“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০১৭

পড়ে যাওয়া দুধের জন্য কাঁদা অনর্থক

(C)Imageঃছবি
।। জাকারিয়া ইছলাম ।।


 মানুষের গায়ের রং দৈহিক কাঠামো যেমন পরিবর্তন  সম্ভব নয়। তেমনি অনেকে মনে করেন, মানুষ যে প্রবৃত্তি ও মানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠে এর পরিবর্তন সম্ভবত কাপড় পরিবর্তনের চেয়েও সহজ। মানুষের মানসিকতা ও অভ্যাস মাটিতে পড়ে যাওয়া দুধের মতো নয় যে, তা আর তোলা সম্ভব নয়; বরং যথাযথভাবে অনুশীলন করলে আমরা নিজেদের প্রবৃত্তি ও মানসিকতা পালটে ফেলতে পারি। শুধু তাই নয়, যথাযথ প্রক্রিয়ায় কখনো কখনো মানুষের চিন্তা-চেতনাও পরিবর্তন করা যায়।
ইবনে হাজাম (রহঃ) তাওকুল হামামাহনামের গ্রন্থে লিখেছেন- স্পেনে একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিল। সেখানকার আরো চারজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার প্রতিযোগিতা ছিল। এক পর্যায়ে তারা তার প্রতি বিদ্বেষী হয়ে উঠলো এবং তাকে চরমভাবে নাজেহাল করার ষড়যন্ত্র করলো। একদিন সকালে সে ব্যবসায়ী তার দোকানে যাচ্ছিল। তার পরনে ছিল সাদা জুব্বা আর মাথায় ছিল সাদা পাগড়ি। পথিমধ্যে সে চারজনের একজনের সাথে সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হ। সে তার সঙ্গে সালাম বিনিময় করে পাগড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার হলুদ পাগড়িটা তো বেশ চমৎকার!’ ব্যবসায়ী বলল আরে! তুমি অন্ধ হয়ে গেলে নাকি? সাদা পাগড়িকে হলুদ পাগড়ি বলছ কেনলোকটি বলল,‘আপনি ভুল করেছেন। পাগড়িটি আসলে হলুদ। তবে হলুদ হলেও আপনাকে বেশ চমৎকার লাগছে
ব্যবসায়ী আর বেশি কথা না বলে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো। একটু অগ্রসর না হতেই ঐ চারজনের আরেকজন এসে সালাম দিয়ে তার পাগড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘মাসাআল্লাহ! আপনি তো আজ চমৎকার পোশাক পরেছেন। পোশাকটি আপনাকে খুব মানিয়েছে। বিশেষ করে এ সবুজ পাগড়িটিতে আপনাকে অন্যরকম লাগছে ব্যবসায়ী তখন নিজের পাগড়ির দিকে তাকিয়ে ভালভাবে দেখে নিশ্চিত হয়ে বলল, ‘আপনি ভুল দেখেছেন। আমার পাগড়িটি সবুজ নয় সাদা সে বলল, ‘না না, এটা সাদা নয় আমি হলফ করে বলছি এটা সবুজ।তবে সবুজ হলেও চিন্তার কোন কারণ নেই। এটা বেশ সুন্দর।’
এরপর সে ব্যবসায়ী চিৎকার করে বলল, আমার পাগড়ি সবুজ নয় সাদা।’ এটা বলতে বলতে সে তার পাগড়ির বিভিন্ন অংশ নাড়াচাড়া করে দেখতে লাগলো। নাহ, সাদা-ই তো দেখা যাচ্ছে। এরপর সে সোজা তার দোকানের সামনে গিয়ে তালা খোলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল এর মধ্যেই তৃতীয়জন এসে বলল, ‘আজকের পোশাকটা তো আপনাকে বেশ ভালো লাগছে। বিশেষ করে আপনার এ নীল পাগড়িটা।’
ব্যবসায়ী তখন নিজের পাগড়ির দিকে আরেকবার তাকিয়ে বলল, ‘ভাই! আমার পাগড়ির রঙ তো সাদা।’ লোকটি বলল, ‘আপনি ভুল করেছেন। আপনার পাগড়ির রঙ নীল। তবে এটা সুন্দর মানিয়েছে আপনাকে। এ নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না।’ এ কথা বলে সে চলে গেল। এদিকে সে একা-একা বলতে লাগলো আমার পাগড়ি সাদা। আমার পাগড়ি সাদা। বারবার সে পাগড়িটি নেড়ে-চেড়ে দেখতে লাগল। ব্যবসায়ী কোনভাবেই তার দৃষ্টি পাগড়িটি থেকে সরাতে পারছিল না।
এর মধ্যেই চতুর্থজন এসে বলল,মাসাআল্লাহ! আপনাকে অভিনন্দন। এ লাল পাগড়িটি আপনি কোথা থেকে কিনেছেন?এটা শুনে সে ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, ‘আরে ভাই কি আবোল-তাবোল বকছেন? আমার পাগড়ি তো নীল।’ না,এতো দেখছি লাল।’ ব্যবসায়ী তখন চিৎকার করে কাঁদতে লাগল আর বলতে লাগল, ‘আমার পাগড়ি সাদা। না, আমার পাগড়ি লাল। একটু পড়ে সে আবার বলল, ‘আমার পাগড়ি সবুজ। না, বরং এটা নীল। না না, এটা তো কালো।’ কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে হাসতে শুরু করলো। এরপর কাঁদতে লাগল। এরপর সে হঠাৎ লম্ফঝম্ফ দিতে লাগল।
ইবনে হাজম বলেন, পরবর্তীতে আমি দেখেছি এ ব্যবসায়ী স্পেনের অলি-গলিতে পাগল হয়ে ঘুরছে আর ছোট ছোট বাচ্চারা তার দিকে পাথর ছুঁড়ে মারছে।
এ চারজন মানুষ যদি তাদের দুরভিসন্ধিমূলক কূটকৌশল দিয়ে একজন মানুষের প্রকৃতি পরিবর্তন করে দিতে পারে, তার বিবেক-বুদ্ধি বিকৃত করে দিতে পারে তাহলে আপনি কেন আপনার ভাল ব্যবহার, দক্ষতা দিয়ে মানুষের মনের গতি ভাল কাজের দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারবেন নাএকজন মানুষ কে ভাল করতে আপনি আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতার সর্বোত্তম ব্যবহার করুন।
যদি বলেন না, আমি পারবো না।
আমি বলব, ‘কমপক্ষে চেষ্টা তো করুন।
যদি বলেন, কীভাবে চেষ্টা করতে হয় তা আমি জানি না।
আমি বলব, তাহলে আগে শিখুন।

আমাদের প্রিয় নবি বলেছেন জ্ঞান লাভ হয় কেবল শেখার মাধ্যমে। আর সহনশীলতা অর্জিত হয় অধ্যবসায়ের মাধ্যমে।

দৃষ্টিভঙ্গি...দুঃসাহসীরা নিজেদের দক্ষতার উন্নতি করতে গিয়ে নিজের সক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যায়।কখনো কখনো অন্যের দক্ষতা বাড়িয়ে দেয় কিংবা পাল্টে দেয় । 



কোন মন্তব্য নেই: