“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৪

রোমন্থন

(C)Image:ছবি


















II শমীক চৌধুরী II



তুমি ভুল বুঝলেই
 নিশ্বাস ভারী হয় 
শত চেষ্টায় ঘুচেছে 
বোঝাবার আশ 
দুর্মুখ মুখপোড়া
 ছাইপাশ গিলছে 
অসংলগ্ন কম্পিত পদক্ষেপ 
নর্দমার কালোপানিতে 
সজ্জিত অবয়ব 

কপালে অঙ্কিত বলিরেখা
 ব্যস্ত রোমন্থনে 
রঙিন স্বপ্নে ছেড়েছি ঘর 
রাতের আঁধারে -
অবৈধ্য বাসর
ফেলে যাবো কোথা
অকুলে মৃত যে আমি 
তবু জীবন অবাধ 

বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৪

শীতোষ্ণ

(C)Image:ছবি










।। দেবলীনা সেনগুপ্ত।।

শীতমেলায় ঘুরতে ঘুরতে
বাইশ নম্বর স্টলে এসে
থম্‌কে থেমে গিয়েছিল নজর-
ময়ূরপঙ্খী রেশমী শাড়িতে
দোল খাচ্ছিল শীতের নরম রোদ
পাশেই ভ্রমরকালো পশ্‌মিনা চাদর
যেন মানিকজোড়
আহ! এই শাড়িটার সঙ্গে ঐ চাদরটা
আর ওই চাদরের সঙ্গে এই শাড়িটা
যা মানাবে না...
ঠিক তোমার - আমার যুগল জীবনের মত
এক বিহনে অন্য বৃথা।
কিন্তু মাসান্তে
আমার হাতব্যাগ...তোমার বুকপকেট
দুই-ই পূর্ণ শুধু স্বপ্নময় শূন্যতায়
তা দিয়ে আকাশকুসুমের মালা গাঁথা যায়
কিন্তু রেশমী পশমকে বশে আনা
তার কম্ম নয়...
সুতরাং,
হাত ধরাধরি করে গন্তব্য বদলে নেওয়া-
চোখ ইশারায়

আর ঠিক তখনই
ভালোবাসা নরম রেশমের মত
পশমী চাদর হয়ে জড়িয়ে যায়
আবেশময় উষ্ণতায়-
নক্‌শি-কাঁথা হয়ে ওম্‌ ছড়ায়
ইহকালের জীবন থেকে
পরকালের মৌনতায়...।

মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৪

কথা ছিল

               






















 ।। সৌম্য শর্মা।।



থা ছিলো _
দিনে, আলোয় মেখে
খাবার নেবো,  ছুটোছুটি করে বেড়াবো
প্রকৃতির কোলে মাথা রেখে ঘুমোবো  আমরা

কথা ছিলো __
রাতে চাঁদের আলোয়
হবে  সুরের অবগাহন,
কলপনায় ছবি আঁকা  করবো

গোলাঘরে
তোলা থাকবে  'প্রয়োজন'
চারপাশে
ফুল থাকবে, ছবি থাকবে
সুর থাকবে, থাকবে প্রেম  ;

কেউ কথা রাখেনি… …

এখন, দিনে শরীর বিকরি করা
রাতে, গভীর আতংক
আনবিক ধোঁয়ায়,
পরষ্পর  ধমকানি
তবু ___ বেঁচে থাকি আমরা……

গোলাঘরে
তোলা আছে, 'ধংসের বীজ '
চারপাশে
ওৎ  পাতা থাবা
যার হুমকিতে,  উড়ে  গেছে  ' প্রজাপতি '  !!!



চিঠি


(C)Image:ছবি






















।। সৌম্য শর্মা ।।

কেমন আছো, নাজনীন?
তোমার শেষ চিঠি পেয়েছি
তা আজ  অনেকদিন!
ভেবেছিলাম, বুড়িয়ে গেছো
হাতের লিখা তো এখনও স্পষ্ট
ঝক্ঝক্, সুন্দর,  অমলীন!

আমার কথা? আর বলো না
বেঁচে আছি, এই আর কি!
শরীরে গভীর  ক্ষতো
বিষাক্ত  হাওয়ায় শ্বাস নিতে পারি না ;
হৃদয়ের  গোপন ক্ষত থেকে,
এখনও  স্মৃতির রক্ত বেরোয় ৷

কাগজ নিয়েও বসি না আজকাল
কতো কী যে ছাপা হয়!
চুরি, ছিনতাই,  সন্ত্রাস, দলবদল
ভালো লাগার কথা নয় নিশ্চয় ?
কোথাও যেন কান্নার শব্দ পাচ্ছি!
দাঁড়াও, দেখে আসছি……

এক পূর্ণ যুবতী, স্বপ্ন ভেঙ্গে
আত্মহত্যা  করেছে!
এইতো সেদিন,
পাশের বাড়ির বউটা, মারা গেলো
না না অসুখে নয়, পণ দেয় নি _ তাই!

কদিন আগে, পার্টি বোমায়
পাঁচটি লাশ পরে গেলো পাড়ায়
সতেজ তরুণ সবাই…
ওদের আত্মার  পোড়া গন্ধও
যেন আমরা কেউ পাই নাই !!

তাপনিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে,
নিশ্চিন্তে কফির কাপে চুমুক দিই…
পেয়ালায় তুফান তুলি, চোখ তোলে দেখি
বিজ্ঞাপিত  রমণীর উদোম নাভি !!

দিনের পর দিন, ঋণের বোঝা বেড়ে যায়
কতো সব চিন্তায়, মাথা নত হয়……

যা হোক, তোমার কথা বলো
তোমার সুখী সংসার, ছেলে- মেয়ে
কতো বড় হ লো?

জানো, তোমার লাগানো ফুল গাছটা
বেঁচে গেছে, গোলাপের ঐ চারাটাও
ক্যাকটাস ও রেখেছি কয়েকটা
তাতেও ফুল ফোটবে দেখো!

আজ সকাল থেকেই দিনটা কেমন যেন
মাথাটা ধরেছে খুব, জ্বর আসে ঘন ঘন,
পুরোনো কাশি টা ছাড়েনি  এখনো
আর, লিখছি না,
লক্ষীটি, রাগ করো না
আমাকে লিখো কিন্তু……

সবকিছু এখানে ভালো হয়ে উঠুক,
তখন নাহয়, লিখবো… …
চিন্তা করোনা, শীঘ্রই ভালো হয়ে উঠবো !!


জলছবি




(C)Image:ছবি






























 ।। সৌম্য শর্মা ।।



( ক)

কিছু কথা      কিছু  সুর
       একটি  গান  !!

( খ)

কিছু  মাটি      কিছু  গাছ
        একটি  বাগান  !!

( গ)

কয়েকটি বছর   কয়েকটি  ঘটনা
        একটি  জীবন  !!

( ঘ)

এক টুকরো সূর্য   এক ফালি  চাঁদ
        অফুরন্ত  আলো  !!

( ঙ)

এক জোড়া মিথুন   একটি  শিশু
         ধন্য  জীবনানন্দ  !!

( চ )

অদম্য ইচ্ছা     কিছু কর্ম
         জীবন  সফল  !!

( ছ)

কিছু স্মৃতি   কিছু  বিস্মৃতি
         অনন্ত  অপেক্ষা……

         হরি বোল্  হরি  বোল্  !!

সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৪

ধোঁয়াশা

(C)Image:ছবি






















II শমীক চৌধুরী II


৪৯ দিনের রাজা

অরাজকতার কথা শোনায়-

৫৬'' ছাতি ভাষার ছলে
স্বপ্ন দেখায় ।
জন্মসুত্রে রাজপুত্র
দেয় অনুর্বর মেধার প্রমাণ,
বিবাহ-জোরে দামাদ
মনোযোগী হতে শাসায়-
যারা অত্যন্ত সাধারণ
বুক বেঁধেছি আশায়

গল্পে শোনা -

ঈশান কোনে প্রথম উঠেছিল স্বাধীন পতাকা
সেই নায়ক কোন অদৃশ্য কারণে রহস্যময় !


আরো অনেক অনেক রহস্য

 হয়েগেছে যা কালক্রমে পরিহাস
দিতে হবে  তার হিসেব

সময় হয়ত কঠোর হবে
আর আমরা জমা খরচ লিখবো
ইতিহাস আলোকিত হবে
সবাই দেখবো সেই বিচ্ছুরণ 
চোখে চশমা থাকবে না
থাকবে না কোনো আস্তরণ -

রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৪

দূরভাষ


(C)Image: ছবি




















।। সৌম্য শর্মা।।



ক্রিং ক্রিং ক্রিং………

খোকা? কেমন আছিস বাবা?
মা, আজ ' গ্রীনকার্ড ' টা পেয়েছি!
কাল ডি সি তে যাবো,
নতুন একটা অফার পেয়েছি,
ভাবছি, নিয়ে নেবো!

ক্রিং ক্রিং ক্রিং… ………

খোকা, তোর কী হয়েছে বাবা?
ফোন করিস্ না যে!
কেমন আ়ছিস্ সোনা?
চিন্তা হয়, বুঝিস্ না?
মা, একটা গাড়ি কিনেছি ৷

ক্রিং ক্রিং ক্রিং… ……

খোকা, কেমন আছিস্ বাবা ?
সারাদিন একা থাকি, তোর কথাই  ভাবি
তোর বাবাতো স্কুলের পর, সেই  পার্টি অফিসে
কি যে করে!  পুঁজীবাদী, গেরুয়া সন্ত্রাস,
কতো কথা যে কানে আসে, বুঝিনা ছাইপাশ্ !

ক্রিং ক্রিং ক্রিং ………

খোকা, তুই কবে আসবি?
তোর বাবার  শরীরটা ভালো নেই,
সমরকাকা সেদিন নিয়ে গিয়েছিলো হাসপাতালে,
এডমিট করেছে, পেসমেকার বসাতে বলেছে ৷
মা, ম্যানেজ করে নাও, ভীষণ ব্যস্ত আছি
নতুন কাজ, ছুটির  কথা বল্লেই সেরেছে! !

ক্রিং ক্রিং ক্রিং… ………

খোকা, কেমন আছিস্ বাবা?
মা, তোমাকে বলা' ই হয়নি
কাল, আমার বন্ধু   এমিলিকে বিয়ে করেছি
ভালো মেয়ে, আমার জন্য বাংলা শিখছে!!

ক্রিং ক্রিং ক্রিং… ……

খোকা, বাবা আমার , ফোনটা তোল
তোর বাবা আর নেই…
আমি এখন কোথায় যাবো বল? !!

ক্রিং ক্রিং ক্রিং… ……



শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৪

"ঈশানের পুঞ্জমেঘ" এর বন্ধুদের প্রতি আবেদন

।।দেবাশিস ভট্টাচার্য ।।

মাদের এই গ্রুপ গতরে বাড়ছে, বিচিত্র মেজাজের বন্ধুরা জড়ো হচ্ছেন। প্রায় প্রতিদিনই এক বা একাধিক আবেদন থাকে সভ্য হতে চেয়ে।গত এক বছরে, আলাপ এর, তর্কের বিষয় ও বিস্তৃত হয়েছে। সভ্যদের সক্রিয়তা বাড়ছে, আমি একজন এডমিন হিসাবে উৎসাহিত। আমরা, এডমিনরা সমবেতভাবেই উৎসাহিত। একই সঙ্গে অস্বস্তিরও কিছু জায়গা তৈরি হয়েছে। প্রথমত, এই গ্রুপ এর নামেই আছে ‘একটি বাংলা গোষ্ঠী’।আমরা বারবার অনুরোধ করা সত্বেও অনেকে রোমান হরফ ব্যবহার করেন। যারা মোবাইল ব্যবহার করেন, তাদের কেউ কেউ হয়ত বাংলা হরফে লেখার সুবিধে পান না। এখানে অনেক বন্ধু আছেন, যারা মোবাইলে বাংলা হরফ কী করে লেখা যায়, তা শিখিয়ে দেবার জন্যে মুখিয়ে আছেন, মাঝে মাঝেই এটা তাঁরা করেও থাকেন। কিন্তু আমরা অস্বস্তিতে পড়ি যখন দেখি অনেকেই দস্তুর মতো বাংলা হরফ লিখতে পারেন, তবু সামান্য শ্রম স্বীকার করবেন না বলে রোমান হরফে মন্তব্য করেন বিভিন্ন আলোচনায়। প্রত্যেকজন সভ্যই ঈশানের সম্পদ। আমি অনুরোধ করি, অনুগ্রহ করে, ঈশানের স্বতন্ত্রতার জায়গাটিকে আসুন, সবাই সম্মান করি।

           দ্বিতীয় একটি বিষয়ের দিকেও সভ্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করি।সাম্প্রতিক অতীতে ঈশানের উঠোনে নানা বিষয়ে প্রবল বিতর্ক হয়েছে। এটি আশার কথা। বিতর্কই তো সত্যে পৌঁছানোর পথ, বিশ্বাসে মিলায় যে কৃষ্ণ, তাঁর প্রতি ঈশানের আস্থা কম।ঈশান যেমন সৃজনের মঞ্চ, তেমনি তর্কের ও। তবে, কিছু কিছু তর্কে, কোনো কোনো সভ্য বড়ো অসহিষ্ণু হয়ে ওঠেন। সম্প্রতি, ‘আমি সমাজের বিবেক’ নামের আড়ালে এক সম্মানিত সভ্য এবং সুশান্ত কর এর দু’টি পোস্ট এ তর্কে এটা লক্ষ করা গেছে। ঈশান সব মতকে, মতের ভিন্নতাকে মর্যাদা দেয়। কিন্তু যুক্তির লড়াই থেকে ব্যক্তিগত আক্রমণের দিকে কথা যখন মোড় নেয়, তখন অসহিষ্ণু প্রকাশগুলি বিব্রত করে। কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে, এবং এডমিন্ দের একজন হিসাবেও একাধিকবার সভ্যদের অনুরোধ করেছি এই আলোচনায় “অনুগ্রহ করে” মন্তব্য যোজনা থেকে বিরত হতে। এও অনুরোধ করা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের যে, চলতি পোস্ট এর বিষয় নিয়ে আলোচনার একটি নতুন সুতো খুলতে। এ ছিল ঈশানের সঞ্চালক(এডমিন)দের নমনীয় অনুরোধ। কিন্তু সভ্যরা এর পরও আলোচনায়, শব্দের শোভন সজ্জা ভুলে দস্তুরমতো ব্যক্তিগত কাজিয়ায় মেতেছেন।অস্বস্তি বাড়িয়েছেন আমাদের। সভ্যদের মধ্যে দু রকমের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কখনো এডমিনদের কাউকে কাউকে ব্যক্তিগত মেসেজ এ মত প্রকাশে বাধা দেওয়ার অনুযোগ করেছেন, কেউ আবার ঈশানের মঞ্চে অশোভন মন্তব্য বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে আর্জি জানিয়েছেন।কিন্তু, এটাও ঠিক যে কেউ ই তর্ক বন্ধ হোক এমন কথা বলেন নি। এটাই ঈশানের স্পিরিট।আমরা তর্কের পক্ষে, কিন্তু তর্ক হোক বন্ধুদের চিন্তার সমিধ, তর্ক উৎসাহিত করুক নীরব বন্ধুদের সবাক হতে। প্রতিটি ভালো আলোচনায় নতুন নতুন সভ্য মন্তব্য রাখছেন, গ্রুপ এর আলোচনার মান বাড়ছে। কিন্তু তর্ক যদি মনের পীড়া হয়ে ওঠে, তখন সভ্যরা বিরক্ত হন।আমরা আবার ও আবেদন করি, আলোচনা, তর্ক হোক। প্রতিজন বন্ধুই ঈশানের সম্পদ। সকলের কোরাস এ ঈশান সমৃদ্ধ হোক।কিন্তু, ব্যক্তিগত আক্রমণ পালটা আক্রমন বন্ধ রাখুন, অশোভন শব্দসজ্জা পরিহার করুন। এ কোনো ম’রাল পুলিশি উচ্চারণ নয়, এ আমাদের সভ্যদের  সমবায়ী রুচির দাবি।ইদানিং কেউ কেউ হাওয়ায় তলোয়ার ঘুরিয়েই যেন মঞ্চে ওঠেন। ঈশানের পুঞ্জমেঘ এর অধিকাংশ বন্ধু মনে করেন, ঈশান  এরকম বেয়াড়াপনার মঞ্চ নয়।

             আবার সভ্যরা অনেক সময় কোনো সভ্যের ব্যক্তিগত মতকে ঈশানের মত বলে মনে করেন।নিজের অপছন্দের মত থাকলেই তা ঈশানের ‘অনুমোদিত’ মত ভাবার কোনো কারণ নেই, বন্ধুরা। আমরা কারও মত এর উপর খবরদারি করতে চাই না, যতটা সম্ভব। প্রয়োজনে, কখনো এডমিন  এর তরফ থেকে কোনো মন্তব্য মুছে দিলে বন্ধুরা ভাববেন না, এটা কেউ ব্যক্তিগতভাবে করেছেন। ঈশানের সভ্যদের জানাতে পারি, সঞ্চালকমণ্ডলী নিজেদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেন। কারো মন্তব্য মুছে দিতে, কোনো পোস্ট এ আর মন্তব্য করতে না পারার মতো প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ নিতে আমরা ব্যাথা পাই। জানবেন, এটা সমবেত সিদ্ধান্ত, এবং কোনোরকম আক্রোশবশত আমরা এই কাজ করি না। কারও একটি মন্তব্য মুছে দিলে কেউ যেন না ভাবেন, ঈশান তাকে প্রত্যাখ্যান করল। বরং এভাবে দেখুন যে আপনার এই মন্তব্যটি ঈশান গ্রহণ করতে পারল না। সম্প্রতি এমন দু একটি পদক্ষেপ আমাদের নিতে হয়েছে, একটি আলোচনা কিছু সভ্যের জোর দাবি সত্ত্বেও, মুছে না দিয়ে শুধু থামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

           ঈশানের সভ্য বন্ধুদের কাছে আবেদন, সরব থাকুন। বহু স্বরের সংলাপ একটি গ্রুপ এর শক্তি ও সৌরভ। আসুন ব্যক্তিগত মত ও সৃজন নিয়েও। আসুন বাংলা হরফে।আসুন, আলোচনার শোভন, গণতান্ত্রিক, সহিষ্ণু মঞ্চ হিসাবে সবাই মিলে ঈশানকে আরও সুন্দর, আরও প্রিয়, আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলি।

বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৪

নিভৃতে

(C)Image:ছবি

















।।সৌম্য শর্মা।।


তারপর এক সময়__
নিভৃতে, ডেকে নিও আমায়

ব্যস্ত জীবন  থেকে দূরে
আলো আধাঁর - এর সীমানা ছাড়ানো
নি: সীম  মৌন স্তব্ধতায় ……

জীবনের শেষ মুহূর্তেও  যেন
তোমার ছবি থাকে মনে
অনেক কিছু  নাই  করে দেওয়া
' সব আছে' এই জীবনে
সেই হউক,  আমার ' পরম- পাওয়া'  !!

শপথ

সৌজন্যঃ শুভজিৎ পাল     





















।। দেবলীনা সেনগুপ্ত।।



ভালোবাসার নামে কোনও শপথ কোরো না
ভালোবাসা নিজেই তো এক সুন্দর শপথ
তাকে শুধু বয়ে যেতে দাও
বহতা নদীর মত
ভাসিয়ে নিয়ে যেতে আদিগন্ত আলপথ।
উন্মনা ধানের শিষে
ভেজা শিশিরতিলকে
আলো হয়ে থাকা রোদগান
যে নিরুচ্চার ছবি আঁকে রামধনুরঙে,
বিনা প্রতিশ্রুতিময়
সে সতত শপথে
নিঃশেষে লীন থাকে যে ভালোবাসা-
তার নামে কোনও শপথ করোনা আজ
কারণ
ভালোবাসা নিজেই তো এক সুন্দর শপথ
আজীবনের...আমরণের...

মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৪

রক্তনদী

দৈনিক যুগশঙ্খে প্রকাশিত ,২  নভেম্বর , ২০১৪



























॥  নীলদীপ চক্রবর্তী ॥

তীব্রবেগে ইস্পাত কণা
গতি ছন্দে মৃত্যু ছুটে চলে
হাড় রক্ত ভয় হলুদ আকাশ জোড়া
দুঃসময়ের নৌকা ভাসে ব্রহ্মপুত্রের বালি ও জলে ।
 
টুকরো টুকরো তারাদের শব
রাজপথ রক্তে মাখা মাখি
আকাশ ভেঙে সূর্য ঝরে নীল মৃত্যুর মতো
বরাকের শুকনো বুকে ভাঙ্গা কাঠের পাখি।
 
নবীন কবির কবিতা যত – বিষয় দু:সময়
নদীর জলে অনড় ঢেউ , জল শুধু নয়, ঘাম ।
আগুনে পুড়ে ছাই কবিতা, টুকরো জলে মেশে
ব্রহ্মপুত্রে, বরাকে ভাসে কবিতা ভরা খাম ।

জননী


























 ।। দেবলীনা সেনগুপ্ত।।

তোর জন্যেই আকাশ হব
আকাশ খুঁড়ে মেঘ জাগাব
মেঘের থেকে বৃষ্টি হব
প্রবল ধারাপাতে
তোর জন্যে আগুন হব
আগুন থেকে অস্ত্র হব
অস্ত্র সাথে শস্ত্র হব
হঠাৎ বজ্রপাতে
তোর জন্যেই বুকের মাটি
নরম হয়ে গন্ধ ঝরায়
সোঁদা সোঁদা গন্ধ ছড়ায়
নিবিড় নির্যাসে
তোর জন্যে মাঠও হব
মাঠ – ভর্তি ফসল হব
এক পৃথিবী আহার হব
থাকিস দুধে-ভাতে
তোর জন্যেই ছেলে আমার ধুলো হব
তোর জন্যেই মেয়ে আমার বালিও হব
এক পৃথিবী আকাশ হব
এক পৃথিবী বাতাস হব
সর্বসহা মাটি হব
তোর জন্যেই...।

রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৪

কন্যাভ্রূণ

(C)Image: ছবি
























।।দেবলীনা সেনগুপ্ত।।
তারপর...
চরাচর ছেয়ে থাকে
শুধু বিষণ্ণ আঁধার
একাকী শূন্যতায়
গর্ভনীরে
জন্ম নেয় প্রাণ
আবাহন ছাড়াই
জীবন পরিধি হারায়
লিঙ্গ- নির্মাণে
যে মাটিতে ভ্রূণ মেশে
জন্ম-অপরাধে
পূত সে মৃত্তিকায়
গড়ে ওঠে দেবাকৃতি
স্ব- ভঙ্গিমায়...

বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৪

কোচিং কেন্দ্র : ঈশান

। ।  শমীক চৌধুরী ।।




















প্রয়োজন বিতর্কের কোচিং
কথা কাটাকাটি থেকে স্লেজিং
কতখানি তে ঠিক আছে
আর কোন খানে ফাউল
চাই তার সঠিক ট্রেনিং

চলছে তাই নিয়ে থিঙ্কিং
নিয়মিত রুলসের ফ্রিস্কিং
এটেনশন বললে রেগে মেগে
পোস্টরেজ !   (রোডরেজ এর মতো )
মাদার ট্যাং বিরোধী নিজেই

ট্রেনিং দরকার ডিজিটাল বাংলার
লিঙ্কের ইউজ শিখে নিন সহজেই
ঈশান করবে একদিন বাজিমাত
প্রাইড এর দিন আসছে সামনেই -

রবীন্দ্র গবেষকদের প্রতি


রবিঠাকুর, বিভিন্ন কবিতায় সাহিত্যে, তাঁর ভাববাদী মনষ্কতাকে প্রতিফলিত করেছেন বিভিন্ন সময়ে। তিনি প্ল্যানচেট নিয়ে চর্চা করেছেন, চর্চা করেছেন হোমিওপ্যাথি নিয়েও। কিন্তু রবিঠাকুর, আশ্চর্য রকমের চলিষ্ণু ছিলেন। সত্তর বছর বয়সে এসে তিনি তাঁর ভাববাদী ধ্যানধারণা থেকে সম্পুর্ণ মুক্ত হয়ে গেলেন।

 লিখেছেন  সুদীপ নাথ

দানীং অনেককেই দেখা যায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর গবেষণা করছেন ও অনেক প্রবন্ধ লিখছেন। তারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর কোনও একটা সামগ্রিক আলোকপাত করতে অসমর্থ। তারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের অভিমত থেকে সরে আসার দিকে কোনও আলোকপাত করছেন না। তাই এই প্রবন্ধে আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের মত থেকেই নিষ্ক্রমণের একটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ দিক তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

একজন মানুষকে যদি বিচার করতে হয়, তিঁনি কেমন, তাহলে জীবিতকালে বিচার করতে হয় তার বর্তমান অবস্থান দেখে। আর যারা এখন নেই, তাদের বিচার করতে হবে, শেষ অবস্থান কেমন ছিল তাই দেখে। তাই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনও তিনি অবস্থান পালটেছেন কিনা এবং সর্বোপরি তিনি শেষ পর্যন্ত কি অবস্থান নিয়েছিলেন, তা আবশ্যিক ভাবেই দেখতে হয়। এটাই এখন দেখা যাক।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩৩৪ বাঙলা ১৯২৭ সালে সাহিত্যধর্ম প্রবন্ধে লিখলেনঃ-

     “বিজ্ঞান পদার্থটা ব্যক্তিস্বভাববর্জিত; তার ধর্মই হচ্ছে সত্য সম্বন্ধে অপক্ষপাত কৌতূহল। এই কৌতূহলের বেড়াজাল এখনকার সাহিত্যকেও ক্রমে ক্রমে ঘিরে ধরছে। অথচ সাহিত্যের বিশেষত্বই হচ্ছে তার পক্ষপাতধর্ম; সাহিত্যের বাণী স্বয়ম্বরা। বিজ্ঞানের নির্বিচার কৌতূহল সাহিত্যের সেই বরণ করে নেবার স্বভাবকে পরাস্ত করতে উদ্যত”।......

     “বংশরক্ষাঘটিত পশুধর্ম মানুষের মনস্তত্ত্বে ব্যাপক ও গভীর, বৈজ্ঞানিক এমন কথা বলেন। কিন্তু সে হল বিজ্ঞানের কথা – মানুষের জ্ঞানে ও ব্যবহারে তার মূল্য আছে। কিন্তু রসবোধ নিয়ে যে সাহিত্য ও কলা, সেখানে এই সিদ্ধান্ত স্থান পায়না। ... আজকালকার য়ুরোপীয় সাহিত্যে যৌনমিলনের দৈহিকতা নিয়ে খুব যে একটা উপদ্রব চলছে সেটার প্রধান প্রেরণা বৈজ্ঞানিক কৌতূহল, রেস্‌টোরেশন-যুগে সেটা ছিল লালসা। কিন্তু, সেই যুগের লালসার উত্তেজনাও যেমন সাহিত্যের রাজটিকা চিরদিনের মত পায় নি, আজকালকার দিনের বৈজ্ঞানিক কৌতূহলের ঔৎসুক্যও সাহিত্যে চিরকাল টিঁকতে পারে না”।......

    আর বিশ্ববিশ্রুত ইতিহাসবিদ আর্নল্ড টইন্‌বিও প্রায় একই কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন- “বর্তমানে যে অরাজকতা প্রকট হয়ে উঠছে, বিশেষ করে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে, বৈজ্ঞানিক মনোভাব তার জন্যে অনেকখানি দায়ী”।

টইন্‌বি দেখেছিলেন বিজ্ঞানের কারণে সমগ্র সমাজটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে, আর রবিঠাকুর দেখেছিলেন শুধুমাত্র কাব্য-সাহিত্যকে কিভাবে বিজ্ঞান কলুষিত করছে।

            রবিঠাকুর, বিভিন্ন কবিতায় সাহিত্যে, তাঁর ভাববাদী মনষ্কতাকে প্রতিফলিত করেছেন বিভিন্ন সময়ে। তিনি প্ল্যানচেট নিয়ে চর্চা করেছেন, চর্চা করেছেন হোমিওপ্যাথি নিয়েও।

            কিন্তু রবিঠাকুর, আশ্চর্য রকমের চলিষ্ণু ছিলেন। সত্তর বছর বয়সে এসে তিনি তাঁর ভাববাদী ধ্যানধারণা থেকে সম্পুর্ণ মুক্ত হয়ে গেলেন। বাঙ্গালী মনীষীদের মধ্যে অন্যতম বিজ্ঞানমনষ্ক প্রতিভা মেঘনাদ সাহা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্দেশ্য করে, ওনার “কাব্য ও বিজ্ঞান” প্রবন্ধে লিখলেনঃ-

“...আমাদের কবি রবীন্দ্রনাথের কন্ঠে আমাদের অপরূপ মাতৃভাষায় সত্য শিব ও সুন্দরের গান ধ্বনিত হইয়াছে। দীর্ঘ জীবন ধরিয়া (প্রার্থনা করি তাহার জীবন দীর্ঘতর হউক) তাঁহার কবি হৃদয়ে কালের  ঘটনাস্রোত তরঙ্গিত হইয়াছে। হোমারের মত কখনও বা তিনি প্রাচীন বীরগণের শৌর্য বর্ণনা করিয়াছেন, কখনও বা হিব্রু সত্যদর্শীদের মত ভক্তির গভীর রস সিঞ্চন করিয়াছেন। অ্যাচিলাসের মত ইঁহার হাতে পুরাতন কাহিনীগুলি নবকলেবর প্রাপ্ত হইয়াছে – আবার কখনও কখনও কবি অ্যারিস্টোফেনসের মত পুরাতন সংস্কারের প্রতি নির্মম আঘাত হানিতেও ইতস্তত করেন নাই। কবিশ্রেষ্ঠ কালিদাসের মত নিপুন হস্তে কখনও ইনি শব্দ চয়ন করিয়া অপূর্ব মণিমালা রচনা করেন, আবার কখনও লোকসঙ্গীতের সহজ সরল সুর তাঁহার বীণায় বাজিয়া উঠে। তাঁহার কবিজীবনের গতি ওডিসির সহিত তুলনীয় । পুরাতন হইয়াও ইনি চিরনবীন। ভাষা রবীন্দ্রনাথের হাতে উৎকর্ষের চরম শিখরে পৌঁছিয়াছে”।

    “কিন্তু বিজ্ঞানীদের পক্ষ হইতে কবির প্রতি আমাদের একটি অনুযোগ আছে। কবি তাঁহার অতুলনীয় শক্তি বিজ্ঞানের স্বরূপ প্রকাশে কখনও নিযুক্ত করেন নাই। এই দৃশ্যমান পৃথিবীর যে সামগ্রিক রূপ প্রাণীবিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব এবং ভৌত বিজ্ঞান উন্মুক্ত করিয়াছে – তাহার সঙ্গীত তাঁহার কন্ঠে আজও বাজে নাই। আমরা আশা করি তাঁহার প্রতিভাধর পূর্বপুরুষ গ্যেটের মত রবীন্দ্রনাথও বিজ্ঞানের প্রতি মনোযোগী হইবেন এবং তাঁহার তুলনাহীন কাব্যে এই দ্বন্দ্বমুখর পৃথিবীর বর্তমান নৈরাশ্য ভেদ করিয়া মিলন, আশা ও আনন্দের বাণী সোচ্চার হইবে”।

রবিঠাকুর, আক্ষরিক অর্থেই আশ্চর্য রকমের চলিষ্ণু ছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর মতের পরিবর্তন ঘটলো এবং তিঁনি বিজ্ঞান সম্পর্কে অবহিত থাকাটা আধুনিক সাংস্কৃতিক চেতনার অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবেই দেখলেন। তিঁনি হয়ে উঠলেন সাচ্চা বিজ্ঞান মনষ্ক মানুষ।

রবিঠাকুর, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভাববাদী ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের জয়গান গেয়ে গেলেন। তিঁনি “আধুনিক কাব্য ১৩৩৯” প্রবন্ধে লিখলেনঃ-

    “আমাকে যদি জিজ্ঞাসা কর বিশুদ্ধ আধুনিকতাটা কী, তাহলে আমি বলব, বিশ্বকে ব্যক্তিগত আসক্ত ভাবে না দেখে বিশ্বকে নির্বিকার তদগতভাবে দেখা। এই দেখাটাই বিশুদ্ধ ; এই মোহমুক্ত দেখাতেই খাঁটি আনন্দ। আধুনিক বিজ্ঞান যে নিরাসক্ত চিত্তে বাস্তবতাকে বিশ্লেষণ করে, আধুনিক কাব্য সেই নিরাসক্ত চিত্তে বিশ্বকে দেখবে, এইটেই শাশ্বতভাবে আধুনিক”।

    “কাব্য তা হলে আজ কোন্‌ লক্ষ্য ধরে কোন্‌ রাস্তায় বেরোবে। নিজের মনের মতো ক'রে পছন্দ করা, বাছাই করা, সাজাই করা, এ এখন আর চলবে না। বিজ্ঞান বাছাই করে না, যা-কিছু আছে, তাকে আছে ব'লেই মেনে নেয়, ব্যক্তিগত অভিরুচির মূল্যে তাকে যাচাই করে না, ব্যক্তিগত অনুরাগের আগ্রহে তাকে সাজিয়ে তোলে না। এই বৈজ্ঞানিক মনের প্রধান আনন্দ কৌতূহলে, আত্মীয়সম্বন্ধ-বন্ধনে নয়। আমি কী ইচ্ছে করি, সেটা তার কাছে বড়ো নয়। আমাকে বাদ দিয়ে জিনিসটা স্বয়ং ঠিকমত কী সেইটেই বিচার্য। আমাকে বাদ দিলে মোহের আয়োজন অনাবশ্যক”।

    তিঁনি আরও লিখলেন – “উচ্চ অঙ্গের গণিতের মধ্যে যে একটি গভীর সৌষম্য- যে একটি ঐক্যরূপ আছে, নিঃসন্দেহে গাণিতিকতার মধ্যে আপনাকে নিমগ্ন করে। তার সামঞ্জস্যের তথ্যটি শুধু জ্ঞানের নয়, তা নিবিড় অনুভুতির : তাতে বিশুদ্ধ আনন্দ। কারণ জ্ঞানের যে-উচ্চ শিখরে তার প্রকাশ, সেখানে সে সর্বপ্রকার প্রয়োজন নিরপেক্ষ, সেখানে জ্ঞানের মুক্তি”।

    “এ কেন কাব্য সাহিত্যের বিষয় হয়নি এ প্রশ্ন স্বভাবতই মনে জাগে। হয়নি যে, তার কারণ এইযে, এর অভিজ্ঞতা অতি অল্প লোকের মধ্যেই বদ্ধ, এ সর্বসাধারনের অগোচর”।।

       বাঙ্গালী মনীষীদের মধ্যে অন্যতম বিজ্ঞানমনষ্ক প্রতিভা মেঘনাদ সাহার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উদ্দেশ্য করে 1931 সালে যে প্রত্যাশা ছিল, তিঁনি তা পূরণ করেছিলেন 1937 সালে, তাঁর অমর গ্রন্থ ‘বিশ্বপরিচয়’ লিখে।

           প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য যে, বিজ্ঞানীদের শিল্পবোধের অভাবের তুলনায় শিল্পী-সাহিত্যিকদের বিজ্ঞানবোধের অভাবটা অনেক বেশি বলেই মনে হয়।

          বাঙ্গালী মনীষীদের মধ্যে অন্যতম বিজ্ঞানমনষ্ক প্রতিভা মেঘনাদ সাহাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে আহ্বান করেন ‘একটি নূতন জীবনদর্শন’ নামে বক্তৃতায় যোগ দিতে, যেখানে তিনি বিজ্ঞানভিত্তিক জীবনদর্শনকেই এ-যুগের জীবনদর্শন বলে প্রতিষ্ঠিত করেন।

          রবিঠাকুরের জীবনের শেষ দশ বছরের সমস্ত কাব্যে, সাহিত্যে তাঁর ভাববাদের বিরোধিতাই প্রকট হয়ে দেখা দেয় আর বিজ্ঞান মনস্কতার জয়গান ধ্বনিত হতে দেখা যায়।

 ***

 সূত্রঃ

     (১) রবীন্দ্র রচনাবলী

    (২) বিংশ শতাব্দীর নির্বাচিত বিজ্ঞান প্রবন্ধ সঙ্কলন

    (৩) বিশ্ব পরিচয়

    (৪) অন্য কোন সাধনার ফল

    (৫) মেঘনাদ সাহা ও বিজ্ঞানে যুগান্তর

সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৪

'সু' আর ' অপ'
























 ।। শমীক চৌধুরী।।
নিষিদ্ধ দেখিবার তরে দর্শক আকুল
অর্থ সঞ্চয়ের প্রতি সমাজ অনুকুল
অর্থ ব্যয়ে দেখিতে হইতো
পুস্তক , বায়োস্কোপে
যত্র তত্র দেখা যাইবে
এই ভেবে হাসে

বসিলে যুগলে কোথাও
উদ্যানে বৃক্ষ তলে
সমাজ প্রহরী আসি
চোখ রাঙ্গাইয়া বলে
ঠিক নয় ঠিক নয়
এটা নয় ঠিক
তাহারো জানা নাই
কোনটা সঠিক

ব্যবহারে মূল্যবান 'সু' আর 'অপ'
বাত্স্যায়ানে দু চোখ ভরে খোঁজো শিল্প

রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৪

‘তেলচোরা’- দ্য ‘টে-ক-নো-ক্রে-ট’ এন্ড হিজ ‘গদা’- দ্য সেভিয়্যর!

।।পার্থঙ্কর চৌধুরী।।



          

             ‘তেল-চোরা’, পইতাচোরা’ এগুলো সবই দুর্মুখের মস্তিস্ক-প্রসূত। আসলে কি, ঐ যে পৈতা, তাতে সরসের তেল কি এক-আধটু লাগানো থাকে না? তা-থেকে শুং দিয়ে কিঞ্চিৎ চেটেপুটে নিলে কি অমন দোষের হয়ে গেলো? ছাই হবে! কচু ! বললেই হল? বরং এর থেকে ঐ ছাপার অক্ষরের দেশের লোকেরা অনেক ভালো। মোটামুটি তো একটা ভালো মানেই ডাকে। ‘আরশোলা’ । পেশা-টাকে ইঙ্গিত করে কোন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য  নেই। সিলেট-আসামের লোকেরা কি ইচ্ছে করলে এই নামে ডাকতে পারে না?  পারে, আলবৎ পারে। ডাকবে-ই না আসলে।  বরং সবচেয়ে ভদ্রলোক বলতে হয় ইংরেজদেরকে। ওরা সত্যি সত্যি সাহেব, ভদ্রতার ষোলো-আনা এরা জানে। কি ভারি  মিষ্টি নামে, সুন্দর নামে ডাকে… ‘পেরিপ্লেনেটা এমেরিকানা’’। একেবারে বুক ভরে যায়। এমন নাম দিয়েছে, মনে হয় আমেরিকা-বাসি। যেন খোদ ইংরেজদের দেশেই মেয়াদি-পাট্টা রয়েছে ।  ডাইরেক্ট, গ্রিন-কার্ড ।

          নিন্দা-মন্দ করা লোকদের বিলকুল পছন্দ নয় সবার চির পরিচিত ঐ ষষ্ট-পদীর।  ‘তেল-চোরা’ নামটায় ঘেন্না ধরে যায় ষষ্ট-পদীর।  গোল্লায় যাক, ঐ সব নাম…। মনে মনে গালি পাড়তে থাকে সব দুষ্টদেরক। বিদ্যার জোর আছে বলে মনে মনে প্রচণ্ড ঈর্ষাও হয় ঐ লোকেদের।  বিদ্যাজীবী আর বুদ্ধিজীবী নাম দিয়ে তো দিব্যি মোটা মাইনের মাসোয়ারা গুনছে মাস ফুড়োতেই।  রোজগার যদিও প্রায় সমানই, তবুও ওর চাহিদাটা যে অনেক বেশী।

          অনেকদিন থেকেই ইচ্ছা, বাড়িতে একটা পূজার আয়োজন করবে। করলোও। পূজার্চনায় একটা মোক্ষম লাভ হল ষষ্ঠপদীর। বলা যেতে পারে মগজ খুলে গেলো। আদত বদল না করে অন্য একটা পেশার নেশা তাকে পেয়ে বসলো।  আসলে, বাড়িতে পুজার দিন লক্ষ্য করেছে, উপাচারের প্যকেট গুলো থেকে সারি বেধে পিঁপড়ার লাইন বেরিয়ে আসছে। এদিক থেকে কিছু যাচ্ছে, তো ওদিক থেকে কিছু আসছে। আসা যাওয়ার পথে একজন আর একজনের সাথে সুঙে সুং মিলিয়ে কিছু যেন কথা বলছে।

          একদিন দাদাই-বাবা-কে জিগ্যেস করেছিল বিষয়টা। বলেছিলেন, ও তুই বুঝবি না; বুঝলে এ কাজটাকে তুইও এতদিনে পেশা করে নিতে পারতি। তোর দেহেও ঐ রসায়ন-টা আছে।  জানিস, এটাকে বলে ‘ফে- রো –মো -ন’ (Pheromone) । দাদাই-বাবা আরও বলেই যাচ্ছেন...। আড়চোখে দাদাই-বাবার কথা শুনতে শুনতে একসময় মূর্ছা গেলো তেলাপোকা। চিৎপটাং হয়ে পা ছ’টা উপরে তুলে তিড়বিড় করতে লাগলো ষষ্ঠপদী। আশেপাশের সবাই ভাবল, হয়তো বা ব্যাটা অক্কা পেয়েছে।

        
           

          সংজ্ঞা হারায় নি মোটেই। আসলে দিব্য-জ্ঞান লাভ করেছিল। দিব্য দর্শনে সে জানতে পারল, ঐ সুদূর মরু-আরবের কোন এক দেশে ওর মতই অন্য আরও এক ষষ্ঠপদী এই ‘ফে-রো-মো-ন’-কে কাজে লাগিয়েই খুব অল্প দিনেই কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে। মূল্যবান এই রসায়ন নাকি দূর-সংযোগে টেলিফোন-মোবাইল-ইন্টারনেট এর বিকল্প হিসেবে কাজ করতে সম্পূর্ণ-রূপে সক্ষম। ব্যস, আর কে পায়? যেমন ভাবা, তেমন কাজ। চটজলদি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল, সে দেশে যেতেই হবে। যাওয়ার দিন সঙ্গে নিয়ে গেলো, অপেক্ষাকৃত মোটা পেটলা এক সঙ্গীকেও। ওর বিচারে সহযাত্রী এই বিষয়ে ঢের পারদর্শী।

          ‘ফে-রো-জ্ঞা-নে’ পাণ্ডিত্য অর্জন করার পর মাস দিন পরেই দেশে ফিরে এলো দুজনে। এবার দেশের মাটিতে এই দুর্লভ তথ্য-প্রযুক্তি কে বেশ ভালই কাজে লাগান যাবে। মুনাফাও আসবে। ‘তেলচোরা’ নামটাও আর থাকবে না, অথচ, ‘ষোলো-আনা-চুরি’ বজায় থাকবে। এর চাইতে আর ভালো কি হতে পারে?

          যথারীতি প্রচার শুরু হল। বিজ্ঞাপনে সব দিক ভরে গেলো। চারদিক ছয়লাপ। সবারই মুখে মুখে এক কথা। এখন থেকে আর কাগজ-কলম দরকার নেই।  ‘নো পেপার-ওয়ার্ক’। যা হবে সব ‘ফে-রো-টেঁ-ক-নো-ল-জি’ দিয়ে। সব বাড়িতে, অফিস-আদালতে, স্কুল-কলেজে-হাসপাতাল প্রাঙ্গন সবজায়গায় তেলচোরা থাকবে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কোন বার্তা, সংবাদ কিংবা তথ্যাদি এক তেলচোরা রিসিভ করে অন্যের কাছে পাঠিয়ে দেবে। দরকার নেই টেলিফোন-মোবাইল- ইন্টারনেটের। মাসে মাসে অনেক টাকা বেচে যাবে, আলবৎ...।

          সর্বত্র ঢাকঢোল পিটিয়ে ফ্রেয়াম-সী অর্থাৎ ফে-রো-টেঁ-ক বিজনেস শুরু হল। স্ত্রী তেলচোরা ভাবল, এতদিনে হয়তো বা একটা সম্মানজনক কিছু একটা হল। তাহলে মনে হয় ‘দাদাই-বাবা’ সত্যি সত্যি সর্বশক্তিমানের কাছে ওদের জন্য প্রার্থনা করেছেন। এখন থেকে সাজগোজ করে রাস্তায় বেরুলেও কেউ আর কিছু তির্যক মন্তব্য কারার মতো কিছু পাবে না। কিন্তু না...।

          কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রবল বিপত্তি শুরু হল। আসলে ঐ গোবিন্দপুরের লাগোয়া সুতানটি গ্রামের টেকনোক্রেট গোছের একজাতের পোকাকে দ্বায়িত্ব দিয়েছিল ফেরোমনের মেসেঞ্জার সাপ্লায়ার হিসেবে। ওর সাথে চুক্তি হয়েছিল, যদিও আমজনতা জানবে যে তেলচোরাই কাজটা করছে, কিন্তু আসলে কাজটা করবে সে। আর এর জন্য মাসে মাসে মাসোয়ারা হিসেবে সে বছরে কিছু একটা পাবে। চুক্তি অনুযায়ী ‘টেকনো-পোকা’ শুরু শুরুর বেশ কদিন ভালো ভাবেই কাজটা করেছিল। কিন্তু বেশ কিছুদিন হল, সে তার পারিশ্রমিক পায় নি। তাই মেসেজ সাপ্লাই বন্ধ!  এই থেকেই সমস্ত বিপত্তির শুরু।

          বন্ধ সব কাজ কর্মও। বাড়ি-ঘর, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ সবখানেই কাজ কর্মও স্থবির হয়ে পড়ে আছে। সব যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় গোটা এলাকায় দারুন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ি থেকে কেউ লাঠি, অফিসের কেউ ডাণ্ডা, স্কুল থেকে রুলার, স্কেল আর হাসপাতাল থেকে অপারেশনের ছুরি নিয়ে যে যেদিকে পারে বেরিয়ে ছুটাছুটি করছে। যেখানেই তেলচোরা পাবে, সঙ্গে সঙ্গে খতম।

          এক অজানা আশঙ্কায় দিন কাটছে পইতাচোরার। সব শুনে তেলচোরা ভাবল,  আবার বাড়িতে একটা সন্ধ্যা-পুজার আয়োজন করবে। সব বড় বড় মানুষ কে ডাকবে। বড় বড় লোকেরা তোর বাড়িতে আসলেই ঐ নিচু মনের লোকদের মুখ তালা-বন্ধ হয়ে যাবে, একদিনেই। যথারীতি, সন্ধ্যারতির আয়োজন হল। বিদ্যাটিল্লা থেকে স্বাত্বিক ভাবে পূজার সব উপাচার এলো প্যকেটিং হয়ে।  বাঁশঝাড়ের মোড়ল বাঁশপোক্ত বাবুও এলেন। এলেন বড় মাপের আরও অনেকেই। সবাই প্রসাদ খেলেন। সে আরেক গল্প। আরও অনেক কথা। যাকগে...

       
           

          সেই থেকে ‘গদা’ থেকে কক্ষনো দূরে রাখেনি নিজেকে...!

          গোল্লায় যাক, বাকি সব...। আগে তো প্রানে বঁচি…!

          গদা-সর্বস্য ষষ্ঠপদী-র আপাততঃ এটাই এজেন্ডা…! মনে মনে তাই মন্ত্রচ্চোরন করলো,…

         

গদা স্বর্গ, গদা ধর্ম… গদা হি পরমং তপঃ…

          গদা'রই প্রিতিমা-পন্নে পলায়তি সর্ব বিপদঃ…

   সন্ধ্যায় পুজা শুরু হয়েছে। পঞ্জিকা দেখে, তিথি ধরে। নিমন্ত্রিত ছোটবড় সবাই এসে গেছে। এরই মধ্যে চিৎকার দিতে দিতে বেচারা ষষ্ঠপদী আবার মূর্ছা গেলো। এবার ‘ফ্রেয়াম-সী’, ‘ফ্রেয়াম-সী’ বলছে না; বলছে, ‘তিন-তলা’, ‘তিন-তলা’ আর র…ড-বা…লু-সি… মে…ন্ট…। গভীর মূর্ছায় আচ্ছন্ন। আই মিন, আবার দিব্য দর্শন। দেখা দিলেন পরম-প্রিয়। পা ধরে আকুতি মিনতি করায় একটা মোটাসোটা ‘গদা’ দেখিয়ে পরম-প্রিয় বললেন, এটা তোর কাছে রাখবি, সবসময়। কক্ষনো হাতছাড়া করবি না। এর জিম্মাদার তুইই। আর কেউ নয়। এটাই তোর  একমাত্র ‘রক্ষা-কবজ’।
  কিন্তু না। একটু পরেই জ্ঞান ফিরে পেলো। ফ্রেয়াম-সী… ফ্রেয়াম-সী…বলে চেঁচিয়ে উঠল। সে কি চিৎকার! (অনেকটা ঐ নিউটনের ‘ইউরেকা’র মতো)। বেচারা ষষ্ঠপদী আবার মূর্ছা গেলো।
‘তেল-চোরা!’ নামটাই তো চূড়ান্ত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের। ব্যটা সিলেটিরা কি আর অন্য কিছু পেলো না ডাকার জন্য। অন্যদের তো ভারি সুন্দর সুন্দর নামে ডাকে। ‘প্রজাপতি’,  ‘কাকাতুয়া’ ইত্যাদি কত মিষ্টি মিষ্টি নাম। আর শুধু ‘সিলেটি’-দেরই বা কেন দোষ? অসমীয়ারাও তো ওরকম একটা বিশ্রী নামে ডাকে। ‘পৈতা-চোরা! শুনলে মনে হয় বেচারা যেন উপনয়ন চুরির দায়ে অভিযুক্ত। সব ব্যাটারাই হীনমন্যের গুষ্ঠি। নিপাত যাক। গুষ্ঠির পিণ্ডি…! বললেই কি আর কেউ বাজে হয়ে গেলো? আসলে বলছে কারা সেটাও তো দেখা দরকার…!