“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৫

তুমি আগামীর মহানাগরিক

(C)Image:ছবি




















।।  মিঠুন ভট্টাচার্য্য ।।

বাবুদের ফরমাইশ খেটে, আব্দার রেখে,
অপুষ্টির শুকনো গলায়
আলজিভ আস্তে আস্তে ঠেলে দেয়
বিন্নি ধানের পিণ্ডি।
কাজপাগল হাত পা শোনে
জন্ম ইতিহাসের খিস্তি।
জড় মস্তিষ্ক, বধির কানে
আচমকা গুঞ্জন
নাগরিকপঞ্জী,নাগরিকপঞ্জী।
রাজপেয়াদা খাজনা রসিদ না পেয়ে
জন্ম ঠিকুজী  নিতে
ঘরছাড়া  বস্তিতে  ফরমান ঝাড়ে।
খাওয়ার লোভে,নিরাপত্তার তাগিদে
স্কুলছুট, দলছুট, ভিটেছাড়া-ভিটেহীন
বাবা মায়ের বংশ পরম্পরার নথি চেয়ে
গয়াধামে পাণ্ডার খোঁজ।
বিধাতার ষড়যন্ত্রে
ভূ-মানচিত্রে কালির আঁচড় ফেলে
খান খান পরাক্রমের শৌর্য,
শূন্য মজুত  ভাণ্ডার।
আজ অমুকবাবুর উপচে পড়া ভাঁড়ারে
নাভিশ্বাস আজন্ম সংগ্রামের।
এই ফাঁকে রাজন্য পারিষদ
উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরিতে উদ্যত
এই সুসময়ে।
কাজের অধিকার, বাঁচার অধিকারে
সীলমোহর দিতে রাজদূতের আবির্ভাব।
মাইকে ঘোষণা-
শুভদিন সমাগত।
তারপরে  হয়তো
অনাবাসী নাগরিক শ্রমে রচিত  হবে
সোনার নাগরিক-প্রাসাদ।

মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০১৫

কবি রুচিরা শ্যাম স্মরণে



।। শিবানী দে।।

কবি রুচিরা শ্যাম চলে গেলেন ।
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অনূদিত কবিতাগুচ্ছ 'ওমর খৈয়ামের রুবাই' (বিশ্ববাণী প্রকাশনী, প্রকাশকাল ১৯৭৮সাল)-এর উৎসর্গপত্রে প্রথম  রুচিরা শ্যামের নাম দেখেছিলাম । প্রথম রুবাই-এর অনুবাদটি এই রকম----

যৎসামান্য শুকনো রুটি,পাত্রভরা প্রাণমদিরা
পদ্যমাখা পুস্তিকাটির সঙ্গে তুমি সই রুচিরা
আর কী থাকে জবরদস্ত ; কুঞ্জবনে মত্ত হাতির ?
এই বিজনের গান করেছে স্বর্গ----- মিছে দিবসরাতির ।

উৎসর্গপত্রে এই রুবাই-এর দ্বিতীয় পঙক্তি উদ্ধৃত করে শক্তি লিখেছেন, 'রুচিরা শ্যাম প্রীতিভাজনেষু'। পড়ার পর মনে কৌতূহল হয়েছিল, এত কাব্যিক ওঁ অসাধারণ নামের এই মহিলাটি কে, যাকে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মত কবি নিজের কাব্য উৎসর্গ করেন ? এর পরে দেশ/আনন্দবাজারে কখনো সকনো রুচিরা শ্যামের কবিতা পড়েছি । আরো পরে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়-কৃত তাঁদের কম বয়সের স্মৃতিচারণে রুচিরা শ্যামের প্রসঙ্গ পেয়েছিলাম ----- বান্ধবী রুচিরা শ্যাম শিলচর চলে যাচ্ছেন । মনে প্রশ্ন জেগেছিলকেন শিলচর ? কোলকাতার মেয়ে হয়ে শিলচর চলে যাচ্ছেন কেন ? তিনি যে বরাক উপত্যকারই মেয়ে, সেটা জানতে আরো অনেক দিন লেগে গিয়েছিল ।(পরে অবশ্য তিনি স্থায়িভাবেই কলকাতায় বসবাস করতেন )।

কিছুদিন আগে বইমেলা থেকে 'বরাক উপত্যকার বাংলা কবিতা' (প্রকাশক উবুদশসম্পাদনা তমোজিত সাহা অমিতাভ দেবচৌধুরী) বলে একটা সঙ্কলন পেলাম । সঙ্কলনে রুচিরা শ্যাম ও আছেনআর সব কবির মত তাঁর ও তিনটে কবিতা নেওয়া হয়েছে । সেখানেই জানলাম রুচিরা শ্যামের পরিচয় ।বড় আফসোস হল, নিজ ভূমির অনেক কবিরই পরিচয় জানতাম না, এত ভাল এঁদের কবিতা, তবুও এত কম এঁদের প্রচার । আমাদের কবিরা যাঁরা ওখানকার পত্রপত্রিকায় স্থান পান, তাঁদের নাম জানলেও ধাম জানা যায় না । ধরে নিই ওঁরা ওদিককার লোক । উক্ত সঙ্কলনে প্রকাশিত রুচিরা শ্যামের দুটো কবিতা এখানে তুলে দিচ্ছি  আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে ।

হৈমন্তী
ক্ষীণ জল, উইপোকা,ধুলো, কুয়াশায় বর্ণাঢ্য পশম
এই নাকি উৎসবের মাস, উদ্বাহের সফল সময়,
বহমান শোলার টোপর, গিলে করা প্রাচীন পোশাক
রংচটা ক্ষয়িষ্ণু দেয়ালে পিঠ ঘষে বিবর্ণ শহর ।
শিলচরে ধোঁয়াটে বিকেল অতর্কিতে অসম্ভব ডাক
কবে এলে,আসো না এখন, ভালো আছো, কতদিন পর!
হেমন্তে শহরে এত ধুলো, কিছু দেখি আসলে দেখি না
এই বুঝি আয়েসের দিন, উনুনের আমেজী আঁতাত।
জমাট পশম বেচাকেনা সে মেলা কোথায় আজকাল
কতদূর উড়ে ঘুরে আসা, খুঁজে ফেরা বাল্যের আলাপ।
চাবিগুলো হারিয়ে ফেলেছি মনে হয় অলৌকিক কথা
উইপোকা কুরে খেয়ে গেছে জমানো চিঠির যত পাতা।
তবু এই উৎসবের মাস অলিগলি ঘুরে ফিরে আসে
আমি খুঁজি কিছু আত্মীয়তা চলে আসি রবাহূত হয়ে।


শৈশব
ডাকিবে না বউ কথা কও
এ বাগানে ফোটে না মালতী
ঘুমায় ঘুমায়ে পড়ে মেয়ে
মুখে তার সুখের চাঁদিনী।
ঘুম ঘুম ভোমরার পাখা
মাগো, তুমি কোন কথা কও?

উড়াল শেখেনি টলোমলো
এ মেয়ে সরল যেন পাখি
সে জানে না কপালে আগুন
কারে কয় জনমদুখিনি
পিতা নীল ঘনছায়া রাখো
তুমি জানো ফোটে না মালতী।

ডাকিবে না বউ কথা কও
তোমার আঙনে গাঢ় ছায়া
ছায়ায় ঘুমায়ে পড়ে মেয়ে
ঢলো ঢলো সুখের চাঁদিনি
জানেনা সে ললাট লিখন
কারে কয় যোগিয়া বিবাগী
উড়াল জানে না টলোমলো
এখনো সরল যেন পাখি ।









সোমবার, ২০ জুলাই, ২০১৫

উড়ান



।।   বৈশালী ঘোষ ।।
 
(C)Image:ছবি
       
দিদি, মেয়ে আপনার ষোলআনা বিদেশ যাচ্ছে
         মা – “কী বলছেন ঠাকুর মশাই ? মেয়ে কি তবে Higher studies এর জন্যে যাবে?
একটুক্ষণ সময় নিয়ে ঠাকুর মশাই আমার ডান হাত, বাঁ হাত আর ঠিকুজি টা কে ভাল করে দেখে গম্ভীর ভাবে বললেনহ্যাঁ ,মনে তো হচ্ছে পড়তেই যাচ্ছে
          মা আমার দিকে তাকিয়ে, চেঁচিয়ে লক্ষ্মীর মাকে ডেকে বললেন, কী গো লক্ষ্মীর মা, ঠাকুর মশাই এতক্ষণ ধরে বসে আছেনকেন চা নিয়ে এলে না? চা টা নিয়ে এসো, সাথে কাল আনা নলেনগুড়ের মিষ্টিটাও এনো
আমি ভাবছি, মা আর ঠাকুর মশাই মিলে আমাকে বিদেশ নামের hostel টায় পাঠাবার ফন্দি গড়ছে না তো? মা কে অনেক দিন বলেছি, আমি তোমায় ছেড়ে কখনো ওই hostel টায় যাব না
         বিদেশে আমাকে যেতেই হচ্ছেনা কোন Higer studies এর জন্যে নয়Study গুলো সব আমি দেশেই শেষ করে নিয়েছিবিদেশে যাওয়ার পুরো credit টাই কিন্তু আমার Better Half এরBetter Half এই কারণে, Life এ যত Better জিনিস বিয়ে নামক সংক্রামক রোগের পর হয়েছে, ওটা আমার other Half এর জন্যেইতাই Better Half word টা আমার life এ খুবই important
আমার আগেই অর্ক কে America তে Shift করতে হলআপনাদের সাথে তো অর্কর পরিচয়টাই করানো হল নাঅর্ক আমার Better Halfবিয়ের পাঁচ বছর আগে থেকেই আমরা একে অপরকে চিনিঅনেক স্বপ্ন দেখেছি দুজনে। এবার সব স্বপ্নকে বাস্তবে বাঁধতে চলেছি আমরাআর কিছুদিন পরই আমি পাড়ি দেব America তে Visa র কাগজপত্র সব রেডি, Ticket টাও confirm হয়ে গেছে বাবা জিজ্ঞেস করলেন, সত্যিই কি তুই চলে যাচ্ছিস ?কাঁপা কাঁপা ঠোট গুলো শুধু নড়ে উঠলবাবা কিছু শুনতে পেল কিনা জানি নাশুধু, দুজনের চোখ থেকে জল গড়াচ্ছিলমার মনটা খারাপকিন্তু ঠাকুর মশাই এর ভবিষ্যৎবাণীটা সঠিক প্রমাণিত হওয়ার জন্যে বেশ আনন্দিতও।
দেখতে দেখতে দিনটি চলে এল। আমি একাই পাড়ি দেব America তেসবাই আমায় Airport এ ছাড়তে এলোবাবা,মা বন্ধুরা এবং আরো কিছু কাছের লোকমা কাঁদছে ,বাবার চোখটাও ছলছল করছেআমিও নিজেকে আর আটকাতে পারলাম নাকিন্তু সময়তো আর কারোর জন্যে আটকাবে নাতাই আমাকে সবাই কে ছেড়ে চেক্ ইন্ কাউন্টার এর দিকে এগোতে হল
          এবার কান্নাকাটি ভুলে আমায় কাজে নামতে হবেপ্রথম বার, তারপর আবার America তে যাওয়াঅর্ক বারবার ফোন করে Instruction দিচ্ছিলCheck in করে immigration এর form টা শুধু fill করতে বসেছি, তার মধ্যেই  announcement - flight 2 hours lateমনটা এমনিই ভার লাগছিলLate এর খবরটা শুনে ভেঙ্গেই পড়লকী আর করা! অপেক্ষা ছাড়া যে আর উপায় নেইSecurity হোলো, Boarding এর জন্যে বসে আছিসকাল সাড়ে পাঁচটায় flight ছাড়বে22 ঘণ্টা আমাকে একা বসে যেতে হবেPlane এ উঠে seat no টা দেখে বুঝলাম মন খারাপের পালাটা আমার পেছন ছাড়েনিকারণ,আমি middle এর seat টা পেয়েছিএক পাশে, এক সর্দার uncle, যার বয়স সত্তর ছুঁই ছুঁইআরেক পাশে, formal পরা এক কমবয়সী ভদ্রলোকহয়তো অফিসের কাজে যাচ্ছেনExcuse me, বলে নিজের seatএ বসতে গেলামকমবয়সী ভদ্রলোক নিজেই ওনার window seat টা আমায় offer করলেনএ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি আমি এক লাফে offer টা লুফে নিলামমিষ্টি হেসে Thank You বলে seat এ বসলাম
কিছুক্ষণ এর মধ্যেই তন্বী air hostess আমাদের পাশে এসে কিছু চাই কিনা জিজ্ঞেস করলসর্দার uncle জল চাইলেনআমি আর মধ্যবয়সী ভদ্রলোক ‘No Thanks’ জানিয়ে নিজের কাজে busy হলামএবার বই পড়ে, movie দেখে ঘুমিয়ে আর নতুন জায়গার স্বপ্ন বুনতে বুনতে আমাকে এই ২২ ঘণ্টা কাটাতে হবে
          একটা Magazine নিয়ে পড়তে শুরু করলামছাইপাশ কিছুই মাথায় ঢুকছে নাপুরো Airbusটা আজ full সামনে পেছনে তাকালে লোকের মাথা ছাড়া কিছুই আর দেখা যাচ্ছে নাMobile টাকে switch off করে রাখলামঅর্কর সাথে কথা হয়েছে plane এ ওঠার আগেইআর যোগাযোগ হবে Boston এ পৌঁছে
         পাশের ভদ্রলোক নিজের laptop নিয়ে busy হয়ে পড়েছেনআর সর্দার uncle এর চোখটা বন্ধ আর ঠোঁটটা নড়ছে। হয়ত উপরওয়ালার নাম নিচ্ছেনআমার মত ওনারও এটা first journey মনে হচ্ছেচার পাশে সবাই নিজেকে নিয়ে busyপেছনের দুটো seat পর বসেছে একটা couple আর তাদের একটা ছোট বাচ্চাবাচ্চাটা খুব কাঁদছে আর ওর মা-বাবা ওকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেকান্না শুনে air-hostess ওদের পাশে এসে দাঁড়াল। কিছু বলছেসামনের বেশ কয়েকটা  seat দখল করে বসেছে বারো তেরো বছরের কিছু ছেলে মেয়ে, সাথে দুজন teacherওরা হয়ত কোন school trip এ যাচ্ছেপেছনের ডান পাশে আরেক টা couple মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে pregnant
Announcement হল, এবার plane টা take off করবে।দুজন Airhostess দুদিকে দাঁড়িয়ে instruction দিতে শুরু করেছে ।Seat belt লাগিয়ে ready মনে মনে তিন বার দুগ্গা দুগ্গা করে নিলাম।অনেক স্বপ্ন, কত মাস পর অর্ককে দেখব। কত স্বপ্ন আমরা এক সাথে দেখেছি, এবার একটা একটা করে সত্যি হওয়ার পালা । মা-বাবার কথা মনে পড়ছে, বাবার সেই ছলছল  চোখ দুটো। Plane টা চলছে runway এর উপর দিয়ে।সব কিছু কে পেছনে ফেলে plane টা যাচ্ছে।
Plane টা এখন মেঘের রাজত্বে। তুলোর পাহাড়গুলোর মধ্যে। আর কতক্ষণ।নানাকথা ভাবতে ভাবতেই airhostess হাজির হল সামনে – “Ma’am what do you prefer ? Veg or non-veg?” ‘Non-veg’
খাওয়া দাওয়ার পর অনেকেই ঝিমোচ্ছে। আমি আবার বই এর পাতা উল্টোচ্ছি, পাশের ভদ্রলোক এখনও laptop এ কীসব কাজ করেই চলেছেন।
সামনে বসা বাচ্চাগুলোর কথা শোনা যাচ্ছে।পেছনের ছোট বাচ্চাটার কান্না শুনতে পাচ্ছি না, হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে। সবার চোখে এখন নানা স্বপ্ন।আমি আমার ছোট্ট বাড়িটার কথা ভাবছি,যার সামনে একটা বাগান আছে।যেখানে আমি  আর অর্ক গাছের নীচে বসে থাকব ঘণ্টার পর ঘণ্টা।এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি।একটা চিৎকারে ঘুম টা ভাঙ্গল।
কিছুক্ষণ সময় লাগল কোথায় আছি বুঝতে।আমার পাশের seat টা ফাঁকা। কী করছেন ভদ্রলোক ওখানে ? ওনার হাতে কি ওটা! বন্দুক !
সবাই কে চুপ করে বসতে বলছে লোকটা ।সর্দার uncle এর মুখটা লাল,খুব ভয় পেয়েছেন।দরদর করে ঘামছেন।খুব ভয় লাগছে, লোকটা কে দেখে তো একবার ও মনে হয়নি ও রকম কিছু করতে পারে।পেছনের বাচ্চাটা খুব কাঁদছে।লোকটা ওদের দিকেই তো যাচ্ছে। চুপ করাতে বলছে বাচ্চাটা কে না হলে মেরে ফেলবে।মা টা বাচ্চাটার মুখ টা চেপে ধরেছে।বাচ্চা টার কান্না আর শোনা যাচ্ছে না।ও কি ঘুমিয়ে পড়েছে আবার? পেছন থেকে আরও দুটো লোক উঠে দাঁড়িয়েছে।ওদের হাতেও বন্দুক।ওরা সবাই একদলের। ওরা কি চায়, কি চায় ওরা? আমাদের তো কোন দোষ নেই।আমরা তো যে যার কাজে, যে যার আপনজনের কাছে যাচ্ছি।
ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে আমাদের সরকার ওই terrorists দের না ছাড়লে ওরা এক এক করে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে।হঠাৎ বাচ্চাটার মা চিৎকার করে  উঠল, বাচ্চাটা যে আর নড়ছেনা। কাঁদছে না কেন বাচ্চা টা ।চুপ । আওয়াজ বন্ধ কর”, তারপর একটা গুলির আওয়াজ, সবাই  চুপ।রক্ত! জলের মত গড়াচ্ছে রক্ত।
আমার পাশে বসা লোকটি যাকে দেখে নিষ্পাপ মনে হচ্ছিল, এখন সে কি হিংস্র।তোমাদের সরকার আমাদের কথা মানছে না। এবার কি target তবে school trip এর বাচ্চা গুলো।ও ঠাকুর আর কতো ,আর কতো ?
এক ঘণ্টা…. দু ঘণ্টা জানি না কত ঘণ্টা! এখন আর ঘড়ির কাঁটার হিসেব নেই আমার কাছে। মৃত্যুকে এতো কাছ থেকে দেখব, কখন ভাবিনি। মা-বাবা কি জানতে পারল আমার কথা। আর অর্ক ….অতো আমার অপেক্ষা করছে।
বাচ্চাটার মাথায় বন্দুকটা ধরেছে, “তোমাদের সরকার এখনো মানেনি আমাদের কথাAirhostess না থাকতে পেরে No No, please বলতে বলতে দৌড়ে আসছে। আবার সেই আওয়াজ । সব চুপ । শুধু রক্ত আর রক্ত ।Cockpit এ ওদের লোক ঢুকে আছে। ভয় কাকে বলে আজ বুঝতে পারছি। কতো  দুর্বল আমরা। একএক করে অসহায় লোকগুলোকে ওরা মারছে, কিন্তু আমরা ওদেরকে বাধা দিতে পারছি না। সময় গড়াচ্ছে, আর বেশিক্ষণ plane টা আকাশে উড়তে পারবে না। কিন্তু আমাদের সরকার তো কিছুই জানাচ্ছেনা।
লোকটার আওয়াজ – “এক ঘণ্টার মধ্যে তোমাদের সরকার না মানলে, সব শেষ হয়ে যাবে।রক্ত চারদিকে রক্ত । তাজারক্তের গন্ধে ভরে গেছে চারদিক। ছোট বাচ্চাটার বাবা দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো লোকটার উপর। পেছনে থাকা দুটো লোক ছুটে আসছে।আবার সেই বিকট আওয়াজ।আর পারছিনা । রক্তের নদী বইছে পায়ের নিচে।Pilot announce করল আর দশ মিনিটের জ্বালানী আছে plane এ।
সরকার কি মানবে না , আমার আর অর্কর কি কখনই এক সাথে বাগানে বসা হবে না। আর মাত্র পাঁচ মিনিটের জ্বালানী plane এ।Plane টা খুব speed এ নিচে নামছে। মা-বাবা কে কি আমি কক্ষনো দেখতে পাবো না।আর মাত্র দু মিনিট । তারপর সব অন্ধকার ।
মা তোমার ঠাকুর মশাইর কথা তো সত্যি হল না। মা আমার কি আর বিদেশে যাওয়া হবে না ? মা,বাবা, অর্ক - সবাই কেন দূরে চলে যাচ্ছে? মা আমি ..আমি বাঁচতে চাই মা।
খুব জোরে একটা ঝাঁকুনি। দূর থেকে মায়ের গলা শোনা যাচ্ছে ….
দিয়া এই দিয়া ওঠ ! Airport এ যাবি না……………”