“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ইকো মুহূর্তেরা

          ইয়ুথ বেলার সোনালি ইতিহাস, গড়ে ওঠে অবুঝ ক্ষণের হাসি-কান্না, হারানো- প্রাপ্তির অর্থহীন কথামালা, বন্ধুত্বের গুনগুন, প্রেমের কবিতা , এলোমেলো সকাল, কর্মহীন ব্যস্ত দুপুর , অশান্ত বিকেল, নির্ঘুম রাতের সাত রঙের মাখামাখিতে। আমার ইয়ুথবেলা জুড়ে রয়েছে, অসামান্য কিছু ইকো মুহূর্তেরা। “ইকো মুহূর্ত” মানে, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তু ও পরিবেশ ( ইকোলজি এন্ড এনভারনমেন্ট) বিভাগে কাটানো সেই বিশেষ মুহূর্তেরা, যা আজীবন চলার পথে জুগিয়ে যাবে বেঁচে থাকার রসদ। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা, সহযোগিতা জীবনের সম্বল। সিমি, বিজিতা, দীপশিখা, জয়া, পল্লবী, স্বপ্না, সোমা, ইভা, মেবা, ভিক্টোরিয়া, বাবন, স্বর্ণা, ইবেতম্বি,বিদ্যা, জতিনা, গারলেন্ড, সমরেশ, আশুতোষ আর সহিদুলরা আজও হু-হু করে ছুটে আসে মনের ব্যালকনির সীমাহীন নিস্তব্ধতায়। ঘুম ঘুম সিমি, চঞ্চল বিজিতা, চিন্তিত দীপশিখা, শান্ত জয়া, প্রেম প্রেম পল্লবী, গম্ভীর স্বপ্না, ব্যস্ত সোমা,  কেতাদুরস্ত ইভা-মেবা-ভিক্টোরিয়া-বাবন,  উচ্ছল স্বর্ণা-ইবেতম্বি, ইন্টেলিজেন্ট বিদ্যা- জতিনা, ফটোপ্রিয় কিরণ দি, নিস্তব্ধ সতীশ দা, অবাক বনিতা দি, সিনিয়র কঙ্কনা দি- হাফসা দি, গায়ক গারলেন্ড, স্বভাবপ্রেমিক সহিদুল, লেখক সমরেশ ও ব্যাখ্যাকার আশুতোষ সবাই নিজ নিজ চারিত্রিক বিশেষত্ব নিয়ে হয়ে ওঠে এক রামধনু, দিগন্তের ক্যানভাসে।

              
                 এদের সাথে কাটানো সময়, ফ্রেশার পার্টির উন্মাদনা, শিক্ষক দিবসের  উদ্দীপনা,  পিরিয়ড শেষের ঘণ্টী, প্রাক্টিক্যাল ক্লাসের দাপাদাপি, শৈবাল খুঁজে আনার ফাঁকে সবুজ ঘাসের চাদরে মুহূর্তের বিরতি, জলজ উদ্ভিদ তুলে আনতে গিয়ে গাছ  থেকে কুল  পেড়ে অথবা লাইকেন ক্লাসের সুযোগে জামরুল পেড়ে এনে নুন লঙ্কা সহযোগে জলযোগ, ধান ক্ষেতের একহাঁটু কাঁদায় পোকার পেছনে ছুটে বেড়ানো, বাঁশ বনে টিলার উপর থেকে সমতলে গড়িয়ে পড়া, একাশিয়া বনে পিঁপড়ের কামড়, ইকোফরেস্টের ঝর্ণাতলায় গানের আসর, চা বাগানের মুখরতা ঘিরে রয়েছে বন্ধুত্বের ইতিবৃত্ত, অনেক বলা-না বলা কাহিনি। আজ যখন ইকোলজি  বিভাগের সীমা পেরিয়ে বেরিয়ে পড়ছি প্রকৃতির নিজস্ব বাস্তবিক জগতে, যা এতদিন শিখেছি , সেই সব মনে রেখে প্রয়োগ করার সময় এখন, এই মুহূর্তে সব শিক্ষক শিক্ষিকা, সহপাঠীদের বিদায় জানিয়ে বলে উঠি, “দেখা হোক আবার কবিতার দেশে”।
                              

কোন মন্তব্য নেই: