“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫

আমি স্নিগ্ধ হবো লাবণ্যলতা

[ Photo from http://www.panoramio.com/ ]


 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

© সুনীতি দেবনাথ

বহুদিন পরে ক্লেদাক্ত দিনের পরে
আমি আবার তোমাকে চাই তোমাকেই চাই__
সময়ের নোংরা হাওয়া লেগেছে শরীরে
আমি আজ নোংরা হয়ে গেছি ঘিনঘিনে,
কোথায় তুমি লাবণ্যলতা আলোকলতা?
একটিবার এসো আমার হাত ধরো।

আমাকে নিয়ে যাও সেই ঝর্ণার ধারে
যে জলে ডুব আর ডুব অবগাহনে আমি
পরিস্রুত হবো তারপর হয়ে উঠবো পবিত্র।
তুমি জানো না লাবণ্যলতা এখন এখানে
এমন কোন ক্লেদাক্ততাহীন টলমলে জলাশয় নেই,
এখানে এমন কোন কলস্বিনী নদীও নেই
সুবিমল প্রবাহিত শীতল সুস্বচ্ছ ধারা

যে ধারা সব ধুলোবালি সব ক্লেদ গ্লানি
ধুয়ে মুছে সাফ করে দেবে দেহ আর আত্মা
আমার সকল আমিকে।আমি তারপর
আবার হবো দূর নক্ষত্রের আলোর মতন বিমল।

এবার আমাকে সেই স্বচ্ছতোয়া নিত্যপ্রবাহিনী
অরণ্যছায়ার কলকল্লোলিনী অলৌকিক ধারার কাছে
সেই ঝর্ণার কাছেই আবার যেতে হবে,
জীবনের ওপার থেকে এসো লাবণ্যলতা
হাত ধরো আমার পথ ভুলে গেছি আমি
দিগ্ভ্রান্ত আমি একটিবার এসো নিয়ে চলো
সেই লোকান্তরের অলৌকিক জলবতীর তীরে।
আমি পাথরের সিঁড়ি বেয়ে তরতর নেমে যাবো
আমি লাফিয়ে লাফিয়ে পার হবো জলসিঁড়ি
ধাপে ধাপে নেমে যাবো জলে স্নান করবো আমি।

আজ যখন রক্তাম্বরে ভোর এসে জানালায় তাকালো
তার চোখে হাসির টুকরো ঝিলিকও দেখিনি,
ওরাও এসেছিলো চেনাজানা দোয়েল পাখিরা
ছটফটি ভুলে স্তব্ধ চোখে চেয়ে ওড়াওড়ি করে
চলে গেলো গাইলো না কোন গান,
জানি ওরা আর কোনদিন কোনদিনই ফিরবে না।

অনেক সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত খেয়া পারাপার হলো
সব শেষে রাতের ঠিকানায় পোঁছে গেছি,
আজ আর পারাপার নেই আছে শুধু
স্তব্ধ গতির রুদ্ধ অন্তরের আত্মার ক্রন্দন
অন্ধকারে মিশে থাকা বিশ্রস্ত চলাচল-
আমি আলো হাতে যেতে চাই সেই অস্তাচলে
আলো হাতে যেতে চাই ঝুম অন্ধকারে
যেখানে বাতাসও স্তব্ধ নিস্তব্ধ তমিস্রা,
সেইখানে আলো হাতে স্পষ্ট কণ্ঠে বলতে চাই
এসো নীরাবতী এসো এই আলোয় এসো
তনু স্নিগ্ধ করো আলোর ধারা অবগাহনে।
এখানে সকাল হবে সেই উজ্জ্বল সূর্য
শত শত রশ্মিজালে তোমাকে আমাকে
সঞ্জীবনী ধারাস্নানে ধুয়ে মুছে বৃষ্টিধোয়া
অলোকলতার মত সোহাগে দোলাবে।

আজ আমার আলো নেই প্রাণের উচ্ছলতা নেই
গতির উদ্দামতাও গিয়েছে হারিয়ে তাই
একটিবার, হয়তো শেষবার লাবণ্যলতা এসো
হাত ধরে এই দুস্তর অরণ্য পেরিয়ে
পথহারা পথ পেরিয়ে নক্ষত্রের অশ্রুঝরা
সুশীতল ধারার কাছে নিয়ে যাও।
ওখানে স্নান করে আমি পরিশুদ্ধ হবো।
আর সেই আগেকার মত দেহ মন সহ
আত্মা আমার স্নিগ্ধতার আবেশে উদ্বেলিত হবে
আমি দীপ্ত হয়ে দৃপ্ত ছন্দে চলেই যাবো
ঐ উপুড় করে রাখা আকাশটার নীচে,
আকাশের অনন্ত আচ্ছাদনে ঘেরা থেকে
আকাশের ছোঁয়ায় দাঁড়িয়ে আমি
আরেকটি বার হয়তো শেষবার
আমি আকাশই হতে চাই আকাশই আমি হবো
লাবণ্যলতা এবার তুমি আকাশের মত এসো।


.................................................................................................
কবিতাটির আবৃত্তি এখানে  শুনতে পাবেন! করেছেন বদরুল আহসান খান।


কোন মন্তব্য নেই: