“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

অশোক বিজয় রাহার দু'টি কবিতা



(C)মিলন সাগর

(কবি অশোকবিজয় রাহার - জন্ম এখনকার বাংলাদেশের সিলেটের ঢাকা দক্ষিণ গ্রামে ।  ছাত্রাবস্থা থেকেই তাঁর কবিতা লেখা শুরু । সাহিত্যের প্রতি টানের ফলে কলেজে দর্শনের অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৭ সালে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক হন । তাঁর শৈশব কাটে সিলেট কাছাড়ের বিভিন্ন জায়গাতে। শিক্ষাজীবন শেষে করিমগঞ্জ কলেজে বেশ কিছুদিন অধ্যাপনা করেন। নবগঠিত ভারতীয় গণনাট্য সংস্থাতে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের সহকর্মী হয়েও কাজ করেছিলেন কিছুদিন। ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত কবি বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনা করেন । তাঁর প্রথম দু'টি কাব্যগ্রন্থ “ডিহাং নদীর বাঁকে” এবং “রুদ্রবসন্ত” সিলেট থেকেই প্রকাশিত হয় ১৯৪১ সালে । তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে।, “ভানুমতীর মাঠ” (১৯৪২), “জলডম্বরু পাহাড়” (১৯৪৫), “রক্তসন্ধ্যা” (১৯৪৫) । বিশ্বভারতীর সঙ্গে যুক্ত হবার  পর প্রকাশিত হয়  “উড়োচিঠির ঝাঁক” (১৯৫১), “যেথা এই চৈত্রের শালবন”,  “ঘন্টা বাজে! পর্দা সরে যায়” এবং “পৌষ ফসল” । তাঁর কবিতা চিত্রবহুল । নদী, পাহাড়, অরণ্যের প্রকৃতি শুধু তাঁর কবিতার পরিবেশমাত্র নয়, তাঁর কেন্দ্রভূমি । স্বল্পবাক, বর্ণাঢ্য চিত্র তাঁর কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট ।

       সজনিকান্ত দাসের শনিবারের চিঠিতে তাঁর ভানুমতীর মাঠ কাব্যগ্রন্থের ভূয়সী প্রসংশা করা হয় । রবীন্দ্রনাথ তাঁকে তরুণ চাঁদ বলে অভিহিত করে লিখেছিলেনঃ"আকাশের চেয়ে আলোক বড়,/মাগিল যবে তরুণ চাঁদ/রবির কর শীতল হয়ে/করিল তারে আশির্বাদ ।" (সৌজন্য মিলন সাগর)। ইংরেজি, ফরাসি ও স্পেনীয় ভাষাতে তাঁর বহু কবিতা অনুদিত হয়েছে।  লীলা রায় তাঁর কবিতার ইংরেজি অনুবাদে ছাপিয়েছিলেন Enchanted Tree নামে । আমরা তাঁর সিলেট যুগের বই
“রুদ্রবসন্ত” কাব্যগ্রন্থের এই কবিতা দুটি এখানে তুলে দিলাম। )



একটি সন্ধ্যা
    
বেতারে কার সেতার বাজে, বাংলা খবর শেষ,
শুনে শুনে পথ দিয়ে যাই, মনে সুরের রেশ,
মফস্বলের শহরতলি খানিকটা বন –ঘেঁষা,
ঝোপে ঝাড়ে সন্ধ্যা নামে বুনো গন্ধে মেশা,
বাঁকের মোড়েই হঠাৎ আসে রাঙা মাটির টিলা
ওর পিছনে উঁকি মারে পাহাড়টা একশিলা,
শেয়াল-ডাকা রাত্রি আসে যেই আসি ওর কাছে,
বাদুরগুলো ঝাপটা মারে কাক-ডুমুরের গাছে,
মাথার উপর ডাকল পেঁচা, চমকে উঠি—আরে!
আধখানা চাঁদ আটকে আছে টেলিগ্রাফের তারে!

~~~~০০০~~~~

শীত-রাত

         

গ্রাম-বুড়ী কাঁথামুড়ি খড়ের ধোঁয়ায়
নাক ডেকে ঘাড় গুঁজে বেজায় ঘুমায়,
পথঘাট ঘুমে কাঠ, কোথা নেই সাড়া,


এক পায়ে ঘুম যায় গাছপালা খাড়া,
ঝোপে ঝোপে শেয়ালেরা সব চুপচাপ,
শিশিরের ফোঁটাগুলি ঝরে টুপটাপ,
ইঁদুরের বাদুড়ের নেই খুট্খাট,
একধারে শুয়ে আছে ধান-কাটা মাঠ।

বটগাছে কেঁদে ওঠে শকুনের ছা
জেগে উঠে পাখসাট মারে তার মা,
একা একা কুয়াশায় এই শীত-রাতে
কানা চাঁদ ভাঙা এক লণ্ঠন হাতে
আদম পুরের দিকে চালিয়েছে পা।
 ~~~~০০০~~~~

কোন মন্তব্য নেই: