“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

রবিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৪

যান দুর্ঘটনা এড়ানোর পদ্ধতি

                                                                    ।।  সুদীপ নাথ ।।

পর্ব-১
*যান দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে পথচারীর করণীয়*
মূল কথা= শহরের ব্যস্ত রাস্তায় দুর্ঘটনা হয়না, হলেও মাঝরাতে বা ভোরে

১। রাস্তা আড়াআড়ি ভাবে পার হওয়া উচিত
২। রাস্তা কখনো কোণাকুণি ভাবে পার হতে নেই
৩। মনে রাখতে হবে, নির্জন রাস্তাই সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক
৪। একসাথে একাধিক পথচারী পাশাপাশি হাঁটা বিপদের মাত্রা বাড়িয়ে তুলে
৫। একাধিক পথচারী সামনে পিছনে হাঁটতে হয়
৬। বাঁকহীন রাস্তা পার হবার ক্ষণে প্রথমে বাঁ দিকে ও পরে ডান দিক দেখে নিয়ে, তারপর বাঁ দিকে তাকিয়ে রাস্তা আড়াআড়ি ভাবে পার হতে হয়
৭। থেমে থাকা ও চলমান গাড়ি পথচারীর দৃষ্টি মারাত্মক ভাবে ব্যহত করে, যা সব সময় মনে রাখতে হবে; এতেই সব থেকে বেশি বিপদ হয়।
৮। রাস্তায় থেমে থাকা গাড়ির ইঞ্জিন চালু থাকলে, গাড়িটাকে স্থানত্যাগ করতে দিন, তারপর রাস্তা আড়াআড়ি ভাবে পার হোন
৯। বাঁকা রাস্তা, মোড়, তেমাথা বা চৌমাথা পার হবার সময়, প্রথমে বাঁ দিকে, তারপর ডান দিকে, তারপর বাঁ দিকে তাকিয়ে রাস্তা আড়াআড়ি ভাবে পার হতে হয়
১০। ড্রাইভার আপনাকে হর্ন দিয়ে সতর্ক করবে, এই আশায় নিজের জীবনের ঝুঁকি নেবেন না
১১। যাদের ‘হঠাৎ মাথাঘোরা’ রোগ আছে,বা কিছু ওষুধ খেয়ে, রাস্তা পার হবার সময় অন্যের সাহায্য নিতে হয়
১২। বাচ্চা নিয়ে মা-বাবা একসাথে থাকতে হয়। নয়ত বাচ্চা হঠাৎ মা থেকে বাবা, বা মাবা থেকে মায়ের দিকে ছুটে যায়। আমি অনেক বাচ্চার পরিবার থেকে শুধু মাত্র এই কারণেই মৃত্যু হতে শুনেছি এবং ঘটনাস্থলেও গিয়েছি। মা রাস্তার একপাশে বাবা ও মেয়েকে দাঁড়াতে বলে রাস্তার অপর পাশে দোকানে গেলে, বাচ্চারা মাকে লক্ষ্য করে ছুটে গিয়ে কিছু কিনে দিতে চাওয়া অতি স্বাভাবিক ঘটনা। আর এমন সময়, গাড়ি এলে বাচ্চারা তাদের বাবা এবং মাকেই নিরাপদ ভেবে রাস্তার মধ্য থেকে দৌড়োতে গিয়েই গাড়ি চাপা পড়ে।
১৩। যেকোন যানবাহন আপনার দিকে এগিয়ে আসতে থাকলে, যদি আপনার কোন পাশে, গাড়ি চলে যাবার পরিমান মত যায়গা থাকে, তাহলে আপনি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন। গাড়ি চালক তাঁর সুবিধা মত বেরিয়ে যাবে। একবার বাঁ দিকে, একবার ডান দিকে চলার দেহভঙ্গি, গাড়ি চালককে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয় এবং বিভ্রান্ত হয়ে আপনার উপরেই এসে পড়ার সম্ভাবনা, এভাবে আপনিই তৈরি করে দিতে পারেন।

 পর্ব-২
*সন্তানের যান দুর্ঘটনা এড়াতে পিতা-মাতার কর্তব্য*
  
যখন ছেলেমেয়েরা ঘর থেকে বেরোয়, তখন কোন্ মা-বাবা বলেন না যে, সাবধানে রাস্তায় চলবি। কিন্তু কি কি সাবধানতা তাদের নিতে হবে কখনো শিখিয়ে দেন কেউ। আমাদের  ছেলেমেয়েরা নিজের বুদ্ধিতেই পথ  চলতে শুরু করে, আর উদ্বেগে ঘরে ছটফট করেন মা-বাবারা।

আমাদের সন্তান নিজে থেকেই রাস্তায় চলার অভ্যাস ও নিয়ম রপ্ত করে নেবে, এমনটা আমাদের আশা করা অনুচিত। যথা সম্ভব অল্প বয়স থেকেই তাকে রাস্তার দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা উচিত। আমাদের সন্তানের স্কুলে পার্কে খেলার মাঠে আত্মীয় বন্ধুদের বাড়িতে বা দোকানে যাওয়ার পথে, যে সমস্ত বাধা বিপত্তি রয়েছে, তা আগে থেকেই বিশ্লেষণ করে বোঝাতে হবে।

এখানে কেবল কথা বললে, ব্যাখ্যা করলে ও তথ্য জোগালেই কোন কাজ হবেনা। এমন কি সবচেয়ে বোধগম্য তথ্য আর বিপদ আলোচনাও প্রয়োজনীয় ফল দেয়না।

দুর্ঘটনা এড়ানো তখনই একমাত্র সম্ভব, যখন পর্যবেক্ষণ ও চলাফেরার অভ্যাস স্বয়ংক্রিয়তা অর্জন করে। আর তা সম্ভব হয় একমাত্র নিরবিচ্ছিন্ন অনুশীলনের মাধ্যমেই। এইরূপ অনুশীলন বহুবার পুনরাবৃত্তি করা আবশ্যিক।

লুকনো বিপদ অনুমান করার অক্ষমতাঃ- আমরা অনেক সময় রাস্তার মাঝখানে চলে যাই, সামনের দৃশ্য আড়াল করে থাকা গাড়ি বা অন্য কিছুর পেছন থেকে। অদৃশ্য জায়গাটাকে বলা হয় ব্ল্যাক পয়েন্ট। এই কারনেই প্রায় এক তৃতীয়াংশ  দুর্ঘটনা ঘটে।

এই যে সামনের দৃশ্য আড়াল করে থাকা,কোন কিছুর পেছন থেকে হঠাৎ চলে যাওয়া,সেই অভ্যাসটি কিন্তু গড়ে উঠে সবার অলক্ষে, একেবারে ছোটবেলা থেকেই।

ছোটবেলায় আমরা বাড়িতে, দরজার পেছন থেকে, আলমারি আসবাব পত্রের পেছন থেকে, নিশ্চিন্ত মনে ছুটে বের হই। তখন এমন কিছুই ঘটেনা। এই ভাবেই আমাদের মনে গড়ে উঠে বাজে একটি নেতিবাচক অভ্যাস। এই অভ্যাস দিনে দিনে শর্তাধীন পরাবর্তের সহায়তায়, বদভ্যাসে পরিনত হয়। এই নেতিবাচক তথা বদ অভ্যাসটি নিয়েই আমাদের ছেলেমেয়েরা পথচারী হিসেবে চলতে শুরু করে গ্রাম-শহরের নির্জন ও ব্যস্ত রাস্তায় আর হাইওয়েতে। রাস্তায় যে গারিটা এগিয়ে আসছে, সেটা তত বিপদজনক  নয়, যতটা বিপদজনক সেই থেমে থাকা গাড়িটা, যা এগিয়ে আসা গাড়ীটাকে আড়াল করে রাখে। শুধুমাত্র থেমেথাকা গারিই নয়, চলন্ত গাড়িও ব্ল্যাক পয়েন্ট সৃষ্টি করে বিপদ ঘটায়।

অনুরূপ পরিস্থিতিকে একটা নির্দিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাক্টরের দ্বারা সূত্রায়িত করা যায়। আর তা হচ্ছে, “ পথচারী লুকানো বিপদটি আগে থেকে আঁচ পড়তে পারেনি”।

উল্লেখযোগ্য যে, অনেকেই মনে করেন, শিশুরা গাড়ী চাপা পড়ে এই জন্য যে, রাস্তায় তারা অমনোযোগী, অবাধ্য ও নিয়ম শৃঙ্খলার প্রতি উদাসীন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটি তা নয়। আসল কারণ হচ্ছে, তারা তালিম পায়নি, তাদেরকে সতর্কতা গুলো শেখানো হয়নি।
আর, আগে থেকেই আনুমান করার ক্ষমতা অর্জনের মধ্যেই আছে টিপিক্যাল পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা এড়ানোর চাবিকাঠি।

পর্ব-৩
*সতর্কতার আদৌ কোন প্রয়োজন আছে কি ?*
মনে রাখবেন অপ্রত্যাশিত কারণে খুব কম সংখ্যক দুর্ঘটনাই ঘটে। প্রায় সমস্ত দুর্ঘটনাই ঘটে কতগুলি সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে। এই সমস্ত দুর্ঘটনা গুলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, দুর্ঘটনা গুলো এড়ানো যেতো। আর তার থেকেই আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, প্রায় সমস্ত দুর্ঘটনাই এড়ানো যায়।
অনেকে মনে করেন যে, ট্র্যাফিক রুল মেনে চললেই সব সময় বিপদমুক্ত থাকা যায়। এটা সঠিক নয় এই কারণে যে, এটা আশা করা উচিত নয় যে, গাড়ি চালকেরা ট্র্যাফিক রুলে ভাঙ্গবে না। আপনার সতর্কতা, আপনারই জীবন বাঁচানোর স্বার্থে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, ট্র্যাফিক পয়েন্টে দুর্ঘটনা হয়না বললেই চলে।
রাস্তার অন্য একটি বিশেষ বিপদজনক পরিস্থিতি হচ্ছে নির্জন রাস্তা। এখানে একটি বিশেষ মনস্তাত্ত্বিক কারণ কার্যকরী থাকে। এখানে মন থেকে সতর্কতা মুছে গিয়ে, কল্পিত নিরাপদ অনুভুতির সৃষ্টি হয়। নির্জন রাস্তা লোকে পার হয় কোণাকুণি ভাবে এবং কোন দিকে না তাকিয়ে। অনেক সময় দুজনে কথা বলতে বলতে হাঁটে রাস্তার মাঝ বরাবর। আর বাচ্চারা খেলতে খেলতে রাস্তার মাঝখানে চলে আসে। আর গাড়িগুলো কত গতিতে চলে আর কিসব মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটায় তা সবারই জানা।
এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হয় যে, রাস্তায় সম্ভাব্য বিপদের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই সমস্ত বিপদ, দেখা দিচ্ছে প্রকৃতি থেকে নয়, আমাদের নিজেদের ক্রিয়াকলাপ থেকেই। এই সব বিপদ বহুবিচিত্র ও খুবই দ্রুত পরিবর্তনশীল। পরিস্থিতি পরিবর্তনের ফলে, সময়ে সময়ে কিছু কিছু বিপদের কারণ অবলুপ্ত হয়ে যায়,  আর নতুন ধরণের বিপদের আবির্ভাব ঘটে। কতগুলি সমস্যার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায়। বিপদের কারণ পরিবর্তিত হয়, যানবাহনের যান্ত্রিক ও আকার- আকৃতিগত বিকাশ তথা পরিবর্তনের সঙ্গে, রাস্তাঘাটের উন্নতি বা অবনতির সঙ্গে।
বৈজ্ঞানিক তথা প্রযুক্তিগত বিপ্লবের যুগে, আমাদের মত আধুনিক মানুষের অর্জন করতে হবে, পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে গতিক বুঝে চলার দক্ষতা, প্রতিক্রিয়ার দ্রুততা (to promptly react) এবং পরিস্থিতির সঙ্গে  নিজেকে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা।
একটা কথা যতই অদ্ভুত শোনাক না কেন, আপনি যখন পথচারী, তখন কোন চালকের শুভবুদ্ধি বা আগত যানবাহনের ত্রুটিহীনতার উপর বিশ্বাস আপনার বিপদ ডেকে আনতে পারে। সেই ভাবেই আপনার মন তৈরি রাখুন। রাস্তার মুহুরমুহু পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে চলতে হলে, পূর্বানুমানের কৌশলটি আয়ত্ব করা ছাড়া বিকল্প কোন কিছুই নেই। তা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

পর্ব-৪
*আমরা যখন যানবাহনে চড়ি*
মূল কথা= মাথা বাঁচাতে পারলেই প্রায় সব মৃত্যু ঠেকানো যায়
 
আমাদের শিশুর জীবনের  নিরাপত্তার স্বার্থে, নিজেদের বা সঙ্গী-সাথীদের, স্বার্থে আমরা দুচাকা, তিনচাকা, চার চাকা, যে যানবাহনেরই আরোহী হই না কেন, আমাদের করনীয় অনেক কিছুই থাকে। কারণ, ২০০৫ সালে ভারতে, এক লক্ষ দশ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, পঁচিশ লক্ষ মানুষ হাসপাতালে গেছে এবং বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০১৫ সালে দুই লক্ষ মানুষের মৃত্যু হবে ও পঁয়ত্রিশ লক্ষ মানুষ হাসপাতালে যাবে।
একথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, প্রায় সব যাত্রীকেই চলমান যানবাহনে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকতেই দেখা যায়। অনেকেই চলন্ত গাড়িতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সময় কাটান। আর চালকের অসভ্যতা, যেমন রেষারেষি, মোবাইলে কথা বলা এসব দেখলে দুয়েকজন সাহসী যাত্রী হয়ত প্রতিবাদ করেন সময়ে সময়ে, কিন্তু সহযাত্রীদের সহায়তা তেমন একটা পান না বললেই চলে। যাইহোক, চলুন এই উদাসীনতা কিভাবে আমাদের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, মানে বিপদের দিকে নিয়ে যেতে পারে, তা খতিয়ে দেখা যাক।
দুর্ঘটনায়, যাত্রীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ কিন্তু মাথায় আঘাত লাগা।  মাথা ছাড়া শরীরের অন্য কোন অঙ্গে আঘাত লাগলে মৃত্যু হয়না, যদিও অল্প সংখ্যক মারাত্মক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বেশি রক্তপাত বা দেরিতে চিকিৎসার কারণেই মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।
তাছাড়া, মাথায় আঘাত থেকে বহুবিচিত্র স্থায়ী অস্থায়ী গুরুতর মানসিক ও স্নায়বিক রোগ দেখা দেয়। এই ধরণের কত  রোগী যে, পরিবার সহ পথে বসে যায়, কে তার খোঁজ রাখে। এসবের আমরা খোঁজ পাইনা কারণ, তারা জীবন্মৃত হয়েই থাকে, থাকে সাধারণের দৃষ্টির বাইরে। মিডিয়া দুর্ঘটনার খবর ছেপে দিয়ে, সরকারকে দোষারোপ করেই, বিষয়টা থেকে দূরে চলে যায়। আমরা কেউ পেছনের দিকে তাকাই না।
অথচ আমরা একটু সতর্ক হলে, সব না হলেও, প্রায় সব ক্ষেত্রেই অন্তত মাথাটা বাঁচাতে পারি। চলন্ত গাড়িতে, উদাসীন না থেকে, যে গাড়িতে আছি ও যেসব গাড়ি এগিয়ে আসছে, সেগুলোর গতি-প্রকৃতির উপর অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ও সজাগ দৃষ্টি রাখতে পারি, যেন অন্তত মাথাটা বাঁচানোর চেষ্টা করতে কয়েক সেকেন্ড সময় পাই। মনে রাখতে হবে, মাথায় অল্প-স্বল্প আঘাতেও ভিতরে রক্ত ক্ষরণ হয়ে মৃত্যু হতে পারে, যাকে ইংরাজিতে বলে ইনটারনেল হেমারেজ হয়ে মৃত্যু।
চলন্ত গাড়িতে সবসময় সীট বেল্ট বাধতে হয়। মোটর সাইকেলে শুধু চালকই নয়, সবাইকেই হেলমেট পরতে হবে। যারা লজ্জায় এসব মানবেনা, তাদের মনকে তৈরি রাখতে হবে, দুঃখ জয় করে রাখতে হবে। তাহলে, নিজের শিশুকে হা্রালেও কোন অসুবিধা হবেনা। আর যারা লজ্জাকে জয় করতে পারবেন, তারা গাড়িতেও হেলমেট পরবেন। এটা মোটেই হাসি ঠাট্টার কথা নয়, এটা আমাদের মত লক্ষ লক্ষ মানুষ ও শিশুর জীবন মরণের প্রশ্ন। আমরা না হয় মরতে রাজি, কিন্তু শিশুরা কী দোষ করেছে? ওরা কেন বড়দের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় তাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার পুতুল হয়ে থাকবে। আমাদের কোন অধিকার নেই তাদেরকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেবার। ছোট বেলায়, যাদবপুরে রাস্তায় একটা ছবি সহ কার্টুন দেখেছিলাম, যাতে বাবার পেছনে বসা হেলমেট ছাড়া বাচ্চাটা বলছেঃ- “বাবার মাথার দাম আছে, আমার মাথার নেই”।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, ৭/৮ বছর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভারত সরকারকে গাড়িতে হেলমেট পরার জন্য সাহায্যের হাত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তা কতদূর এগিয়েছে জানা যায়নি। এদিকে, মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আর নেতাবাবুরা, আমলারা যার যার ঘর গোছানোর ব্যস্ততায়, নামকে ওয়াস্তে দায়সারা দুঃখ প্রকাশ, প্রতীকী সভা করে, উপদেশ ও নির্দেশ দিয়ে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করে দিব্যি পার পেয়ে যাচ্ছেন।

পর্ব-৫
*যান দুর্ঘটনা এড়াতে চালকের করণীয়*

১। আমরা যত ভাল চালকই হই না কেন, মনে রাখতে হয়, বিপরীত দিক থেকে যেসব গাড়ি আসছে, সেই চালকের উপর, আমাদের কোন নিয়ন্ত্রন নেই
২। আমরা যদি চাকুরিরত চালক হই তাহলে, আমাদের গাড়ির মালিক যতই চাপাচাপি করুক না কেন, আমরা কোন পরিস্থিতিতেই গাড়িতে ত্রুটি থাকলে, তা সারাই না করে গাড়ি চালাবো না।
৩। আমরা যেন কোন পরিস্থিতিতেই ভাগ্যের দোহাই দিয়ে গাড়ি না চালাই।
৪। কোন পরিস্থিতিতেই, যেমন “হয়তোবা সামনের বিপদজনক যায়গাটা কোনরকম পেরিয়ে যাব” ভেবে, নিজের ও আরোহীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলব না।
৫। মারাত্মক দুর্ঘটনা চালক জীবনে একবারই ঘটায়। কিন্তু এখনও যারা মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটায়নি, সেইসমস্ত সব চালকরাই ভাবে, “কোনদিন তো দুর্ঘটনা ঘটল না, আমি তো ওস্তাদ, আমার কিছুই হবেনা”। এই ভাবনা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবো।
৬। মনে রাখতে হয়, সামনের অজানা পরিস্থিতি আর গাড়ির ইঞ্জিন,  আমাদের ইচ্ছাধীন নয়, এবং তা আমাদের  বিপদ-আপদের তোয়াক্কা করেনা।
৭। আমাদের নিজের জন্য, আমাদের সন্তান আর পরিবারের জন্যই আমরা গাড়ি চালাই।
৮। গাড়িতে ঝালর, ফটো, পর্দা, খেলনা ইত্যাদি লাগিয়ে, নিজের এবং আরোহীদের দৃশ্যমানতা কোনভাবেই কমানো উচিত নয়। চালক ও আরোহীরা যেন সামনে, পিছনে, ডানদিকে ও বাঁদিকে, বাইরের সবকিছু ভাল ভাবে দেখতে পায় তা সুনিশ্চিত রাখতে হয়।
৯। বাইরের দৃশ্যমানতা কমানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইন কঠোর ভাবে পালন করতে হবে।
১০।। বিপরীত দিক থেকে যে গাড়ি গুলো আসছে, তার কোনও চালক যেসব বিষয়ে জড়িত থাকতে পারেঃ-
ক) সে হয়তো কুসংস্কার বসে, ফাঁড়া কাটাতে মাদুলি, রত্ন ধারন করে নিশ্চিন্তে এক্সেলেটার চাপতে দুঃসাহসী
খ) তার হয়তবা কোনদিন দুর্ঘটনা ঘটেনি, তাই নিজেকে মাত্রাতিরিক্ত সাহসী মনে করে
গ) তার হয়তবা বিশেষ কোনও ওষুধ খেতে হয়েছে, যা খেয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী যান চালনা নিষিদ্ধ
ঘ) তার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোথাও হয়ত যেতে হবে, যেমন- হাসপাতাল, ইন্টারভিউ, পরীক্ষা কেন্দ্র
ঙ) সে হয়ত মদ খেয়ে মাত্রাতিরিক্ত কর্তব্য বোধহীন
চ) সে হয়ত বাড়ি থেকে ঝগড়া করে বেরিয়েছে
ছ) তার সন্তান,স্ত্রী বা আপনজন হয়ত গুরুতর অসুস্থ
জ) তার গাড়িতে হয়ত কোন রোগী, অপরাধী বা বিপদজনক বস্তু আছে
ঝ) সে হয়ত আরোহীর সাথে গল্পে মগ্ন
ঞ) সে মদ খেয়ে হয়তবা দ্বিধাগ্রস্ত তথা কিংকর্তব্যবিমুর
ট) তার হয়ত আরেকটা ট্রীপ ধরতে হবে
ঠ) সে হয়ত অসুস্থ
ড) সে হয়ত ক্ষীণদৃষ্টির রোগী বা তার শ্রবণ শক্তি কম
ঢ) সে হয়ত মদ খেয়ে হাত পা টলমল অবস্থায় আছে
ণ) সে মদ হয়ত খেয়ে মাত্রাতিরিক্ত সাহসী বোধে আচ্ছন্ন

কোন মন্তব্য নেই: