“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০১৩

আপনার সাধের ডাক বাক্স থেকে ফেসবুকের আবর্জনাগুলো ঝ্যাঁটিয়ে বিদেয় করুন

                                  ।। সুশান্ত কর।।

              
মরা নিশ্চিত যে ফেসবুকের আবর্জনা যখন আপনার বৈদ্যুতিন ডাকবাক্সে ( ইমেল -ইনবক্সে) গিয়ে ভিড় করে আপনি তখন বেশ বিব্রত বোধ করেন। দরকারি ডাকগুলো খুঁজে পাওয়া ভার         হয় , যেদিকে তাকান সেদিকেই শুধুই ফেসবুক। ফলে আপনার সাধের ডাকবাক্স নিয়ে কাজ করা খুব কঠিন হয়ে যায়। এই করে বছর দুই ধরে ফেসবুক তার জনপ্রিয়তা এতো বাড়ায় যে বাকি সামাজিক সংযোগ সাইটতো বটেই, ইমেল ব্যবস্থাকেও প্রত্যাহ্বানের মুখে ফেলে দেয় ফেসবুক। নইলে ভাবুন, ফেসবুকের বয়সতো এক দশক হতে চলল, সে বাজার ধরতে পারছিল না। অরকুট, লিঙ্কড ইন ইত্যাদি সাইটের ছিল রমরমা। লোকে সেখানে বা বিভিন্ন ই-মেল গ্রুপে আড্ডা জমাতো। বাকি সময়টা দরকারি সাইট, ব্লগ দেখে বা সেখানে লিখে দিন কাটাতেন। বস্তুত ব্লগ সাহিত্যের রমরমাও ছিল সে যুগে। ফেসবুক ব্লগ সাহিত্যকেও প্রত্যাহ্বানের মুখে ফেলে দেয়। কারণ, মেইল খুললেই যখন আপনি দেখছেন ফেসবুকের বার্তা ---স্বাভাবিক ভাবেই খুলে দেখছেন সেখানে কী আছে, আর বাড়িয়ে চলছেন ফেসবুকের লক্ষকোটি ডলারের ব্যবসা। নিশ্চয়ই আপনিও লাভান্বিত হচ্ছেন , নইলে আপনি ফেসবুকে যাবেন কেন?
        কিন্তু সমস্যা হলো-- যে সে এসে জুড়ছে ফেসবুকে আপনার সঙ্গে, যেকোন গ্রুপে আপনাকে জুড়ে দেয়া হচ্ছে। যে কোন পেজ আপনাকে লাইক করতে বলা হচ্ছে। তার অনেকগুলোই আপনার পছন্দের নিশ্চয়, কিন্তু অধিকাংশকেই আপনার কাছে মনে হচ্ছে অদরকারি দূষণ বা আবর্জনা। আপনি এর থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন। বা মুক্তি আপনি পেতে চাইছেন 'ঈশানের পুঞ্জমেঘের' মতো  পছন্দের গ্রুপের ডাকবাক্সে আসা বার্তা থেকেও। আর কেন চাইবেন না, বলুন?  টিভিতে আপনি একটি ভালো ছায়াছবি দেখছেন--মাঝে যে বিরক্তিকর বাণিজ্যিক বিরতিটি আসে --কে পছন্দ করে বলুন। নতুবা ধরুন আপনি একটি পছন্দের দৈনিক কাগজের গ্রাহক। কেমন হতো যদি আপনাকে যে পত্রিকা সরবরাহ করে সে রোজ কাগজের সঙ্গে আলদা করে ঐ কাগজে প্রকাশিত সব বিজ্ঞাপনও আপনাকে দিয়ে দিয়ে যায়, বা মুখে বলে বলে যায়-- আজকের প্রধান আকর্ষণগুলো?  দৈনিক কাগজের বেলা সেরকম করে না বটে। কিন্তু করলে কী হতো, ভাবুন। ফেসবুক তাই করে। অথচ, আপনিতো ফেসবুক খুললেই আলাদা করে সেসবই দেখছেন। তবে আর ঐ ডাকবাক্সে গিয়ে হামলা কেন বাপু?
           দুনিয়া জুড়েই ফেসবুক এই হামলার বিরুদ্ধে অভিযোগের মুখে পড়েছিল। বেশ গ্রাহকও হারিয়েছিল। এবং হারাচ্ছেও।  পরে একটি বিকল্প যোগ করে যাতে এই আবর্জনার আগ্রাসন আপনি রুখতে পারেন। কিন্তু সেটিও তারাই করতে পারেন যারা একটু অগ্রণী ব্যবহারকারী এবং সমস্যার সামনে পড়লে পালিয়ে না গিয়ে যারা সুরাহা খুঁজেন। 
         আমি নিজে ফেসবুক ব্যবহার করি তার জনপ্রিয় হবার দিনগুলোর আগে থেকেই। এবং যখন থেকে ফেসবুক এই হামলাবাজিটি শুরু করে তার কিছুদিন পরেই তার আবর্জনার দুষণ থেকে মুক্তি পেয়ে গেছিলাম। আমার ডাকবাক্সে কেউ কিছু ট্যাগ না করলে ফেসবুক থেকে কিচ্ছুটি আসে না। একেবারে উপরে ছবিটি দেখুন।  ডাকবাক্স থাকে খালি। ভাবছিলাম, অন্যরাও আপনিই এই উপদ্রব থেকে মুক্তি পাবার  পথ পেয়ে যাবেন। কিন্তু প্রায়ই দেখি, অনেক বন্ধু দরকারি মেইলের জবাব দেন না, বা অনেক দিন পরে অনুরোধ করেন এই বলে "তোমার সেই মেইলটা আবার পাঠাও না, এতো এতো ফেসবুকের বার্তার ভিড়ে সেটি কোথায় তলিয়ে গেছে পাচ্ছি না।" আজ সকালে এমন এক ফোন বার্তা পেয়ে মনে হলো , না--- এবারে এই নিয়ে ঈশানে একটি পোষ্ট না দিলেই নয়। তাই চট করে এটি লিখে ফেলা।
           এমনিতে আপনার ডাক বাক্সে কারো পুরোনো মেইল খুঁজে না পেলে তারও সহজ পদ্ধতি সেখানেই আছে। উপরে একটি সার্চ বাক্স থাকে সেখানে ব্যক্তিটির নাম লিখে দিলেই মেইল আইডি সহ সেটি দেখাতে থাকে। সিলেক্ট করে এন্টার টিপে দিলেই সারিবদ্ধভাবে সেই একক ব্যক্তির সমস্ত মেইল আপনার ডাকবাক্সে দেখাবে। আমি যেমন করে আমার ডাকবাক্সের উপরে ফেসবুক লিখে সেখানকার সমস্ত বার্তা একত্রে নিয়ে এসছি, উপরের ছবিতে দেখুন।  সে নিয়ে নিতান্ত দরকার বোধ করলে পরে আলাদা লেখা যাবে, কিন্তু আপাতত আপনাদের ফেসবুক হামলা বা আগ্রাসন থেকে মুক্ত করা যাক। এটি আমার নিজের স্বার্থেও দরকার , যাতে আপনাদের কাউকে দরকারি মেইল করলে সেটি হারিয়ে না যায়, সময় মতো জবাব আসে, বা পরে জবাব দিলেও আপনাকে সমস্যার মুখে না পড়তে হয়। 
                    কী করবেন তবে? কিচ্ছু না, আপনার ফেসবুক প্রফাইলে সাইন ইন করে ঢুকে যান। উপরে বামে দেখুন তিনটি ছবি আছে। এই তিনটির একেবারে বামেরটি  সক্রিয় থেকে একটি  সংখ্যা দেখায় যদি আপনি কোনো বন্ধুত্বের অনুরোধ পেয়ে থাকেন। মাঝেরটি সক্রিয় থেকে একটি সংখ্যা দেখায় যদি আপনি কোনো ব্যক্তিগত বার্তা পেয়ে থাকেন আর শেষেরটি সক্রিয় থেকে একটি সংখ্যা দেখায় যদি আপনি অংশ নিচ্ছেন এমন কোথাও কেউ কোন মন্তব্য করেছেন, বা আপনাকে কেউ কিছু ট্যাগ করেছেন --ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলোকে ফেসবুকের ভাষাতে নোটিফিকেশন বলে। এগুলোই হচ্ছে আসল শয়তান যারা গিয়ে আপনার সাধের বৈদ্যুতিন ডাকবাক্সটির বারোটা বাজায়। এবারে আপনি ওদের বারটা বাজান। ঐ নোটিফিকেশনে একটি গ্লোবের ছবি দেখাবে। সেখানে ক্লিক করুনঃ

ক্লিক করলে যা খুলবে তার ডানে দেখুন সেটিংস লেখা আছে। তাতে ক্লিক করুনঃ

সেটিংস খুললে দেখুন, ই-মেল বিকল্প আছে। একেবারে ডানে সম্পাদনা বা এডিট বিকল্প। নিচের ছবি দেখুন। সেখানে ক্লিক করুনঃ

দেখবেন দশ মাথার দশানন হা হা হা করে হাসছে। All notifications, except the one you unsubscribed from--এই কথা গুলোর বামে একটি গোল  গণ্ডিরেখা আছে  । সেটি ক্লিক করে রাখা আছে । একটি সবুজ বাতি টিমটিম করে জ্বলছে। এই বাতিটি নেভাতে হবে। 

কিচ্ছু না। আপনি শুধু এর ঠিক নিচের গণ্ডিটিতে ক্লিক করে দিন মাউস নামিয়ে। আপনকার রাবণ বধ সম্পূর্ণ। দেখবেন ফেসবুকে কেউ আপনাকে কিছু ট্যাগ না করলে  ডাকবাক্স থেকে ফেসবুক পই পই করে বিদেয় নেবে। 



আপনি  স্বস্তির শ্বাস নেবেন এবং  স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন আপনার বৈদ্যুতিন ডাকবাক্সের ব্যবহারে। শুধু তাই নয়, ফেসবুক খুলে তখন আপনি আয়েস করে আপনার নিজের দেয়াল, বা হোম পেজ বা পছন্দের গ্রুপে ঘোরা ফেরা করুন, বাকি যত উপদ্রব আছে এরা থাকুক হাজারে হাজারে । আপনাকে এরা কেউ বিব্রত করতে পারবে না। ধীরে ধীরে এদের আপনার ফেসবুক হোম পেজেও দেখাবে না। আপনার সময় এবং শ্রমের দেদার সাশ্রয় হবে। আজ পবিত্র ঈদের দিন। আজই কাজটা করুন। আপনার ঈদ হয়ে উঠবে সুখময় আর সুন্দর।


কোন মন্তব্য নেই: