“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৭

জীবনধর্ম ৫

।। সুমন পাটারী ।।
(C)Image:ছবি
কালবেলা পড়েছি অনেক দেরি হলো জানিনা কেন কাল সকাল থেকে ইচ্ছে হচ্ছিলো একবার পড়ি।বাইখোড়া পাব্লিক লাইব্রেরি, সন্ধ্যা সাতটা, আমি গিয়ে ঢুকলাম, ভেতরে বসে আছেন অমুক বাবু, পান মুখে অনেকটা বিচ্ছিরি বেলাজ ঘরজামাইর মতো বলে ওঠলেন, কী রে! এখানে কেন? আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে বই খুঁজছি আর অমনোযোগী ভাবে নার সাথে দু-একটা কথার উত্তর দিচ্ছি। হঠাৎ-- বলে উঠলেন "এইসব কবিতা,( নাটকীয়,) কোনো লাভ নেই, চাকরি একটা ব্যবস্থা কর নাইলে কেউ মুলাইতো না, কোনো দাম নাই" চাকরি থাকবো, যে কেউ কথা কইতে চিন্তা করবো, বাকি সাকি ধারদেনা জীবনযাপন সহজ হইবো .....ব্লাহ ব্লাহ!" আমি বই খুঁজছি তখনো, আমি দুটো বই নিয়ে ইস্যু করালাম তখনো উনি বলে যাচ্ছেন, আরো অনেক কথা যা নিতান্তই সহজলভ্য ডাইলগ মনে হলো, তাই তুলিনি।
একটা কথা শুধু শেষে বলে উঠলেন,
এইসব বই পড়া কই যাইবোগা টের পাইতি না; নাটক নাটক লাগের কয়েকদিন, কবিতা, এসবে ভাত দিতো না! এখনো টের পাওনাইতো জীবন কী জিনিস? তখন যদি ভালো করে পড়তি আজ এই কাজ করতে হইতো না" মাথা নাড়া দিয়ে উঠলো, কী রে! আজে বাজে যা ইচ্ছা বলে লে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করি, আপনি কয়বেলা খান ভাত? পারিনা রে বাবা একবেলা খাই, সুগাররে খাইয়ালাইছে শরীর, হার্টব্লকও আছে।” আমি কিন্তু স্যার তিনবেলা ভরপেট খাই, নিয়ম করে হাগি, আর হজম ও খুব ভালো, বলে একটা হাসি দিলাম উনিও একটি সংকুচিত হাসি দিলেন চলে এলাম। আসতে আসতে ভাবছিলাম এখানে শিক্ষা শুধু জীবিকার জন্য, চাকরি করে সঞ্চয়ের জন্য, পরে খাবো, পরে খাবো করে শুধু ওষুধের জন্য জমানো হয়।
জীবন একইসাথে একটি স্বসহায়ক ও স্ববিরোধী স্বত্বা,যা তার ধারণকারীকে প্রতিনিয়ত সংরক্ষণ ও আঘাত করে। আবিষ্কারের প্রথম ডিমান্ড জিজ্ঞাসা মধ্যবিত্ত মনে যন্ত্র আবিষ্কারের ধারণা বিরল ভাতে ঘুমে জননে চলে যায় আশি বছর, বস্তুত আমরা যা দেখতে পাই তা হলো ভবিষ্যৎ নির্মাণের শিক্ষা দিয়ে থাকে প্রতিটি পিতামাতা সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ বলতে কিছু হয় না এই একটা চাকরি ও সামান্য বেতনে রুটিনমাফিক চলা সামান্য সঞ্চয়ে একমাসের তীর্থ যাত্রা এই ছক বাঁধা জীবন থেকে মুক্তি দরকার। জীবন বাঁচতে জানতে হয়; প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসে। সুখ মানুষকে বিকলাঙ্গ করে তোলে, আবিষ্কারের প্রয়োজন থাকেনা  নিশ্চয়তা মানে মৃত্যু, কোনো ভাবে ঘেমে ঘুমে রিটায়ার জীবন আসলে চুরি, জীবনের মুখোমুখি দাঁড়াতে ভয় পাওয়া
জীবন অনেকটা কপট ইন্দ্রের অহংকারী বর্ষাসেনা জীবনের ধারণকারী ব্যক্তি স্বয়ং  বাজ-বৃষ্টিতে স্থির গোবর্ধন।  যেকোনো কাজ জীবন যাপনের প্যাশন, জীবন ধারণ নয়। যে ঘাম ঝরাতে কৃপণতা করে আর যাই হোক সে অন্তত দৃঢ়চেতা ব্যক্তি নয়। যে কোনো সময় তার ফর্মুলা নিজে বাঁচলে বাপ হতে পারে। শারীরিক বা মানসিক শ্রম কখনোই মানুষের কষ্ট হতে পারে না, যারা বলেন তারা মেকি, ছদ্মবেশী মোমগাছ, কষ্ট সম্পর্কের, সম্পর্কসৃষ্ঠ।
একজন প্রকৃত শিক্ষিত লোক কখনোই একজন শ্রমজীবী ও একজন প্রফেসরের সামাজিক লেভেলের বৈষম্য দেখে না যদি আপনি দেখেন তবে আপনার শিক্ষায় ফাঁকি ছিলো। আপনি মূর্খ। দুটোই জীবন ধারণ। পার্থক্য জীবন যাপনে, আপনার শিক্ষায় জং ধরছে কি? আপনি কি যা পড়েছেন তার সামাজিক বা ব্যাবহারিক প্রয়োগ শিখেছেন, বইয়ে বন্ধ আছে কি সব? নিজের ভেতরে অক্ষরের সঠিক সচল রাখা খুব জরুরি

কোন মন্তব্য নেই: