“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭

ঋতুক্ষরণের রোদচশমায় : পাঠকথা, কবি মিলনকান্তি দত্ত

ঋতুক্ষরণের রোদচশমায় 

চিরশ্রী দেবনাথ
স্রোত প্রকাশনা
মূল্য একশ টাকা
পাঠকথা : লিখেছেন মিলনকান্তি দত্ত 

          বি চিরশ্রীর দ্বিতীয় সংখ্যক কবিতার বই। কবি স্ব বচনে লিখেছেন '...একটি ভীষণভাবে মেয়েলিভাবনা নিয়ে বড়ো হয়ে ওঠা এই আমি এবং আমার কাছে কবিতা আমার সেই স্বপ্নের পুরুষ, তাই তাকে নিয়ে যতো ভাবি ততোই ভালো লাগে, ততোই স্নান করতে ইচ্ছে হয় ...",স্বাভাবিকতা এটাই, কবিপুরুষ যখন তার কবিতাকে 'বণিতা চৈব 'ভাবতে ভালোবাসেন, সে এক কল্পনালতা ও মানসসুন্দরী, সে এক রাণীর ঘাড়,  জ্যোৎস্না রাতে ব্যবিলনের... তখন ভীষণভাবে মেয়েলিভাবনা নিয়ে বড়ো হয়ে ওঠা কবি তরুণীর কাছে কবিতাকে একটি স্বপ্নের পুরুষের মতোই মনে হবে। স্নান করার অবচেতনাময় ইচ্ছেমালায় গ্রন্থিত বালিবর্ষা, দেবী শরৎ, হেমন্ত ধান, চন্দনশীত, বসন্ত ধুলো, চূর্ণগ্রীষ্ম সিরিজে ঋতুময় একাশিটি কবিতা। অসাধারণ ভাবনা, অনুভূতি এবং প্রকল্পনা। কবির উচ্চারণে নারী আছে, বাদ নেই। দেহগন্ধ তুমুলভাবে উপনীত কিন্তু কবিতার আর্দ্রতা লঙ্ঘন করে নয়। ভালো লাগে কবির চিত্রকল্প, শব্দনির্মিতি ...হৃদয় অলকানন্দা থেকে উৎসারিত অমোঘতরঙ্গগুলোর কবিতা রূপান্তর। আলাদারকম কোনো কবিতার উল্লেখ না করে কবিতাপাঠকের কাছে প্রত্যাশা রাখছি কাব্যটি পড়ে দেখার জন্য। কেন না চিরশ্রীর কবিতা কি  অনায়াসে বলতে পারে
"গণসংগীতের সুরেও বর্ষা নামে
রবীন্দ্রগানের মতো আকুল কদম হয়তো নয় "...এমন নিযুত গন্ধরেনু, নারীময়, অথবা পৃথিবী জুড়ে পড়ে থাকা মাংসকাটার গান।
          প্রচ্ছদ তার মতো করে কবি নিজেই এঁকেছেন, অকপট সারল্যের ছোঁয়া লেগে আছে রেখাপাতে। কবির দুটো ছবিসহ দু  'মলাটে বিস্তর কথালাপের দরকার ছিল না হয়তো, কবিতাই তো কবির বক্তব্য। মুদ্রণভ্রান্তি আছে, এই প্রকাশনা থেকে যেমনটা হয়, শেষপৃষ্ঠায় শুদ্ধিতালিকা সংযোজিত ...এসব প্রকাশকের অনবধানতা বা প্রযত্নমেধার অভাবকে স্পষ্ট করেছে।

কোন মন্তব্য নেই: