“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বুধবার, ২৪ মে, ২০১৭

রাজীব ভট্টাচার্য ২২ টি কবিতা


।। রাজীব ভট্টাচার্য।।
ব্লগ পোষ্ট +Rajesh Chandra Debnath 
 

(C)Image:ছবি























হিমকথা
 

স্বপ্নের পাশে কুয়াশা জমে আছে
শ্রান্তির পাশে জেগে আছে শীতকাল
মনোকষ্টের পাশে সক্রিয় ফড় দালাল
ভাসাবো উচ্ছন্নে প্রতিদিন সান্ধ্য স্বাধীনতা
কাঙ্গালপনার মুখে পা ঘষে নিবিষ্ট সাধনা
হে সুপ্রিয় শীতকাল আমাকে আরো নিবিড়
আড়াল করো , কুয়াশা সময় ...
..........

পুণঃরাজা রানি বিষয়ক

মাথার উপর আশ্চর্য জ্যোতিচক্র
ঘুরতে দেখেছি উদ্বাস্তু শিবির থেকে
প্রথম অলৌকিক আলো দেখেছি বদ্ধ
সীমানা থেকে দূরে
তোমার রাজকীয় চামর দুলে
রেডকার্পেট রাতে বিলাস ভ্রমণে
অজস্র তারা খসে পড়ে
আহা: কী ফুলঝুরি আলো !
পরাজিত এক সৈনিক দীর্ঘ পথ হেঁটে এসে
তোমার রূপমদিরার শেষ বিষটুকু পান করে
অণু পরমাণুতে মিশে যায় ।
অর্থজয়ী রাজা নিপুণ কৌশলে প্রতিদিন
ভরে তুলেন তোমার ভাড়ার বৈভব
একটার পর একটা গ্রহ উপগ্রহ উপহারে
বিদেশী স্বপ্ন পালতুলে নৈশ টেবিল নৌকো হয়ে যায়
মিলিয়ন ডলারের সাথে সদাগরি  রমণ শেষে রাজা
অশ্লেষে লালাময় নিদ্রা গর্ভে চলে যান
তোমার জঠর ছুঁয়ে 
অন্যদিকে তুমি প্রতিরাতে স্বপ্নশিকারি হয়ে
ওঠো ঈশ্বরী স্পর্ধার মোহময়তায়
কাগজে কলমে কাব্যের পৃষ্ঠায়
ফাঁকা ক্যানভাসে কেবলই
'ময়না দ্বীপ' আঁকো আশ্চর্য মহিমায় ...
অলীক সে দ্বীপে কোনদিন যাওয়া হবে না
জেনেও পথভ্রষ্ট নাবিক ডুবে মরে যায়
আর তুমি দূর থেকে করুণা অশ্রুতে সিক্ত
কর তাদের ব্রাত্য আত্মা
ততক্ষণে ভোর হয়, পাখি ডেকে ওঠে
মুক্তির আনন্দে ,আকাশে ওড়ে যায়
এপার ওপার 
সকালের আলোর সাথে তোমার ঈশ্বরীয়
হাসি ছড়িয়ে পড়তে থাকে আনাচে-কানাচে
আমাদের ভাঙা ভাঙা 'ভুবন ডাঙায়' ... !
...........
অসামাজিক

আলোর অন্ধকার থেকে ছুটি যাই প্রিয় শব্দের দিকে ,
শূন্যতার পথে সাজান রয়েছে  ভুলে ভরা সংবেদনা
সামাজিক সম্পর্ক থেকে দূরে , বহুদূরে "স্বপ্নলোকে উজ্জয়িনী পুরে"  এখনো একান্ত নিজস্ব জগৎ জুড়ে মেঘ মেঘ খেলা ,
মে মাস জুড়ে কৃষ্ণচূড়ার মতো লালে ফুটে আছে যাবতীয় ক্ষত ,
অন্যদিকে বিদগ্ধ রমণীরা গোলাপ হয়ে ফুটে আছেন বিলাসী টবে !
অধরা স্বপ্নের থেকে ছুটে আসছে অজানা
উড়ন্ত চাকী ,
নিবিড় বীক্ষণে স্বপ্ন ভেঙে ভেঙে শব্দ তুলে রাখি বিজন ঘরে একা একা ,-
বদলে যাওয়া শহরের অলিগলি ঘুরে
ডিজিটাল যুগ পেরিয়ে ফিরে আসি
প্রায় বৃদ্ধ পানের দোকানে
যে এখনো স্মৃতি আঁকড়ে পড়ে আছে
শুভ বিবাহের মতো সুসংবাদের প্রতীক্ষায়
অবান্তর কথার পাহাড় থেকে নেমে গড়াতে থাকে রাত ,
টিনের চালে বৃষ্টির শব্দে বিভোর ঝর্ণা নেমে এলে
শব্দেরা উড়ে উড়ে যায় এফ বি লাইভের লাইকের মতো
ছোটবেলা থেকে ভেসে আসে কেটে যাওয়া ঘুড়ির উদ্দেশ্যহীন ভাসানের স্বপ্নের কথা  ...
............
মে'ডে


বড় নিঃশব্দে মিছিল চলে যায়
ঘুম ভাঙে না !
হে-মার্কেটের পতাকার নীচে
নতুন শ্রম আইন লেখা হচ্ছে
এ বড় বানিয়া সময় ...
চলো,সানডে সেলিব্রেট করি !!!
..........
জ্বর

এখন বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে শহর
বৃক্ষেরা ফলবতী হবে বুঝি এই গর্ভিণী সময়
ম্লান রজনীগন্ধা থেকে চুঁইয়ে পড়ছে জল
স্মৃতির অলিন্দ থেকে ঝুলে আছে মাধবীলতা
চাতক ইচ্ছেরা স্নান সেরে নিচ্ছে
গোপন সমুদ্র অভিলাষ ...
ততক্ষণে বৃষ্টিতে ভিজে গেছে আমার শহর
নিষিদ্ধ কান্না বুকে আজ পৃথিবীর জ্বর  !
..........
মোচন

ফাগুন সন্ধ্যা জুড়ে পরাগ-আর্তি
মোচনের রাগ জোনাকির মতো মাথার গভীরে
দীপ্তির আভায় মহিনের ঘোড়া ফিরে আসে
লজ্জা কুড়তে জানা মানুষেরা
একদিন রাগ হয়
অন্যদিন গান হয়ে যায়
.........

ভয়

শিরদাঁড়া হিম করে নেমে আসছে
সাপেদের কিলবিল
হীনমন্যতায় ধুঁকতে থাকা যাজনিক  বুদ্ধির
লেজ গজিয়ে গেছে
মেধার পরাজয় সূচিত করা চাবুকের কাছে
চেতনার কথা বলা পাপ
অন্ধকারের বুকে আদিম অশ্লীলতা রক্তের আলপনা আঁকছে
প্রকাশ্যে পর্দা টেনে রেখো, উন্মোচিত হলেই পারদ চড়বে ...
ভয়েরা কিলবিল করছে , থিকথিক ভয় !
নিজেকে অন্ধ করো মননে মেধায়
মানবিক মাংসে বরং পিকনিক আজ
পরিত্রাণের আনন্দে পাশ ফিরে ঘুমোও
ভাবো চিতার আগুন তোমায় পোড়াবে না ।
তবু একাকী অন্ধকারে চুপিচুপি দুঃখ খুলে দেখো
এতো আলো ...
থিকথিক ভয়ের নরকে ।
..........

জলশব্দে ভুল কথারা

ঝর্ণার কথা বলছি না  ; সে ছলনাময়ী
না, নদীও নয়  ; সে গতি বদলায়
সমুদ্র তো রাক্ষস গিলে খেতে তেড়ে আসে বারবার...
জল ও জীবনের মাঝে জেগে থাকা এইসব দ্বন্দ্ব
বৃষ্টিতে না ভিজলে কোনদিন জানা হয় না
.........
ঋত ঋণ

আধুনিক অক্ষর সযত্নে সাজিয়েছ শরীরে
চরিত্র হননের দিকে চলে যাচ্ছে চাকার ঘর্ঘর ।
তারপর বেলুন বিলাস শুরু হবে
অজানার পথে লালিত দুঃখরা হবে লাল নীল
ব্যাগের পসারা সাজিয়ে বসে যাবে রাজপথ !
একটা ঘড়ির খুঁজে ছুটে চলেছে সময়
যা অনন্তের তাপে গলে যাবে একদিন ।
মোহের ভিতর মোক্ষ-তাড়িত অভিশাপ
মৃত্যুর ব্যঞ্জনায় লিখে দেবে অসীমের কথা
আর ফুলের বাসনার দিকে উড়ে যাবে
দুরন্ত প্রজাপতি ...
প্রত্ন অক্ষরেরা পাললিক স্তর থেকে উঠে এসে
প্রেমের কবিতা লিখে দেবে একদিন আমাদের
সমাধি পরে 
............
আর্তি

এইতো বেশ নষ্টচাঁদ নিরাভরণ রাত্রিতে
রিক্ততার কথা শুধু আকাশের ঐ তারা জানে
সেই জানার তৃষ্ণাতে মোম পুড়ে রাত নিবিড়
নষ্ট সব যৌনসুখ আত্ম-পীড়ন  তৃপ্তিতে ...
কোন অজানা ছুঁয়েছ কে রূপকথার কন্যেকে
নিদ্রাহীন তার জীবন তাই নান্দনিক আর্তিতে ...
.........
বসন্তে

এইসব আনন্দে বমি বমি ভাব সাথে
এতো ঘৃণা জমে আছে সুখের ভিতর
দুঃখের প্রলেপে ঢাকা যাজনিক মন
কুটকুট করে কেটে খায় নতুন সবুজ পাতা
ছবি তোলা সন্ধ্যায় লাস্যতা লেগে থাকে
লেগে থাকে লম্পট প্রেম, প্রজ্ঞা সোহাগে  ...
বসন্তের আমিষ রঙ যে আনন্দে
চেটেপুটে খায় বাহারি বিড়াল
সেই সুরে বেহায়া  কোকিল শুধু
গাছ থেকে গাছে বিজ্ঞাপন ছড়ায়...
........
নির্বাণ

বন্ধনে বিরাগ রেখেছ
বহমান সময়ের কাছে
নিয়মিত ফিরে আসি তোমার কাছেই
ফিরে আসা পথ জটিল চক্রে ঘূর্ণি প্রবাহ বিদ্যুৎ
এবার জলজ বিষাদ ছুঁয়ে দেখবো
আঁধারের বাজিমাত করা উৎসবে
আনন্দ সে তো অমানিশা রাতে অপরাগ
তোমার মাথার কাছে আলো জ্বলে বসে আছে
আমার সন্ন্যাস ।
........

সংকীর্তন

নিষিদ্ধ প্রহর জুড়ে
এই আকুলতা সুধারসে
দমের খেলায়
জেগে ওঠছে সহজিয়া প্রণয়
বাসনার আর্তি
কামনা তখন সুরে ঢেলে দিচ্ছে
শরীরী প্রেম
বহ্নি ঢেকে রাখছে
বৈষ্ণব বিনয়
...........
ডুব


এখন আর উঠে দাঁড়াতে পারছি না
মাথার উপর তোমার সদাগরি নৌকা ভেসে যায় , অন্য বন্দরে ... অবগাহনে অবগুণ্ঠিত আমি খুঁজে পেয়েছি জলের আঁধার মাছেদের
কুরেখাওয়া যন্ত্রণায় অক্ষর মুখে অলৌকিক সংসার .............
...........
শোষণ


কালো জীবনের সাদা মুখ
কি অসম্ভব সাদা ...
কেউ বুঝতে পারে না
নির্বাক জটিলতা , প্রকাশের অন্তরায়ে মড়ার মতো সাদা হয়ে আছে অবান্তর কথারাও বাঁচার রসদ হয় স্বপ্ন মাড়িয় শীতের রাজপথ দুই ভাগে স্বর্গের দিকে যায় অন্যটা নরকে সিঁড়িভাঙা সাদামুখ সান্ত্বনা খুঁজে ইতিহাসের পাতায় উত্থান পতনের আক্রমণ আর আহত হবার ...
নিজের সমাধি'পরে এফিটাফ লিখে - 'যাদের মুক্তির জন্য মৃত্যু তুচ্ছ হয়েছিলো সেই কামনার গভীরে বুঝি পাপ ছিলো ...............

মাঝি

মাঝদরিয়ায় উথালপাথাল ভাসান শুকিয়ে কাঠ , লোহা ও পাথর ছড়ানো বিচ্ছিন্ন বিবাদ ... বেবাক আস্ফালনে গুল্মের বিন্যাস ঘর ঘর খেলা তবু নিকোনো উঠোন অবিন্যস্ত চুলের গভীর শুশ্রূষায় সন্ধ্যা নির্বাপিত প্রদীপ
........

পিঁপড়ে

তখন নদীর কাছে উজাড় সোহাগ
চাঁদমুখ জ্যোৎস্না ডুবজলে
অক্ষম নিবেদনে রাত, বুক জ্বলে
আঁকিবুঁকি তারাদের সাথে গহীন আহ্লাদ
পতঙ্গরা আগুনের দিকে উড়ে ... ।
রাত শেষে জলে ভেসে আজন্ম মৃতশরীর
পাখিদের ডাকে নদীপাড় জাগে
ঘাসফুল লিখে রাখে নাম
সেই প্রিয়নাম হলুদ অক্ষরে ...!
পতঙ্গ জীবন জাগে মৌমাছি গুঞ্জন
জলে স্থলে সরীসৃপ ভালোবাসা
আগুন-সন্ধি-জলে আধপোড়া লাশ
তাকে ঘিরে প্রজাপতি উড়ে ...
উৎসব যেন আজ ,মধুরে সমাপয়েত
গাছ থেকে হেলেদোলে পাতা পড়ে ঝরে
গতির নিয়মে নদী সাগরের দিকে যায়
সময় শরীর শব টলোমলো ভাসে  ...
একটি পিঁপড়ে জীবন পাতার আশ্রয়ে বাঁচে
লাশের স্বপ্ন মুখে আস্বাদ খুঁটে খায় ...
..........
সিউডো সকাল


পলিগ্যামি মঞ্চ সেজে উঠছে
উত্থান পতনের অঙ্কে
চতুরতা রপ্ত করেছে অহং-সময়
নিজের প্রয়োজনে গড়ে তোলা ছায়ানট
ব্যবহারে পটু হয়েছে অবৈধ সঙ্গম !
খেলা শেষে জাগিয়ে রাখা
নেতানো শিশ্নের আগামী মহড়া !
কাঙালপনার মুখে পা ঘষে
মাল খেয়ে পোঁদ খুলে পড়ে আছে ঋত্বিক মেধা
এভাবেও নিজেকে নিজের কাছে রাখা যায়
অস্বীকারের অন্য মুদ্রায় ।
মহৎ ও মানবিক ভ্রষ্টতার আঁকনবাঁকন জুড়ে
জটিল অলিগলি
জনপ্রিয় সাজানো সংসার
সংগ্রামী কেনা বেচা সাঙ্গ করে
আয়ু ছুঁয়ে বসে থাকা পাখি
উড়ে যাবে একদিন
সেদিনও জেগে থাকবে মুক্তির সকাল
মুখোশ বদলে
ইতিহাস তা ঠিক জানে !
.........
নিঃস্বতা


আকাশ ধরবে বলে
অহংকার ছুঁয়ে থাকা সময়
স্বপ্নের গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে
তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো
রাজা হবার স্পর্ধা
নিজেকেই সম্পূর্ণ গিলে খেলো !
........

জানালা


দরজা বন্ধ থাক
জানালা দিয়ে ঠিক বেরিয়ে পড়বো
এই গোপন কথঞ্চিত রূপকথা কেউ জানবে না
নতুন এক আকাশ মেঘ সাজিয়েছে অপেক্ষায়
চলো ভিজি
ধুয়ে ফেলি সমস্ত বিষন্নতা 
..........
জোনাকিরা


প্রদীপ জ্বলছে সুতোর লেজুড় ধরে
উঠে আসছে তেল
শিরোনামহীন একটা সন্ধ্যায়
আকাশ মেঘ সাজাচ্ছে চতুর লাস্যে
নক্ষত্র তাড়িত নিষিদ্ধ আড়াল
ল্যাপটপ খুলে দেখে নিচ্ছে সংঘর্ষের সময়
অন্ধকার থিতু হয়ে আছে
অনন্ত কবিতায় কালি ঢেলে দেবে বলে
বণিক বিকল্পে লোকসান পোষাতে ব্যস্ত
দেখা ও অদেখা অন্ধকার ভরে আছে
তীব্র হিংস্র দাঁতে , নখে ...
জোনাকিরা ওড়ে গেছে ঠিক ঘাসের বনে
আলোরা এভাবেও বেঁচে থাকে ...
........
জল 


ঘোলা জল আসছে 
পাইপ ফেটে গেছে 
কোথায় ?
কেউ খুঁজে পাচ্ছে না ।
জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে !
ঘোলা জলে মাছ ধরার
স্বপ্ন কিলবিল করছে ...
নীতিবাক্যে পড়েছিলাম
জলের অপর নাম জীবন !

কোন মন্তব্য নেই: