“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৪

কথায় কথায়

( রণবীর পুরকায়স্থের এই গল্পটি শিলচরের মানবীর , ২০১৩ সংখ্যাতে বেরিয়েছিল। আমার প্রিয় গল্পকার, তাই এই গল্পটাও তুলে দিলামঃ সুব্রতা মজুমদার )
(C)Image:ছবি



পূর্ণিমা – আফজল

--- শুনেছিস কিছু ?

--- কী শুনব ?

--- আমাদের 'সাহারা আশ্রম' এবার সাবালক হবে । দুবিঘা জমির উপর ইস্কুল হবে, কারখানা হবে ।

--- কারখানা ? মানে ধূপকাঠি মোমবাতি আর বুড়িমার মুড়ি বানানো, মধু আর ঘিয়ের বোতলে লেবেল লাগানো ?

--- তুই এত রেগে যাস কেন আফজল ? তোর এক পা নেই বলেই কি রাগ ? ওরা বলেছে পা লাগিয়ে দেবে জয়পুরের, ধরাই যাবে না । আমাকেও দেবে ।

--- আর দিয়েছে ? কতবারই তো শুনলাম, কিন্তু ফাণ্ড আর হয় না । এক পায়ে কম কী আছি বল ? তুইও তো এক হাতেই সব কাজ করিস ।

--- লোকে তাকিয়ে থাকে, করুণা করে ।

--- কাঠের পা টানতে বড় কষ্ট রে ।

--- হোক কষ্ট, সত্যদা যখন বলেছে হবে একদিন । আমাদের জন্য এত করছে । মুড়ি বল মধু বল ধূপকাঠি যাই বানাই না কেন, বিক্রির ব্যবস্থা করে সত্যদা । মাস গেলে মাইনেটা তো দেয় ।

--- প্রথম প্রথম ভাল লাগত, উৎসাহ ছিল । এখন আর ভাল লাগে না রে । মনে হয় বিক্রি তো হচ্চে না, দয়া হচ্চে, কোথাও একটা রাজনীতি আছে । এনজিও পলিটিক্স !

--- সত্যদা এরকম মানুষ না ।

--- সত্যদার কথা বলছি না ।

--- তাহলে ?

--- তিনিও তো মানুষ রে পূর্ণিমা !

--- মানুষ না, তিনি সাক্ষাৎ দেবতা । সোনার নিখাদ মুর্তি ।

--- আমরা সোনা দিয়ে কী করব ? গরীব মানুষ মাটির দেবতার পূজা করে । আমাদের ধর্মে তো তাও নেই ।

--- আবার ধর্ম নিয়ে এলি কেন ?

--- না, বলছিলাম সত্যদা যদি পাল্টে যায় কোনোদিন, তখন আমরা কোথায় যাব ? কী করব ? কী খাব ? আমাদের তো স্থায়ী চাকরিও নেই । সত্যদাও আমাদের মতো খোঁড়া লেংড়া বোবা কানা নয় । করে খেতে পারবে ।

--- যত উদ্ভট ভাবনা তোর । দেখিস একটা হিল্লে হবেই, কোথাও না কোথাও জুটে যাবে । কথায় আছে জীব দিয়েছেন যিনি আহার দেবেন তিনি ।

--- তাহলে বলছিস সত্যদা কোন ফ্যাক্টর নয় ?

--- সত্যদা আমাদের খুব ভালবাসেন । আমাদের উপর ভরসা করেন । উদ্‌ঘাটন সমারোহে তুই ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করবি মন্ত্রীকে,

--- আমি করব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ।

--- এখানেও রাজনীতি । প্রতিবন্ধি রাজনীতি, নারীবাদি রাজনীতি আর সংখ্যালঘুর রাজনীতি । সবার উপরে এই ফুলের তোড়ার রাজনীতি । বড় মারাত্মক রে !

মন্ত্রী – প্রদ্যুম্ন

--- তোর তো অনেক পড়াশুনা রে পদা ।

--- হায়ার সেকেন্ডারি ফেল, আপনি বি এ পাশ ।

--- আমি বিএ সি ।

--- মতলব ?

--- মতলব চোতা বি এ চোতা মানে টুকলি । তুই বিদ বুঝিস ?

--- বিদ ?

--- বাদ বুঝিস ?

--- জরুর, আপনি বললেই বাদ দিয়ে দেব ।

--- কী বাদ দিবি গর্দভ ? একশ আটটা বাদ আছে ।

--- শ্রীকৃষ্ণবাদ ।

--- গুড, আগে ?

--- মার্কসবাদ করে পুকার ইনকিলাব জিন্দাবাদ ।

--- উগ্রবাদ সন্ত্রাসবাদ মাওবাদ ।

--- নিপাতযাক ।

--- গান্ধিবাদ ?

--- জিন্দাবাদ । আচ্ছা গুরু নারীবাদ সংখ্যালঘুবাদ দলিত শ্রেণীবাদও তো আছে ?

--- আছে । ভোটার খায়, একশ আট নয় রে এক হাজার আট রকমের বাদ আছে । আরো বেশিও হতে পারে । বেশি পড়াশুনা হলে পেটে গুড়গুড়ি হয়, পিলে হয় । পিলের নামে এক একটা বাদ হয় । বাদ পাশ করলেই বিদ ।

--- বিদ মানে বিদ্যা । পড়াশুনা ।

--- গুড । তবে হবে, এভাবেই জানতে হয়, লিখতে হয় । আমরা হলাম বিদ্‌, বাদ হল বহুবচন, পালে থাকে । গরুর পাল ভেড়ার পাল যেমন । বিদ হল রাখাল, রাজা, ফার্স্ট পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার । যেমন আমি ।

--- মন্ত্রীবিদ ।

--- চালিয়ে দিলে চলতে পারে, তবে একটু রয়ে সয়ে । আমার এখন চিন্তা মন্ত্রীসভার অর্থনীতিবিদকে নিয়ে । অর্থনীতি বড় জটিল সাবজেক্ট, আমি বুঝি না । আমার কাজ জনসেবা, পাবলিক সার্ভেন্ট, জনতার সেবক আমি । সেবা করতে গেলে টাকা চাই, মাওবাদিরা উগ্রবাদিরা যে এত নীতির কথা বলে, বোমা বন্দুকের কথা বলে, টাকা না হলে সব ফিউজ উড়ে যাবে । টাকা না হলে মাইন কিনবে কী করে?  একে ফর্টিসেভেন কিনতেও মিরচি শেঠকে টাকা দিতে হয় । টাকা ইনকাম করা বড় জটিল প্রক্রিয়া, কলের জল নয় যে খুললাম আর ঝমঝমিয়ে একবালতি দুবালতি ভরে নিলাম । ওরা পাবলিক মেরে খায়, আমি ডিরেক্ট মারি না । আমাকে দেয় অর্থমন্ত্রী, খরচাপাতির খাজাথিও । কোথা থেকে দেয় সে তার মাথা ব্যথা, আমার নয় । বিভাগের টাকা আছে, রাস্তাঘাট স্কুল কলেজ পাবলিক হেলথ কতরকমের খাত আছে । টাকা তুমি খাতে ফেলে দাও, তারপর আমি দেখে নেব । সেন্টারওলাকেও বলেছি, একশ দিনের কাজ কিংবা ইন্দিরা আবাস যোজনার বরাদ্দ বাড়িয়ে দাও, ঠিক সাইড কেটে বেরিয়ে যাব ।

--- আজ দৈনিক জনপতাকায় হাইলাকান্দি শিববাড়ি রোডের যা ছবি বেরিয়েছে, পার্টির নাম সরকারের নাম কাদা করে দিল গুরু ।

--- রাস্তা না ধানক্ষেত বুঝা যাচ্ছে না, তাই তো ?

--- ও, তোমার পড়া হয়ে গেছে বস ?

--- কাগজ পড়তে হয় না রে পাগলা, ছবিটা আমিই দিয়েছি কমলাক্ষকে টাইট দিতে । এত ঝামেলা করে টাকা স্যাংশান করলাম, এখন বলছে সব টাকায় রাস্তা হবে, দেবে না কিছু । বুঝ শালা এমএলএ কেমন লাগে! ভাল মানুষির ভূত এবার কিলিয়ে সোজা করবে পাবলিক ।

--- নতুন যোগী তাঁতে উঠেছে বস । নতুন নতুন এমএলএ হলে কাজ করার বাই মাথা চাড়া দেয় । সব বুঝে যাবে দু একবার টাইট খেলে, মিনিস্টারের সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়া বেরোবে এবার ।

--- কমলাক্ষকে তাড়াব না বলছিস ?

--- না গুরু, হরগিজ না । অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে লড়তে গেলে নাম্বার চাই, না বুঝে করে ফেলেছে, শিষ্য তো তোমারই ।

--- আরে ব্বাস ! তুই দেখি অনেক কথা শিখে গেছি পদা । দাঁড়াবি নাকি কমলার সিটে ?

--- দিয়ে তো দেখতে পারতে ? সব তোমার হতো । যোজনা, আউট – যোজনা সব তোমার ।

--- যোজনা বহির্ভূতও জানিস ? বাজেট ববাদ্দ  জানিস ? ওটা না জানলেও চলে, শালার সেক্রেটারি অফিসার ঘরে এসে দিয়ে যাবে মাল্লু । মুখ্যমন্ত্রীর ত্রান তহবিলটার দিকে খেয়াল রাখতে হয় শ্রাবণ ভাদ্রমাসে ।

--- জানি গুরু, ফ্লাড হয় ।

--- কিছুই জানিস না । এক কথায় বাজেটের বাইরে যা, সবই মুইঠের চাল ।

--- হা হা হা । হাসির কথা নয় মোটে । মন্ত্রী হলে উন্নয়ন থামতে দেওয়া চলবে না । পকেট গরম রাখতে হয় ।

--- 'দৈনিক প্রভাত ফেরি’ তে তোমার টাকা বিলোনো নিয়ে লিখেছে ।

--- লিখুক ।

--- ওটাও তুমি লিখে দিয়েছ নাকি ?

--- হা হা হা ।

--- ‘জনপতাকা’য় তোমার প্রতিক্রিয়াও ছেপে দিল পাঁচকলম । তুমি নাকি খুব রেগে গেছ । বলেছ, তুমি জমিদারের নাতি, ভিকি রিনও । তোমার পকেটে টাকা থাকবে না, তো কার কাছে থাকবে ? গরিব জনতাকে প্রয়োজন মতো আর্থিক সাহায্য করায় কোন অন্যায় নেই ।

--- প্রশ্ন করলেই হয় না, উত্তরটাও রেডি করে দিতে হয় মিডিয়াকে । উল্টোপাল্টা ছাপলে চলে ? পাবলিককে কনফিউজড করে দিতে হয়, দানবীর ইমেজটা রাখতে হয় । দুছত্তর পড়া শহুরে পাবলিক আর কম্যুনিস্ট এপিকস কী বলল তাতে বুদ্ধ বিশ্বাসের কিছু যায় আসে না । আমার ভোটার আমার ইশারায় চলে ।

--- শুধু ইশারায় হয় না বস, টহলও দিতে হয় ।

--- টহলদার ব্যাটেলিয়ানের খবর কী ? সব খুশ তো বাইক বাহিনির ?

--- কোথায় খুশ ? চারমাস থেকে ফাণ্ড বন্ধ । সব ক্লাবেরও বন্ধ শনিবাড়ি বন্ধ মাজারও বন্ধ ।

--- শালার ফিনান্সটাকে নিয়ে আর পারি না । আমার ফান্ড বন্ধ করলে আগুন জ্বালিয়ে দেব শালার লেজে । কানা কাহারকে সুপারি দিয়ে দেব নাকি ? বহুত চর্বি জমে গেছে ।

--- একে বারে খতম বস ?

--- না তো কী ? সোজা আঙ্গুলে না হলে করতে হবে । আমি আলোচনা ফনায় বিশ্বাস করি না । ডিরেক্ট অ্যাকশন । বাপুজি বলেছেন করেঙ্গে আউর মারেঙ্গে । নানা সিংএর কেস জানিস না ?

--- আমাদের নানা ? অটো ইউনিয়নের সেক্রেটারি ?

--- ইস্কুলের পিওনি করে বাপ রিটায়ার করেছে । পেনশন তো নেই, লাখ দুয়েক টাকা ব্যাঙ্কে রেখে নেড়ে চেড়ে খাচ্চে । নানাকে অটোর পারমিট করে দিলাম । মন্ত্রী হয়েছি বলে তো আর গাড়ি কেনার টাকা দিতে পারি না, তাহলে তো সবাই চাইবে । বাপও দেবে না, বলে খাব কী ? নানা বলে, অটো কিনলে ইনকাম হবে । ইনকামের কথা শুনে বাপ খিস্তি দেয় । বাপ তুলে গালাগালি দেওয়ায় নানার মটকা গরম হয়ে যায় । কুপিয়ে মেরে ফেলে । বাপটাও ছিল গান্ডু, বুঝিয়ে সুজিয়ে দুকথা বলতে পারত, বুড়ো মানুষ খিস্তি দেবে ? সেইতো নানাই সব পেলো, পুলিশ ওর চুলও টাচ করতে পারে নি । তো যে  কথা বলছিলাম অর্থমন্ত্রীও আমার সিনিয়ার, বাপের মতো । পারবি তো পদা ?

--- প্রদ্যুমন গোয়ালাকে যা হুকুম করবে গুরু । তবে পার্টি লেবেলটা একটু চাঙ্গা করতে হবে । কয়েকটা বাইক কিনতে হবে, সাহারা আশ্রম এনজিও টার জন্য কিছু করতে হবে জোরদার । ঢালতে হবে কিছু ।

--- সাহারা আশ্রম মানে প্রতিবন্ধী এনজিও সেক্রটারি সত্যচরণকে দিয়ে হবে না, বহুত টেঁটিয়া ছোকরা । কথা মেনে চললে মালামাল করে দিতাম । এবার তবে আঙ্গুল চুষো শালা ।

--- বর্ষায় বড় কষ্ট ওদের । নৌকো করে যেতে হয় আশ্রমে । পঁচিশজন প্রতিবন্দী । ফ্যাক্টরিটা বাইরে কোথাও নিয়ে গেলে হয় না ?

--- জমি নেই, টাকা নেই ? দিতে হবে ? দেব । কাকে বলব টাটাটি, মেগর না ইউনিসেফ ? সরকারও দেবে । কিসের ফ্যাক্টরি ? ফ্যাক্টরির জন্য কেউ দেবে না ।

--- না না, ওরকম নয় । ফ্যাক্টরি মানে হস্তশিল্প আশ্রম, ধূপকাঠিটাঠি বানায় । শারীরিক প্রতিবন্ধী তো সব ।

--- চাতলা হাওরে প্রতিবন্ধী কোথায় রে ব্যাটা ? এত ঢপবাজি তোদের, সব তো মৎস্যজীবী । মাছমারা ছাড়া কিসের কাজ ওখানে, মাছের গন্ধ তাড়ানোর ধূপ নাকি ?

--- না গুরু, সব ক্লিন । সারা জেলা থেকে প্রতিবন্দী জড়ো করেছে সত্যচরণ । বলেছে হোম করবে, স্কুল বানাবে । ভোটার লিস্টেও থাকবে ।

--- আমি কিন্তু আবার কমলাক্ষ কেস চাই না । কথা বলে ঠিক করে নে কত পার্সেন্ট ?

প্রদ্যুম্ন – সত্যচরণ

--- দেখো প্রদ্যুম্ন আমরা, কিন্তু কোন কাটমানি দিতে পারব না । এরজন্য যদি অনুদান না পাই না               পেলাম ।

--- ঠিক বলেছেন সত্যদা আমিও এর এগেইন্সটে । প্রদ্যুমন সবরকম দুনম্বরী কাজের বিপক্ষে ।

--- তবে এসব কথা তোমার মাথায় ঢুকালো কে ?

--- যারা দেবে  তারা ।

--- ও বাবা, সর্ষের মধ্যেই ভূত ? তা হলে কী আর করা ।তবে একটা কথা বলি তোমায়, ভাল কাজ করতে গেলে বাধা আসবেই । তা বলে বাধার কাছে হার মানব ? এ তো হয় না । তা তোমাদের মন্ত্রীমশাই কী বলেন ?

--- তিনি আমাদের সদাশিব মানুষ, কর্মযোগী । কর্মই তার ধর্ম । তিনি সাহারা আশ্রমের জন্য অনেক কিছু করতে চান ।

--- আমাদের এমপিও বলেছেন কেন্দ্রিয় প্রকল্পে ঢুকিয়ে দেবেন ।

--- ওসব ঢপের কথায় কান দেবেন না সত্যদা । আমাদের পার্টি যা করবে, ওরা পারবে না । ওদের কোন পাওয়ার নেই । সেন্টারেও আমাদের সরকার ।

--- আমরা রাজনীতির মানুষ নই প্রদ্যুম্ন । যে যা দেয় প্রাণভরে নিই । তবে এটাও জানি আমাদের মন্ত্রীর মতো উদার হৃদয় মানুষ দেখে নি বরাক উপত্যকা । পকেটে লাখ লাখ টাকা নিয়ে ঘুরেন । যার যা সমস্যা, অবস্থা বুঝে সাহায্য করেন । একেবারে বাগদাদের হারুণ রশিদ ।

--- এ নিয়েও কী কম কথা সত্যদা ? বলে কী না ঘুষের টাকা । বুদ্ধ বিশ্বাস দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না জানবেন । তার নিজেরই এত আছে যে বিলিয়েও শেষ হবে না ।

--- তিনি তো মুখের উপর জবাব দিয়েছেন । বলেছেন তিনি জমিদারের নাতি, ভিকিরি নন ।

--- আমাদের মিনিস্টার সাধারণ নেতা নন, মুখের কথায় সমস্যার সমাধান করেন না । তিনি আমাদের গুরু, পথ প্রদর্শক, মানুষের দুঃখ বুঝেন । বলেন ভাল কাজ করতে গেলে টাকার দরকার, টাকা ছাড়া হয় না, তাই দরকার মতো টাকা দেন বাজেট বহির্ভূত, পকেট থেকে । আপনি আর না করবেন না । যা দেওয়ার দিয়ে দেবেন ।

--- দেব ?

--- দেখুন না একবার বুদ্ধ বিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করে । আপনাকে একটা গল্প বলি শুনুন । আপনার মতোই একজন, নাম তাঁর মৃণাল । মৃণাল সরকার পাবলিক হেলথ এর ই ই । আমাদের মন্ত্রী তখন বেকার, ছোটখাটো কন্ট্রেক্টারি করে জনতার সেবা করেছেন । মৃণালদা আর পাবলিক হেলথ দিয়েই তার রাজ্যপাট । মানেন খুব শ্রদ্ধাও করেন । একবার মৃণালদার কঠিন অসুখ, কলকাতার বেলেভিউতে ভর্তি । বুদ্ধদা চলে গেল কলকাতা । কী বলল জানেন, বলল চিকিৎসার খরচ যা লাগে দেবে বুদ্ধ বিশ্বাস, বলল ওজন করে টাকা দেবে, একদিকে মৃণালদা আর একদিকে হাজার টাকার বাণ্ডিল । বলে ঝরঝর করে কেঁদেছিল । পাঁচলাখ টাকা দিয়েছিল ক্যাশ ।

--- আমার নিজের জন্য কিছু চাই না প্রদ্যুম্ন ।

--- সে তো জানি দাদা । এবার দেখুন না আপনার সাহারা আশ্রমের জন্য কত কিছু হয় । ওপেনিং এর দিনঠিক করে ফেলুন । আপনি শুধু লিস্ট দিয়ে দেবেন, হুইল চেয়ার চশমা অন্ধদের পড়ার বই বৈশাখী জয়পুরের হাত পা সব দেবেন মন্ত্রী, নিজের ফাণ্ড থেকে । তবে আপনাদের জায়গাটা বড় ভিতরে, জল দিয়ে ঘেরা, রিস্কি !

--- কী করব বল, কৈবর্তদের কাছে এসেছিলাম হাঁসমুরগি পালনের প্রশিক্ষণ দিতে, যাদবচন্দ্র পাটনির মেয়ে পূর্ণিমার হাত নেই একটা । বলল, আমাদের জন্য কিছু করতে পারেন না ? বললাম, পারি । পঞ্চায়েত থেকে এই জল ঘেরা জায়গাটা দিয়ে দিল । রিস্ক নেই কিছু শুধু বর্ষার সময় একটু কষ্ট, নৌকো লাগে । ব্যাস, ঘর বানিয়ে শুরু করে দিলাম ধূপকাঠি ।

--- আর পূর্ণিমা ?

--- মানে, আছে ।

--- আছে তো ? ব্যস কোন চিন্তা নেই ।

--- কেন ?

--- না, মানে হোম করতে চান তো, স্কুলও । কাজের জায়গা একটু খোলা মেলা হওয়া দরকার । অফিসটা থাকুক এখানে যেমন আছে, উদঘাটনও এখানে হোক আপাতত । বাগবাহারে জমি পাবেন দুবিঘা । মন্ত্রী সব করে দেবেন । তখন আবার হবে যশন । আবার ফান্ড ।

--- কিন্তু বাগ বাহারে তো জনবসতি কম । টিলা বেশি, ডাকাতি হয় ।

--- হবে না । মন্ত্রী কী আর না বুঝে ব্যবস্থা করেছেন । ডাকাতি হবে না ।  

সুবল – আফজল

--- কী বুঝলি আফজল, ধান্দাটা বুঝতে পারলি ? মিনিস্টার নিজের কোলে ঝুল টানল । বিধানসভা এলাকায় ঢুকিয়ে দিল ।

--- দিক না, আমাদের কী ? জমি হবে, টাকা হবে সাহারা আশ্রম এর । শুনলি না জয়পুর পা লাগিয়ে দেবে, হাত দেবে । প্রতিবন্দীদের দুর্গাঠাকুরের চালির ভিতর ঢুকিয়ে দেবে সাজিয়ে গুছিয়ে । সবাই ধন্য ধন্য করবে । আচ্ছা সুবলদা আমরা তো নয় লুলা ল্যাংড়া মানুষ, তোমার তো দেখি সব ঠিকঠাক, কোন সুবাদে ?

--- তোদের সত্যদা কোন সুবাদে ? নিম্নবিত্ত পড়াশুনা করলে কাঁচা ব্রেন এর জন্ম দেয়, বিএ পাশ করলে উল্টোপাল্টা ভাবে । এত ভাবিস না, পা-এর মাপটা দিয়ে দে, আর পূর্ণিমার হাত । একটা দুটো দেবে, বাকিদের ভাঁওতা । অনুদানের টাকা ঝেড়ে দেবে ।

--- মিনিস্টার নিজের ফাণ্ড থেকে দেবে ।

--- জমিদারের নাতির ভাণ্ডার ? কথার প্যাঁচ বুঝলি না, বিধায়ক তহবিলের টাকা দেবে ।

--- তাহলে তো আরো ভাল, হিসেব পত্র থাকবে, সত্যদা অনিয়ম হতে দেবে না ।

--- সোনার মুর্তি হলেও মাটির পা কিন্তু সত্যচরণ মণ্ডলের । আর পদা, প্রদ্যুম্ন যা একখানা জিনিস, একেবারে ইসপল্টুর টিন, ঢেউ খেলানো । সোজা বাঁকা কথায় সাইজ করে দেবে সত্য মহারাজকে ।

প্রদ্যুম্ন – সত্যচরণ

--- প্রদ্যুম্ন, মন্ত্রীর জন্য একটা বড় দেখে নৌকোর ব্যবস্থা করি ? আমাদের তো ছোট ছোট, ডিঙি ।

--- করবেন ? ঠিকাছে ।

--- পুলিশকে তো বলতে হবে ?

--- আমাদের মন্ত্রীর পুলিশ লাগে না । যুবরাজ বাইকবাহিনি ইন্ডিয়ান আর্মি থেকেও পাওয়ার ফুল । স্থল বিমান নৌ ।

--- বাইকবাহিনি বুঝলাম, যুবরাজটা কী ?

--- আমাদের পার্টির নেতা ।

--- এত বাইক ঢুকবে কী করে এই জল জঙ্গলের পথে ?

--- এর জন্যই তো বাইক । বাইক যেতে পারে না কোথায়? বাইক হল আমাদের হেলিকপ্টার, টাটা চেসিজ,লঞ্চ নৌকো । তবে পুলিশকে জানিয়ে রাখবেন । আজকাল কত কী ঘটছে, ল্যান্ড মাইন ওয়াটার মাইন সব চেক করবে ওরা । ফুলের তোড়া টোড়া দেখে নেবেন ভাল করে ।

--- ওনিয়ে ভাবতে হবে না  । পূর্ণিমা আছে আফজল আছে ।

--- আফজল ? একবার দেখিয়ে দেবেন তো ? কার্ড ছাপিয়েছেন ?

--- সানগ্রাফিকস একদিনে করে দেবে । কার কার নাম দেব ?

--- উপাচার্য প্রধান অথিতি আর মন্ত্রী উদ্বোধক । মাননীয় লিখবেন । আপনার আর আমার নাম থাকবে নীচে । ভবদীয় ।

--- তোমার নামের নীচে কী লিখব ?

--- আহ্বায়ক ও ছাত্র নেতা । লুলা লেংড়াদের ইস্কুল যখন ছাত্র নেতা থাকা দরকার । কাল থেকেই চেক পড়তে শুরু হবে । কালেকশন করিয়ে নেওয়া আপনার দায়িত্ব । ওপেনিং এর দিন ক্যাশ রেখে দেবেন আমার গাড়ির ভিতর । আমি গুণে নেব । ফিফটি ফিফটি না হলে উদ্বোধন ক্যানসেল ।

আফজল – সুবল

--- যাই বলো সুবলদা, আমাদের মন্ত্রী কিন্তু বাঘের বাচ্চা । কেমন লাফ দিয়ে উঠলো নৌকোয়, কী ভাষণ দিল, এতসব প্রকল্প ঘোষণা করল, এসব কী হবে সত্যি সত্যি ?

--- হবে না কেন ? মন্ত্রী চাইলেই হবে । শ্যামপুরের মতো বড় গ্রাম আছে নাকি এই হাওর এলাকায়, এত এত ভোট ।

--- মনসাবাড়ির উন্নয়নের জন্য এককথায় দিয়ে দিল কুড়ি হাজার । বলল তো আবার আসবে নতুন ইস্কুলের উদ্‌ঘাটনে ।

--- সে তো জঙ্গলের ভিতর বাগবাহারে, ডাকাতের আড্ডা ।

--- বলেছে ডাকাতি হবে না ।

--- সে কী মন্ত্রী না ডাকাতের সর্দার ? এখন পা চালাও আজল সর্দার, হরি ঘোষের দোকান থেকে স্পেশাল মিষ্টির প্যাকেট আনতে হবে অথিতিদের জন্য ।

--- তবে সুবলদা, মিনিস্টারের জন্য ফুলের তোড়াটা তুমি বানিয়েছ দারুণ । পূর্ণিমার এক হাতে উঠাতে কষ্ট হচ্চিল । এত ফুল তুমি পেলে কোথায় ?

--- গোপালজির মন্দিরে কত ফুল প্রতিদিন নষ্ট হয়ে যায় । গোঁসাইজিকে বলে রেখেছিলাম ফুল লাগবে মন্ত্রীর জন্য । ভয়ে আর গোপালঠাকুরকে পুষ্পসেবা করেন নি তিনদিন ।

--- গোপালজির মন্দির কোথায় গো সুবলদা ?

--- ডলু বাগানে ঢুকার মুখে কত বড় আখড়া ।

--- তবে দাদা মন্ত্রীর তোড়ায় এত সাদা ফুল দিলে কেন ? উপাচার্যকে তো লাল হলুদ মিশিয়ে দিয়েছ ।

--- ও পূর্ণিমা বানিয়েছে । আমি সবসময় সাদা তোড়াই করি ।

--- তবে মিলে গেছে সুন্দর । মন্ত্রী মনটাও সাদা । এত প্রতিশ্রুতি দিলেন মনে হল যেন হয়ে গেছে ।

--- একে বলে জনমোহিনী । ভোটের লাগিয়া কত কথা বলতে হয় । ভোট বড় বালাইরে আফজল, ভোটহলে টাকা যায় । এমএলএ হয়, মন্ত্রী হয়, টাকা হয় ।

--- আমাদের মন্ত্রী ওরকম নয়, তিনি পকেটের টাকা খরচ করেন, তিনি জমিদারের নাতি ।

--- তিনি বিভূতি বাবা, হাত ঘষলেই টাকা । আচ্ছা রে আফজল তোর বয়স কত ?

--- পঁচিশ বছর ।

--- আমারও তো পঁচিশ, তাহলে তুই আমাকে সুবলদা ডাকিস কেন ?

--- কী ডাকব বল ? প্রতিবন্ধী মানসিকতা সবাইকে ডরাই ।

--- ডাকবি না । আচ্ছা আফজল তুই আমাদের ধর্ম সম্পর্কে কী জানিস ?

--- সবাই যেমন জানে, বারো মাসে তেরো পার্বণ । দুর্গাপূজা মনসা পূজা । এখন তো হাওর ভরে মনসা পূজার ধূম । পুঁথিপাঠ, খিচুড়ি ভোগ এই শ্রাবণ মাসে ।

--- তোরা যাস ?

--- মনসা পূজায় সবাই যায়, খায় ।

--- দুর্গা পূজায় ?

--- যায়, বোধহয় বাধা নেই, বড়রা খুব একটা যায় না ।

--- মন্ত্রীর বাড়িতে মহা ধুমধাম করে হয়, একদিন থাকে গরিব দুঃখীর খিচুড়ি ভোগ, বাকি কয়দিন মোচ্ছব । বড় বড় গাড়ি বড় বড় মানুষ বড় বড় খাওয়া, পাঠাবলির মাংস ।

--- মুসলমান ধর্মে এসব নেই । ধনীগরিব সবাই পাশাপাশি নামাজ পড়ে ।

--- এ নমাজেই সীমাবদ্ধ সাম্যবাদ । আশরাফ আতরাফ শুনেছিস ?

--- আমরা আতরাফ, সম্ভ্রান্ত নই । এসব পাল্টানো যায় না ?

--- যায় । একজন বড় মাপের লেখক, সুনীল গাঙ্গুলি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মাপের, একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখলেন মানুষ যেমন ছিল তেমনই আছে, শুধু তারা ধর্ম ভুলে গেছে । পৃথিবী থেকে সব মন্দির মসজিদ গির্জা গুরদোয়ারা উধাও হয়ে গেছে । জায়গাগুলো খালি পড়ে আছে, কত কত জায়গা । গ্রামের জায়গাগুলিতে ধানক্ষেত গমক্ষেত মূলোক্ষেত হল, পুকুর গুলিতে মাছের চাষ বেড়ে গেল । শহরের গ্রাউন্ড জিরোতে ছোটদের খেলার মাঠ হল ।

--- স্বপ্ন । আমরা দেখব কবে ?

--- দেখব দেখব । ধর্ম নিয়ে এখনই নাড়াচাড়া করা ঠিক হবে না । হিতে বিপরীত হতে পারে ।

--- ধর্ম নিয়ে কিছু বললে মোল্লারা ক্ষেপে যায় ।

--- গুরু পুরুতরাও দাঙ্গা করে ।

--- তা হলে থাক ।

--- আমার বন্ধু আমিন আশরাফকে বলেছিলাম ‘ধর্মছাড়ো’ আন্দোলন শুরু করতে । রাজি হয়নি, বলেছে, মানুষের সঙ্গ ছাড়া কোন সংগ্রাম হয় না, তাই থাক না । বলেছে, আপাতত ভোরের আজানের বিকল্প কিছু দিতে পারব না কৃষককে তাহলে কেন কেড়ে নেব । কমসে কম ভোরের বেলা ঘুম থেকে তো উঠছে প্রার্থনা করছে চাষ আবাদে যাচ্ছে । মেনে নিয়েছি আর সুবল মণ্ডলের দেখা এক সকালের গল্প, শুনিয়েছি ওকে ।

--- কী গল্প সুবলদা ?

--- আবার সুবলদা ?

--- তুমি যে গুছিয়ে কথা বলতে পার দাদা ।

--- হ্যেঁ, আমি ও দেখেছি, ঘুম থেকে উঠে দেখেছি আমাদের তিনটে জেলা, মিলে একটা দেশ হয়ে গেছে । সেই দেশের কী মসৃণ রাস্তা, ৩০ মিনিটে করিমগঞ্জ পৌঁছন যায়, শিলচর থেকে হাইলাকান্দি ২০ মিনিটে । মহাসড়ক দিয়ে গৌহাটি তিন ঘণ্টা । ব্রডগেজ হয়ে যাওয়া পাহাড় লাইনে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে । পাড়ায় পাড়ায় পার্ক হয়েছে, খেলার মাঠ হয়েছে । পাঠশালা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা হয়েছে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক । চাল ডাল মাখনের প্যাকেট নিয়ে কালোবাজারি নেই । ওজন করে মাছ বিক্রি বন্ধ, ছোট মাছের ভাগা আর বড় মাছের পেটিগজ মুড়ো । ফিরে এসেছে আদর্শবাদী নেতার দিন । যারা বাজেট বরাদ্দ, বাজেট বহির্ভূত কিংবা ত্রান তহবিলের অর্থে ব্যক্তিগত ভূসম্পত্তির বহর বাড়িয়েছে তারাও রহস্যজনক ভাবে কোন পুলিশ কেস ছাড়া উধাও হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে ।

--- আমাদের মিনিস্টার বুদ্ধ বিশ্বাস তো ভাল মানুষ ।

--- তলিয়ে গেছে হাওরের জলে, বডি পাওয়া যায় নি । বিস্ফোরণে ডুবে গেছে ।

--- বিস্ফোরণে তো উড়ে যায় সুবলদা ? ডুবল কী করে ?

--- আবার সুবলদা ? আরে, এই তো প্রদ্যুম্নর গাড়ি । তোর আর যাওয়ার দরকার নেই । আমি গাড়ি নিয়ে যাব আর আসব । তুই চলে যা আফজল । মন্ত্রীর তাড়া আছে, চলে যাবে তাড়াতাড়ি ।

--- মিস্টির প্যাকেট নিয়ে যাবে না ?

--- মন্ত্রীর প্যাকেটে মিস্টি থাকে না ।

পূর্ণিমা – আফজল

--- সত্যদা বেঁচে গেছে । সাঁতরে উঠেছে পারে ।

--- আর মিনিস্টার ?

--- ডুবে গেছে, উঠেনি এখনও । একটা জোর শব্দ হয়েছিল । পদার হাতে ফুলের তোড়া ছিল, ভম করে শব্দ হয় । পদাও ডুবে গেছে ।

--- তুই দেখেছিস পূর্ণিমা ?

--- পারে দাঁড়িয়ে দেখলাম বিসর্জন ।

--- মালফাল খেয়েছিল ?

--- মন্ত্রীরা ওসব খায় নাকি ?

--- না, পদার কথা বলছি । নেশার ঘোরে মিনিস্টারকে নিয়ে ডুবে গেল । বখরা নিয়ে মনোমালিন্য হতে পারে । এত এত টাকার ফাণ্ড এল সাহারা আশ্রমে ।

--- আফজল ? তোর মুখে কিছু আটকায় না ।

--- ভাবছি, সুবলদাও কী নেশা করেছিল ?

--- সুবলদা কে ?

--- কী জানি কে ? পঁচিশ বছর বয়স, মন্ত্রীর জন্য ফুলের তোড়া বানিয়ে দিল ইয়াব্বড় । যেটা তুই তুলে দিলি হাতে ।

--- ভারি সুন্দর সাদা ফুলের মালা বানিয়েছিল । মন্ত্রীরও পছন্দ হল, বলল সঙ্গে নিয়ে যাবে ।

--- সুবল কী করে বলল বিস্ফোরণের কথা, ডুবে যাওয়ার কথা । সুবল কী তবে উগ্রপন্থী, বোমা ছিল ফুলের তোড়ায় ?

--- দেশভক্ত হতে পারে, আর কিছু বলল ?

--- না, তবে গমগম করে একটা গানের কলি গাইল । শেষ শব্দটার মানে জানতে চাইল আমার কাছে । বলল, বলতো ‘খর করবাল’ কথার অর্থ কী ?

--- আমি জানি ।

--- অর্থ জানিস ?

--- গানটা তো বন্দেমাতরম ।

                                                                                                                  

কোন মন্তব্য নেই: