“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৬

আয়স কাল ১৭

(দক্ষিণ আফ্রিকীয় লেখক জে এম কোয়েটজি-র লেখা 'এজ অব আয়রন'- উপন্যাসের  বাংলা অনুবাদের ৩য় অধ্যায়ের ৭ম     ভাগ: -- শিবানী দে)
কজোড়া নারীপুরুষ রাস্তার অন্যধার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল । আমি কি মেয়েটিকে চিনতে পারলাম ? ও কি সেই স্ত্রীলোক যাকে ভারকুয়েইল আমার বাড়িতে তুলেছিল, অথবা সেইসব স্ত্রীলোকেরা, যারা  অ্যাভালন হোটেল এবং সোলি ক্র্যামার-এর মদের দোকানের আশে পাশে ঘুরঘুর করে, তাদের পাগুলো এরকম রোগা, মাকড়সার মত হয় ? পুরুষটির কাঁধের উপর একটা গিঁট দেওয়া প্ল্যাস্টিক ব্যাগ ফেলা, সে তো ভারকুয়েইল নয় ।
আমি লেপটা আরো ভালোভাবে জড়িয়ে শুয়ে পড়লাম । আমার হাড়ের ভেতরে ভেতরে ফ্লাইওভার দিয়ে যাওয়া গাড়ির শব্দ বাজছিল । পিলগুলো বাড়িতে, বাড়ি এখন অন্য লোকের হাতে । পিলগুলো ছাড়া আমি কি বাঁচতে পারি ? না, কিন্তু আমি কি বাঁচতে চাই ? একটা বুড়ো জানোয়ার যখন বুঝতে পারে তার সময় আসন্ন, তখন শীতল, মন্থর শরীরে সে গুটিগুটি পায়ে জমিতে কোনো গর্তের দিকে এগোয়, তার মন্থর হৃদয়ের ধুকপুকুনির সঙ্গে সব কিছুই সঙ্কুচিত হয়ে যায়, তার সেই সময়কার উদাসীন শান্তি আমিও এরই মধ্যে বোধ করতে শুরু করেছিলাম । ত্রিশ বছর সূর্যের আলো না দেখা একটা কংক্রিট পিলারের পিছন দিকে আমি আমার ভাল দিকটার উপর শুয়ে পড়লাম, শুয়ে শুয়ে ব্যথার বাদন শুনতে থাকলাম, যা হয়তো আমার নাড়ির ধুকপুকুনিও হতে পারে ।
আমি নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । সময় নিশ্চয়ই পেরিয়েছে । যখন আমি চোখ খুললাম, দেখলাম একটা বাচ্চা ছেলে আমার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে, লেপের ভেতরের ভাঁজে হাতড়াচ্ছে । আমার শরীরের উপরও তার হাত চলতে লাগল ।তোমার জন্য কিছুই নেই,”আমি বলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু আমার দাঁতগুলো ঢিলে হয়ে আছে । ছেলেটা বড়জোর দশ বছর বয়স, মাথা কামানো, খালি পা, চোখে কঠোর দৃষ্টি । তার পেছনে তার চাইতেও কমবয়সী দুই সঙ্গী । আমি দাঁতের সেটটা ঠিক করলাম । বললাম, “আমাকে ছেড়ে দাও, আমি অসুস্থ, তোমরা আমার থেকে অসুখ বাঁধাবে ।
ধীরে ধীরে তারা সরল, কিন্তু কাকের মত অপেক্ষা করতে লাগল ।
আমার তলপেট খালি করতে হত । উপায় নেই, আমি যেখানে শুয়েছিলাম, সেখানেই পেচ্ছাব করে ফেললাম । ভাবলাম, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে এখন ঠাণ্ডা, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আমার শরীর অবশ । সহজে জন্ম দেবার জন্য সব কিছু একসঙ্গে কাজ করে ।
ছেলেগুলো আবার নিকটে এল । তাদের হাতড়ানোকে গ্রাহ্য না করে অপেক্ষা করতে লাগলাম । গাড়ির চাকার গর্জন আমাকে ঘুমপাড়ানি গানের মত আচ্ছন্ন করে রাখল; যেভাবে মৌচাকে লার্ভাগুলো মধুর মধ্যে ডুবে থাকে, আমিও তেমনি ঘূর্ণমান জগতের গুঞ্জনধ্বনির মধ্যে ডুবে ছিলাম । শব্দে বাতাস ভারি হয়ে গেছে । হাজার হাজার পাখা পেরিয়ে যাচ্ছে, আবার পেরোচ্ছে পরস্পরকে স্পর্শ না করেই । মহাশূন্য ওদের পক্ষে কেমন ? সকলের জন্য জায়গা আছে কি ? আকাশে সকল বিদেহী আত্মার জন্য কেমন জায়গা আছে ? কারণ, মার্কাস অরিলাস বলেন, আত্মারা একজন আরেকজনের সঙ্গে মিলে যায়, তারা জ্বলে গিয়ে মিশে যায়, আর এই ভাবে বিশাল চক্রের মধ্যে ফেরে ।
মৃত্যুর পরে মৃত্যু । মৌমাছি-ভস্ম ।
লেপের খুটটা ধরে কেউ খুলছে । আমার চোখের পাতার উপর আলো পড়ছে বুঝলাম, চোখের জল যেখান দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে, সেখানটাতে ঠাণ্ডা ও অনুভব করলাম । আমার দুঠোঁটের মাঝখান দিয়ে কিছু ঢোকানো হচ্ছে, জোর করে মাড়িদুটোর মাঝখান দিয়ে দিয়ে ঠেলা দিচ্ছে । আমার গলা বুজে এল, আমি ঝটকা মারলাম । তিনটে বাচ্চা এখন অন্ধকারে আমার উপর ঝুঁকে ; আরো কেউ কেউ ওদের পেছনে ও থাকতে পারে । ওরা কি করছে ? আমি তাদের হাত সরাতে চাইলাম, কিন্তু হাতটা আমাকে আরো জোরে চেপে ধরল । একটা বিশ্রী শব্দ আমার গলা থেকে বেরোলো, কাঠ ফাঁড়ার মত শুকনো কাশি । হাতটা সরে গেল । করোনা,” আমি বললাম, কিন্তু আমার মুখের তালুতে জখম, কোনো শব্দ ঠিক ঠাক বেরোল না ।

আমি কি বলতে চেয়েছিলাম ? এটা করো না । তোমরা দেখছ না আমার কিছু নেই ? তোমাদের কি কোনো দয়া নেই ? কি বাজে কথা ! দুনিয়াতে দয়া কেন থাকবে ? আমি গুবরেপোকার কথা ভাবলাম, কালো বড় বড় গুবরে পোকা, পিঠটা উঁচু, যখন মরতে থাকে, পাগুলো দুর্বলভাবে নাড়ায়, পিঁপড়েরা তাকে ছেঁকে ধরে, শরীরের নরম অংশ, সন্ধি, চোখ খুবলে খুবলে মাংস খেতে থাকে ।
আমার মুখে সে যে বস্তুটি ঢুকিয়েছিল, তা কয়েক ইঞ্চি লম্বা কঞ্চি ছাড়া আর কিছু নয় । দানা দানা ধুলো ময়লা যা আমার মুখে রেখে গেছে, তার স্বাদ আমি বুঝতে পারলাম ।
কঞ্চির ডগা দিয়ে সে আমার উপরের ঠোঁটটা উঠাল । আমি মুখটা সরালাম ও থুতু ফেলতে চেষ্টা করলাম । সে উদাসীনভাবে উঠে দাঁড়াল । খালি পায়ে একটা লাথি মারল, ধুলো ও নুড়ির বৃষ্টি আমার মুখে পড়ল ।
একটা গাড়ি চলে গেল, গাড়ির আলোয় বাচ্চাগুলোর অবয়ব দেখা গেল । ওরা ব্যুইটেনকান্ট স্ট্রিট-এর নিচের দিকে চলে গেল । অন্ধকার ফিরল ।
এইসব ঘটনা কি আদৌ ঘটেছে ? হ্যাঁ, অবশ্যই ঘটেছে । এ সম্পর্কে আর কিছু বলার নেই । ঘটনাগুলো শুণ্ডার স্ট্রিট এবং ব্রেদা স্ট্রিট থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে ঘটেছিল, সেইসব রাস্তা, যেখানে এক শতাব্দী আগে কেপটাউনের ধনীরা আদেশ করেছিলেন যে তাঁদের ও তাঁদের বংশধরদের জন্য চিরকাল-স্থায়ী প্রশস্ত বাড়ি বানানো হবে, এবং তাঁদের দৃষ্টিতে সেই ভবিষ্যতের কথা কখনো ছিল না যে সেই বড় বড় বাড়ির ছায়ায় মুরগিরা এসে বাসা বাঁধবে ।
আমার মাথার মধ্যে একটা ধোঁয়াশা, একটা ধূসর দোলাচল । আমার কাঁপুনি এল । হাই তোলার ঢেউ চলতে লাগল আমার উপর, কিছু সময়ের জন্য আমি স্থান কাল বিস্মৃত হলাম ।
তারপর কিছু একটা আমার মুখ শুকতে থাকল : একটা কুকুর । আমি তাকে তাড়াতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু ও আমার আঙ্গুলকে ফাঁকি দিতে থাকল । তাই আমি হাল ছেড়ে দিলাম, ভাবলাম, কুকুরের ভেজা নাক, উৎসুক শ্বাসের চাইতেও খারাপ জিনিষ আছে ।আমি তাকে আমার মুখমণ্ডল, আমার ঠোঁট, আমার চোখের জলের লবণ চাটতে দিলাম । অন্যভাবে দেখতে গেলে, এ তো আদরের চুমো ।
কেউ একজন কুকুরটার সঙ্গে আছে । আমি কি গন্ধটা চিনলাম ? এ কি ভারকুয়েইল ? অথবা সব ভবঘুরের গা থেকেই ওরকম পচা পাতার, ছাইয়ের গাদার উপর পড়ে থাকা পচা অন্তর্বাসের গন্ধ বেরোয় ? “মি; ভারকুয়েইল ?” আমি গোঙালাম, আর কুকুরটা উত্তেজনায় কুঁইকুঁই করতে লাগল , সোজা আমার মুখের উপর একটা মস্ত হাঁচি হাঁচল ।
একটা দেশলাই কাঠি জ্বলল । হ্যাঁ, এ তো ভারকুয়েইল, তার হ্যাট ও সব সমেতসে জিগ্যেস করল, “তোমাকে এখানে কে রেখেছে ?” “আমি নিজেই,” মুখের তালুর ঘা-টাকে এড়িয়ে কোনো রকমে বললাম । কাঠিটা নিভে গেল । চোখ থেকে আবার জল গড়াল, কুকুরটা মহানন্দে চাটল ।
আমি ভাবতে পারিনি উঁচু হয়ে থাকা কাঁধের হাড় ও গাংচিলের মত সরু বুক নিয়ে ভারকুয়েইল এত বলশালী হতে পারে । কিন্তু সে আমাকে পাঁজাকোলা করে তুলল, ভেজা লেপসমেত, এবং বয়ে নিয়ে চলল । আমি ভাবলাম, চল্লিশ বছর হয়ে গেল আমাকে কোনো পুরুষ বহন করেছে । লম্বা মেয়ের দুর্ভাগ্য ! গল্পটা কি এভাবে শেষ হবে: বলশালী বাহু বয়ে নিয়ে যাবে বালুতট দিয়ে, অগভীর জল দিয়ে, ঢেউয়ের মাঝখান দিয়ে গভীরতর অন্ধকারের দিকে ?
আমরা ফ্লাইওভার থেকে দূরে স্বর্গীয় নীরবতার দিকে গেলাম । সব কিছুই যেন হঠাৎ করেই সহনীয় হয়ে আসছিল । বেদনা কোথায় ? ব্যথাও কি ভাল মেজাজে এল ? “আর শুণ্ডার স্ট্রিটে যেও না,” আমি আদেশ করলাম ।
একটা বাতিস্তম্ভ পেরোলাম । দেখলাম ওর কাঁধের মাংস পেশি ওজন বওয়ার ফলে ফুলে উঠেছে , ওর শ্বাস দ্রুত পড়ছে । আমাকে একমিনিট নিচে রেখে দাও,” আমি বললাম । সে আমাকে নিচে রেখে বিশ্রাম করল । কখন সেই সময় আসবে যখন তার কাঁধ থেকে জ্যাকেট খসে গিয়ে বড় বড় ডানা দেখা যাবে ?
ব্যুইটকাণ্ট্‌ স্ট্রিট পর্যন্ত সে আমাকে বয়ে নিয়ে গেল, ভ্রেডে স্ট্রিট, শান্ত রাস্তাটা পেরোল, আস্তে আস্তে পা ফেলে, প্রত্যেকটা পদক্ষেপে বড় বড় শ্বাস নিয়ে একটা গাছগাছালিপূর্ণ অন্ধকার জায়গায় পৌঁছল । গাছের ডালের ফাঁক দিয়ে আমি তারা দেখতে পেলাম ।
সে আমাকে নিচে রাখল ।
তোমাকে দেখতে পেয়ে অত্যন্ত সুখী হলাম,” আমি বললাম, শব্দগুলো অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উঠে এলো । তুমি আসার আগে কতকগুলো বাচ্চা ছেলে আক্রমণ করেছিল । আক্রমণ, না কৌতূহল ----আমি জানিনা কোনটা ঠিক, এই জন্যই এত অদ্ভুতভাবে কথা বলছি । ওরা আমার মুখে একটা কাঠি গুঁজে দিয়েছিল, আমি বুঝলাম না কীজন্য । ওটা তাদের কি আনন্দ দিতে পারে ?”
ওরা তোমার সোনার দাঁত দেখতে চাইছিল,” সে বলল, “তারা বন্ধকের দোকানে সোনা দিয়ে পয়সা পায় ।
সোনার দাঁত ? কি আশ্চর্য, আমার ত কোনো সোনার দাঁত নেই । আমার দাঁতগুলো খুলেছি কোনো মতে । এইতো সেগুলো ।
অন্ধকারে কোনো জায়গা থেকে সে কার্ডবোর্ড নিয়ে এলো, একটা কার্টন বাক্স চ্যাপটা করে ভাঁজ করা সেটা সে বিছিয়ে আমাকে শুতে সাহায্য করল । তারপর কোনো তাড়াহুড়ো ছাড়া, কোনো কথাবার্তা ছাড়াই আমার দিকে পেছন করে সেও শুয়ে পড়ল । কুকুরটা আমাদের পায়ের মাঝখানে বসে পড়ল ।
তুমি কি লেপের কিছুটা নেবে ?” আমি জিগ্যেস করলাম ।
আমি ঠিক আছি ।
সময় গড়িয়ে চলল ।
খুব দুঃখিত, কিন্তু আমার খুব তেষ্টা পেয়েছে আমি ফিসফিস করে বললাম, “এখানে কি জল হবে  না ?”
সে উঠে একটা বোতল নিয়ে এল । আমি শুকলাম: মিষ্টি ওয়াইন, বোতলটা আদ্ধেক ভর্তি । সে বলল, “এই আমার আছে ।আমি তা-ই পান করলাম । এতে আমার পিপাসা মিটল না, কিন্তু আকাশে তারাগুলো সাঁতার কাটতে লাগল । সব কিছু অনেক দূরে মনে হতে লাগল : ভিজে মাটির গন্ধ, ঠাণ্ডা, আমার পাশে শোওয়া লোকটা, আমার নিজের শরীর । একটা কাঁকড়া যেমন সারাদিনের পর ক্লান্ত হয়ে তার দাঁড়া গুটিয়ে নেয়, ব্যথা ও তেমনি ঘুমিয়ে পড়ল । আমি অন্ধকারে ডুবে গেলাম ।
যখন আমি জাগলাম, সে আমার দিকে ফিরে একটা হাত আমার গলার উপর দিয়েছে । আমি নিজেকে ছাড়াতে পারতাম, কিন্তু তাকে বিরক্ত করতে চাইলাম না । তাই যতক্ষণ ধীরে ধীরে নতুন দিন আরম্ভ হল, আমি চুপচাপ তার মুখোমুখি হয়ে শুয়ে থাকলাম । তার চোখ একটা সাবধানী জানোয়ারের মত একবার খুলল । আমি বিড়বিড় করে বললাম, “আমি যাইনি ।সে আবার চোখ বুজল ।
একটা চিন্তা এল : এখন, এই সময়ে, এই পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর মধ্যে আমি কাকে সবচাইতে ভাল জানি ? ওকে । তার দাঁড়ির প্রত্যেকটা লোম, তার কপালের প্রত্যেকটা ভাঁজ আমার জানা । তাকে, তোমাকে নয় । কারণ সে এখানে, এখন আমার পাশে ।
ক্ষমা করো । সময় সঙ্কীর্ণ, আমার হৃদয়কে বিশ্বাস করে সত্যকথা বলতে আমাকে হবেই । দৃষ্টিহীন, অজ্ঞান, সত্য আমাকে যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই যাব ।
আমি মৃদুস্বরে বললাম, “জেগে আছ ?”
হ্যাঁ ।
ছেলেদুটোই মরে গেছে,” আমি বললাম ।ওরা তাদের দুজনকেই হত্যা করেছে । তুমি কি জানতে ?”
আমি জানি ।
তুমি কি জান যে বাড়িতে কি ঘটেছে ?”
হ্যাঁ ।
আমি কথা বললে তুমি কিছু মনে করবে ?”
কথা বলো ।
তাহলে বলি : ভেকি যেদিন মরল সেদিন আমার ফ্লোরেন্সের ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল ---- ভাই বা তুতোভাই ও হতে পারে একজন শিক্ষিত লোক । আমি তাকে বললাম, কিভাবে আমি চেয়েছিলাম ভেকি ওসবে---- ওটা কি বলব? সংগ্রাম ? ----- যেন না জড়ায় । সে একটা বাচ্চা ছেলে,” আমি বলেছিলাম, “সে এখনো তৈরি হয়নি । তার সেই বন্ধুটা নাহলে সে কোনোমতে ওসবে জড়াত না ।
পরে আবার আমি তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললাম । আমি তাকে খোলাখুলি বললাম যে তারা যাকে আদর্শবাদ-বন্ধুত্ব বলে, সেই ব্যাপারটা সম্পর্কে আমি কি ভাবি । তার জন্যই আজ ছেলেদুটো মারা গেছে । আমি বলি, মৃত্যুর মন্ত্রগুপ্তি । আমি ফ্লোরেন্স ও তার মতন লোককে এসব ব্যাপারে ছেলেদের নিরুৎসাহিত না করবার জন্য দোষী মনে করি ।
  সে আমার কথা ভদ্রভাবে শুনল। সে বলল, আমি আমার মতামত প্রকাশ করতেই পারি, কিন্তু আমি তার মত পালটাই নি ।
কিন্তু এখন আমি নিজেকে প্রশ্ন করি : আদর্শবাদ-বন্ধুত্ব বা অন্য কিছুর বিষয়ে মত দেবার জন্য আমার কি অধিকার আছে ? ভেকি ও তার বন্ধুকে ঝামেলা থেকে দূরে রাখতে চাওয়ার জন্য আমার কি অধিকার আছে ? একটা শূন্যতার মধ্যে আমার মতামত দেওয়া, এমন মতামত যা কাউকেই স্পর্শ করে না, এখন মনে হয় অর্থহীন। মতামত যদি থাকে, তবে তা কাউকে না কাউকে শুনতে হবে, শুনে তার ওজন পরীক্ষা করতে হবে, শুধুমাত্র ভদ্রতার খাতিরে শুনলে চলবে না । আর ওজন পরীক্ষা করার জন্য সেই মতামতকে ওজনদার হতে হবে । মিঃ থাবেন আমি কি বলেছিলাম তা পরখ করে দেখেনি । তার কাছে আমার মতের কোনো ওজন ছিল না । ফ্লোরেন্স তো আমার কথা শুনেই নি । আমার মাথায় কি চিন্তা হচ্ছে ফ্লোরেন্স তার সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন, আমি জানি ।
ভারকুয়েইল উঠে একটা গাছের আড়ালে গিয়ে পেচ্ছাব করল । তারপর আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, সে আবার এসে শুয়ে পড়ল । কুকুরটা তার দুপায়ের মাঝখানে নাক রেখে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকল । আমি আমার মুখের ঘা পরখ করে দেখলাম, রক্তের স্বাদ জিভে লাগল ।
আমি আমার মত বদলাইনি,” আমি বললাম । আমি এখনো এই যে আত্মোৎসর্গের ডাক, যা অল্পবয়সী ছেলেদের কাদার মধ্যে রক্তপাত হয়ে মরতে দেয়, সে জিনিষটাকে অপছন্দ করি । যা বলে ভান করা হয়, যুদ্ধ সেই জিনিষ নয় । সামনের পরতটা খোঁড়, অবধারিতভাবে দেখবে বয়স্করা কোনো আদর্শ বা অন্য কিছুর নামে তরুণদের মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পাঠাচ্ছে । মিঃ থাবেন যাই বলুক না কেন, (আমি তাকে দোষ দিই না, ভবিষ্যৎ সব সময়েই ছদ্মবেশে আসে, যদি সে আবরণহীন হয়ে আসত, আমরা তাকে দেখে ভীতিবিহ্বল হতাম ) এটা বয়স্ক মানুষদের অল্পবয়সীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ । স্বাধীনতা অথবা মৃত্যু ! ভেকি ও তার বন্ধুরা উচ্চস্বরে বলছিল । কার কথা ? তাদের নয় নিশ্চয়ই । স্বাধীনতা অথবা মৃত্যু!, নিঃসন্দেহ যে ওই বাচ্চা মেয়েগুলোও ঘুমের মধ্যে আওড়াচ্ছে । না ! আমি বলতে চাই, নিজেদের বাঁচাও
বাস্তববোধের স্বর কোনটি, মিঃ ভারকুয়েইল ? আমার বিশ্বাস, আমারটা । তবুও, আমি কে, এরকম স্বরে আদৌ কথা বলবার আমি কে ? আমি কিভাবে সম্মানের সঙ্গে তাদের সেই আহবানের দিকে পেছন ফিরতে বলি ? আমার মুখ বন্ধ করে এক কোণায় বসে থাকা ছাড়া আর কোনো ভূমিকা আছে ? আমার কোনো কণ্ঠস্বর নেই ; আমি সেটা অনেক আগেই হারিয়েছি ; হয়তো কোনোদিন ছিলও না । আমার কোনো স্বর নেই, এই হল মোদ্দা কথা । আর সবই নীরবতা । কিন্তু এই নিয়ে----এ যা-ই হোক না কেন---- এই স্বর যা কোনো স্বরই নয়, আমি চলতে থাকি । চলছি, চলছি।
ভারকুয়েইল কি হাসছিল ? তার মুখ লুকোনো । দন্তহীন মুখে আঠালো থুতু জড়ানো ফিসফিস স্বরে আমি কথা বলে চললাম ।
অনেকদিন আগে একটা অপরাধ করা হয়েছিল । কত আগে ? আমি জানিনা । কিন্তু নিশ্চয়ই ১৯১৬-এর আগে । এত আগে যে আমি তাতে জন্ম নিয়েছিলাম । এটা আমার উত্তরাধিকার । এটা আমার অংশ, আমি তার অংশ ।
প্রত্যেক অপরাধের মতই এই অপরাধের ও মূল্য দিতে হয়েছে । আমি আগে ভাবতাম যে এই অপরাধের মূল্য লজ্জাতে চোকাতে হবে : লজ্জার সারা জীবন এবং কোনো এক অখ্যাত অজ্ঞাত কোণে লজ্জার মৃত্যু, যে মৃত্যুর জন্য কেউ দুঃখ করবে না । আমি এটা মেনে নিয়েছিলাম, আমি নিজেকে আলাদা করবার চেষ্টা করিনি । যদিও আমি চাইনি এই অপরাধ করা হোক, এটা আমার নামে হয়েছিল । যারা এই নোংরা কাজ করেছিল, আমি মাঝেমাঝেই তাদের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠতাম----তুমি দেখেছ, যে অপরাধের বিরুদ্ধে রাগে জ্বলে ওঠা হচ্ছে, সেটা যেমন, তেমনি লজ্জার রাগে জ্বলে ওঠাটাও একটা বোকামি---- আমি এটাও মেনে নিয়েছিলাম, এই ভেবে যে এই অপরাধ ও এই রাগ আমার ভেতরেই আছে । তাই যখন আমি রাগে ওদের মৃত্যু কামনা করতাম, আমি নিজেরও মৃত্যু কামনা করতাম । সম্মানের নামে । সম্মানের সম্মানিত আদর্শে ।

স্বাধীনতা মানে কি তা আমার জানা নেই, মিঃ ভারকুয়েইল । আমার মনে হয় ভেকি ও তার বন্ধু ও জানত না বোধ হয় স্বাধীনতা সবসময়েই এবং একান্তভাবেই অনুমানের ঊর্ধ্বে । এতৎসত্ত্বেও আমরা অস্বাধীনতাকে দেখি ও জানতে পারি, পারি কি পারিনা ? ভেকি স্বাধীন ছিল না, সে জানত । তুমি স্বাধীন নও, অন্তত: এই পৃথিবীতে নও, আমিও নই । আমি দাস হয়ে জন্মেছিলাম, এবং দাস হয়েই মরব । শিকলে বদ্ধ জীবন, শিকলে বদ্ধ মৃত্যু---- এটা হল মূল্যের অংশমাত্র, এর বিরুদ্ধে কথা বলা চলবে না , কান্না চলবে না ।

আমি যা জানতাম না, আমি যে ব্যাপারটা জানতাম না----এখন শোনো---- যে মূল্য ছিল আরো অনেক বেশি । আমি ভুল গণনা করেছিলাম । ভুল কোত্থেকে এল ? এই ভুলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সম্মানের ; যে কথাটা আমি সম্পদে বিপদে আঁকড়ে ধরেছিলাম, আমার শিক্ষা থেকে, আমার পড়াশোনা থেকে, যে একজন সৎ মানুষের আত্মা কখনো ক্ষতিপীড়িত হয়না । লজ্জাকে দিক্‌নির্দেশক করে আমি সব সময়েই সেই সম্মানের লক্ষ্যে, সেই আত্মসম্মানের লক্ষ্যে কাজ করতাম । যতসময় পর্যন্ত আমার লজ্জাবোধ আছে, তত সময় পর্যন্ত  আমি অসম্মানের রাস্তায় হাঁটব না বলে জানতাম । এটাই ছিল সেই লজ্জার ব্যবহার : একটা পরশমণি হিসেবে, যে জিনিষটা সব সময় থাকবে, এমন জিনিষ যার কাছে তুমি অন্ধের মত আসতে পার, স্পর্শ করলেই বলতে পার তুমি কোথায় আছ । বাকি সব কিছুতে আমি আমার লজ্জা থেকে সম্মানজনক দূরত্ব রাখতাম । আমি তাকে হজম করে ফেলিনি । এই লজ্জা কখনো লজ্জাজনক আমোদ হয়ে ওঠেনি ; এটা কখনো দংশন থেকে মুক্তি দেয় নিআমি এর থেকে গর্বিত ছিলাম না, আমি এই লজ্জাকে বোধ করতাম । আমার লজ্জা, আমার নিজের । আমার মুখে ভস্ম দিনের পর দিন, যার ছাইয়ের মত স্বাদ ছাড়া আর কোনো স্বাদ নেই ।
এই সকালবেলা এখানে আমি এই স্বীকারোক্তি করছি, মিঃ ভারকুয়েইল,” আমি বললাম, “এ হল আমার সম্পূর্ণ স্বীকারোক্তি আমি গোপন কিছু রাখিনি । আমি একজন ভাল মানুষ ছিলাম; আমি অকপট স্বীকার করছি, আমি এখনো ভাল মানুষ । এটা কেমন সময় যখন শুধুমাত্র ভাল মানুষ হলে চলে না !
আমি আগে যা গণনায় আনিনি তা হল, ভাল হওয়া থেকে আরোও কিছু বেশি দরকারি । কারণ দেশে ভাল মানুষের অভাব নেই । আমাদের অনেকেই ভাল, প্রায় ভাল । কিন্তু সময় এখন এই ভালত্ব ছাড়াও অন্য কিছু চাইছে । এই সময় চাইছে বীরত্ব । এটা এমন একটা শব্দ যা উচ্চারণ করলে কেমন অদ্ভুত শোনায় আমার মুখে । আমার সন্দেহ আছে কোনো বক্তৃতা দেবার সময়ও শব্দটা আমি কখনো ব্যবহার করেছি কিনা । কেন করিনি ? হয়তো শ্রদ্ধার জন্য । হয়তো লজ্জার জন্য । যেভাবে উলঙ্গ মানুষ দেখলে লোকে চোখ নামায় । আমি বক্তৃতায় হয়তো বীরত্বের অবস্থাশব্দগুলো ব্যবহার করতে পারতামবীরতার বীরত্বের অবস্থায় । বীর, সেই প্রাচীন উলঙ্গ অবয়ব ।
ভারকুয়েইল-এর গলা থেকে একটা গভীর গোঙানি বেরিয়ে এল । আমি গলা বাঁকিয়ে দেখতে চাইলাম, কিন্তু যা দেখলাম তা হল তার গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি এবং লোমশ কান । মিঃ ভারকুয়েইল,” আমি ফিসফিসিয়ে ডাকলাম সে নড়ল না ঘুমিয়ে পড়ল ? ঘুমের ভান ? আমার কথা কতটুকু সে শুনতে পায়নি ? সে কি আমার ভালোত্ববীরত্বসম্পর্কে কথাগুলো শুনেছে ? ‘সম্মানলজ্জাসম্পর্কে ? সে যদি না শুনে থাকে, তাহলে সেটা কি সত্যি স্বীকারোক্তি হল ? তুমি কি আমার কথা শুনলে, না আমি তোমাকেও ঘুম পাড়িয়ে দিলাম ?
আমি একটা ঝোপের পেছনে গেলাম । চারদিকে পাখিরা গান করছিল । কে ভাবতে পেরেছিল যে শহরতলিতে এত পক্ষীজীবন আছে ? এ যেন আর্কাডির* মত । আশ্চর্যের কিছু নয় যে ভারকুয়েইল ও তার বন্ধুরা খোলা জায়গায় থাকে । বৃষ্টি থেকে বাঁচানো ছাড়া ছাদের আর কি দরকার ? ভারকুয়েইল আর তার বন্ধুরা !
আমি তার কাছে আবার শুয়ে পড়লাম, আমার পাগুলো ঠাণ্ডা ও কাদামাখা । এখন বেশ আলো হয়ে গেছে। চ্যাপ্টা করা বাক্সের উপরে খোলা জায়গায় শোয়া আমাদের নিশ্চয়ই সব পথিকেরা দেখছিল । আমরা দেবদূতের চোখেও এরকমই দেখাব : কাচের ঘরে থাকা মানুষ, তার সব কাজই খোলাখুলি । আমাদের হৃদয় নগ্ন, কাচের বাক্সের ভেতর ধুকধুক করা । পাখির গান বৃষ্টির মত ঝরতে লাগল ।
আমি এই সকালবেলা অনেক ভাল বোধ করছি,” আমি বললাম ।কিন্তু আমাদের বোধ হয় এখন যেতে হবে । ভাল বোধ করা সাধারণত: পরে খারাপ বোধ করার আগের সতর্কবার্তা ।
ভারকুয়েইল উঠল, টুপিটা তুলল, লম্বা ময়লা নখ দিয়ে মাথা চুলকালো । কুকুরটা কোত্থেকে ছুটে এসে আমাদের মাঝখানে আদুরেপনা দেখাতে লাগল । ভারকুয়েইল কার্ডবোর্ডটা ভাঁজ করে ঝোপের ভেতর লুকিয়ে রাখল ।
আমি হঠাৎ করে বললাম, “তুমি কি জান যে আমার একটা স্তন কেটে ফেলতে হয়েছে ?”
সে বিব্রতভাবে এটাসেটা নাড়াচাড়া করতে লাগল ।
আমি এখন অনুতাপ করি, অবশ্যই । অনুতাপ করি যে আমি চিহ্নিত হয়ে গেছি । এটা যেন কোনো একটা আসবাবে ঘষটানোর দাগ কিংবা পোড়ার দাগ হলে তাকে বিক্রি করার চেষ্টা করা । তুমি হয়তো বলবে চেয়ারটা একদম ভাল আছে, কিন্তু লোক আকৃষ্ট হবে না লোকে দাগ ধরা জিনিষ পছন্দ করে না । আমি আমার জীবনের কথা বলছি এই জীবন হয়তো সম্পূর্ণভাবে ভাল নাও হতে পারে, তবুও এটা একটা জীবন, কোনো আদ্ধেক জীবন নয় । আমি ভেবেছিলাম আমি এটাকে বিক্রি করব, অথবা আমার সম্মান বাঁচানোর জন্য খরচ করব । কিন্তু এখনকার অবস্থায় কে একে গ্রহণ করবে ? এ ব্যাপারটা যেন এক দ্রাকমা খরচ করার চেষ্টা । অন্য কোথাও এটা খুব ভাল মুদ্রা, কিন্তু এখানে নয় । সন্দেহজনকভাবে  দাগি ।
কিন্তু আমি এখনো হাল ছেড়ে দিই নি । আমি এখনো এ দিয়ে কিছু একটা করতে চাইছি । তুমি কি এ বিষয়ে কিছু বলবে ?”
ভারকুয়েইল তার টুপিটা পরল, সামনে ও পেছনে টেনে টুনে বসিয়ে দিল ।
তোমার জন্য একটা হ্যাট কিনে দিলে আমার ভাল লাগবে ।
সে হাসল । আমি তার হাত ধরলাম; ধীরে ধীরে আমরা ভ্রেদে স্ট্রিট ধরে রওয়ানা হলাম ।
আমি বললাম, “আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি, সেটা বলি । আমার স্বপ্নের লোকটার হ্যাট ছিল না ।কিন্তু আমার মনে হয় সে তুমিই ছিলে । লোকটার তেলা চুল কপাল থেকে পেছনের দিকে সোজাভাবে ব্রাশ করা ।লম্বা এবং তেলা, ময়লাও, পেছন দিকে অনেকগুলো ইঁদুরের  লেজের মত বিচ্ছিরিভাবে ঝুলছে, কিন্তু সেকথা উল্লেখ করলাম না ।
আমরা সাগরের ধারে ছিলাম । সে আমাকে সাঁতার কাটতে শেখাচ্ছিল । সে আমার হাত ধরে টানছিল, আর আমি লম্বা হয়ে শুয়ে লাথি মারছিলাম । আমার পরনে একটা কালচে নীল সাঁতার পোশাক, যেরকমটা আগেকার দিনে হত । আমি ছিলাম একটা বাচ্চা । আসলে স্বপ্নে আমরা সবসময়ই বাচ্চা থাকি ।
সে আমাকে টানছিল, সাগরের দিকে পেছন ফিরে, আমাকে স্থির দৃষ্টিতে দেখে । তার চোখগুলো তোমার মত । সাগরে বড় ঢেউ ছিল না , শুধু ছোট ছোট তরঙ্গ, আলোয় ঝকমক করছিল   এমন কি জলটা তেলতেলে । যেখানে তার শরীর জলে ঠেকছিল, তেল তার গায়ে লেগে চকচক করছিল । আমি নিজের মনে ভাবলাম, এ নিশ্চয়ই সারডিন মাছের তেল, আমিই ছোট সারডিন, সে আমাকে তেলের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । তাই আমি বলতে গেলাম, ফেরো । কিন্তু মুখ খুলতে ভয় করছিল পাছে তেল আমার মুখ ভরে দেয়, এবং আমার ফুসফুসে চলে যায় । তেলের মধ্যে ডোবা: সে সাহস আমার নেই ।
আমি থামলাম । ভাবলাম সে কিছু বলুক, কিন্তু সে কিছুই বলল না । আমরা রাস্তার কোণ দিয়ে শুণ্ডার স্ট্রিটে পড়লাম ।
আমি বললাম, “অবশ্যই আমি এই স্বপ্নটা সরলভাবে বলছি না । স্বপ্নটা বিশদভাবে বলা মানে কিছু পাওয়ার আশা । কিন্তু প্রশ্ন হল, সেটা কি ?”
আমি যেদিন প্রথম তোমাকে গ্যারেজের পেছনে দেখি, সেদিনই নিজের বিষয়ে খারাপ খবরটা পেয়েছিলাম । এটা যেন একটা সমাপতন । আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবছিলাম, তুমিই কি সেই দেবদূত, যে এসেছে আমায় পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে । অবশ্যই তুমি ছিলে না, এবং নও, হতে পার না----আমি তা দেখছি । কিন্তু এতো গল্পের আদ্ধেক, তাই না ? আমরা অর্ধেক দেখি, কিন্তু অর্ধেক সৃষ্টিও করি ।
তাই আমি সেইসব গল্প বলতে থাকি যাতে তুমি আগে আগে যাও, আমি তোমাকে অনুসরণ করি । আর তুমি যদি একটা শব্দও না বল, আমি নিজেকে বলি, এর কারণ হল দেবদূতেরা বাক্‌হীন । দেবদূত আগে আগে যায়, নারী পেছনে তার চোখ খোলা, সে দেখে, নারীর চোখ বন্ধ, নারী পার্থিব জগতে এখনো ডুবে আছে । এইজন্যেই আমি  তোমার কাছে পথনির্দেশের জন্য, সহায়তার জন্য বারেবারে ফিরি ।
সামনের দরজাটা তালাবন্ধ ছিল, কিন্তু উঠোনের গেট খোলা । ভাঙ্গা কাচ ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করা হয়নিফ্লোরেন্সের ঘরের দরজা ঝুলছে । আমি নিচে দেখে দেখে সাবধানে পা ফেলতে থাকলাম । ওই ঘরের ভেতরে দেখবার মত মনের জোর এখনো পেলাম না ।
রান্নাঘরের দরজা খোলা ছিল । ওরা চাবি খুঁজে পায়নি ।
ভেতরে এসো,” আমি ভারকুয়েইলকে বললাম ।
বাড়িটা আগে যেরকম ছিল, সেরকম আর ছিল কিংবা ছিল না । রান্নাঘরের জিনিষগুলো সব ঠিক জায়গায় নেই । আমার ছাতাটা আগে যেখানে ঝোলানো থাকত, সেখানে নেই, অন্য জায়গায় । সোফার জায়গাও সরেছে, ফলে কার্পেটের উপর দাগ দেখা যাচ্ছে । সর্বোপরি একটা অপরিচিত গন্ধ: সিগারেটের ধোঁয়া ও ঘামের নয়, কিন্তু কিছু তীব্র ও ঝাঁঝালো, যা কিসের আমি ঠিক ধরতে পারছিলাম না । তারা তাদের চিহ্ন সব জায়গায় রেখে গেছে, আমি ভাবলাম, তারা একদম নিখুঁত কাজ করা লোক । তারপর আমার মনে হল ডেস্কের উপর আমার ফাইল, আমার চিঠি, এখন পর্যন্ত লেখা সবগুলো পাতা । সেগুলোও ! (ওরা স্পর্শ করেছে) ভাবলাম, সেগুলোও ওরা পড়েছে ! ময়লা আঙ্গুল দিয়ে পাতা উল্টেছে, নগ্ন শব্দগুলোর উপর কোনো ভালবাসা ছাড়া চোখ বুলিয়েছে ।
ভারকুয়েইলকে বললাম, “আমাকে উপরে যেতে সাহায্য কর ।
ফাইলটায় আমি যখন শেষ লিখি, খোলা রেখেছিলাম, এখন বন্ধ । ফাইল রাখার দেরাজের তালা ভাঙ্গা । বুকশেল্‌ফের মধ্যে ফাঁক ।
দুটো অব্যবহৃত ঘরের তালা ও জোর করে খোলা হয়েছে ।
তারা সমস্ত আলমারি, ড্রয়ার ঘেঁটে দেখেছে ।
কিছুই আর না-ছোঁয়া নেই । যেরকমভাবে আগের বার চোরেরা করেছিল । খোঁজাটা তো একটা অজুহাত মাত্র । আসল উদ্দেশ্য ছিল, ছোঁয়া, আঙ্গুল লাগানো । একটা অনিষ্টকারী মন । যেরকম ধর্ষণ : নারীকে নোংরা করার একটা উপায়
আমি ভারকুয়েইলের দিকে ফিরলাম, পাকস্থলী পর্যন্ত গোলাচ্ছে, কথা বলতে পারলাম না ।
সে বলল, “নিচে কেউ একজন আছে ।
সিঁড়ির নিচে আমরা কাউকে টেলিফোনে কথা বলতে শুনলাম।
কথা থেমে গেল । একটা ইউনিফর্ম পরা যুবক হলঘর পর্যন্ত এসে আমাদের দিকে ইসারা করল ।
আমি ডেকে বললাম, “আমার বাড়িতে তুমি কি করছ ?”
সে বেশ খুশি খুশি ভাবে বলল, চেক করছি । আমরা বাইরের লোককে আসতে দিতে চাইনি ।সে একটা টুপি, একটা কোট, একটা রাইফেল একত্র করল । এই রাইফেলটার গন্ধই কি আমি টের পাচ্ছিলাম ? সে বলল, “গোয়েন্দা পুলিশেরা আটটায় এখানে আসবে । আমি বাইরে অপেক্ষা করব ।সে হাসল, যেন আমার খুব উপকার করেছে, তাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত ।
আমি ভারকুয়েইলকে বললাম, “আমায় চান করতে হবে ।
কিন্তু আমি স্নান করলাম না । আমি বেডরুমের দরজা বন্ধ করলাম, দুটো লাল পিল খেলাম, সর্বাঙ্গ কাঁপতে কাঁপতে শুয়ে পড়লাম । কাঁপুনি বেড়ে শরীরটা ঝড়ে কাঁপা পাতার মত লাগছিল । আমার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু কাঁপুনির কারণ ঠাণ্ডা ছিল না ।
আমি নিজেকে বললাম, একবারে একমিনিট : এখুনি ভেঙ্গে পড়লে চলবে না । পরের মিনিটের কথা ভাব ।
কাঁপুনি আস্তে আস্তে কমল ।
আমি ভাবলাম, মানুষ, মানুষই একমাত্র জীব যার অস্তিত্বের একটা অংশ অজানিতের মধ্যে, ভবিষ্যতের মধ্যে, ঠিক যেন তার সামনে ফেলা ছায়া । সে অনবরত সেই চলন্ত ছায়ার পেছনে পেছনে ছুটছে, তাকেই নিজের প্রতিমূর্তি বলে ধরছে । কিন্তু আমি তো আর সেই মানুষ হতে পারব না । আমি যা হব, তা আরো ছোট, আরো অন্ধ, মাটির কাছাকাছি ।
দরজায় টোকা দিয়ে ভারকুয়েইল ঢুকল, পেছনে সেই পুলিশ, আগে বল্গা হরিণের ছবি থাকা জার্সি পরেছিল, এখন একটা টাই ও জ্যাকেট পরেছে । কাঁপুনি ফিরে এল । লোকটা ভারকুয়েইলকে ইশারায় ঘর থেকে চলে যেতে বলল আমি উঠে বসলাম । বললাম, “যেয়ো না, মিঃ ভারকুয়েইল ।তারপর পুলিশটিকে বললাম, “আমার বাড়িতে আসার তোমার কি অধিকার আছে ?”
আমরা তোমার জন্য খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম ।তাকে অবশ্য বিশেষ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল না । তুমি কাল রাতে কোথায় ছিলে ?” তারপর যখন আমি কোনো জবাব দিলাম না , তখন বলল, “তুমি কি নিশ্চিত যে তুমি নিজে নিজেই ঠিক আছ, মিসেস কারেন ?”
যদিও আমি হাত শক্তকরে মুঠো করেছিলাম, কাঁপুনি আরো বেড়ে গেল, এবং প্রায় দাঁত কপাটির মত অবস্থা হল । আমি জোরে চিৎকার করে বললাম, “আমার মাথার ঠিক নেই । তুমিই শুধু আছ যার মাথার ঠিক আছে ।
সে ঘাবড়ে গেল না । বরঞ্চ, সে আমাকে চালিয়ে যাবার জন্য যেন উৎসাহিত করতে লাগল ।
আমি ভাবলাম, নিজেকে সামলাও । ওরা তোমাকে বাধ্য করবে, তোমাকে পাগল বলবে, তারপর তোমাকে নিয়ে চলে যাবে ।
আমি কিছুটা শান্তভাবে জিগ্যেস করলাম, “এখানে কি চাও ?”
আমি কয়েকটা প্রশ্ন জিগ্যেস করতে চাই । তুমি এই জোহানেস বলে ছেলেটাকে কিভাবে চিনলে ?”
জোহানেস: ওটা কি তার আসল নাম ছিল ? নিশ্চয়ই নয় ।
সে আমার কাজের লোকের ছেলেটার বন্ধু ছিল । স্কুলের বন্ধু ।
নিজের পকেট থেকে সে একটা ছোট ক্যাসেট রেকর্ডার বের করে আমার কাছে বিছানার উপর রাখল ।
আর তোমার কাজের লোকের ছেলেটা কোথায় ?”
সে তো মরে তার কবরে আছে । নিশ্চয়ই তুমি এসব জান ।
তার কি হয়েছিল ?”
ফ্ল্যাট্‌স অঞ্চলে তাকে গুলি করা হয়েছিল ।
এবং তুমি কি ওদের আরো অনেককে চেন ?”
আরও কাদের ?”
আরো বন্ধুদের ।
হাজার হাজার । লাখ লাখ । যত তুমি গুনতে পার, তার বেশি ।
আমি বলতে চাইছি, তোমার ওই ছোট ঘরে যারা ছিল, তার চাইতে বেশি । আরো কেউ কি তোমার বাড়ি ব্যবহার করেছে ?”
না ।
আর তুমি কি জান এই অস্ত্র কিভাবে ওদের হাতে এল ?”
কি অস্ত্র ?”
একটা পিস্তল, তিনটে ডিটোনেটর
আমি ডিটোনেটরের বিষয়ে কিছু জানি না । আমি ডিটোনেটর কি তাও জানি না । পিস্তলটা আমার  ছিল ।
ওরা কি তোমার থেকে ওটা নিয়েছিল ?”
আমি ওটা ওদের দিয়েছিলাম । ওদের নয়, জন বলে ছেলেটিকে ।
তুমি তাকে পিস্তলটা দিয়েছিলে ? পিস্তলটা তোমার ছিল ?”
হ্যাঁ ।
তুমি কেন তাকে পিস্তল দিলে ?”
নিজেকে রক্ষা করতে ।
কার বিরুদ্ধে রক্ষা করতে, মিসেস কারেন ?”
কোনো আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ।
ওটা কি ধরণের পিস্তল ছিল, মিসেস কারেন ? তুমি কি ওটার লাইসেন্স দেখাতে পার ?”
আমি পিস্তলের রকম জানি না । আমার কাছে ওটা দীর্ঘদিন পড়েছিল, যখন এইসব লাইসেন্সের ঝামেলা ছিল না, তখন থেকে ।
তুমি কি নিশ্চিত যে তুমিই তাকে ওটা দিয়েছিলে ? তুমি কি জান যে আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি সেটা একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ ?”
পিলগুলো খাবার ফল শুরু হয়ে গিয়েছিল । পিঠের ব্যথা দূরের বলে মনে হচ্ছিল, অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো ছেড়ে যাচ্ছিল, দিগন্ত প্রসারিত হচ্ছিল ।
আমি বললাম, “তুমি কি এইসব বাজে কথা সত্যি চালিয়ে যেতে চাও ?” আমি বালিশের  উপর আবার শুয়ে পড়ে চোখ বন্ধ করলাম । আমার মাথা ঘোরাচ্ছিল । আমরা যাদের বিষয়ে কথা বলছি তারা তো মরে গেছে । ওদের তো আর কিছুই করতে পারবে না । ওরা বেঁচে গেছে । তোমরা হত্যা করেছ । আর বিচার দিয়ে কি করবে ? কেস বন্ধ কর না কেন ?”
সে রেকর্ডারটা তুলল, একটু নাড়াচাড়া করল, তারপর আবার বালিশের উপর রাখল । বলল, “দেখে নিচ্ছি একটু ।
ঝিমধরা হাত দিয়ে আমি রেকর্ডারটাকে ঠেলে দিলাম । মেঝেতে পড়বার আগেই সে ধরে ফেলল ।
আমি বললাম, “তোমরা আমার ব্যক্তিগত কাগজ পড়েছ । তোমরা আমার নিজস্ব বইগুলো নিয়ে গেছ । আমি সেগুলো ফেরত চাই । আমি সব কিছু ফেরত চাই । সেসব আমার জিনিষ । সেসব তোমাদের কিছু নয় ।
আমরা তোমার বইগুলো খেয়ে ফেলব না, মিসেস কারেন । শেষপর্যন্ত তুমি সব কিছুই ফেরত পাবে ।
আমি শেষপর্যন্ত কিছু পেতে চাইনা । আমি সেগুলো এখনি চাই । এগুলো আমার, এগুলো ব্যক্তিগত ।
সে মাথা নাড়ল । এসব ব্যক্তিগত নয়, মিসেস কারেন, তুমি জান । এখন আর কোনো কিছুই ব্যক্তিগত নয় ।
অবশ ভাবটা আমার জিভকেও অধিকার করেছিল । আমি মোটা সুরে বললাম, “আমাকে ছেড়ে দাও ।
আর কয়েকটা প্রশ্ন । কাল রাতে কোথায় ছিলে ?”
মিঃ ভারকুয়েইলের সঙ্গে ।
কে এই মিঃ ভারকুয়েইল ?”
চোখ খুলতে বেশ চেষ্টা করতে হল । হ্যাঁ ?” আমি বিড়বিড় করে বললাম ।
মিঃ ভারকুয়েইল কে ?” তারপর স্বর পালটে, আফ্রিকান্‌সে আবার একই প্রশ্ন, “কে এই লোকটা ?”
মিঃ ভারকুয়েইল আমার দেখাশোনা করে । মিঃ ভারকুয়েইলই আমার ডান হাত । এখানে এস, মিঃ ভারকুয়েইল ।
আমি কোনোরকমে হাত বাড়িয়ে ভারকুয়েইলের ট্রাউজার্সের পা পেলাম, তারপর তার হাত, খারাপ হাতটা বাঁকানো আঙ্গুলসমেত । অবশ, পাখির নখের মত দেখতে বয়স্ক আঙ্গুলগুলো দিয়ে আমি সেটা আঁকড়ে ধরলাম ।
ঈশ্বরের নামে !ডিটেকটিভ যে কোনোও দূর স্থান থেকে বলল । ঈশ্বরের নামে: এটা কি হতাশ হয়ে, না আমাদের দুজনের উপর অভিশাপ ? আমার হাতের মুঠি আলগা হয়ে গেল, আমার চেতনা গড়িয়ে যেতে থাকল
একটা শব্দ আমার সামনে দেখা দিল : থাবান্‌চু, থাবা ঙচুআমি মনোযোগ দেবার চেষ্টা করলাম নটা অক্ষর, কিসের অ্যানাগ্রাম ? খুব চেষ্টা করে আমি অক্ষরটাকে আগে নিলাম। তারপর আমার চেতনা আর থাকল না ।
যখন জাগলাম, তখন আমি খুব পিপাসার্ত, পা টলোমলো, ব্যথায় কাতর । সামনেই ঘড়ি আছে, কিন্তু কাঁটাগুলো কি দেখাচ্ছে বুঝতেই পারছিলাম না । বাড়িটাও পরিত্যক্ত বাড়ির মত নিঃশব্দ ।
থাবান্‌চু : বাঞ্চ্‌ ? বাথ ? অবশ হাত দিয়ে আমি গা থেকে চাদর সরালাম । আমি কি চান করব ?
কিন্তু আমার পা আমাকে নিয়ে বাথরুমে গেল না । রেলিং ধরে ধরে নিচু হয়ে, কোঁকাতে কোঁকাতে আমি নিচে গেলাম এবং ফোনে গুগুলেতুর নম্বর ডায়েল করলাম । ফোন বাজতেই থাকল । তারপর শেষপর্যন্ত কেউ একজন উঠাল, একটা বাচ্চা মেয়ে । জিগ্যেস করলাম, “মিঃ থাবেন কি আছে ?” “না,” “তাহলে মিসেস ম্‌কুবুকেলি----না, মিসেস ম্‌কুবুলেকি, মিসেস ম্‌কুবুলেকি ?” “মিসেস ম্‌কুবুকেলি এখানে থাকে না ।” “তুমি কি মিসেস ম্‌কুবুকেলিকে চেন ?” “হ্যাঁ ।” “তুমি কে ?” “আমি লিলি ।লিলি । তুমি কি একাই বাড়িতে আছ ?” “আমার বোনও আছে ।” “সে কত বড় ?” “সে ছবছরের ।” “আর তুমি কত ?” “দশ ।” “তুমি মিসেস ম্‌কুবুকেলিকে একটা খবর দিতে পার, লিলি ?” “হ্যাঁ ।” “কথাটা হল তার ভাই মিঃ থাবেনের ব্যাপারে । সে যেন মিঃ থাকেনকে বলে সাবধান থাকতে । বলবে, কথাটা জরুরি । মিঃ থাবেন যেন সাবধানে থাকে । আমার নাম মিসেস কারেন । তুমি কি সেটা লিখতে পার ? আর এটা আমার নম্বর ।আমি নম্বরটা পড়ে দিলাম, নামের বানান বললাম । মিসেস কারেন, নটা অক্ষর : কিসের অ্যানাগ্রাম ?

কোন মন্তব্য নেই: