“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

গুচ্ছ কবিতা



















। ধ্রুবজ্যোতি মজুমদার ।।



 পাহাড়ে একটি দিন 
                                               

পাহাড়ী বেপথু বাঁকে সর্পিল যাত্রায়
ঝিকঝাক তালে যবে দুলছিলো চিত্তখানি
যৌবনাদীপ্ত উগ্র উন্মাদনার শিঁস
প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে ফিরে আসছিলো
বড়াইলের চূড়া ছুঁয়ে-
সর্বহারা আর্তনাদ রূপে।

হাসি আর কান্নার মধ্যে জোড় লড়াই
আমাতে অধিকার ফলানোর জোড় চেষ্টায় ব্রতী
আমি তখন দোঁহের ধরা ছোয়ার বাইরে
জন্ম-মৃত্যুর ঊর্দ্ধে;
সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে অনেক উপড়
সৃষ্টিসুখ আর ধ্বংসের সন্ধিস্থানে।।

প্রকৃতি মোহিনীর বেশে মায়াডালি নিয়ে দাঁড়ায়
আমার মন্থন শেষ না হতেই এত আয়োজন!
মনে পড়ে ঊর্বশী মেনকাদের কথা
যত সব ছলনার গাঁথা;
আধুনিক সংস্করণে ওরা আজও আছে
বিশ্বামিত্রও হয়ত কোথাও কোনও এক গোপন কোণে!!

সেই খোঁজের তন্ময়তায় বুঝতেই পারিনি-
পাশের সীটের আধুনিকা মেনকার উপস্থিতি,
সুন্দরের পূজারী কবিমন আমার- সহসাই যেনো দার্শনিক
সুন্দরতার কদাকার দিকটি উন্মোচিত হচ্ছিলো ইতিহাসের হাত ধরে,
তারই ফাঁকে একবার ভিতরের বিশ্বামিত্রের প্ররোচনায়
আড়চোখে দেখে নিলাম- আধুনিকা মেনকা পানে।

কিন্তু এ কী দেখলাম!!
চতুর্দশী আননে এক বিঢ়াট প্রশ্নচিহ্ন,
ওর এযাবৎ অর্জিত পরিসংখ্যান তালগোল পাকিয়ে,
এক আশ্চর্য্য চাহনি আমার অন্থস্থল ভেদের ব্যর্থ প্রচেষ্টায়;
মুচকি হেসে বিশ্বামিত্র আবার ধ্যানস্থ হলো,
সারাটা যাত্রাপথ জুড়ে ব্যর্থ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে মেনকা
………….. একগুচ্ছ প্রশ্ন আর সংশয় নিয়ে- নেমেছিলো মাহুর ষ্টেশনে।।
                                                                                                (২২.১১.২০১৩ ইং)
~~~০০০~~~
                আড়ালে আবডালে

ওরা আমাকে প্রভেদ বোঝায়---
ঘৃণা আর ভালোবাসার, প্রাকৃত আর ছলনার !
ওরা যারা আজকের নব-প্রজন্ম,
কেউ কেউ উপদেশ দেয় ত্যাগ আর মহানুভবতার !!

আমি আমার প্রথম ভাগের দিনগুলি স্মরণ করি
একান্ত বাধ্য ছাত্রের মতো- নেই ভুল শুদ্ধের বাছ-বিচার
নেই কোনো দ্বিরুক্তি; নিবিষ্ট চিত্তে করি শ্রবণ,
ওরা শিখিয়ে তৃপ্ত হয়,ওদের হাসি আমাকে দেয় প্রশান্তি অপার।।

ওরা শাসন ও করে – হেয় ভরে কভু বা করে উপহাস
আমার হাপড়ে পোড়া মন হাসে ওদের অজ্ঞতার উপর,
চোখ বুজে ভাবি- পরগৃহলক্ষ্মী রূপী আমার প্রেমের দেবীটিকে
“ত্যাগের” থিওরী এক্সপার্টরা কি রাখে সেই খবর ??


~~~০০০~~~


          আত্মসঙ্গী


আজ সহসা আমার আকাশ মেঘশূণ্য
সমস্ত জলকণা অকাল বর্ষণে কোথায় যেনো দিলো পাড়ি,
আমি নির্মেঘ নভোতলে দাঁড়িয়ে-
হতবাকের মতো – খুঁজিতেছি চিহ্ন তার ই।

কিন্তু এ কী!! যতসব হিজিবিজি সংখ্যা ঘুরপাক খায়-
আমার চারপাশ ঘিরে, দিন-পক্ষ-মাস-যুগের ছড়াছড়ি,
কালচক্র  ভাসে চোখে, সেকেন্ড মিনিট নয়
এ যেনো- যুগ-শতাব্দী আর জন্মান্তরের বিশাল ঘড়ি!!

দুর্জ্ঞেয় সব তত্ত্বরাশি এক অপত্য স্নেহে
ছায়াছবির মতো তুলে ধরছে-তার মর্মার্থ-মঞ্জরী,
কিংকর্তব্যবিমূঢ় আমি মোহাবিষ্টের মতো দেখলাম-
আমার এযাবৎ প্রত্যেকটি জন্ম-বৃত্তান্ত লহরী।

দেখলাম চির যাযাবর জীবন, এক বুক অফুরন্ত প্রেম,
দেখলাম তোমার উপস্থিতি,আমার জীবনগুচ্ছের প্রান্ত ধরি।
দেখলাম করুণ সব পরিণতি,
আমার নিরন্তর পরাজয়,আবার নতুন স্বপ্নের ফুলঝুড়ি।।

একসময় দৈবদৃষ্টি গেলো ছেড়ে-
অসাড় পৃথিবীতে আমার পুঞ্জীভূত হচ্ছিলো বারি,
উদ্গীরণ হতে হতে থমকে গেলো-
পরমত্তত্বের শান্তিছিটায়_ সুপ্ত আগ্নেয়গিরি।

সত্য দর্শনে সিদ্ধ হলো-অশান্ত আহত মন
তোমার ভূমিকাটা পরিষ্কার হলো,বিষাদ গেলো ছাড়ি,
বুঝলাম-অপ্রাপ্ত আছো বলেইতো চলছে জীবনচক্র,
বেঁচে আছি মোরা আত্মসঙ্গী হয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী---
…………………………… জন্ম-জন্মান্তর দিচ্ছি পাড়ি।।



                চারণভূমিতে

 "স্মৃতি' সে তো ছায়া থেকেও আপন
আঁধারেও অচ্ছেদ্য সঙ্গী,
প্রাণ যেন মুহুর্মুহু রূপান্তরিত হয়েই চলছে
কঠিন তরল আর বায়বীয়ের চক্রাবর্তে।

অশালীন সব শব্দগুচ্ছরা
প্রতিনিয়ত জন্মায়- কুণ্ডলীনির জঠরে,
তাতে সার জল যোগান দিতে
অক্লান্ত পরিশ্রম করছে সমাজ।

দায়বদ্ধতা শব্দের অর্থ জানা নেই
নিছক সময় কাটাতেই খেলি শব্দের হিজিবিজি,
আশ্চর্য্য!! প্রত্যেকটি শব্দ-বাক্যের নেপথ্যে ফুটে উঠে
সেই অনাদি নিষ্ঠুরতার- পাষাণী প্রতিবিম্ব!!

~~~০০০~~~


যান্ত্রিক চাল


লতে হয়,
বাধ্যতামূলক যান্ত্রিকচালে।
যারা আমার চলার পথে
ব্যস্ত পাথর আর কাঁটা সাজাতে;
ঈষৎ হাসির সাথে
বলতে হয় ওদেরকে ও
ভালো আছি।।

প্রত্যুত্তর প্রতিদানের ভাষা
চিরকালেই ছিলো মূল্যহীন,
গূঢ় সত্যতো শৈশবেই বুঝেছি-
ভেজা চোখ হোক অথবা হাস্যজ্জ্বল মুখ
নিজ ওজন বয়ে চলাটাই তো শেষ কথা,
তবে কেনোই বা একটি
মিথ্যে কৃত্রিম সুখদায়ী উত্তরের আশা করা ?!

এই বসুন্ধরা এখন আর
মনুষ্যত্বের বাসোপযোগী নয়,
যান্ত্রিক সভ্যতায় “প্রোগ্রামিং” এর বড্ড দাপট,
“টারগেট” এ পৌছার জন্য প্রয়োজন শুধু
উপযুক্ত “কমান্ড” ইনপুট।
বাকি সবকিছুই নেহাৎ বাড়তি ভেজাল,
সেই ধাঁচেই হয়ত বলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি
নইলে কি আর বলতে পারতাম-
“ভালো আছি” ; বেশ আছি ?!?!


~~~০০০~~~

কোন মন্তব্য নেই: