“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

কেন ইংরাজি বই কিনি ?




 ।। শিবানী দে।।


(C)Imageঃছবি

লকাতা বইমেলা কদিন হল শেষ হয়েছে । মফঃস্বলের বইমেলাগুলোও শেষ প্রায় । সাধারণ পাঠকের বছরকার মত বইএর ফসল উঠানোর পালাও একরকম সাঙ্গ ।এবারে বিকিকিনির লাভক্ষতির হিসেবের পালা । প্রত্যেক বছরের মত এবারও এখানে ওখানে ক্ষোভ শোনা যাচ্ছে---- বাংলা বইয়ের তুলনায় ইংরাজি বইয়ের বিক্রি বেশি হয়েছে, কাজেই বাংলা বই বিক্রেতাদের লাভ ইংরাজি বই বিক্রেতাদের তুলনায় কম থেকেছে অনেক প্রকাশক, লেখক, কিছু পাঠকেরও ক্ষোভ----বাংলার বুকে হওয়া বইমেলায় কেন বাংলা বইয়ের বিক্রি ইংরাজির চাইতে বেশি হবে না । ভাষাভাষিক আবেগও খুঁচিয়ে তোলার প্রচেষ্টা চোখে পড়ে ।

 কেন বাংলা বইয়ের বিক্রি কম আর ইংরাজি বইয়ের বেশি  ?

ইংরাজি বই মানে ইংরাজি ভাষায় লিখিত বই, সেগুলো ইংরাজিভাষী দেশগুলো যেমন ইংল্যান্ড, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার লেখকদের লিখিত হতে পারে, আবার নাও হতে পারে । অনেক দেশের লেখক তাঁর মাতৃভাষা ইংরাজি না হলেও ইংরাজিতেই লেখেন । আফ্রিকার নাইজিরিয়া, কেনিয়া, ঘানা ইত্যাদি দেশের অনেক লেখক এই গোত্রের । কিছু ভারতীয় লেখকও এই পথের পথিক, যদিও ভারতীয় অনেক ভাষাই যথেষ্ট সমৃদ্ধ, ঐতিহ্যশালী সাহিত্যসম্পন্ন । হয়তো লেখক ইংরাজিতেই বক্তব্য প্রকাশ করতে বেশি সুবিধা বোধ করেন, এবং নিজের বক্তব্য নিজের ভাষার ছোট গণ্ডীর বাইরে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে চান । আজকাল  অনেক চিনা, জাপানি লেখকও ইংরাজিতে  লিখছেন ।

পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় লিখিত বিখ্যাত সব বই প্রকাশিত হবার অল্পদিনের মধ্যেই ইংরাজিতে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়ে বাজারে আসে, পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়ে । বেশির ভাগ তর্জমাই সুখপাঠ্য; উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার অভিবাসী সংস্কৃতি মূলত ইউরোপভিত্তিক হওয়ায় ইউরোপের সঙ্গে কমবেশি মিল আছে, তাই ভাল অনুবাদকারীর হাতে মূল বইয়ের স্বাদ গন্ধ খুব একটা বিকৃত হয় না । দুটো ভাষা সংস্কৃতিতে মিল না থাকলে অনুবাদকালে  যথার্থ প্রতিশব্দ খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য । বাংলা মৌলিক রচনাতে সমৃদ্ধ থাকলেও এতে অন্যান্য ভাষার অনুবাদ খুবই কম, এবং যা কিছু আছে, তাদের অনেকগুলোই সুখপাঠ্য নয় ।

আমরা সাধারণ পাঠকরা যারা ইংরাজি ছাড়া অন্য কোনো বিদেশি ভাষা জানি না, অথচ বিদেশি সাহিত্য সংস্কৃতির খোঁজ নিতে চাই, তাদের ইংরাজির শরণাপন্ন না হয়ে গত্যন্তর নেই । ফরাসি, জার্মান, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, আরবি, তুর্কি, জাপানি চিনা সব ভাষার সাহিত্যই আসে ইংরাজি অনুবাদে । মায়ের হেঁসেলের রান্না খেয়ে খেয়ে কখনো সকনো অন্য বাড়ির খাবার চাখতে ইচ্ছে হতেই পারে । কিন্তু অন্যরা যখন অনেক দূর, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব কি করে ? ইংরাজি রেস্তোঁরা আমাদের সে স্বাদ গন্ধ কিছুটা হলেও দেয়, ততটা খাঁটি নাহলেও । আরবি ফারসি তুর্কির ভারি পর্দাদেওয়া ঘরের ভেতর ও অনূদিত সাহিত্যের জানালা দিয়ে দেখা যায়, জার্মান রাশিয়ান স্প্যানিশের তো কথাই নেই ।

আমি নিজে এবারে কিনেছি ইংরাজি মৌলিক রচনা নাইজিরীয় লেখকের, ইংরাজি অনুবাদ কিনেছি পর্তুগিজ ও আরবি(মিশরীয়) লেখকের, বাংলা কিনেছি বাংলাদেশি লেখকের । কলকাতা থেকে প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিন কিনেছি, কিন্তু এছাড়া বাংলা মৌলিক রচনা আর কিছু কেনা হয়নি । যে ধরণের বই কিনেছি, সেসব বইয়ের বিজ্ঞাপন থাকে না, বইমেলা ছাড়া এসব বই নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ পাওয়া যায় না, তাই এসময়েই কিনে নিই । লিটল ম্যাগাজিন সম্পর্কেও ওই একই কথা । এখানে প্রকাশিত বাংলা মৌলিক বই ও পত্রপত্রিকা স্থানীয় লাইব্রেরিতে পড়তে পাই, তাই সেগুলো কম কেনা হয় ।

আমাদের মত সাধারণ পাঠকদের ক্রয়ক্ষমতা সীমিত, কিন্তু অন্যভাষাভাষীদের হাঁড়ির খবর জানতে সমুৎসুক হলেই বইপত্রের সম্মুখীন হই। অন্য কোথাও গিয়ে বা অন্য বুলি শিখে ফেলে সে দেশীয় সংস্কৃতির খোঁজ খবর নেবার মত পরিশ্রমসাধ্য ব্যাপারে আমাদের  ক্ষমতা ও প্রশ্নযোগ্য । অতএব দেশি লেখক প্রকাশকরা মার্জনা করবেন, তাঁদের ছোট করতে বা বাংলাভাষাকে যথেষ্ট ভাল না বাসার জন্য ইংরাজির দ্বারে যাওয়া হয় না ।  বাংলাভাষায় বিশ্বসাহিত্যের ভাল অনুবাদ---- শুধু মূলানুগ না, সুখপাঠ্যও---- যদি যথেষ্ট পাওয়া যেত, তাহলে মনে হয় বইমেলায় ইংরাজি বই বিক্রি কমুক আর না কমুক বাংলা বইয়ের বিক্রি স্বাভাবিকভাবেই বাড়ত ।

রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

বসন্ত ধুলো....এগারো

।। চিরশ্রী দেবনাথ।।
(C)Image:ছবি



















তো তীব্র এই বসন্তযাম!
গন্ধরাজ গ্লাসে উপচে পড়ে ক্ষরণ
আর কত,  আর আর ......
সব শৌখিন শব্দ, মুখোশ যাপন আসলে যন্ত্রনা
নিভে যেতে হবে, হয়তো কিছু সময়
সব মুকুল ঝরে ঝরে পরে যাক
জোৎস্নায় দেখি সারা পৃথিবী, ঘুমোক তারা ...
এই অশান্ত সময় আমাকে শুধু শব্দ কণা দিও ...

শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

এটা কোন দেশ

।।শৈলেন দাস।।
(C)Image:ছবি

















টা কোন দেশ
সমাজ সভ্যতা স্থবির যেখানে
শান্তি নিরাপত্তাও প্রায় অবশেষ।
হিংস্র শিয়ালেরা দল বেধে
খুবলে খায় নারীর শরীর
রাজপথে রক্তের দাগ
লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে শকুনেরা অস্থির।

রঞ্জনা ও চারদিনের ঘটনা

(C)Image:ছবি

 















।।শৈলেন দাস।।
১.
রঞ্জনা সেদিন দিদির সনে
দাঁড়িয়ে ছিল বাস ষ্টেশনে
উল্টোদিকের পান দোকানে
সিগারেট টেনে টেন
দেখতে পেলাম আমি যখনে
হাসছিল সে আপন মনে
লজ্জা পেয়ে মনে মনে
লুকিয়ে নিলাম হাত পিছনে
জানতে সাহস হয়নি মনে
যাচ্ছে নাকি কোনখানে।
২.
রঞ্জনা সেদিন বিকেল বেলায়
এসেছিল বই মেলায়
ফিরতে পথে শিমূলতলায়
বলল ডেকে চাপা গলায়-
"বাঁধা কিসের সাথে চলায়?"
মেতে উঠলাম প্রেমের খেলায়
সকাল সন্ধ্যে দুবেলায়
ভাবলাম বুঝি উপরওয়ালায়
বেছে বেছেই জোড়া মিলায়।
৩.
রঞ্জনা সেদিন সাতসকালে
এসেছিল হাসপাতালে
বুক ভাসিয়ে চোখের জলে
বলল- "যেতে হবেই চলে
জ্ঞাতি-গোষ্ঠী সবাই মিলে
বিয়ে দিতে রাজি হলে
বাঁধা দেব কি বলে?
বলব, গাড়ির চাকার তলে
স্বপ্নগুলো গেছে চলে
গড়ব আবার দুজন মিলে?
৪.
রঞ্জনা সেদিন বিয়ের আসনে
দাঁড়িয়েছিল বর সামনে
জল ভরা দুনয়নে
তাকিয়ে ছিল আমা"পানে
প্রত্যয় তার ছিল মনে
চলে আসবে আমার সনে
শেষে রটে জনে জনে
চলে এলাম আমি পিছনে
বলতে সাহস হয়নি মনে
যাবেনা তুমি কোনখানে
যাবেনা তুমি কোনখানে।

আধুনিক


।।শৈলেন দাস।।


(C)Image:ছবি




















বাবা তাঁর ছেলেকে বললেন
কাল একটু বাড়িতে থাকিস্, কারণ
হীরেন ও তার স্ত্রী কাল আসবেন
আমাদের বাড়ীতে, তোকে দেখতে।
লক্ষী যখন ধরা দিতে চায়
তখন না বলতে নেই, তারচেয়ে
পাকাকথা দিয়ে দেওয়াই
বুদ্ধিমানের কাজ।
মার কথা-
রিমি যদিও নয় গৃহকর্মে নিপুণা
দেখতে কিন্তু মোটে খারাপ না।
বড় ঘরের মেয়ে হলেও ধীরে ধীরে
সবকিছুতে মানিয়ে নেবে ঠিকই।
একজন সাতাশ বছরের স্বনির্ভর ছেলে
ওসবে তেমন গুরুত্ব দিলনা, কারণ
তার চিন্তা একটু আধুনিক
সে একটি গরীব মেয়েকে ভালবাসে।।