“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫

আচ্ছা মাগো বলো দেখি রাত্রি কেন কালো?

(C)Image:ছবি



।। রজতকান্তি দাস।।

“আচ্ছা মাগো বলো দেখি রাত্রি কেন কালো?” একটি কবিতায় এক শিশু তার মাকে এই প্রশ্নটি করছে। তবে দেখেছি বাস্তবে শিশুরাও এতো বোকা নয়। ঠিক জানে যে রাত্তিরে আকাশে সূর্য থাকেনা তাই রাতের আকাশের রঙ কালো। তবে এই প্রশ্নটি যতই সহজ হোক না কেনো এর উত্তর কিন্তু এতটা সহজ নয়। এর উত্তর বের করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। কয়েক শতাব্দী লেগে গেছে এই আপাত উত্তরটির প্রশ্ন ও এর সঠিক উত্তর বের করতে। প্রশ্ন হলো এই শিশুর মুখের প্রশ্নটি এতো জটিল কেনো?

             রাতের আকাশ কালো কেনো এই প্রশ্ন করেছেন অতীতের বহু বিজ্ঞানীরাই। যেমন জোহানেস কেপলার, এডমন্ড হেইলি ও পরিশেষে ১৮২৩ সালে জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলহেম ওবলের্সও এই একই প্রশ্ন করে বিজ্ঞানীদের রাতের ঘুম কেড়ে নেন। প্রথমে দেখা যাক এই প্রশ্নটি বিজ্ঞানীদের মাথায় আসল কি করে।            মনে করলাম আমি একটি জঙ্গলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। চারদিকে গাছপালাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।আমি গাছগুলোর ফাঁক দিয়ে দিগন্তের আকাশ দেখতে পাচ্ছি। এই জঙ্গলের পরিধি যতো বাড়তে থাকবে আমি দিগন্তের আকাশ ততই কম দেখতে পাব। কারণ গাছের আড়াল ততই বাড়তে থাকবে। এখন যদি এই জঙ্গলটির পরিধি অসীম হয়ে যায় তাহলে কী হবে? আমি যে দিকেই তাকাবো কোনও না কোনও গাছই আমার নজরে আসবে। দিগন্তের আকাশ আর নজরে আসবেনা। মনে করি গাছগুলো যদি সাদা হয় আর দিগন্তের আকাশ কালো তাহলে জঙ্গলের দিকে তাকালে আমি শুধু সাদা রঙই দেখতে পাবো কারণ দিগন্তের কালো আকাশ আমি আর দেখতে পাচ্ছি না, তাই।        যদি ব্রহ্মাণ্ডের প্রসঙ্গে আসি তবে দেখি যে আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড হলো অসীম, অনাদি ও অনন্ত। এখানে আকাশ কালো ও নক্ষত্রগুলো সাদা। যেহেতু ব্রহ্মাণ্ড অসীম তাই যেদিকেই দৃষ্টি যাবে সেদিকেই কোনও না কোনও নক্ষত্রের উপরই দৃষ্টি পড়বে। তাই রাতের আকাশ হতে ছিল সাদা। অথচ আমরাতো কালোই দেখি।      রহস্যটা কি?           ‘ব্রহ্মাণ্ড হলো অসীম, অনাদি ও অনন্ত’। একসময় বিজ্ঞানীদের মধ্যেও এই ধারণাই ছিল। দুঃখের বিষয় বিজ্ঞান ও সাহিত্যের মধ্যে এক প্রাচীর গড়ে ওঠায় অধিকাংশ কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে এই ধারণা আজও আছে। ব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর হিসেবে শ্রীকৃষ্ণেরও আরেক নাম অনন্ত। ‘অনন্ত রাখিলো নাম অন্ত না পাইয়া’। এই ভ্রান্ত ধারণাটির জন্যই রাতের আকাশ কালো কেন এই প্রশ্নের উত্তর পেতে কয়েক শতাব্দী পার হয়ে গেছে। এ ছাড়া এই ব্রহ্মাণ্ড অনন্ত যেমন নয় তেমনি অনাদিও নয়। আজ থেকে প্রায় ১৪৭০ কোটি বছর আগে একটি ধূলিকণার চাইতেও ছোট আকার থেকে এই ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম হয়েছিল। (সৃষ্টি কথাটা ব্যবহার করলাম না কারণ কেউ কেউ আবার স্রষ্টার পেছনে দৌড়বেন। আমি নিজে পুরোপুরি নাস্তিক নই যদিও, তবে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনায় এই প্রসঙ্গে আর আসতে চাইছিনা।) তখন থেকে সময়েরও শুরু। এই প্রায় ১৪৭০ কোটি বছর ধরে ব্রহ্মাণ্ড ক্রমশ আয়তনে বাড়ছে। শুরুতে খুব দ্রুত গতিতে বেড়েছিল, সময়ের সাথে সাথে বাড়ার গতি কমে এসেছে। এখন প্রশ্ন হলো রাতের আকাশ কালো কেন?

    ১) ব্রহ্মাণ্ড অসীম নয় সসীম।

    ২) ব্রহ্মাণ্ড অনাদি নয়। অর্থাৎ অনন্ত কাল ধরে আছে এমন নয়। তাই এ রকম বহু তারকাপুঞ্জ আছে যেখান থেকে আলোকরশ্মি এখনও পৃথিবীতে এসে পৌছয়নি।

    ৩) এমন কোটি কোটি নক্ষত্র আছে যেগুলো ইতিমধ্যেই নিভে গেছে। সম্ভবত এগুলোর সংখ্যা জাজ্বল্যমান নক্ষত্রের চাইতে বেশি।আকাশের কালো জায়গায় এ রকম নিভে যাওয়া নক্ষত্রের সংখ্যা নেহাত কম নয়।

    ৪) বহুদূরের নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে আলোকরশ্মি আসার সময় দ্রুতগতিতে ধাবমান নক্ষত্রপুঞ্জগুলোর আলোকের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ডফ্লার্স এফেক্টের ফলে বেড়ে যায়, ফলে আমাদের আর দৃষ্টিগোচর হয় না। কারণ আলোকরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য একটা সীমার মধ্যে থাকলেই আমাদের তা দৃষ্টিগোচর হয়।

প্রধানত এই কারণগুলোর জন্যই ‘রাত্রি হল কালো’। তবে যদি মা হেসে কন ‘সোনার খোকা আছেন ভগবান’, তাহলেও শুনতেতো ভালই লাগে।


কোন মন্তব্য নেই: