যায় না, শীতের নিস্তব্ধ দুপুরে রাজহাঁসের দল রাজকীয় ভঙ্গিমায় সাঁতার কেটে অথবা গরমের দীর্ঘ রাতগুলোতে নির্ঘুম চাঁদ জলের আরশিতে নিজের মুখ দেখে অবহেলায় কাটিয়ে দিতে পারে। ছবির মতন সাজানো চাতলাকে ঘিরে রয়েছে গ্রাম বরাকের নিজস্ব সংস্কৃতি, লোকাচার , জীবন যাত্রা। ঢেউয়ের তালে তালে ভেসে আসা ভাটিয়ালির সুর, নাম না জানা অচিন মাঝির গলায় ব্যক্ত জগদীশ্বরের উদ্দেশ্যে আকুল প্রার্থনা , “বন্ধু, অকূলে ভাসাইয়া আমায়, কই রইল্যা রে../নহর ও দরিয়ার বুকে রইল্যাম সাঁতরাইয়া, /কি দুঃখ বুঝিবে বন্ধুরে কিনারে দাঁড়াইয়া /বন্ধু , কই রইল্যা রে...ও”। চাতলার কোলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকগুলো গ্রাম আজও ইলেকট্রিসিটির জাদু কাঠি থেকে বঞ্চিত, বিশুদ্ধ পানীয় জল মরীচিকার মতো, রাস্তা ঘাটের অবস্থাও তথৈবচ। তবু দারিদ্র, চরম অবহেলা, এই সব কিছুর মধ্যেই এলাকার অধিবাসীরা যারা মূলতঃ মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের, তারা আগলে রেখেছেন নিজের একান্ত আপন অকপট আন্তরিক সুখ, তৃপ্তি ,আনন্দকে। হাজার রিক্ততা, প্রতিকুলতা ও বঞ্চনার বর্ণহীনতা , আশার রঙ স্বপ্নের তুলি দিয়ে বর্ণময় করে তোলে তারা সাজিয়ে নেন আপন স্বপ্নের ভুবন। তাই তো হাড়ভাঙা খাটুনির পর সন্ধ্যার আবছা আলোয় মেতে উঠতে পারেন মনসা মঙ্গল , তিন নাথের সেবা, হরিনাম সংকীর্তনে। লোকগীতির সুরে সুরে যশোদার বাৎসল্য, গোপালের শিশু সুলভ চপলতা–আনন্দ-দুঃখ–অভিমান হয়ে উঠে তাদের আপন পরিবারের গল্প, চাওয়া পাওয়া বা নাপাওয়ার ব্যক্ত অব্যক্ত ইতিহাস।সাপের মতন এঁকে বেঁকে চলা রাস্তার দুপাশে, মাটিতে নিকানো ছন বাঁশের ঘর, উঠোনের মধ্যমণি মমতা ঢালা তুলসি বেদী, বারান্দার কোনে দুপুরের পড়ন্ত রোদে ঘুম ঘুম চোখে কর্তব্যরত কুকুর, সদ্য চান করে ফিরে আসা হাঁসের দল, পালকের যত্নে উন্মুখ পায়রার গম্ভীর বাকবাকুম, বাঁশের বেড়ার উপর মেলে রাখা জাল, উঠোনের কোনে মাছ ধরার ডরি, চেপা, কোচা, দুপুরের রোদে মাছ শুকানোর কাজে ব্যস্ত নববধূ, চাতলার বুকে মাছ ধরায় তন্ময় সন্ন্যাসীর মতন দৃপ্ত সুঠাম বলিস্টদেহী যুবকেরা, হিজল ছায়াবীথিতে গরু চরানো রাখাল বালকের দল, ছাগ শিশু কোলে ঝুঁটি বাঁধা কিশোরী, ঘাটে জল নিতে আসা মেয়েদের সুখ দুঃখের কথোপকথন, হাসির অনুরণন সব কিছুই যেন প্রকৃতির মতন অকৃপণ, সৌম্য, শান্ত, বাহুল্য বর্জিত ।
         
              আমাদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় , আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপিকা ডঃ সুস্মিতা গুপ্তের তত্বাবধানে এবং বিশ্ববিদ্যালয় অনুদান আয়োগের (ইউজিসি) আর্থিক সাকুল্যে চাতলার জলের গুণগত মান, উৎপাদন ক্ষমতা এবং মৎস্যজীবীদের আর্থ সামাজিক অবস্থান নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা সম্পর্কিত প্রজেক্ট হাতে তোলে নেওয়া হয়। তিন বছরের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষার পর চাতলার যে ছবি আমাদের সামনে উঠে এসেছে সেটা জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে আশার প্রদীপ। চাতলার জলের গুণগত মান, উৎপাদন ক্ষমতা এবং মৎস্যজীবীদের আর্থ সামাজিক অবস্থান নিয়ে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বৈজ্ঞানিক গবেষণা সম্পর্কিত প্রজেক্ট রিপোর্ট অনুযায়ী চাতলার জলের গুণগত মান মোটামোট ভালোই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদিও জলে লোহার (আয়রন) পরিমাণ বেশী পাওয়া গেছে তা সত্বেও জলে অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে শুরু করে অম্ল/ক্ষারকতা এবং অন্যান্য তত্ত্বগুলো মৎস্য উৎপাদনের উপযোগী পরিমাপ নির্দেশ করছে। তবে কোন কোন জায়গায় ধান খেত এবং সব্জি খেত থেকে জলের স্রোতে ভেসে আসা সার এবং বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক বৃষ্টির পর পরই দেখিয়েছে মারন চিহ্ন, জন্ম দিয়েছে ভীতির। চাতলার জল উৎপাদনক্ষম এবং এই জল যাতে কীট নাশকের সংস্পর্শে বিষিয়ে না যায়, সেই দায়িত্ব আমাদেরই। আমাদের লোক সংস্কৃতি এবং পরম্পরাগত লোকধারায় থরে থরে সাজানো রয়েছে সব সমস্যার সমাধান। প্রাকৃতিক সার এবং কীট নাশে পারম্পরিক পদ্ধতির প্রয়োগই মুক্ত করতে পারে প্রকৃতিকে বিষের করাল গ্রাস থেকে। মৎস্যজীবিদের মতে বর্তমানে চাতলায় মাছের সংখ্যা

এবং প্রজাতি দুটোই তলানির দিকে । তাছাড়া মৎস্যচাষের জন্যে প্রয়োজনীয় খরচপাতির অভাবেও মৎস্যজীবিরা উৎপাদনবৃদ্ধি করতে পারছেন না । এই ব্যাপারে যে তথ্যগুলো রিপোর্টে উঠে এসেছে তার অন্যতম একটি হল মাছ ধরার জন্যে নির্বিচারে মশারী জালের ব্যবহার। মশারীজাল বংশবিস্তারযোগ্য বয়েসের আগেই কেড়ে নেয় মাছেদের জীবন । দ্বিতীয়তঃ যখন চাতলার অন্তর্গত ফিসারীগুলো জলে একাকার হয়ে যায় তখন চাতলা সম্পূর্ণ রূপে সার্বজনীন সম্পত্তি হয়ে পড়ে, আবার শীতকালে যখন জল কমে আসে তখন ছোট ছোট ফিসারীগুলো মৎস্যজীবিদের নিজস্ব পারিবারিক সম্পত্তির আওতায় এসে পড়ে। ব্যবস্থাটি নিঃসন্দেহে সুন্দর, কিন্তু এর সাথে যদি কোন কো-অপারিটিভ অর্থাৎ সমবায় গড়ে তুলতে পারতেন এলাকার মৎস্যজীবিরা সেই ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে প্রয়োজনীয় টাকার পয়সার ব্যবস্থা, মশারীজাল নিষিদ্ধ করণ, ভালো চারা সংগ্রহ, উপযুক্ত মৎস্যখাদ্য শনাক্ত করন এবং প্রয়োগ, উপযুক্ত বাজারের সংস্থান অনেকাংশে সহজ হয়ে উঠতো, ঠিক যেমনটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশে। চাতলা আমাদের সম্পদ, গ্রাম বরাকের জীবনরেখা। একে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার, আপনার, আমাদের সবার। আসুন আমারা জীবনীশক্তিতে উদ্বেল করে রাখি আমাদের প্রিয় চাতলাকে।

সোমবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৩

তিনসুকিয়াতে গণশিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান


গামী ২০ জানুয়ারি, ২০১৩ রোববার  দিনজোড়া কর্মসূচীতে তিনসুকিয়া  বিষ্ণুজ্যোতি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ে উদযাপিত হবে গণশিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস জন্মশতবার্ষিকী। বিস্তৃত কার্যসূচী আমাদের  চিঠির প্রতিলিপিতে  পাবেন। নিচের ছবিগুলো ক্লিক করুন। আশা করছি আপানাদের  অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান সর্বাঙ্গসুন্দর হয়ে উঠবে। সংক্ষেপে জানাই,১)দৃশ্যশিল্পের প্রদর্শনী এবং প্রতিযোগিতা হচ্ছে। হেমাঙ্গ বিশ্বাসের প্রতিকৃতি নির্ভর ছবি, কোলাজ বা ভাস্কর্য কর্ম বাড়িতে তৈরি করে ২০শে সকাল ১০টার আগে জমা দিলেই হলো। ২)অসমিয়াতে 'কুলখুৰাৰ চোতাল' নতুবা বাংলাতে 'শালগাছ' কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা হবে। বয়সের বাধা নেই। ৩) এছাড়া বিকেলে থাকছে আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।








শনিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৩

অনুভব তুলসীঃ অসমিয়া কবিতার অন্যতম যুবরাজ

অনুভব তুলসী
নুভব তুলসী। অসমিয়া কবিতার অন্যতম এই যুবরাজকে প্রথম দেখি আট বছর আগের একদিন আগরতলার Poetry Confluence অনুষ্ঠানে। তারপর ইটানগর, ত্রিপুরা, গুয়াহাটিতে সাহিত্য অকাদেমি, ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট্রের বিভিন্ন পোয়েটস মিট অনুভবদার সঙ্গে বন্ধুত্বকে আরও তীব্র করে তোলে। অলোকরঞ্জন যেমন লিখেছিলেন, পাখিটির মাতৃভাষা চেয়ে থাকা, তেমনি অনুভব তুলসীরও কিরাতপ্রতিভা, মিটিমিটি হাসি। অনুভবদার মোহিনী পাঠিকাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য, ওড়িয়া ভাষার কবি মানসরঞ্জন মহাপাত্র ছাড়া আর কারও কাছে নেই। কবি নীলমণি ফুকনের পর সমীর, নীলিম, নীলিমা, জীবন, লুৎফা, অনুভবদের হাতে অসমিয়া কবিতার ধারা নিরীক্ষালালিত হয়ে বাঁক নিয়েছে সৌরভ, কুশল, প্রণবদের হাতে। আখমাতোভা, হাইনে, ভাস্কো পোপা, পাজ, রিলকে, গালিব অনুবাদ করে অসমিয়া ভাষার পাঠকদের মননে অনুভব তুলসী বইয় দিয়েছেন এক দরজাখোলা নদী । গুয়াহাটি পৌঁছে নৈশ শিস দিলেই জয়ানগর বাঙ্কার থেকে অনুভবদা বেরিয়ে পড়েন তার গাড়ি নিয়ে। তারপর শুরু হয় আমাদের যৌথ নাশকতা কর্মসূচি। ২০১১তে ভারতীয় প্রতিনিধি এই ভ্রমণকামুক ঘুরে এলেন অরহান পামুকের দেশ। অনুভবদার পেরেকে রক্তাক্ত হয়ে উঠি তবে?


পেরেক
..........

সেই হিংস্র লোকগুলো
তাদের হাত ভিজিয়েছিল
যিশুর লাল, উষ্ণ
রক্তে

নিতান্ত অকারণেই
ক্রুদ্ধ জনতা
তাদের অভিশাপ ঢেলে দিয়েছিল
পেরেকগুলোর ওপর--
আর পেরেকগুলো সহ্যও করেছিল সব

লোকগুলো সম্পূর্ণ নিশ্চিত ছিল
যে ওই পেরেকগুলো নির্ঘাৎ পচে মরবে
নরকের অতল গহ্বরে

অনিঃশেষ নৈঃশব্দ্য
হিঁচড়ে টেনে এনেছিল
তিন-তিনটে কালো রাত

অবশেষে একসময়
ঘড়ি ঘোষণা করল
ভোর

রোদের প্রথম রশ্মিগুচ্ছ
প্রত্যক্ষ করল সেই
অলৌকিক ঘটনা

হঠাৎই ক্ষয়ে নিঃশেষ হয়ে গেল
শবাধারের সব ক-টি
কাঠের পাটাতন

শুধু পুনর্জন্ম হল
সেই পেরেকগুলোর...

......

-মন্দাক্রান্তা সেন অনূদিত
বৃষ্টিদিন। বইমেলা সংখ্যা। ১৪১৫

মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৩

আমাদের যে গোঁড়ায়ই গলদ !!

নেক দিন থেকেই শুনছি মেয়েরা বুঝি ঘরের বাইরে নিরাপদ নয় !! তাই মনে হল কিছু বলি । বাইরে দেখার আগে আমরা যদি একবার নিজের ঘরের মেয়েদের দিকে একবার তাকাই তাহলে নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারব আমাদের চোখের সামনেই ( যুগ , বছর , মাস নয় মাত্র দিনে একটিবার খেয়াল করি যদি ) আমাদের ঘরের মেয়েদেরকে আমরা নিজেরাই কত অন্যায় অবিচারের দিকে ঠেলে দেই ! জন্ম থেকে শুরু করে শেষ অবধি আমরা আমদের ঘরেই কত সংঘর্ষের মুখোমুখি হই!!! ইংরাজিতে একটা কথা আছে না " charity begins at home " ! তাহলে কি আমরা পারি এই ছোট্ট পরিসরে আমাদের দৈনিক দায়িত্বটুকু সামলাতে ? একবার ভেবে দেখুন ! কেবল মোমবাতি নিয়ে বাইরে লোক না দেখিয়ে আমরা যদি মনের প্রদীপ টাকে আলো করে একবার চোখ খুলে নিজের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো কত ছোট অথচ ক্ষমার অযোগ্য অন্যায় আমরা নিজেরাই করে বেড়াচ্ছি !! তাহলে কি আমরা চুপ করে থাকবো ? না । নিজের ঘরের মেয়েদের চোখের জলটাকে মিটিয়ে আমরা যদি এগোই তাহলে আমাদের প্রতিবাদী সুরটা মনে হয় আর ও তীব্রতর হবে !! আমাদের যে গোঁড়ায়ই গলদ !! গাছের জড়ই যদি ঘুণে ধরা হয় তো উপরের ডালপালা সুন্দর করে কি হবে? বাঁচাতে পারবেন সেই গাছটা ? বোধহয় না !!


 যারা এই অন্যায় করেছে তাদের এই ভুল শিক্ষার জড়টা কোথায় একবার তা ভেবে দেখা উচিত আমাদের। তারা কি কখনো তাদের স্কুল এ এই ধরণের কিছু অন্যায় করেনি ? ওই গোঁড়ায় গলদ গুলাকে তাদের অভিভাবকদের কাছে কখনো কি স্কুল থেকে ওদের শিক্ষকরা শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন? যদি ওদের পরিবার ওদের ওই ছোটবেলার দোষগুলা এড়িয়ে গিয়ে থাকেন তাহলে ওদের ওই ধরণের ব্যবহারের বিরুদ্ধে কি কোনও শিক্ষক প্রতিবাদ করেছিলেন ? আমরা কি তা জানি? কাপড়ের ফুটো যদি ছোট থাকতে না সারানো যায় তাহলে পুরো কাপড়টা ছিঁড়ে যাওয়ার পর তাতে তালি লাগিয়ে লাভ কি? গুয়াহাটিতে একটা মেয়ের সাথে মাঝ রাস্তায় এতো লোকের সামনে যা ঘটলো তাতে কি ওইসময় সেখানে উপস্থিত লোকেদের ও সমান দোষ ছিলোনা ? তারা যদি তখন একটা মেয়েকে ওই শয়তানগুলোর হাত থেকে তখনই উদ্ধার করতে না পারলেও পরে যে ওই মানুষগুলাই ওর ছবি হাতে রাস্তায় লোকদেখানো প্রতিবাদ জানায়নি তা কি আমরা বলতে পারবো? এই প্রতিবাদের কি মূল্য আছে ? দামিনীর আগেও ওর মতোই কত দামিনী নীরবে শেষ হয়ে গেছে শুধু ন্যায়ের আশায় ! মেয়েদের কি রাস্তাঘাটে ওদেরই পাড়ার ছেলেরা রোজ অপমানিত করছেনা ? ওদের স্কুলে কি ওদের কোনও সহপাঠী বাজে কথা বলে আজ ও অপমানিত করছেনা ? কয়টা স্কুল ওই নিচু মানসিকতার ছাত্রদের শুধরাবার চেষ্টা করে ? আর কয়জন অভিভাবক ওদের সন্তানদের ওই নিচু মানসিকতাকে জড় থেকে নষ্ট করে ওকে ' প্রকৃত মানুষ ' করে তুলতে দৃঢ়তার সঙ্গে চেষ্টা করেছেন ? তাহলে বলুন এসবের সৃষ্টি কোথায় ? ওই শয়তানগুলো যারা মেয়েদেরকে কেবল ধর্ষণ করার মতো ভোগ্য বস্তু মনে করে তাদের এই মনোবৃত্তি কি ওই মুহূর্তেই সৃষ্টি হয়েছিলো ? আগে কি ওদের পরিবারের কেউ ওদেরকে এভাবে চলাফেরা করতে দেখেনি ?

এরকম যে একটি ঘটনাই হয়েছে তা নয় । আজ ও আমাদের পাড়াতেও হয়তো চোখ খুলে দেখলে দেখতে পারবো এই ধরনের ঘৃণ্য মানসিকতার মানুষ ! একটা ঘৃণ্য ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমরা প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামি । আর বাকিটা সময় কি আমরা পারিনা নিজের হাতের নাগালের ভিতরে যেগুলো এই ধরনের ঘটনা ঘতে যাচ্ছে ওইটাকে তখনই নষ্ট করার ? এটাও তো দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ! প্রতিবাদের এটাও আর একটা রূপ যা আমরা ইচ্ছা করলে আমাদের ঘর থেকেই শুরু করতে পারি ! তাতে আমরা একভাবে দেশেরই উপকারের একটা মাধ্যম হতে পারবো নিজ নিজ পথে !তাই না ? এরকম অনেক লোক রয়েছেন যারা হয়তো রাস্তায় এসে প্রতিবাদ জানাতে পারছেন না অনেক কারণে ! কিন্তু তাহলে কি হাতে হাত ধরে বসে থাকবেন ? পারবেন না ওরা ওদের চোখের সামনে ( হয়তো ওদের নিজেদের ঘরেই ) যেসব অন্যায় ঘটে যাচ্ছে সেগুলো ঠিক করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে একটা বিবেকসম্পন্ন পদক্ষেপ নিতে ? ঘরের বাইরে গিয়ে যেমন আমরা নীরবতা ভেঙে প্রতিবাদ জানাচ্ছি সেভাবে আমাদের ঘরেও তো আমরা ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি !! এইভাবে শুধু আমরা আমাদের ঘরের জন্য কেবল নয় দেশের জন্য ও অনেক অবদান রেখে যেতে পারি আমাদের দায়িত্বের এই ছোট্ট পরিসরেও ! এতে পুরো দেশ একসঙ্গে আমাদের হাতের মুঠোয় না আসুক প্রতিবাদের জন্য কিন্তু এই পথে চলে আমরাও তো পারি ছোট ছোট ক্ষেত্রেও আমাদের প্রতিবাদের সুরটাকে সজাগ করে তুলতে ! যেখান থেকে এইসব ঘৃণ্য মানসিকতার সৃষ্টি তার জড়টাকে নষ্ট করা একান্ত দরকার বলে আমার মনে হয় আর তা কেবল আইনের সাহায্যেই সম্ভব নয় । দরকার গোঁড়া থেকে মানুষের মনে মেয়েদের প্রতি সম্মানবোধ জাগিয়ে তোলা আর তা আমাদের নিজেদের ঘরের ভিতর থেকেই শুরু করা উচিত । ভুল- শুদ্ধের প্রথম শিক্ষা আমরা আমাদের জন্মদাতা মা বাবার কাছ থেকেই লাভ করে থাকি । তাই বলি গোঁড়াটা মজবুত হওয়া দরকার । নাহলে ভবিষ্যতে আর ও দামিনী সৃষ্টি হতে থাকবে আর আমরা অসহায় হয়েই দাড়িয়ে দেখতে থাকবো । তাই আমাদের সংবাদ মাধ্যমের আলোর পিছনেও একবার গিয়ে দেখা উচিত যেখানে প্রতিদিনই এরকম অনেক দামিনীরা অপমানিত হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ।
প্রত্যেক সময়ই ঝড় আসার আগে একটা পূর্বাভাস দিয়েই থাকে । দরকার ওই পূর্বাভাসটাকে বুঝে গোড়াতেই ওইটাকে নষ্ট করে দেওয়া যাতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মতে আর কোনও দামিনী না সৃষ্টি হয় । দরকার ঘরে ও বাইরে দুটো ক্ষেত্রেই নিজের আত্মাকে জাগিয়ে তোলে অন্যায়কে সহ্য না করে এগিয়ে যাওয়ার । নাহলে এই ধরনের কুকর্ম কখনই থামবে না !! প্রতিবাদ কেবল রাস্তায়ই নয় প্রয়োজন প্রত্যেকটি ঘরে ঘরে তা জ্বলে উঠার যাতে মেয়েরা ঘরে ও বাইরে দুদিকেই সুরক্ষিত থাকতে পারে । একটা বাড়ি শক্ত করে বানাতে গেলে তার ভিতটা মজবুত হওয়া দরকার ! কিন্তু তা বলে কি ঘরের ছাদকে মজবুত করবো না ? নিশ্চয়ই করবো । তার জন্যই আইনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকেও দরকার একটা দিনের জন্য হলেও সমালোচনার মুখে ঠেলে দেওয়ার !!! একটিবার নিজের ঘরের মা, মেয়ে , স্ত্রী , বৌ কে জিজ্ঞেস করে দেখুন ওরা কি সত্যিই সত্যিকারের সম্মান লাভ করছে আপনার নিজেরই ঘরে ????? ভেবে দেখুন ।। নাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে হয়তো !! ২০১২ তে আমাদের বিশ্ব যখন ধ্বংস হয়ে যায়নি তাহলে আর একটি নুতন যুগের সৃষ্টির সাক্ষী হয়ে থাকি আমরা ! বা এভাবেও বলতে পারি একটা নুতন যুগ --একটা নুতন ভারতবর্ষই তাহলে সৃষ্টি করা যাক ।।