“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ৪ মে, ২০১৫

আজকের কথা


(C)Image:ছবি
।। শিবানী দে।।
শেষপর্যন্ত ব্লগার পেজ অবধি পৌঁছে নিজেই  নিজেকে  অভিনন্দন জানাচ্ছি । ছবি আপলোড করার জন্য কন্যার সাহায্য নিতে হল, সৌভাগ্যবশত সে আজকে তাড়াতাড়ি এসে গেছে । আমি অবশ্য গোঁয়ারের মত ভাবছিলাম যে নিজেই সব করতে পারব । তাতে শুধু সময় নষ্ট ছাড়া কিছু হয়নি । ধন্যবাদ ঈশানের পুঞ্জমেঘ ব্লগের সঞ্চালক, আপনাদের ব্লগে আমন্ত্রণ এবং সহযোগিতার জন্য ।

           এই নতুন প্রজন্মের দক্ষতা দেখলে এত ভাল লাগে! আমরা শুধু হাতড়াই, এদিক থেকে ওদিকে যাই, ভুলি, ভুল করি, ওরা নিশ্চিত দৃঢ়তার সাথে আমাদের সাহায্য করেদেখিয়ে দেয়,  হাসতে হাসতে চটপট হাতে কাজ করে ফেলে   অনেকেই হয়ত তথাকথিত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নয়, তবুও অনুভব কত বেশি ! আমরা আমাদের পুরোনো ধ্যান ধারণার সাথে না মিললে তাদের 'ট্যাঁস' বলি, 'আজকালকার ছেলেমেয়ে' বলে অবজ্ঞা অথচ ভয় মেশানো  দূরত্ব রেখে চলিওরা হাসতে হাসতে 'বাইবলে চলে যায় ।

           আমাদের প্রজন্ম কিছুটা কিম্ভুত । আমাদের পূর্ববর্তীরা অনেক দুঃখ সয়ে আমাদের তুলেছিলেন, তাঁরা বেশির ভাগই খুব বেশি শিক্ষিত ছিলেন নাঅনেকেই  ছোটখাটো কাজ করে, শনি সত্যনারায়ণ, মা কালী, শীতলা ইত্যাদি দেব দেবীর দুয়ার ধরে, ব্রত উপবাস করে, বারবেলা, তিথি নক্ষত্র মেনে দুরু দুরু করা বুকে আমাদের 'মানুষ' করেছিলেন । তবে তাঁরা তাঁদের বিশ্বাসে আস্থা রাখতেন । শুধু একটা অভিমুখ ছিল, পড়াশুনো ( মানে পরীক্ষা পাশ) করতে হবে, কারণ পড়াশুনো হল অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার চাবিকাঠি । আমাদের অনেকেই তাই পড়াশুনোর সঙ্গে বিপত্তারিণীর পান, শিবরাত্রির উপবাস, শনিবার শনিবার করে  শনিবাড়িতে মাথাঠোকা সবই চালিয়ে গেছিশিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত যুক্তিকে একপাশে রেখে দিয়ে যদ্দূর সম্ভব পাঁজিপুঁথি মেনে চলবার চেষ্টা করেছি ।  বিদ্যালয়ে লজিক্যাল, বাড়িতে পাঁজিক্যাল   বাস্তবের অভিঘাতে দিনে দিনে পাঁজিপুথি বা শনি শীতলার শাসন কিছুটা কমেছে বটে, অনেক ক্ষেত্রে পাঁজিপুঁথির  অমিল বা পূজোপকরণের  অপ্রতুলতা ও কারণ হতে পারে , যেমন যে সমস্ত বাঙালি দেশেরই অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যাণ্ড মিজোরাম এর মতন রাজ্যে কাজ করতে গেছেঅভাবকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হয়েছেযথা---- ভগবান ত আর বলেননি অত নিয়ম মেনে পুজো করতে হবে, কিংবা---- ঠাকুরকে মনে মনে ডাকলেই হয়,---- (আরে বাবা, এসব কথাতো অনেক আগে থেকেই সবাই জানত ! তবুও নানা উপচার যোগাড় না করলে মন ভরত  না, পাছে ঠাকুর রাগ করে !)  তারপর আস্তে আস্তে মনে খুত খুত রেখেই অভ্যাস কিছুটা পালটেছে ।
            এবং তার জন্য দায়ী এই পরের প্রজন্ম, যাদের শিক্ষা প্রথম থেকেই বহুমুখী, প্রশ্ন ও বেশি, কাজেই যুক্তি ও বেশি । আমাদের মত কিম্ভুতদের তারা কিছুটা মানুষ করেছে । প্রশ্ন করেছে, উত্তর দিতে পারলে ভাল, না পারলে নিজেদের মত করে ওরা খুঁজে নেবে, কিন্তু গোঁজামিল দিলে নাজেহাল করে ছাড়বে । উত্তর দিতে না পারলে উত্তর খোঁজখুঁজে দাওকিন্তু নির্বিচারে 'মেনে নাও' বললে  চলবে না । এই উত্তর খোঁজার পাল্লায় পড়ে লোক নিজের বিবেকের দুয়ারে ঘা দেয়, অনেক উত্তর নিজের থেকেই বেরিয়ে পড়ে । বাবা-মাদেরও মানুষ হবার পালা শুরু হয় ।


     

কোন মন্তব্য নেই: