“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৭

লক্ষ্মীর পাঁচালি (গল্প)


।। জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত।।
ঝরছে অঝোরে কখনও একটু থামছে, ঝিরিঝিরি থেকে টিপটিপ তারপর আবার...... রাস্তায় কাদা থিকথিক পুরনো বাঁশের বাতা আর মরচে ধরা তারের বাঁধনে চেনা-অচেনা গাছপালাগুলো বিধু সরকারের কাঠাখানেক জমিকে ঘিরে রেখেছে দুপুরের আলোয় বিষণ্ণতার ছোঁয়া ঠিক সেই সময় দাওয়ায় তার কাদা মাখানো একজোড়া পায়ের ছাপ পড়েই গেলভেতর থেকে দুটো কড়া চোখের চাহনি সশব্দে আছড়ে পড়ল
ঐ কাদামাখা ছাপের পায়ে
– ‘লক্ষ্মী না’!!?
দুটো পা আর তার
ল্যাপটানো কাদাছাপ আটকে গেল ওখানেই। মুখটা নেমে এল বুকে
ঢিপঢিপ শব্দটা দলা
পাকিয়ে উঠতে লাগল গলা লক্ষ্য করে। কানে এল ভেতর থেকে কয়েক জোড়া পায়ের দুপদাপ আওয়াজ
, ‘কে, কেগো? কে এলো?!! অ্যাঁ তুই...!?’
সোজা তাকাতে সাহস হল
না
, কিন্তু সামান্য মুখ তুলে চোখের কোনা দিয়ে দেখল পিসিমা দরজা আগলে দাঁড়িয়েছেন, আর তাঁর প্রসারিত
দুবাহুর দেয়াল ডিঙিয়ে আরও দু
-তিনটি উৎসুক চোখ। এতদিন পর কইত্থাইকা
আইলি মুখপুড়ি
? লক্ষ্মীছাড়াটা আসে নাই? একা আইসস? বাচ্চাদুইটা কই? তা হেইগুলানরে খাইয়া
আইলি নাকি মরার মাগী
!!?’ তার কানের ভেতর দিয়ে যেন গরম সীসে কে ঢেলে
দিচ্ছে। বুকের দলাটা ততক্ষণে বোবা মুখ থেকে আরও ওপরে উঠে চোখের কোণ বেয়ে গড়াতে
শুরু করেছে। মাথাটাও কি একটু ঘুরে উঠল
?
লক্ষ্মী, নারে দেবি? আইসে ক্যান জিগা তো!’ না, এ রুক্ষ প্রশ্নের
জবাব আর সে দিতে পারল না। তার আগেই মনে হল সে হাল্কা হয়ে যাচ্ছে
, একটা কালো চক্কর, ব্যস আর কিছু নয়।
দেবি পিসি ছুটে এসে
কোলের ওপর মাথাটা না রাখলে হয়ত দাওয়াতেই
গড়িয়ে পড়ত দু-তিন মিনিট মনে হল সে অন্ধকারে ভাসছে। তারপর আবছা
ভেসে উঠছে
কয়েকটা মুখ, চারপাশ থেকে কানে
আসছে গোমড়া আওয়াজ। উঠে বসার চেষ্টা করল সে
, পারল না। কে কি বলছে তাও সে বুঝতে পারছে না। শুধু
তার মনে হচ্ছে একটু উঠে বসতে হবে
, কথাগুলো বলতে হবে কিন্তু চোখের পর্দায়
ঝলকে উঠছে গলার শিরা ফোলানো একটা অসহায় শুকনো মুখ যার চোখের মণি ঠিকরে বেরিয়ে এসে
যেন তাকে তাড়া করছে
সে চোখ বন্ধ করে ফেলল। কনুইতে ভর দিয়ে আবার
চেষ্টা করল উঠে বসতে। এবার পিসিমার গলা কানে এলো
– ‘উঠতে অইব না শুইয়া
থাক একটুক্ষণ। অই গইন্যা
...... মারে কদুধটা গরম কইরা লইয়া আইতে।
--হ্যারে দুধ খাওয়াইবার কি কাম? বাইচ্চাগুলান কি উনা
প্যাটে থাকব
? আকাশের অবস্থা দেখতাসস না? এর পরে তো খাওনের
লেইগ্যা খড়কুটাটাও পাওন যাইব না। চখে
-মুখে জল ছিটাইয়া দে। উঠলে তগো লগে দুইডা শুদা ভাত
খাওয়াইয়া দিস পিয়াজ আর লঙ্কা পোড়া দিয়া


...বাকিটা পড়তে এখানে চলে আসুন...


লক্ষ্মীর পাঁচালি (গল্প)

কোন মন্তব্য নেই: