“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

বেনাম

(C)Image:ছবি
 ।। দেবশ্রিতা চৌধুরী।।
মেয়েটির কোন দোষ ছিলো না।একটিই ভুল করেছিল, ভালোবেসেছিল,তুমুল বৃষ্টিতে কাকভেজা ভালোবাসা, সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেসে আসা অবিরাম ভালোবাসার মতো।অন্যদিকে কী ছিলো জানতে পারেনি।আজ একটি সদ্যভোরের  মতো ,একরাশ পবিত্রতার মতো একটি মেয়ের গল্প বলবো।
শহর থেকে একটু দূরে পাশাপাশি দুটি বাড়ি।ছোট ছোট একতলা সামনে ছোট্ট ফুলের বাগান তুলসীতলা।দুই বন্ধু একসাথে একরকমের বাড়ি করে যেন বন্ধুত্ব সারাজীবন স্থায়ী হয়।একজনের স্ত্রী আর পুত্র নিয়ে বাস,আর আরেক জনের দুটি মেয়ে।ভাইবোনের মতোই বড় হচ্ছিল,ভাইফোঁটার দিন কেউ ভাই বা বোনের অভাব অনুভব করেনি কখনো।ফুটফুটে তিনটি ছেলেমেয়ে ওদের মা বাবারা স্বপ্নের মতোই জীবন কাটাচ্ছিল।ছোট বোনটি স্কুলে আর ছেলেটি কারিগরি কলেজে, বড় মেয়ে স্থানীয় কলেজে আর কি চাই।

বড়োমেয়ে নীপা কলেজে যাওয়া শুরু করতে মা বাবা একটু চিন্তিত ছিল কারণ মেয়েটি সুন্দরী আর কলেজ বেশ কিছুটা দূরে।আস্তে আস্তে সব অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।বন্ধু মহলে নীপা জনপ্রিয় হয়েছে,সবাই ভালোবাসে।স্বাভাবিক কারণেই ভালোবাসা দরজায় কড়া নাড়ে।ঋতম মানে ওর ভাইয়ের বন্ধুর দাদা।বেশ চলছিল ওদের যোগাযোগ কথাবার্তা।সময়ের সাথে দুজনের বাড়িতে সবাই মেনেও ছিল সব।
ঋতমের একটা পরিবর্তন কিছু দিন হলো চোখে পড়ছে নীপার ,প্রশ্ন করেছে
কী হয়েছে ভাই তোর?ও উড়িয়ে দিয়েছে বলেছে কিছুই হয়নি।কিন্তু সত‍্য বেশিদিন লুকিয়ে রাখা যায় না।ঋতম নেশার বস্তুতে প্রবল আসক্ত।মন সবারই দুবাড়িতেই খারাপ।আসলে তো বাড়ি দুটি ছিল না ছিল একটিই।
অভিমন্যু অর্থাৎ নীপার ভালোবাসার জন কথা দিল নীপাকে ঋতমকে সে ফিরিয়ে আনবে সর্বনাশের পথ থেকে।পরম বিশ্বাসে ভরসা করেছে ওরা।

একদিন ঋতম এসে বললো, দিদিভাই চলো-- তোমায় বেড়াতে নিয়ে যাবো এক জায়গায়।গন্তব্যে পৌঁছে দেখা গেল অভিমন্যু আগে থেকেই এসে ছিল।তিনজন গল্প করে খাওয়াদাওয়া করে ফেরার পথে।রাত হয়ে গেছে অনেক আসার সময় ঋতমের বাইকে এলেও দুজনে জোরজার করে তুলে দিল অভিমন্যু র গাড়িতে।তারপর পথের আর শেষ নেই, চলা শুরু হলো একটি মেয়ের।সর্বস্ব প্রেমিকের হাতে খুইয়েও রেহাই নেই,বহুদূরের এক বারবিলাসিনীর ডেরায় হলো স্থান।প্রতিরাতে নতুনের মনোরঞ্জন তার কাজ।মেয়েটি বিশ্বাস করেছিলো তার ভালবাসার দুটি মানুষকে,রক্তের সম্পর্কের চেয়ে ও বেশি ভাইকে।নেশার বস্তু জোগানে যে বোনকে বলি দিলো প্রেমিকের ছদ্মবেশে আসা আরেক নেশাড়ুকে।না জেনে কতবার ভুল হয়ে যায়।কিন্তু একেকটা ভুল এমন হয় যার সংশোধন জীবন দিয়ে ও করা যায় না।নীপা জীবন দিতে পারেনি কারণ তার মাঝে তখন সে টের পাচ্ছে আরেকটি প্রাণের স্পন্দন,যার পিতৃপরিচয় সে নিজেও জানেনা।থাক তবে মায়ের সন্তান পরিচয়ে বড়ো হোক সে।পুত্র কন্যা যাই হোক না কেন নীপার সন্তান হয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকুক।

কোন মন্তব্য নেই: