“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৬

কেবলই ভাঙ্গছি আমি


।।  সুনীতি দেবনাথ ।।

(C)Image:ছবি

















খাটি গদ্য এবার
চলছে দ্রুতগতিতে পরীক্ষা - নিরীক্ষা। ফলাফল পজিটিভ।
চারতলায় একটি রুমে দু'জন রুগী।
সেই রাতের সঙ্গী, হয়তো বেঁচে যাবে।
খুপরি জালির জানলা দিয়ে বিকেলের সূর্য
উঁকি দিচ্ছে দেবদারু গাছের ফাঁক দিয়ে।
চোখে মুখে চটুল আলোর ঝাপটা,
ক্লান্ত কাকটা ডেকেই চলেছে কা কা কা।
এতো সবুজের ফাঁকে আকাশের টুকরো ফ্যাকাসে নীলচে সাদা।
অদূরে চলমান গাড়ির ভেঁপু জানাচ্ছে ব্যস্ততার বড় সড়কের কথা।
আমার কোন ব্যস্ততা নেইদেনাপাওনার হিসেব - নিকেশ কবেই তো শেষ।
জানলা দিয়ে পাগলা হাওয়া বেআইনি অনুপ্রবেশের ঠিকেদারি নিয়েছে।
বেআইনি বললাম হাওয়ার অভাব মেটাতে উপরে ফ্যানটা তো সারাক্ষণ অনুগত একনিষ্ঠ কর্তব্যে। শুনেছি এখান থেকে মহাবলীপুরম গাড়িতে মোটে একঘণ্টার রাস্তা।
জানো, যেতে খু - উ - ব ইচ্ছে করছে!
সাথেসাথে বড় কঠিন নিষ্ঠুরতা নিয়ে সত্যটা উদগ্র হয়ে উঠলোআমি রুগ্ন, অসমর্থ।
যাকসে, ফেরার পথে একদিন চেন্নাই থাকবো। তোর্সাকে সমুদ্র দেখাবো এবং গোল্ডেন বীচ। জানো এই বীচে অনেক অনেক তামিল সিনেমার স্যুটিং হয়,
আর বাংলদেশে থেকেও তুমি তামিল সিনেমার ভক্ত! হিংসে হচ্ছে ভাই?
ধ্যুস্! তোমাদের তো চট্টগ্রামের কোল ঘেঁষে কেমন সমুদ্র!
আছে নদী কর্ণফুলি! আরো কত মায়াবী নদী
ক্ষেপি পদ্মা, কালো গভীর জলে আক্রোশে
ঢেউয়ের ঘূর্ণি তোলা মেঘনা,ঝিমোনো স্রোতের নদ প্রৌঢ় ব্রহ্মপুত্র ঢিলেঢালা
তাই বুঝি বাংলায় তার নাম হলো নারীর নামে যমুনা!
আরো কত নদী কপোতাক্ষ, বেত্রবতী, আত্রাইচিত্রা, ভৈরব ঝিনাই
কত বলবো?
এখানে ভেলোরে আশপাশে কোন নদী নেই
রুকুশুকু অনুর্বর মাটি তবু সবুজের খামতি নেই।
আর এই হাসপাতালে জীবনের বিশুদ্ধ কবিতার পঙক্তি
লেখা হচ্ছে প্রাণ আর রক্তের আখরে,
আমি ভাঙ্গছি শুধু ভেঙ্গেই চলেছি  —
কাল রাতে একশো বছরের তামিল মা
আমার পাশের বেডে এলেন,
দেখে মনে হলো অভিজ্ঞতা থেকে
পাটিমা আর কয়েক ঘণ্টা বা
কয়েক মিনিট হয়তো বেঁচে থাকবেন
আশ্চর্য এই বিকেলে মুখে হাসি চোখে জল তাঁর!
কাল বিকেলে হুইল চেয়ারে অপেক্ষায় ছিলাম
কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার,
আমার পাশে তোমার দেশ থেকে আসা তরুণী বধূটি উদ্গ্রীব, 'আমি ভালো হবোতো '?
বড় গলায় বলেছি, ' কেন হবে না? হবেই হবে '!
আজ জেনেছি শেষ পরীক্ষা বোন মেরু টেস্ট
জানিয়েছে বৌটির ব্লাড ক্যান্সার!
ভাই, তোমার দেশ এখনো চিকিৎসায় পিছিয়ে,
আমিও উত্তর- পূর্ব ভারত থেকে সুচিকিৎসার জন্য
বহু কাঠখড় পুড়িয়ে এই দক্ষিণে
এখানে নদী নেই অনুর্বর মৃত্তিকায় গাছ আাছে,
পাশে দেবদারু গাছে সন্ধ্যার পাখিরা কলতান মুখর,
প্রাণের ঝুম বর্ষায় আমি ভাঙ্গছি কেবল। 
সি এম সি হসপিটাল,
     ভেলোর,
২ এপ্রিল, ২০১৬

কোন মন্তব্য নেই: