“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৬

সুরমা গাঙর পানিঃ উজান পর্ব ২৯

(দেশভাগ এবং পরের দশকের কাছাড় সিলেটের প্রেক্ষাপটে রণবীর পুরকায়স্থের এই উপন্যাস ছেপে বের করেছে দিন হলো। ভালো লাগা এই  উপন্যাস পুরোটা টাইপ করে তুলে আমার প্রিয় কথা শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানালাম। আশা করছি আপনাদের সবার এটি পড়তে ভালো লাগবে। সম্পূর্ণ উপন্যাসের সংলাপ ভাগটি সিলেটিতে -সে সম্ভবত এই উপন্যাসের সবচাইতে আকর্ষণীয় দিক। আপনাদের পড়বার সুবিধে করে দিতে, ঈশানে এই উপন্যাস ধারাবাহিক ভাবে আসছে। আজ তার  উজান  পর্বের  অধ্যায় ঊনত্রিশ     ---সুব্রতা মজুমদার।) 

ঊনত্রিশ

  ঠাট্টা মাট্টা নারকেলের চোঁচ । দুখু থাকলে ঠাট্টার মজাও বাড়ে তিনগুন । কিন্তু বাড়ি ফিরলেই আবার দুঃখ বাড়ে । বৈতল তো আর ঠাট ঠমকের ধার ধারে না, বৈতল অল্প নিয়ে থাকে । দুর্গাবতীর চমক ডমক দেখে ভাল লাগে না । দুর্গাবতী এখন শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজও পরে, শাড়িটাও আর ঢাকাঢুকির নেই । বৈতল যেমন আছে তেমনই আছে, লুঙিও ছাড়ে নি, কাঁধের গামছাও না । ব্যাঙ আর ঠেংএর গল্পের পর দুখু তাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায় । বৈতল মেয়েকে দেখে, মেয়ের পায়ে সাদা ব্যান্ডেজ দেখে দুঃখে হুহু করে ওঠে বুক । চোখে কি জল আসে তার । বৈতলের চোখের জল কেউ দেখেনি, কিন্তু মেয়ের জন্য বৈতল ভেঙে পড়তেও রাজি । এক হাওর প্রমাণ চোখের জল ফেলতে রাজি বৈতল, শুধু মেয়েটা তার আবার আগের মতো হয়ে যাক । দুঃখ থেকে হয় রাগ, বৈতল রেগে দুর্গাবতীর হাত ধরে জোরে । বলে,
--- হুন বেটি । ই অলক্ষী বাড়ি ছাড়ি দেই চল । ইবাড়ি ছাড়িয়া চল নায় যাই গিয়া খাসিয়াপট্টি । দশ টেকা দিলেউ ঘর পাউমু ভাড়াত ।
--- কেনে ইনো কিতা দুষ । অন্যখানো থাকলেও অইল নে । ইতা খামকা মাত মাতিও না । অতদুর থাকি আইয়া কাম করলে শরীলেও দিত নায় ।
--- কে কর তরে কাম করতে । হুন বেটি আর উনাপেনা নাই । অখনও যদি ইবাড়ি না ছাড়ছ, আমি কইলাম তরে মারতাম নায় বেটা ইগুরে মারি ফালাই দিমু শাশিরগো টিপিয়া । আমি ইতা মানতাম নায় । আমার পুড়ির ঠেং ভাঙব আর তুমি তার লগে বইয়া চা খাইবায়, শাড়ির লগে বেলাউজ লাগাইবায়, ইতা অইত নায় তুই বেটি ফিরাগাই নি, বলদ খুজরে নি । আমারে দি অয় না ।
     বৈতলের রাগকে সমীহ করে দুর্গাবতী । কোনও জবাব দেয় না, মেয়েকে বুকে করে বসে থাকে আর কাঁদে । সন্ধ্যার পর আসে যমুনা জমিদার, বৈতল করে শুকনো নেশা । জমিদার একেবারে কাদাভেজা, মদের নেশায় চুর । পকেটে হাত ঢুকিয়ে বের করে পাঁচ টাকা দশ টাকার নোট, জমিদার টাকা দেয় দুর্গাবতীর হাতে । বলে সুর ডাক্তারকে ডেকে দেখাতে । মেয়ের প্রতি অবহেলার জন্য দুর্গাবতীকে গালমন্দ করে । বৈতলেরও নাকের ডগায় রক্ত জমে, শরীরের সব পেশি জমে শক্ত হয় । বৈতল স্থির করে আজই শেষ দিন । মাতালকে আর বাধা দেয় না । বলতে থাকে, শাসন করতে থাকে দুর্গাবতীকে । স্বামী যেমন শাসন করে বৌকে । বলে,
--- তুমি কি লাখান মা কও চাইন দুর্গা । একটা পুড়িয়ে দেখিয়া রাখতায় পারনা । আমারে দেখিয়ার অখন বাইচ্চা দেখার আলাদা মানুষ রাখন লাগব ।
--- আমি তো চান্দু বাবারে দেখিয়া রাখি ঠিক মতো
--- তিলোত্তমারেও দেখন লাগব ।
--- বাপে দেখইন । দেখিয়া অউত্ত লই গেলা লগে লগে বড় হাসপাতালো ।
--- ইতা গাইঞ্জাখুরর কুনু ঠিক নাই ।
   পতিনিন্দায় এবার তেতে ওঠে দুর্গাবতী । বৈতলের রাগ তো চেনে, অনর্থের ভয়ে সামাল দেয় পরিস্থিতি । বলে,
--- তে আমরা যাইমু গিয়া, আর থাকতাম নায় ।
--- কই যাইতায় । রিফ্যুজিকেম্পো । পারবায় আবার । কিতা বা উঝা পারবায় নি ।
      দুর্গাবতীর রূপ দেখে বৈতলের পেশি শিথিল হয়ে, নাকের ডগার রাগ নামে । দুর্গাবতী বৈতল দুজনেই সমস্বরে বলে,
--- পারমু ।
   রাগের ভানে বৈতল এ কাঁধের গামছা ও কাঁধে নেয় । বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম করে । বৈতল জানে তার কাজ হয়ে গেছে । লম্পট জমিদার কাত হয়েছে । দেড়মনি কাতলার বাচ্চাকে এবার একাই টেনে তুলতে পারবে দুর্গাবতী । কারণ বৈতল যতই রাগারাগি করুক সে ভালই জানে তার বিয়ে না করা বৌকে । যতই রাগারাগি করুক সে জানে সে বৈতলের বৌ, বৈতলের বুদ্ধিকেও তাই সে মান্য করে । দুর্গা জানে বৈতল যতই ঢপযাত্রা করুক বেরিয়ে যাওয়ার, যাবে না । উদ্দেশ্য একটা সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত হরিৎবরণ ছেড়ে যাবে না । যম সিংএর সঙ্গে তার লড়াই সেয়ানে সেয়ানে । যমুনা প্রসাদও প্রতিহিংসা নিতে জানে, তার মুখের উপর কথা বললে ছেড়ে দেয় না সে । কিন্তু জমিদার জানে না বৈতলের প্যাঁচে পড়লে সবাই কাত হয় । জমিদার টলতে টলতে সোনার পায়ের ব্যান্ডেজের উপর আলতো হাত বুলিয়ে দেয় । দুর্গাবতীর দিকে একবার বৈতলের দিকে একবার তাকায় । বলে,
--- যাইতায় গিয়া । যাও । তুমরা আমার লক্ষ্মী । তুমরা আওয়ায় আমার পুয়া অইল, তুমরারও পুড়ি অইল, ভাবলাম ভাই বইন একলগে বড় অইব ।
   বৈতল জমিদারের কথার মাঝে ফোড়ন কাটে । বলে,
--- রাজপুত্রর লগে রিক্সাআলার পুড়ির কিওর মিল ।
--- মিল লাগে নি । মিল করাই দিমু । আমার জমি জমা টেকা পয়সার অভাব নাই, তাইর নামো লেখি দিমু । নগদও দিমু । থাকি যাও ।
   মাতাল লোকটা ঝরঝরিয়ে কাঁদে । বৈতলের পেটের ভিতর হাসি জমতে থাকে দুর্গাবতীর জন্য । এরাও দুজনে সমস্বরে বলে,
--- আমরার ইতা লাগে না ।
--- না লাগলেও লেখি দিমু বাজারর জমি । থাকলে থাকো, গেলে যাও ।
   সে-রাতে আর মাল খায় নি বৈতল । ভাবতে ভাবতে যায় নাগাপট্টি । মাতাল মানুষের মালের ঘোরের কথার কান্নার কি কোনও ঠিক আছে । ঠিক আর বেঠিকের ভাবনায় দুলতে দুলতে ভরপেট মাল খেয়ে ফেরে বৈতল গভীর রাতে । দুর্গাবতীর গায়ে শেষরাতের মতো এলিয়ে পড়ে । বলে,
--- কেমন, কইছলাম নি, কও ।
     এসব মামুলি মিল আর ঝগড়া দিয়েই বৈতলের কুপিলম্ফের দপ্‌দপানি । ভালও লাগে অস্থিরতাও বাড়ে । দুর্গাবতীকে নিয়ে বৈতলের সব উচাটন । বৈতল দুর্গাবতীকে চেনে আবার চেনে না । এক এক সময় মনে হয় বৈতল ছাড়া সবাইকে নিয়ে দুর্গার দুনিয়া । দুর্গাবতীও জানে বৈতল তার পোষা পাখি । ময়না রাধাকৃষ্ণ কও বললেই বৈতল বলবে কথা । বৈতল জানে তার চরিত্রে পাখির উষ্ণতা নেই । এক নিষ্ঠুর শৈত্য কাজ করে তার শরীরে । নিজের অক্ষমতা নিয়ে দুর্গাবতীর উপেক্ষা সহ্য করে বৈতল । দুর্গাবতী বলেই সহ্য করে, অন্য কেউ বৈতলকে উপেক্ষা করলে আগুন ধরিয়ে দেয় চরাচরে । দুর্গাবতীর সঙ্গে ঝগড়া হলে বৈতল তেল মবিল নিয়ে বসে পক্ষীরাজের পরিচর্যায় । এত ভারী গাড়িটাকে ওঠায়, প্যাডেল ঘোরায় হাত দিয়ে বনবনিয়ে । তেল দেয় গ্রিজ দেয় বিয়ারিংএ । মার্ডগার্ড ঠিক করে দেখে নেয় টাল । পক্ষীরাজের ফিরুল ঘোরায় চাকা । মেয়ে সোনামনিরও বয়সের চাকা ঘোরে । তিন বছরের মেয়ে সেজেগুজে তৈরি থাকে বাপের সঙ্গে যাওয়ার জন্য । বৈতল ছোট একটা বালিশ বানিয়েছে মেয়ের জন্য । সিটকভারের নিচে রাখে । সামনের রডে তুলোর গদিতে মেয়ে বসিয়ে বৈতল হয় উধাও ।
     মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত । বৈতলেরও পছন্দের ঠাঁই বরাক নদী আর নদীর পার । সেই বিতর্কের ঘোড়ার ক্ষুরের বাঁক যেখানে । বাঁধের উপর মন্টু মিঠাইওলা ঘণ্টা বাজিয়ে সোনাকে ডাকে । মস্ত বড়ো এক তেলাল বরুয়া বাঁশ কাঁধ থেকে নামায় । লাল শাদা মিঠাইর মণ্ড বাঁশের মাথায় । রবারের মতো টেনে বের করে, তৈরি করে মিঠাই পছন্দসই সাজের । গরমদিনে বৈতলের সোনামার পছন্দ পাখার সাজ । এক পয়সার মিঠাই পেলেই মেয়ের হাসি খিলখিল । মেয়ে খায় মিঠাই বাপ খায় মালা । মহুয়া ফুলের শুকনো মালা । মালা খেয়ে মাতাল হয় না, অল্প মৌতাত হয় । সব কিছু ভাল লাগে বৈতলের, রাগ দুঃখ হারিয়ে যায় । সোনা মেয়েকে নিয়ে বিশ্বজয় করতে বেরোয় বৈতল । কিড়িং কিড়িং করে রিক্সার বেল সংকেত পৌঁছে যায় ইয়ার বন্ধুদের কাছে, কয়েক মুহূর্তেই এসে জড়ো হয় সবাই । সোনাকে নিয়ে শুরু হয় লোফালুফি খেলা । সব হাত ঘুরে যায় দুখুর কোলে । গামছাবাঁধা গুপ্তধন থেকে বেরোয় চিরল পাতার শুকনো মধু । এ এক প্রক্রিয়া, পাতা পোড়ে, চোখ লাল হয়, কম কথার হাসি আনন্দে সময়কে কিনে নেয় চার ইয়ার । যে বন্ধু ওড়া ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখে হাসে, সেই দুখু মিয়া তখন খেলা করে বৈতলকন্যা তিলোত্তমার সঙ্গে ।
     এর মধ্যেও লুকোচুরি খেলে বৈতল । বন্ধুদের লুকিয়ে চলে যায় নদীবাঁধের অপর পারে । একা একা মেয়ের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে । মামুর কথা বলে, দুর্গাবতীর কথা বলে, বন্ধু দুখুর কথা বলে । বলে দূরদেশের এক গুরুজনের কথা বলে বন্ধু রুল আমিন বেজ এর কথা । দুখুর কথা বলতে গিয়ে বলে দুষ্টাদুখু না হলে যে বৈতলের কোনও কাজই সম্পূর্ণ হয় না, তবু দুখুর সঙ্গে তার এক অলৌকিক প্রতিযোগিতা । দুই সতীনের লাগ । মামুর সর্বক্ষণের খিদমতগার দুখু মিয়া । বলে মামু তার মুর্শেদবৈতল বলে মামু তার ভগবান । স্বার্থপরতার লেশমাত্র নেই বিশালদেহী বোবা মানুষটার । নিজের গাঁয়ের কাপড়টা পর্যন্ত যে ঠিকঠাক রাখতে পারে না, খেতে দিলে অন্যকে খাইয়ে সুখ পায় । যে-মানুষটা ভাল, মানুষের আরো কেন ভাল হয় না, তাই ধরে মারে । মন্দ বদমাশ লোককে আদর করে, যেন আশীর্বাদ দেয় ভাল হও । সে-মানুষ ভগবান না তো কী । সেই মামুকে সর্বক্ষণ ঘিরে রাখে বলে দুখুর উপর রাগ বৈতলের । বছই ছাড়াও তো সে রিক্সা চালায়, নিজের রিক্সা পক্ষীরাজ, তবে কেন মামুকে নিয়ে যেতে দুখুর অনুমোদন চাই । বৈতল মুসলমান নয় বলে । কেন মামু কি দুখুর কেনা । দুখুকে শায়েস্তা করার জন্যই এবার বৈতল মুসলমান হয়ে যাবে । আর কোনও ফারাক থাকবে না বেঁটে লোকটার সঙ্গে । মামুও তখন একা দুখুর থাকবে না । দুখুটার ভিতর অনেক শয়তানিও আছে । ইন্ডিয়ার স্বাধীনতার দিন সে পাকিস্তানের চান্দ তারা পতাকা ওড়ায় । লোকে বলে দুখু তার বউকে মেরে খাদিম হয়েছে । কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে জানে না বৈতল । বৈতল জানে দুখুর মনটা ভাল । সব রুক্ষতার ভিতর একটা শিশুমন লুকিয়ে আছে তার । তাই গাঁজার আসর সাজিয়ে দেয় বন্ধুদের, নিজে থাকে বাইরে, পাহারা দেয় । বন্ধুকন্যার দুর্ঘটনার বার্তা পেয়েই মামুকে অন্য রিক্সায় বসিয়ে বছইর গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যায় সরকারি হাসপাতাল । বৈতলও তাই নিশ্চিন্তে সোনাকে দুখুর জিম্মায় রেখে নেশা করে । আবার এই দুখুই তাকে বারণ করে মুসলমান হতে । এই দুখুকে লুকিয়ে একা মামুকে পেতে বৈতল যায় পিরের মোকাম । মেয়েকে বলে,
--- তর দুখুকাকা খুব ভালা, নানি রে ।
--- কাকা নায়, চাচা ।
--- ভালা নি কছ না ।
--- ভালা ।
--- তর মাও খুব ভালা রে মনি ।
--- আমার মাও ভালা ।
--- মারে কষ্ট দিছ না বেটি ।
--- তুমি অউত্ত দেও । গাইল্লাও ।
--- আর দিতাম না, গাইল্লাইতাম নায় ।
  বৈতল মেয়েকে কথা দেয়, আর নদীর জল থেকে এক আঁজলা চোখে দেয় । বৈতলকে কেউ কখনও কাঁদতে দেখেনি । মেয়েও না, মেয়ের মাও না । মর্মের সজল তার শুষে নেয় বরাক নদীর বিস্তীর্ণ বালিয়াড়ি ।
    মামুর বাড়ি । মামুর নাম যে শেখ জালালুদ্দিন সে ভুলে গেছে নদীর পারের মানুষ, শহরের মানুষ, জেলার মানুষ । কেউ কেউ এখনও বলে জালাল পির । জালাল পিরের মামু হয়ে যাওয়ার কারণ এখনও কেউ জানে না । মামু বোবা কিংবা মৌনী নন, মামুর কথা বলার একটি অস্পষ্ট ভাষারূপ আছে, যে-রূপের বিষয়ে অনেকটাই ওয়াকিবহাল দুখু মিয়া ।
    মামুর বাড়ি এখন তীর্থক্ষেত্র । বাড়ি তো নয় বাঁশ বেড়ার এক ছাউনি নদীর পারে । ভেতরেও বাঁশের নড়বড়ে এক মাচান । মাচানে তেলচিটে কাঁথা, লুঙি গেঞ্জি গামছা আর অসংখ্য ছারপোকা । মামুর খুব কষ্ট হয় তাই দুখু মাঝে মাঝে বিছানাপত্র রোদে দেয়, গরম জল ঢালে মাচানে, কিছু ছারপোকা মরে, দুদিনেই বংশবৃদ্ধি হয় । বাঁশের খাপ থেকে বেরোয় রক্তচোষার দল । ছফুটের মতো দীর্ঘ মানুষটির কোনও বিরক্তি নেই একটু উসখুশ ছাড়া । আর, ভালমানুষ দেখলেই মারে চড়থাপ্পড় । বৈতল মেয়েকে নিয়ে যায় যদি সাধুমানুষ দু একটা চড় মারে সোনাকে । বৈতল জানে ভগবানের দরবারে এক নিয়ম চলে না । মামু সোনাকে দেখলেই হাততালি দেয়, যেন অনেকদিন পর খেলার সাথির দেখা মিলেছে । মামুর বাড়িতে তখন উৎসব হয় । এক্কা দোক্কা খেলে ফকির । সোনার বাড়ি ফেরার সময় হলে চোখের জল ফেলে মামু । মামু ইশারায় বলে আবার আসবে তো । খুকি তিলোত্তমা মাথা হেলিয়ে বলে,
--- আইমু রেবা, আইমু ।




চলবে  


কোন মন্তব্য নেই: