“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪

রিক্সাওয়ালা....

(C)Image:ছবি
।। পার্থ ঘোষ।।
         উত্তুরে বাতাসের দাপটে আজ একটু তারাতাড়িই সবাই ঘর মুখো হয়েছে।রাত বাড়ার সাথে সাথে শীতও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ইলেক্ট্রিকের ঠান্ডা লোহার পোষ্টগুলো বেয়ে চুয়িয়ে চুয়িয়ে নামছে আলো। রাজপথের বুকে চলছে কুয়াশাদের শিশির হওয়ার গল্প । এই ক'বছরে শহরটার চেহারাই আমূল বদলে গেছে।গভীর রাতে উদোম বুকের এই শহরটা এক অদ্ভুত মায়াজাল সৃস্টি করে রাখে এখন।ছোট শহরের তকমাটা ধীরে ধীরে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে যেন।দ্রুত বদলাতে থাকা শহরটায় পাঁচ সাত কিলোমিটার দূর থেকে রোজই আসতে হয় সুধনকে। তিনচাকার রিক্সাটা তার রুটিরুজির একমাত্র অবলম্বন।পায়ে চেপে মানুষ গুলোকে টানতে টানতে জীবনের প্রায় আদ্ধেক রাস্তা পেরিয়ে  গেছে।

         হ্যলোজেনের স্তিমিত আলোতে একটা রাজনৈতিক পতাকা অবিরাম দুলছে। পতাকার ছায়ায় কোন দলের অহংকার লেখা থাকেনা,তবু সুধনের অর্থহীন দৃষ্টি আজ আঠার মতো আটকে থাকে তাতে। তিনচাকার রিক্সার হুড খুলে যাত্রী সিটে ঠায় বসে থাকে। ঘরে ফেরার তাড়া নেই কোন,তবুও বাড়ির কথা মনে হতেই বুকের ভেতরটা খামছে ধরে কেউ।

           সারাদিনের ক্লান্ত ও ঠান্ডা পা'দুটো উনুনের আঁচে সেঁকতে সেঁকতে কতকাল মলিনার মায়ের সাথে গল্প হয়না। ' আর দুটো ভাত দিই? একটু ঝোল নাও, শুঁকনো ভাতগুলো গলা দিয়ে নামবে কেন? '... এমনই দু'একটা অভ্যস্ত বাক্য ছাড়া মলিনার মা যেন অন্য কোন কথা ভুলেই গেছে আজ। সুধনের চিন্তার ভাঁজে ভাঁজে এবার নানা পুরানো স্মৃতি এসে ভিড় জমায় । বিয়ের পর এই মুখটাকে বড়ো মিস্টি লাগতো তার,এখনো যে ভাল লাগেনা তা নয়। নাকছাবিটা সুন্দর মানাতো ওকে। প্রথম পোয়াতি হবার সময় কলসি নিয়ে পড়ে কী কান্ডটাই না বাঁধিয়ে ছিল। শম্ভু ডাক্তার না থাকলে মারাই যেত সেবার।এতরাতে জোরে হাসতে বারণ করেও লাভ হতোনা কিছুই, পাহাড়িয়া ঝর্নার মতো খলখলানি হাসিতে মাটিতে নুয়ে পড়ত।খাওয়া শেষ হলে সুধন আজ ভাতের থালাতেই মুখ ধূয়ে নেয়। মলিনার মা পাশের দোচালাটায় চলে গেলে, পা সেঁকতে শুরু করে উনুনে,মৃতপ্রায় আগুনটাকে একটু উস্কে দেয়।আবারও ভাবনাগুলো ফিরে আসে। নিজের মেয়ে বলে নয়,পাড়াপড়শীরাও স্বীকার করত, মলিনার রূপের প্রশংসা করত সবাই।বাড়ন্ত শরীরটার দিকে চোখ গেলেই মেয়ের বিয়ের জন্য সুধন উতলা হয়ে উঠত। পোড়ামুখী নির্ঘাত প্রেমে পড়েছিল,আজো ভাবতে গেলে চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে তার।অবৈধ গর্ভের লজ্জায় নদীর চড়ার ঐ কদম গাছ গাছটায় ঝুলে যাবার আগে পর্যস্ত কেউ কিছুই জানতে পারেনি।সুধন অভ্যাসের বিড়িতে একটা জোরে টান মেরে ভাবতে থাকে এত উঁচুতে মেয়ে তার উঠল কি করে? তবে কি গাছেও চড়তে শিখেছিল লুকিয়েই ! মেয়ের নিথর শরীরটা নামিয়ে আনার সময়ও বুকটা আজকের মতোই গভীর যন্ত্রনায় কঁকিয়ে উঠেছিল।

          আজ চিন্তার রেশ বারবার ছিঁড়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে তার।একমাত্র জীবিত সন্তানের মুখটা মনে পড়তেই এক তীব্র কাঁপুনি দিয়ে উঠে সারা শরীর।ছেলে তার বড়ই ভাল। চাকরিতে নাম লিখিয়ে এসেই মরণ বাবার পা ছুঁয়েছে, প্রণাম করে বলেছে--- তোমাকে আর রিক্সা টানতে যেতে হবেনা।সারাজীবন অনেক করেছ বাবা।এবার বাড়ির ধারে কাছে সহজ কোন কাজ পেলে, ইচ্ছা হলে যেও। ' সেদিন আনন্দে সুধনের গলা ধরে এসেছিল, রা' সরছিলনা মুখে। সেদিন থেকে আর যায়নি রিক্সা নিয়ে,। এমন সুখের দিনের আশাতেই বোধহয় বাঁচে প্রতিটি বাপ।

       ছেলে আজকাল অনেক দূরে থাকে,নিজেই রান্নাবান্না করে। পরান নিজেই বলেছে বাড়িওয়ালাটা ভালই, তার দুটি যুবতী মেয়েকেও নাকি পড়াবার দায়িত্ব দিয়েছে পরানকেই।ওদের পড়িয়ে ঘর ভাড়ার টাকাটা উঠে যায়। ছেলে সবই বলেছে তবুও সে রাতেই মলিনার মা,মরণের জন্য পাত্রী দেখার কথাটা বলেছিল।সুধনের বেশ মনেও ধরেছিল কথাটা, মুখে কিছু না বললেও একবার ভাবার চেস্টা করে কল্পিত পুত্রবধূর মুখখানা। কত রক্ত-ঘামের, কত সাধনার ফল ছেলে তার। পড়ার খরচ চালাতে হিমসিম খেতে হয়েছে,রিক্সার মালিকের কাছে বারবার হাত পেতেছে। কস্টগুলো ক্রমে যেন ইতিহাস হয়ে গেছে।পরান বি.এ.পাশ করে আজ সরকারী স্কুলে মাস্টার হয়েছে।এখন পাড়ায় তাকে সুধইন্যা বলে খুব একটা কেউ ডাকেনা।মাস্টারের বাপ হবার গর্ব তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে সে। সন্ধ্যার পড়া ফেলে পার্টির ছেলেদের সাথে রাত পর্যন্ত আঠা পোস্টার নিয়ে যখনই বেরুত,খুব রাগ হত তার । কিন্তু ছেলে বুঝিয়েছে -- পার্টির কাজে যেতে হয় বাবা, নাহলে কথা কইবার জায়গা থাকেনা যে। সুধন মনে মনে ভাবে এই পার্টি বাড়িতে টিনের ঘর দিয়েছে,পাকা লেট্রিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে, এসব তো সত্যিই হয়েছে। তাই অকাট্য যুক্তি আর প্রমানের সামনে নিজের অপছন্দের কথা আর তুলে না,চুপ মেরে যায় সুধন।
          
             মাস কয়েক আগে ননীর চায়ের দোকানে সকালে চা খেতে খেতে শুনছিল,  নতুন সরকারী মাস্টারদের চাকরিগুলো থাকবে না আর, কিসের চাকরি নীতি নাকি মানা হয়নি তাই। নিরক্ষর সুধন এগিয়ে গিয়ে আরেকজনের ঘাড়ের উপর দিয়ে চোখ বুলাতে থাকে পত্রিকার পাতায়।কিছু বোধগম্য না হলেও সে নিষ্পলক তাকিয়েই থাকে পত্রিকাটার দিকে।এবার আট দশ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মোদ্দা ব্যাপারটা বুঝে নিতে চায়,এক অব্যক্ত আশংকায় গলাটা যেন শুকিয়ে আসছিল।
            চরম এক অস্থিরতার মধ্যেও একচক্কর বাড়ি যায়,মলিনার মাকে গিয়ে গোটা ঘটনাটাই বলেছে-,কিন্তু কথাটা পেড়ে তেমন পাত্তা পেলনা।

         পরান তার বন্ধু পাশের বাড়ির শেফালের কাছে প্রায়ই ফোন করে,আজো করেছে।আগেই বলে রেখেছিল তাই শেফাল ফোনটা এনে দেয় সুধনকে।চিন্তিত সুধন ত্রস্ত গলায় জিজ্ঞেস করে--কিরে,পত্রিকায় নাকি লিখেছে - তোদের চাকরিটা থাকবেনা ? ছেলে শাসিয়ে দেয়--সব বাজে কথা।দাদাদের সাথে কথা হয়েছে, সব গুজব,ফালতু কথা। ছেলের দাবড়ানিটা সুধনকে কিছুটা সাহসী করে,বুকে বল আসে তার।মানুষের আর খেয়েদেয়ে কোন কাজ নেই--পরের ভালটা কেউ দেখতেই পারেনা।মনে মনে বিড়বিড় করে কথাগুলো। সন্ধ্যাটা বেশ কিছুটা যুবতী হলে
             আবারও যায় চায়ের দোকানের পরিচিত আড্ডায়।এই আড্ডাটার একটা নেশা আছে,টানে খুব।বহু বছরের অভ্যাস। নিন্দামন্দ যেমন হয়,ভাল কথাও দু'চারটে শোনা যায়।প্রতি সন্ধ্যায় স্থানীয় বাংলা খবরটা সেই দাঙ্গার বছর থেকে এখানে শুনতেই হয় তাকে।আজো দিল্লির বাংলা খবরটা চলতে চলতেই এককাপ চায়ের কথা বলে। ননী হাতে চায়ের গরম কাঁচের কাপটা ধরিয়ে দিলে,স্থানীয় খবর শুরু হয়।প্রথমেই চাকরি যাবার খবরটা পড়া হচ্ছে। হাইকোর্ট শব্দটা বারকয়েক কানে আসে,বাকি কথাগুলো বিশেষ শুনতেই পায়নি,কিংবা শোনেনি সে।হাতে ধরা চা জুড়িয়ে জল।আজ দুপুরবেলাও ঠিকমত খেতে পারেনি।মাথাটা একটু ঝিমঝিম করছিল তার।পাঁচটা টাকা দিয়ে ঔষধের দোকানে প্রেশারটা মাপালে হয়। পরান বারবার করে বলে রেখেছে---মাঝে মধ্যে প্রেশারটা চেক করিয়ে নেবে। সবসময় অবশ্য ভালও লাগেনা।কিন্তু দু'একবার করিয়েছে।দোকানদার বলেছে সব ঠিকই আছে।প্রেশার মাপানোর মধ্যে এক অদ্ভুত ভালবাসা জড়িয়ে থাকে সুধনের।ছেলের কথা মত পাঁচটা টাকা নাহয় খরচই হল--তবু পরানের ভালবাসার হালকা চাপটা যেন টের পায় সে,প্রেশার মাপার যন্ত্রটার মোটা ফিতের চাপটা যেন অবিকল পরানের স্পর্শ।

           আজ এক জায়গায় বসে থাকতে ভাল লাগছেনা তার।একটা অস্থিরতা ভেতর থেকে কেবলই আনমনা করে দিচ্ছিল বারবার।হাঁটছে এদিক ওদিক।একটু যেন ঘেমেও উঠেছে, কুঞ্চিত কপাল জুড়ে বিন্দু বিন্দু অস্বস্তি। নিজের অজান্তেই হাটতে হাটতে কখন যে দীনেশ মাস্টারের বাড়ী পৌছে গেছে খেয়ালই করেনি।দীনেশ মাস্টার বড় ভাল মানুষ, দেশ বিদেশের অনেক খবরই রাখেন উনি।সুধনকেও ভালবাসেন নিজের মায়ের পেটের ভাইয়ের মত।এ বাড়িতে মুনিষের কাজে এলে দুপুরে ভাত না খায়িয়ে ছাড়েনই না। দীনেশ মাস্টার তাকে দেখেই বলতে লাগলেন--পরানের সাথে কথা হল কিছু? খবরটা শুনেই ওর কথা খুব মনে পড়ছিল। এবার হটাতই ধপাস করে ঠান্ডা পাকা মেঝেতে বসে পড়ে সুধন।হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করে।নিজের সাথে সারাদিনের নীরব যুদ্ধের পরাজিত সৈনিক এবার আর ধরে রাখতে পারেনা নিজেকে।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলতে থাকে-- আমি হাইকোর্ট বুঝিনা,সরকার বুঝিনা,এ কেমন অন্যায় মাস্টার?? এ কেমন অন্যায়? আমার এখন কি হবে? ছেলেটার চাকরি গেলে...... বলেই কান্না আরো জোর পায়।সুধন আর কথা বলতেই পারছিলনা। দীনেশ মাস্টার মলিনার মৃত্যুর ঘটনা জানেন,তাই সুধনের অজানা ভয়ের কারণটাও ভালই বুঝেছেন।অভয়ের সুরে বলতে লাগলেন--দেখইনা সরকার কী করে? কিছু একটা করবেতো নিশ্চয়। পরানতো আর একা না,দশ হাজার জীবনের ব্যাপার। ভেবনা সব ঠিক হয়ে যাবে। আর পরান আমাদের খুব বুঝের ছেলে,ভেবোনা কিছু.....
                দীনেশ মাস্টারের কথাগুলো সুধনের ক্ষতে যেন কিছুটা প্রলেপের কাজ করে।তবুও মনের অস্থিরতাটা কিছুতেই কাটছেনা।

             সবে পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এদিকটায় এখনো রাস্তায় আলো লাগেনি,বেশ অন্ধকার।সাবধানে লুঙ্গির খুঁটে হাত বুলিয়ে দেখে নেয়,বিড়ি,দেশলাই আর টাকা চল্লিশটা ঠিক আছে কিনা।বহুদিন সে হরিপদের বাড়ি যায়না।হরিপদের বাড়িতে এখন কম বয়সীদের নেশার আড্ডা। পরানের সন্মানের কথা ভেবে সুধন নেশা ছেড়েছে আজ অনেক কাল।তবুও আজ সাতপাঁচ ভেবে ঢুকে পড়ে,পেট পুড়ে দেশী মদ খায়,টলতে টলতে বাড়ী ফেরে।মলিনার মা প্রথমে কিছু না বুঝলেও, পুরানো উৎকট গন্ধটাকে চিনতে ভুল হয়না তার।মনে মনে ভাবে কত বছর বাদে আজ আবার নেশা করেছে।মলিনার মা কথা না বাড়িয়ে ভাত দেয়।ধীরে ধীরে সোহাগের গলায় বলে --আজ বুঝি প্রতাপের বাপের পাল্লায় পড়েছ? সুধন একথার কোন উওর না দিয়ে,নেশার সুরে বলে-- কাল থেকে আবার রিক্সায় যাব।মলিনার মা কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি।নেশার ঘোরে আগেও এমন উল্টোপাল্টা বকত,ভাবছিল আজও ঘোরেই বাজে বকছে। এবার সুধন ভাতের বড় একটা গ্রাস মুখে পুরে দিয়ে আবারও বলল--কাল ভোরে ডেকে দিও।সকাল সকাল না গেলে ভাল রিক্সা পাবনা। এরপরেও মলিনার মা কথাগুলো বিশ্বাস করেনি। সকালে ডাকতে হয়নি সুধনকে,নিজেই উঠে পড়ে।মুখ ধুয়ে বেড়িয়ে পড়ে রাস্তায়।চায়ের দোকানে প্রভাতী চায়ের আস্বাদ নিয়ে পুরানো রিক্সাওয়ালাদের সঙ্গ নেয়।মালিক পূর্বপরিচিত হওয়ার সুবাদে খুব বেশী কথা বলতে হয়নি,
             তিরিশ টাকা দিনে ভাড়া ফুরিয়ে একটা নতুন রিক্সা নিয়ে শহরমুখী হয় সুধন।অনেকদিনের অনভ্যস্ত পায়ের মাংসপেশিতে কিছুটা টান পড়ছিল ,তবু যেতে যে তাকে হবেই।জীবন যুদ্ধে স্থবিরতার আরেক নাম মৃত্যু।যুদ্ধ তার বাকি এখনো,তাই এই পথ তাকে চলতেই হবে।
              দুপুরবেলা হঠাৎই বি.এল.ও'র কিছু জরুরি কাজে কিছু না জানিয়েই বাড়ি ফিরে আসে পরান।বাবার খোঁজ করতেই মলিনার মা কাল রাতের সবকথাই ছেলেকে বলে। আবার সেই রিক্সায় গেল? -- বলে খানিক চুপ করে থাকে পরান। অপয়া ডিসেম্বরের সবে শুরু,আরো যে কী কী  দেখতে হবে কে জানে? কথাগুলো নিজের মনেই আওড়াতে আওড়াতে বাড়ির সামনেটায় গিয়ে দাঁড়ায় পরান।
         রাতে এত ঠান্ডা পড়ে অথচ এই দুপুরবেলার সূর্যের তাপে গা পুড়ে যায়।সবাই বলে টানের দিন,মাঠের তৃষার্ত গরু গুলোও মুখ তুলে আছে।এরই মধ্যে সুধন ফিরে আসে রিক্সা নিয়েই,বাপ ছেলের মুখোমুখি হয়, কিন্তু কেউ কিছুই বলে উঠতে পারেনি।কিছু অপ্রিয় কথা অনেক সময় মৌনী হয়ে বেশি জ্বালা দেয়।
           বাড়ির বাইরে রাখা রিক্সাটার কাছে যায় পরান। এর হাতল,চাকা,বেল, সব কিছুতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে সে।এই রিক্সার কামাই খেয়েই সে আজ এত বড় হয়েছে, রিক্সাটাকে খুব ভাল লাগছে তার।ছোট বেলায় যেমন পরান রিক্সা চালিয়ে খেলা করত,ঠিক তেমনি আজো চালকের আসনে বসে জোরে একটা চাপ দেয়,রিক্সাটা চলতে শুরু করে,আবার চাপ দেয়,রিক্সাটা দৌড়াতে থাকে এবার,মরণ চাপতে থাকে প্যডাল।গতি বাড়তে থাকে ক্রমে,আরো জোরে... আরো জোরে আরও আরও আরও....রিক্সাটা .প্রচন্ড এক গতিলাভ করে ছুটতে থাকে.....।

কোন মন্তব্য নেই: