“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৩

হাতি পাঁদে পুঁ পুঁ...

।।মিফতাহ উদ্দীন।।
গেলো পনেরো তারিখ আমার আরেকটা হ্যাপি বাড্ডে গেলো। জন্মভুমি ছেষট্টিতে পা রাখলেন আর আমি তাঁর ঠিক অর্ধেকে। একটা সময় ব্যাপারটা বেশ উৎফুল্লের মনে হতো, এখন ঠিক তেমন হয় না তবে ইঞ্জিরির "ফুল" এর মত মনে হয়। ব্যস এই যা। আমার এক বন্ধু বলে আমার নাকি ট্রেঞ্জিশন চলছে, বিয়ে করেছি কিনা তাই। তবে আমি আমার এই বয়স বাড়া বা বুড়ো হওয়া নিয়ে মোটেই চিন্তিত নই। আমি আমার নিজের মাঝে কোন গেলো গেলো রব শুনতে ও পাইনা দেখতে ও পাইনা।

   
ছবি সৌজন্যঃ
        কিন্তু গোলটা বাঁধে যখন আমার সাথে সাথে অবশিষ্ট পৃথিবী টা ও তাল মিলিয়ে চলে। আর গেলো গেলো রব ফোবিয়ায় আক্রান্ত হই তখনি যখন কোন বিশিষ্ট দিন যোগ হয়ে যায় পৃথিবীর ওই তালের সাথে। সেরকমই একটা দিন গেলো গত পরশু। আমার এক খালাতো বোনের বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়ের কথা বার্তা চলছে, তারিখ ঠিক হয়ে গেছে এসব শুনে আসছিলাম, ব্যাপারটা আর বাকি সবার মত স্বাভাবিকই লাগছিলো কিন্তু যেই বিয়ে হয়ে গেলো ব্যাস ব্যাপারটা স্বাভাবিক থেকে সরে একটু অন্য রকম লাগতে লাগলো। মাকে ফোন করে বললাম “ওর বিয়ে হয়ে গেলো, যে কিনা ওই সেদিনই নতুন সেলাই করা ইউনিফর্মে নার্সারিতে যাচ্ছিল...ভাই বোনের সবার ছোটো ছিল বলে ওর আদরের ভাগটা ছিল বাকিদের থেকে বেশি, সেই এক রত্তি মেয়ে যার কিনা বিয়ে হয়ে গেলো, তোমরা বিয়ে দিয়ে দিলে?” মা, ছেলের এই অতি ইমোশনাল দীর্ঘ সংলাপে শুধুমাত্র মাত্র একটা সংক্ষিপ্ত “হুম” বলে ফোনটা আরেক খালাকে দিয়ে বিয়ে বাড়ির ঝামেলায় ব্যস্ত হয়ে গেলেন, আমি আর আমার সংলাপের পুনরাবৃত্তি না করে ছোটো খালাকে শুধু বললাম “ওদের আসলে ইঞ্জেকশন দিয়ে বয়স টা আটকে দেবার দরকার”, খালা এক পান হাসি দিয়ে বললেন, “ধুর তা কি করা যায়?” আমি আমার এই দ্বিতীয় সংলাপের ওজন টা ঠিক মাপার আগেই ব্যস্ত হয়ে যাই অফিসের কাজে। খালাকে বলি, পরে ফোন করবো।

                আর তারপর যখন অফিস নেই, ঘরে বসে, তখন আবার ভাবি এ নিয়ে। ওর বিয়ে হয়ে গেলো, নতুন ঘর, নতুন মানুষ, নতুন সংসার। নতুন এক আত্মীয়তা। দুটো পরিবারই একে অপরের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মা চলে আসবেন, চলে যাবেন বাকি খালারাও। কিছুদিন পর নতুন মুখ, নতুন খুশি, নতুন ব্যস্ততা। এভাবেই যারা যার একটা সংসার এর সৃষ্টি। নতুনের সৃষ্টির সাথে পুরোনের দূরত্ব যাবে বেড়ে।

          আশ্চর্য হই আমি, একের পর এক বিশেষ দিন এভাবেই যোগ হতে থাকে, আমার ভ্যাবাচ্যাকা সংলাপে শুধু আমিই আক্রান্ত হই। আর তারপর ভাবি কিসের হ্যাপি বাড্ডে, আসলে তো প্রতিটা মুহূর্তই একটা জন্ম আর প্রতিটা মুহূর্তই একটা মৃত্যু। সাধারণ গনিতে একটা মুহূর্তের আয়ু মাত্র এক সেকেন্ড, লক্ষ লক্ষ মুহূর্তের জন্ম হচ্ছে আর লক্ষ লক্ষ মুহূর্তের মৃত্যু। প্রতিটা মুহূর্তই মৃত্যুর জন্য জন্ম নিচ্ছে। আর আমি এই জন্ম মৃত্যুর খেলায় মাঝে মাঝেই আক্রান্ত হই গেলো গেলো ফোবিয়ায়...

মাদ্রাজ,
১৮ই আগস্ট, ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই: